ভালোবাসা বারন

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
দিনগুলি দ্রুত গড়িয়ে যেতে লাগল, কিন্তু রাহুল ও মেঘনার মধ্যে অনুভূতি গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকল। গ্রামে প্রতিদিনের কাজের মধ্যে তারা একে অপরের কাছে আসতে চেষ্টা করতো। নিঃশব্দে হলেও, তাদের হৃদয়ের অবস্থা একে অপরকে জানানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

এক সন্ধ্যায়, যখন তারা গ্রামের পুকুরের পাশে বসেছিল, রাহুল মেঘনার দিকে এক দৃষ্টি দিল। সে জানতো, এ মুহূর্তে কিছু বলার নেই, কিন্তু মনে মনে সে ভাবছিল, কেন ভালোবাসা এত নিষিদ্ধ? তারা কি সত্যিই নিজেদের অনুভূতিগুলোকে চাপা দিতে পারবে?

মেঘনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “রাহুল, আমরা কি সত্যিই এই সমাজের নিয়ম মানতে পারব? আমার মনে হয়, ভালোবাসা দুর্বলতা নয়, বরং এটি শক্তির একটি নতুন দিক। আমরা তো একে অপরকে অনুভব করছি, অথচ প্রকাশ করতে পারছি না। তুমি কি মনে কর?”

রাহুলের চোখে জল চলে এলো। সে জানত, মেঘনা ঠিক বলছে। “হ্যাঁ, মেঘনা। কিন্তু আমাদের এ সম্পর্কের জন্য একটি বড় মুল্য দিতে হবে। আমরা কি তা নিতে প্রস্তুত?”

মেঘনা কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর সে বলল, “আমরা কি ভালোবাসা নিয়ে লড়াই করতে পারি? যদি আমাদের মধ্যে সত্যিই ভালোবাসা থাকে, তবে তা এ সমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে যাবার সাহস করবে।”

সেই রাতে, তারা সিদ্ধান্ত নিল। তারা তাদের ভালোবাসার কথা গোপনে জানাতে এবং গ্রামবাসীদের মাঝে সত্য প্রকাশ করতে প্রস্তুত হলো।

কিছুদিন পর, গ্রামে একটি উৎসব পালিত হতে যাচ্ছে। রাহুল ও মেঘনা ঠিক করল, সেখানে তারা তাদের ভালোবাসার কথা বলবে। উৎসবের দিন, গ্রামের মাঠে রং-বেরঙের বাতি জ্বলে উঠলো। গ্রামের সকল মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু মেঘনা ও রাহুলের মনে ছিল এক অদৃশ্য উদ্বেগ।

রাহুল মেঘনার হাত ধরল এবং ভীড়ের মাঝে উঠে দাঁড়াল। সে জানালো, “প্রিয় গ্রামবাসীরা, আমাদের সমাজে ভালোবাসা প্রকাশ নিষিদ্ধ, কিন্তু আমি বলি—ভালোবাসা দুর্বলতা নয়, এটি মানবতার শক্তি। আমরা ভালোবাসি, এবং আমাদের এই অনুভূতিকে লুকিয়ে রাখা অন্যায়।”

ভিড়ে শ্বাসরুদ্ধকর এক নীরবতা নেমে এল। মেঘনা যোগ করল, “ভালোবাসা আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি। যদি আমরা আমাদের অনুভূতিগুলোকে অস্বীকার করি, তবে আমরা নিজেদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছি।”

গ্রামের প্রধান হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি সামনে এগিয়ে এসে বললেন, “তোমরা জানো, ভালোবাসা প্রকাশের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু তোমাদের সাহস দেখে মনে হচ্ছে, তোমাদের ভালোবাসা সত্যিই গভীর।”

হঠাৎ করে, গ্রামে কিছু বৃদ্ধ মানুষ উঠে দাঁড়ালেন। তাদের একজন বললেন, “আমরা আমাদের জীবনে অনেক কঠিন নিয়ম পালন করেছি। কিন্তু জীবনের শেষ সময়টাতে আমরা বুঝতে পারি, ভালোবাসা ছাড়া সবকিছু অশুদ্ধ। তোমাদের সাহসিকতার জন্য আমরা গর্বিত।”

একটি নতুন আলো গ্রামে ফুটে উঠল। গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, ভালোবাসার প্রকাশ নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো মানে নেই।

রাহুল ও মেঘনা তাদের ভালোবাসা নিয়ে সমাজের নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। তারা বিশ্বাস করেছিল, ভালোবাসা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি মানবতার শক্তি।

সেই রাতে, শান্তিপুরে নতুন সূর্য উঠল, যেখানে ভালোবাসা নিষিদ্ধ নয়, বরং সবাই একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও মায়া নিয়ে এগিয়ে যাবে। ভালোবাসা, যা একদিন ছিল বারন, এখন গ্রামে গড়েছিল নতুন ইতিহাস—এক নতুন জীবন, নতুন সম্পর্ক এবং নতুন সংজ্ঞা।

185 Views
3 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: