সূরা কুরাইশ এর গুরুত্ব ব্যাখ্য ও তাৎপর্য

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
সূরা কুরাইশ

সূরা কুরাইশ হলো কুরআনের ১০৬ নম্বর সূরা, এবং এটি একটি মক্কী সূরা। আয়াত সংখ্যা ৪। এই সূরাটি মূলত কুরাইশ গোত্রের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কুরাইশ ছিল মক্কার একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রভাবশালী গোত্র, যারা কাবা শরীফের তত্ত্বাবধান করত। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধি দান করেছিলেন, যা তাদেরকে মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশেও নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করেছিল।

অবতরণের কারণঃ-

এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে কুরাইশ গোত্রের উপকার এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য। কুরাইশরা আল্লাহর ঘরের রক্ষক ছিল, এবং তারা শীত ও গ্রীষ্মকালে ব্যবসায়িক সফর করত, যা তাদের জীবনযাত্রা ও আর্থিক অবস্থাকে সুসংহত করেছিল। তাদের জীবনের নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক সুবিধা, এবং খাবারের যোগানের সবই আল্লাহর ইচ্ছার কারণে সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তারা এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল।

সূরা কুরাইশ এর ব্যাখ্যাঃ-

1. "লিইলাফি কুরাইশ"

এই আয়াতটিতে কুরাইশদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য বিশেষভাবে ব্যবসায়িক শান্তি এবং সমৃদ্ধি প্রদান করেছেন, যা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।



2. "ইলাফিহিম রিহলাতাশ শিতাই ওয়াস সাইফ"

কুরাইশদের ব্যবসায়িক যাত্রার কথা বলা হয়েছে, যেটি শীতকালে তারা ইয়েমেনের দিকে এবং গ্রীষ্মকালে সিরিয়ার দিকে করত। এই যাত্রাগুলি তাদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল এবং তাদের সামাজিক প্রভাবও বৃদ্ধি করেছিল।



3. "ফালইয়াবুদূ রাব্বা হাজাল বাইত"

আল্লাহ তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা যেন এই ঘরের (কাবা) প্রভুর ইবাদত করে। এই ঘর এবং তাদের নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি সবই আল্লাহর দান। তাই তাদের উচিত কৃতজ্ঞ হয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, অন্য কারো নয়।



4. "আল্লাযী আত'আমাহুম মিং জু'ঈ ওয়া আমানাহুম মিং খাওফ"

এই আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই তাদেরকে ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে ভয়ের হাত থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। মরুর মধ্যেও কুরাইশরা কোনো রকম অভাব বা ভয় ছাড়াই জীবনযাপন করতে পেরেছে, শুধুমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে।



তাৎপর্যঃ-

১. আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের স্বীকৃতি: সূরা কুরাইশ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহর দয়া এবং অনুগ্রহের জন্য সবসময় কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। কুরাইশরা আল্লাহর আশীর্বাদে নিরাপদে ও সমৃদ্ধিতে জীবনযাপন করেছে, কিন্তু তারা আল্লাহর ইবাদত করতে ভুলে গিয়েছিল। তাদের মূর্তিপূজা এবং ভুল পথে পরিচালিত জীবনযাপনের প্রতি সূরা কুরাইশ সতর্কবার্তা দেয়।

২. বাণিজ্য ও নিরাপত্তার দান: কুরাইশরা নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর প্রতি ঋণী ছিল। আল্লাহ তাদেরকে এমন একটি জায়গায় স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তাদের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল এবং তারা শত্রুদের ভয় থেকে মুক্ত ছিল। আল্লাহ তাদেরকে এমন একটি সমাজে সমৃদ্ধি ও শান্তি দান করেছিলেন, যা সে সময়কার আরব অঞ্চলে বিরল ছিল।

৩. এককভাবে আল্লাহর ইবাদত: সূরা কুরাইশ মুমিনদের শেখায় যে, শুধুমাত্র আল্লাহই আমাদের সব প্রয়োজন পূরণ করেন এবং তিনিই আমাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন। তাই, আমাদের উচিত কেবল আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা। মূর্তিপূজা বা অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর বদলে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া বড় ভুল।



সূরা কুরাইশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহ আমাদের জন্য যা কিছু করেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া এবং তাঁর প্রতি ইবাদত করা আমাদের দায়িত্ব। নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, খাদ্য এবং জীবনযাত্রার সকল সুবিধা আল্লাহর কাছ থেকে আসে, এবং একমাত্র তিনিই এর যোগানদাতা।
321 Views
8 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: