আজও তোমায় ভালোবাসি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রিমঝিম বৃষ্টির ধারা বয়ে চলছে, টিনের চালের উপর বৃষ্টিরা যেনো, পা মিলিয়ে ছন্দে নাচছে।খোলা জানালা দিয়ে হালকা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে,,
বারান্দায় সারি বদ্ধ লাল গোলাপ, বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে তারাও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে ব্যস্ত,,,।

বাারান্দায় একটা টেবিলে বই আর এক কাপ ধোঁয়া উঠা চা,, আর একটা খাতা তাতে অবশ্য ৫/৬ লাইন কবিতাও লিখা। বইটা খুলে বসে রয়েছে আবরার,

নির্জন এই ঝুপড়ি ঘরে একাই থাকে সে, জীবনটা তার বড্ড অগোছালো, বাবা মায়ের আদরের সন্তান আবরার, যখন ওর বয়স আট বছর তখন ওর মা মারা যায়, এরপর কয়েক বছর ওর বাবাই ওকে লালন পালন করে। কিন্তু আবরার মায়ের জন্য কাঁদতো, এটা দেখে আত্মীয় স্বজনেরা ২য় বিয়ে করতে বলে, আবরারের বা আজমল খানকে, ২য় বিয়ে করে আনার কয়েক মাস ভালোই কাটে, কিন্তু আবরারের ছোট ভাই আসার খবর যেদিন সবাই পায় সেদিন থেকে ওর আদর কমতে থাকে, ও দিন দিন বেয়ারা হয়ে উঠে।

বাবা সারাদিন বিজি থাকতো,আর সৎ মা তোমন খবর নিতো না। বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে বাজে হয়ে গিয়েছিলো।

(এর পরের ঘটনা আবারের মুখ থেকে শুনবো,,,)


একদিন সকাল বেলা আমার বন্ধু রিফাত কল দিয়ে বললো,,
হ্যালো দোস্ত,
আব:: হুম বল,
রিফা:: তুই কী ঘুমাচ্ছিস??
আব:: হু কেনো??
রিফা:: দোস্ত একটা ঝামেলা হয়েছে, আয়তো, একটু
ফোনটা কেটে দিয়ে রেডি হলাম, ঘর থেকে বের হতেই দেখি ছোট ভাইটা পড়ছে, আমি কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখতেই, ও চারপাশে দৃষ্টি দিয়ে নিচু আওয়াজে বললো,,
ভাইয়া তুমি চলে যাও আম্মু বলছে তোমার সাথে কথা বললে আমিও বাজে, খারাপ ছেলে হয়ে যাবো। আর বাবা বলছে তোমার সাথে আমাকে না মিশতে মিশলে মারবে। ছোট ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। চোখের পানিটা আড়াল করে আমি উঠে চলে আসলাম।
খুব রাগ হলো, নিজের ভাগ্যের উপর,
বাইক নিয়ে রিফাতের সাথে দেখা করলাম, ঝগড়া মারামারি শেষ করে, আমি আর রিফাত আড্ডা দিচ্ছিলাম,

তখনি বাতাসের সাথে খুব মিস্টি একটা ঘ্রান নাকে প্রবেশ করলো, সামনে তাকাতেই দেখলাম খুব সুন্দর আর মিস্টি একটা মেয়ে ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছে বান্ধবীদের সাথে আর আইসক্রীম খাচ্ছে,,
আমি মেয়েটার দিয়ে তাকিয়েই থাকলাম, এত সুন্দর মেয়ে কখনই দেখিনি।

পরের দিন ওর এক বান্ধবীর কাছ থেকে ওর নাম জানলাম, ওর নাম বর্ষা, দশম শ্রেনীর ছাএী, বাবা নেই মা আছে।
কাছেই একটা বাড়িতে থাকে ওর মা নার্স,

ওকে প্রোপজ করবো ভাবলাম, পরের দিন ও স্কুল থেকে বের হয়ার পর আমি ওকে প্রোপজ করলাম, কিন্তু আমি যে মাস্তান এটা সবাই জানে, তাই ও ভয় পেয়ে গেলো। আর কাঁদতে শুরু করলো, আমি কীছু বললাম না চলে আসলাম, এরপর আবার প্রোপজ করলাম। ও আমাকে রিজেক্ট করলো।

আমার অনেক রাগ উঠলো, আমি ওকে রেখে দূরে চলে আসলাম, কয়েকদিন ওর সামনে গেলাম না। ও আমার খোঁজ করতে লাগলো।।আমার ব্যাপারে রিফাতের কাছে জিজ্ঞেস করলো, রিফাত ওর প্রতিবেশী ছিলো, রিফাত আমার জীবনের সব গল্প বললো,

একদিন আমাদের গলির মোড়ে আমি সিগারেট খাচ্ছিলাম আর আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন বর্যা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে গেলো। আমি বাড়ী নিয়ে গিয়ে খুললাম, তাতে লেখা,,,

প্রিয় আবরার,,
জানিনা প্রেমের কী অনুভুতি কিন্তু এ মন তাকে অনুভব করতে চায়, অপেক্ষা কালের জন্য লেকের পাড়ে
ইতি,,,
বর্ষা,,৷।।
চিঠিটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, নিজেকে এতদিনপরে শান্তি লাগছিলো। কিন্তু লেকের পাড়ে যাওয়া টাইমতো বলেনি, তাই সকাল বেলাই লেকের পাড়ে চলে গেলাম।রাতে আর ঘুম হয়নি।
বিকেলের দিকে বর্ষা এলো, কী সুন্দর লাগছিলো, ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আস্তে আস্তে আমাদের ভালোবাসা গড়ে উঠলো।আমিও সমস্ত খারাপ সব ছেড়ে দিয়ে জব খুজতে লাগলাম।
অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ একটা জবও পেয়ে গেলাম। বর্ষার আম্মুকে বর্ষা সব জানানোর পর ওর মা আমাদের সম্পর্কটা মেনেও নিলো।
আমি আলাদা একটা বাসা ভাড়া নিলাম, আমাদের বিয়েও হলো। যখন বাড়ী থেকে একেবারে চলে আসবো তখন ছোট ভাইয়া সেদিন জরিয়ে খুব কাদলো।।

সমস্ত সৃতি বিসর্জন দিয়ে নতুন করে সংসার গুছালাম, আমাদের ভালোবাসা পুর্ণতা পেলেও। খুব সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলাম।যেদিন আমাদের পরিবারে আর একজন ছোট্ট মেহমান আসার খবর পেলাম সেদিন মনে হচ্ছিলো আমিই পৃথিবীর সেরা সুখি ব্যক্তি, কিন্তু কথাতেইতো আছে শুখ বেশিদিন টিকে না।
আমার মেয়েটা পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই, ওর মা মানে আমার বর্ষা চলে গেলো।
আমি পাথর হয়ে গেলাম মেয়েটা কাঁদ ছিলো, কী করবো বুঝতে পারছি না।। বলতে বলতেই আবরারের চোখ ভিজে উঠলো। সেদিন সেই ছোট্ট মেয়েটিও আজ আর নাই, গতবছর টাইফেট জ্বরে মারা গেলো।
কিন্তু ওদের প্রতি ভালোবাসাটা রয়েই গেলো। আবরার ঘরে চলে গেলো, টেবিলে এখনো চায়ের কাপটা রয়েছে তবে ধোঁয়াটা আর নাই, আর খাতার উপর লেখা। আজো তোমায় ভালোবাসি প্রিয়া,,,,,,।
181 Views
3 Likes
1 Comments
4.3 Rating
Rate this: