সূরা আল লাহাব

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
সূরা আল-লাহাব

সূরা আল-লাহাব হলো কুরআনের ১১১ নম্বর সূরা, এবং এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এতে ৫টি আয়াত রয়েছে। এই সূরাটি মহানবী (সা.)-এর অন্যতম শত্রু আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মে জামীলার প্রতি আল্লাহর চূড়ান্ত অভিশাপের ঘোষণা বহন করে। আবু লাহাব নবীজির (সা.) দাওয়াহ প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করতে সবসময় সক্রিয় ছিল এবং মহানবী (সা.)-কে অত্যন্ত তীব্রভাবে বিরোধিতা করত।

অবতরণের কারণ:

আবু লাহাব ছিল মহানবী (সা.)-এর চাচা, কিন্তু সে নবীজির বার্তা প্রচারকে তীব্রভাবে প্রতিহত করত। যখন মহানবী (সা.) ইসলাম প্রচারের জন্য প্রকাশ্যে ডাক দেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠে লোকদের সতর্ক করেন, তখন আবু লাহাব তাঁকে গালি দিয়ে বলে, “তোমার ধ্বংস হোক! তুমি কি এ জন্যই আমাদের একত্রিত করেছ?” এই ঘটনাটি সূরা আল-লাহাবের অবতরণের মূল কারণ। আল্লাহ তাঁকে ও তার স্ত্রীকে তাদের কঠিন শাস্তির কথা জানিয়ে দেন।

ব্যাখ্যা:

1. "তাব্বত ইয়াদা আবী লাহাবিউঁ ওয়া তাব্ব"

আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক!

এখানে "হাত" ধ্বংস হওয়ার অর্থ হলো তার ক্ষমতা ও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। আবু লাহাব যে সমস্ত চেষ্টা করেছে নবীজির (সা.) দাওয়াহকে বাধাগ্রস্ত করতে, তা সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।



2. "মা আগনা আনহু মালুহু ওয়া মা কাসাব"

তার ধন-সম্পদ ও যা সে অর্জন করেছে, তা তাকে কোনো কাজে আসবে না।

আবু লাহাব ছিল ধনী ব্যক্তি, কিন্তু তার সম্পদ ও সম্পত্তি তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। "মা কাসাব" বলতে তার সন্তান ও তার অন্যান্য অর্জনকেও বোঝানো হয়েছে। কিছুই তাকে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।



3. "সাইয়াসলা নারা-ন্ যা-তা-লাহাব"

সে অগ্নি লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে।

আল্লাহ তাকে ঘোষণা করছেন যে, আবু লাহাব জাহান্নামের ভয়ংকর আগুনে দগ্ধ হবে। "লাহাব" শব্দের অর্থ হলো লেলিহান শিখা, যা আবু লাহাবের নামের সাথেও মিলে যায়। তাই আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন, সে চিরস্থায়ী আগুনের মধ্যে শাস্তি পাবে।



4. "ওয়ামরআতুহু হাম্মা-লাতাল হাতাব"

এবং তার স্ত্রী, যিনি কাঠবাহীনি।

এখানে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীলকেও অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। "হাতাব" বা কাঠ বহনকারী বলতে বোঝানো হয়েছে যে, সে নবীজির (সা.) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা কথার আগুনে ঘি ঢালত। সে সবসময় নবীজির ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। আল্লাহ তাকে এই মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেবেন।



5. "ফী জীদিহা হাবলুম মিম মাসাদ"

তার গলায় থাকবে খেজুর পাতার দড়ি।

উম্মে জামীলের জন্য আল্লাহ ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা করেছেন। তার গলায় খেজুর পাতার মোটা রশি বাঁধা থাকবে, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে। এটি প্রতীকীভাবে তার শাস্তির ভয়াবহতা বোঝাচ্ছে, যেহেতু সে পৃথিবীতে নবীজির (সা.) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।




তাৎপর্য:

1. আল্লাহর শাস্তির ঘোষণা:
সূরা আল-লাহাব আল্লাহর শাস্তির চূড়ান্ত ঘোষণা বহন করে, বিশেষত নবীজির (সা.) প্রধান শত্রু আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর প্রতি। এটি দেখায়, যারা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং সত্যকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদের জন্য আল্লাহর কঠোর শাস্তি নির্ধারিত।


2. সম্পদের নিরর্থকতা:
এই সূরা আমাদের শেখায় যে, দুনিয়ার সম্পদ বা ক্ষমতা আখিরাতে কোনো কাজে আসবে না। আবু লাহাবের ধন-সম্পদ এবং পৃথিবীতে তার অর্জন তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না। মানুষ যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তার দুনিয়ার সম্পদ কোনো কাজে আসবে না।


3. মিথ্যা প্রচারের পরিণতি:
আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী নবীজির (সা.) বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত ছিল। আল্লাহ এই মিথ্যা প্রচারণার জন্য তাদের শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এটি একটি শিক্ষা যে, মিথ্যা প্রচার করা এবং সত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করা চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।


4. নবীজির মর্যাদা:
সূরাটি নবীজির (সা.) মর্যাদা এবং আল্লাহর কাছে তাঁর অবস্থানের প্রতীক। নবীজির (সা.) প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তাঁর দাওয়াহকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের জন্য আল্লাহর অভিশাপ অবধারিত। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে সবসময় রক্ষা করেন এবং তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করেন।


5. বিনাশের চূড়ান্ততা:
সূরা আল-লাহাব আমাদের জানায়, যারা আল্লাহর সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতা করে, তারা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। পৃথিবীর জীবনে তারা যতই ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালী হোক না কেন, আখিরাতে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।





সূরা আল-লাহাব আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহর অভিশাপের ঘোষণা। তারা নবীজির (সা.) শত্রু ছিল এবং ইসলামের প্রচারকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আল্লাহ তাদের ধ্বংসের ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেন, যা পৃথিবীর জীবনে তাদের কোনো অর্জন দ্বারা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এটি সত্যের বিজয় এবং মিথ্যা প্রচারকারীদের চূড়ান্ত পরিণতির শিক্ষাদায়ক উদাহরণ।
90 Views
6 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: