সূরা আন নাস

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
সূরা আন-নাস:

সূরা আন-নাস হলো কুরআনের ১১৪ নম্বর সূরা এবং এটি মদিনায় অবতীর্ণ। এতে ৬টি আয়াত রয়েছে। "নাস" শব্দের অর্থ হলো "মানুষ"। এই সূরা মানুষের জন্য শত্রুতা এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। এটি কুরআনের শেষ সূরা, যা মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অবতরণের কারণ:

সূরা আন-নাস অবতীর্ণ হয়েছে যখন মুশরিকরা, যাদুকর এবং শত্রুরা নবীজির (সা.) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ইসলাম এবং মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। এই সূরা আল্লাহর কাছে শত্রুদের থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশনা দেয়।

ব্যাখ্যা:

1. "কুল আওযু বি রাব্বিন-নাস"

বলুন, আমি মানুষদের প্রভুর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হচ্ছে। "রাব্বিন-নাস" শব্দটি আল্লাহর নাম, যিনি মানুষের প্রতিপালক ও রক্ষাকারী।



2. "মালিকিন-নাস"

মানুষের রাজা।

এখানে আল্লাহর রাজত্বের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ একমাত্র সার্বভৌম শক্তি, যিনি সব মানুষের উপর শাসন করেন। তাঁর রাজত্বে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, কারণ আল্লাহ সর্বশক্তিমান।



3. "ইলাহিন-নাস"

মানুষের উপাস্য।

আল্লাহর একত্ববাদ এবং একমাত্র উপাস্য হিসেবে তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এখানে আল্লাহকে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ উপাস্য হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে, যিনি সকলের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।



4. "মিন শারর আল-ওাসওয়াসিল খন্নাস"

খতনায়ক ওসওয়াসের ক্ষতি থেকে।

এখানে "ওসওয়াস" বলতে শয়তানের কুমন্ত্রণা বোঝানো হয়েছে। শয়তান মানুষের মনে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দেয় এবং তাঁদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। "খন্নাস" শব্দের অর্থ হলো, যা পিছিয়ে থাকে, অর্থাৎ শয়তান মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে, কিন্তু আল্লাহর স্মরণে সরে যায়।



5. আল্লাজি ইউওয়াসউইসু ফি সুদূরিন-নাস

যারা মানুষের হৃদয়ে কুমন্ত্রণা দেয়।

এখানে বোঝানো হয়েছে যে, শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা করে এবং খারাপ চিন্তা, সন্দেহ ও অসুস্থতার বীজ বপন করে। আল্লাহ এই শয়তান থেকে রক্ষা চেয়ে প্রার্থনা করতে বলেছেন।



6. মিনাল-জিন্নাতি ওয়ান-নাস

জিন এবং মানুষের ক্ষতি থেকে।

এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, কেবল শয়তানই নয়, জিন ও অন্যান্য মানুষও ক্ষতির কারণ হতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে এই সকল ক্ষতিকর শক্তি থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।




সূরার তাৎপর্য:

1. আল্লাহর আশ্রয়ের গুরুত্ব:
সূরা আন-নাস আমাদের শেখায় যে, বিপদের সম্মুখীন হলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের জীবনে শয়তান ও অন্য অশুভ শক্তির কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন।


2. মানুষের দুর্বলতা:
এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষের মধ্যে শয়তানের কুমন্ত্রণা খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে। তাই আমাদেরকে সবসময় সজাগ ও আল্লাহর স্মরণে থাকতে হবে।


3. শয়তানের প্রভাব:
শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব ও তার কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। শয়তান মানুষের অন্তরে সন্দেহ, অশান্তি এবং খারাপ চিন্তার সৃষ্টি করে, যা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।


4. আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা:
সূরা আন-নাস আমাদেরকে আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে শরণাপন্ন হওয়ার শিক্ষা দেয়। শয়তান ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রার্থনা করা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


5. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব:
এই সূরা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর ক্ষমতার ওপর জোর দেয়। আল্লাহ মানুষের রক্ষাকর্তা ও সমর্থক, এবং তিনি আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।





সূরা আন-নাস মানুষের জন্য অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশনা দেয়। এটি শয়তান ও অন্যান্য মানুষের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্ব বোঝায়। আল্লাহ আমাদের রক্ষাকর্তা, এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করা আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।
96 Views
6 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: