বাবার স্বপ্নের উড়ান

পর্ব ১: ছোট্ট নীহারিকা

নীহারিকা একটি ছোট গ্রামে বাস করত। তার বাবা, রঞ্জিত, একজন কৃষক এবং তার মা, মৌমিতা, গৃহিণী। নীহারিকা ছোটবেলা থেকেই খুবই মেধাবী এবং প্রাণবন্ত ছিল। তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, যাতে সে গ্রামে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিতে পারে। তার বাবা-মা তাকে খুব ভালোবাসতেন এবং তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন।

পর্ব ২: দুঃখের খবর

একদিন, নীহারিকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা জানান, রঞ্জিতের একটি গুরুতর রোগ ধরা পড়েছে এবং তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে। মৌমিতা, নীহারিকা, এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চেষ্টা করলেও, তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না।

নীহারিকা তার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সে জানত যে, তার বাবার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে হলে তাকে পড়াশোনা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।

পর্ব ৩: স্বপ্নের বিসর্জন

নীহারিকা পড়াশোনার পেছনে তার স্বপ্ন এবং আশাকে বিসর্জন দিয়ে বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে শুরু করে। সে ছোটখাটো চাকরি নেয়, বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের জন্য আবেদন করে এবং নিজের সঞ্চয়ও খরচ করে। তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে কিছু টাকা জোগাড় হলেও, তা যথেষ্ট ছিল না।

রঞ্জিতের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। নীহারিকা দুঃখের সাথে দেখতে থাকে যে, তার বাবার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পুরোপুরি জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। সে তার বাবার পাশে বসে কাঁদত, কিন্তু কিছুই করতে পারছিল না।

পর্ব ৪: শেষ বিদায়

একদিন, রঞ্জিতের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। নীহারিকা তার বাবার পাশে বসে ছিল, যখন রঞ্জিত শেষবারের মতো তার চোখ খুলে বললেন, "নীহারিকা, তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো। তোমার স্বপ্ন পূরণ করো, আমার জন্য তুমি সাফল্য অর্জন করো।"

রঞ্জিতের মৃত্যুর পর, নীহারিকা গভীর শোকের মধ্যে পড়ল। তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল যে, নীহারিকা একদিন সফল হবে। কিন্তু এখন সে নিজেকে হারিয়ে গেছে এবং অনুভব করছে যে, তার বাবার ত্যাগ এবং কষ্টের মূল্য কোনভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

পর্ব ৫: নতুন শুরু

নীহারিকা কিছুদিন শোক কাটানোর পর, নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রতিজ্ঞা করে। সে কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করে, তার পড়াশোনা পুনরায় শুরু করে এবং তার বাবার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে।

বছর ঘুরে যায় এবং নীহারিকা ডাক্তার হয়ে উঠে। সে তার গ্রামে ফিরে আসে এবং তার বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে শুরু করে। তার বাবা-মায়ের স্মৃতি তাকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে, এবং সে জানে যে, তার বাবার ত্যাগ এবং ভালোবাসার মূল্য সে শুধুমাত্র তার সফলতায়ই প্রদান করতে পারে।

শেষ: একটি বাবার স্বপ্নের পূরণ

নীহারিকা তার বাবার স্মৃতি এবং স্বপ্নকে সম্মান জানিয়ে গ্রামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে। সেখানকার মানুষদের সেবা করে সে তার বাবার স্মৃতিকে চিরকাল অম্লান রাখার চেষ্টা করে।

নীহারিকা জানে যে, তার বাবার ত্যাগ, ভালোবাসা, এবং সংগ্রামের মূল্য কখনোই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তার বাবার স্মৃতি তার জীবনকে অনুপ্রাণিত করে এবং তাকে প্রতিদিন নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা দেয়।


---এই গল্পটি একটি বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং কন্যার ত্যাগের মাধ্যমে তার বাবার স্বপ্ন পূরণের যাত্রাকে তুলে ধরে। এটি পাঠকদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলবে এবং তাদেরকে পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যের গুরুত্ব সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে।