দরিদ্র মায়ের দান এবং নবীজী (সাঃ) এর বার্তা

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় মদিনায় একবার দুর্ভিক্ষ চলছিল। অনেক মানুষই দারিদ্র্যের কারণে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট খাবার পেত না। তবুও নবীজির (সা.) সাহাবিরা সবসময় একে অপরকে সাহায্য করার এবং দানের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) সবসময় মানুষকে দানের গুরুত্বের ব্যাপারে বোঝাতেন এবং বলতেন যে আল্লাহর পথে দান করা মানুষের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি উপায়।

একদিন, এক দরিদ্র নারী তাঁর ছোট শিশুটিকে কোলে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তাঁর কাপড়-চোপড় খুবই পুরানো ছিল, কিন্তু তাঁর মুখে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ছাপ ফুটে উঠেছিল। নবীজি (সা.) তখন সাহাবিদের সঙ্গে মসজিদে বসে আলাপ করছিলেন। দরিদ্র মা তাঁর হাতের মুঠোয় একটি ছোট্ট খেজুর নিয়ে নবীজির (সা.) সামনে আসলেন।

মহানবী (সা.) মহিলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। তিনি জানতেন, এই মহিলার কাছে কিছুই নেই, তবুও তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর সামান্য যা কিছু আছে তা দান করতে এসেছেন। তিনি নবীজিকে (সা.) বললেন, "ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার কাছে দানের জন্য কিছুই নেই। কিন্তু এই একটি খেজুর আছে, যা আমি আল্লাহর জন্য দান করতে চাই।"

নবীজি (সা.) খুব আনন্দের সাথে খেজুরটি গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আল্লাহ এই খেজুরকে পাহাড়ের সমান বড় করে দিবেন, কারণ এই মহিলার নিয়ত ছিল খাঁটি এবং সে আল্লাহর পথে যা ছিল তা-ই দান করেছে।"

নবীজির এই কথা শুনে সাহাবিরা বিস্মিত হলেন। তাঁরা জানতেন, দান ছোট বা বড় কোনো বিষয় নয়, বরং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া এবং খাঁটি নিয়তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নবীজির এই শিক্ষণীয় বার্তা সাহাবিদের মধ্যে অনেক উৎসাহের সৃষ্টি করল।

এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, দানের পরিমাণ বড় না হলেও, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয় এবং নিয়ত বিশুদ্ধ হয়, তবে তা অনেক মূল্যবান হয়ে ওঠে। আল্লাহ ছোট দানকে এমনভাবে গ্রহণ করেন এবং বৃদ্ধি করেন, যেমন বীজ থেকে মহীরুহ বৃক্ষ তৈরি হয়। এটি আমাদের উৎসাহিত করে যে, আমরা যতটুকু পারি তা দান করতে, কারণ আল্লাহর কাছে খাঁটি নিয়ত এবং আন্তরিকতার চেয়ে বড় আর কিছুই নেই।

শিক্ষণীয় হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"আল্লাহ বলেন, সৎকাজে কেউ যতটুকু দান করবে, আল্লাহ তা পাহাড়ের সমান বড় করে দিবেন যতক্ষণ না তা একদিন পাহাড়ের মতো হয়ে যাবে।"
(সহিহ মুসলিম ২৩৩৮)