...

অশুভ আত্মার বাড়ি

...
আশরাফ আলী
...
25-Sep-2024, 12:07 PM
...

79

...

1

...

5.0(1)

ক্যাটাগরি : ভয়ানক গল্প

শীতের রাত, বাইরে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ। নির্জন গ্রামে একটি পুরনো বাড়ি, দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। বাড়িটি ছিল একসময় গ্রামের প্রধান জমিদারের। কিন্তু সেই জমিদারের পরিবারের সবাই অদ্ভুতভাবে এক রাতেই মারা যায়। তখন থেকেই কেউ আর সেই বাড়িতে থাকতে সাহস করে না।

একদিন শহর থেকে পাঁচজন বন্ধু ঘুরতে আসে গ্রামে। গ্রামের মানুষদের মুখে ভয়ের গল্প শুনে তারা বাড়িটা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে। গ্রামের বৃদ্ধ মুরুব্বি তাদের অনেক নিষেধ করেন, কিন্তু তারা কারও কথায় কর্ণপাত করে না। ঠিক করে, রাতে সেই বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাবে।

রাত গভীর হতে থাকে। বন্ধুরা পাঁচজন বাড়ির ভেতরে ঢোকে। ভেতরে সবকিছুই ভাঙাচোরা, ধুলোয় মোড়ানো। হঠাৎ করেই বাতি নিভে যায়। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। একজন লাইট জ্বালাতে চেষ্টা করে, কিন্তু তার লাইট কাজ করছে না। সবাই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে—হঠাৎ করেই তারা শুনতে পায় কারও নিঃশ্বাসের শব্দ।

বাতাস ভারী হয়ে উঠছে, মনে হচ্ছে যেন কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এক বন্ধু হঠাৎ বলল, “তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?” ঠিক তখনই জানালার পর্দা সশব্দে নড়ে উঠল। কেউ একজন যেন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে! তারা সবাই একসঙ্গে জানালার দিকে তাকাল, কিন্তু কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

তখনই একটা ভয়ংকর কণ্ঠ শোনা গেল, “এখানে কে?”। সেই কণ্ঠ যেন হাড়ের মধ্যে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিল। বন্ধুরা আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে দৌড়াতে লাগল। কিন্তু দরজা যেন কোথাও মিলছে না, তারা যেদিকেই যাচ্ছিল, চারপাশে শুধু দেয়াল। যেন তারা একটা ফাঁদে আটকে গেছে!

এমন সময় পেছনে তাকিয়ে একজন বন্ধুকে দেখা গেল—সে নিথর দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখ দুটি অস্বাভাবিক রকমের ফ্যাকাসে, ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত এক হাসি। হঠাৎ করেই সে বলল, "তোমরা এখানে কেন এসেছ?" বন্ধুরা বুঝে গেল, সে আর তাদের বন্ধু নেই।

### বন্ধুর রহস্যময় পরিবর্তন

বন্ধুটির ফ্যাকাসে চোখ আর অদ্ভুত হাসি দেখে বাকিরা আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে যায়। যেন তার শরীরে অন্য কেউ ভর করেছে। তাদের মধ্যে একজন সাহস করে জিজ্ঞাসা করল, “তুই ঠিক আছিস তো?” কিন্তু সেই বন্ধুটি উত্তর দিল না। বরং, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকল, আর তার মুখের হাসি আরও গা ছমছমে হয়ে উঠল।

### পালানোর চেষ্টা

বন্ধুরা বুঝল, কিছু একটা অশুভ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তারা দ্রুত পালানোর চেষ্টা করল। ঘরের ভিতরে তারা দিক হারিয়ে ফেলেছে, দরজা কোথায় ছিল, তা আর খুঁজে পাচ্ছে না। সব দিকেই যেন একধরনের অন্ধকারময় লুপের মধ্যে তারা আটকে গেছে। প্রতিটি দিকেই বন্ধ দরজা। হঠাৎ এক বন্ধু বলে উঠল, “আমরা আসলে এই বাড়ি থেকে কখনো বের হতে পারব না!”

### অশরীরী কণ্ঠস্বরের আবির্ভাব

হঠাৎ করেই আবার সেই অশরীরী কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “তোমাদের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এখান থেকে কেউ বের হতে পারবে না।” কণ্ঠটা এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, বন্ধুরা কাঁপতে শুরু করল। কিন্তু তবুও তারা বের হওয়ার কোনো উপায় খুঁজছিল। এক বন্ধু জানালার দিকে দৌড়ে গেল, কিন্তু জানালার বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না—শুধু কালো শূন্যতা।

### চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

একসময় একজন সাহসী বন্ধু বলল, “এখান থেকে বের হওয়ার একটাই উপায় আছে। আমাদের কিছু একটা খুঁজে বের করতে হবে, যেটা এই বাড়ির অভিশাপ মুক্ত করবে।” তারা সবাই মিলে ঘর খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছিল, বন্ধুটির আচরণ আরও অদ্ভুত হতে থাকল। সে যেন পুরোপুরি সেই ভূত বা অভিশপ্ত আত্মার অধীনে চলে গেছে।

### গা ছমছমে সমাপ্তি

ঘরের এক কোণে হঠাৎ তারা একটা পুরনো ডায়েরি খুঁজে পেল। ডায়েরির প্রথম পাতায় লেখা ছিল: “যদি এই বাড়ি থেকে বাঁচতে চাও, তবে জমিদারের শেষ ইচ্ছা পূরণ কর।” তারা ডায়েরির বাকিটা পড়ার আগেই, এক তীব্র বাতাস ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিল। চারপাশে নিঃশব্দে অন্ধকার নেমে এলো, আর তখনই তারা বুঝতে পারল, সময় ফুরিয়ে এসেছে।

ধীরে ধীরে, বাড়ির ভেতর অদ্ভুত এক আলো জ্বলতে শুরু করল, আর সেই বন্ধুটি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার চোখের গভীরতায় মৃত্যুর ছায়া নেমে এলো, আর তার কণ্ঠে শোনা গেল সেই চূড়ান্ত অশুভ কণ্ঠ: "এখন তোমাদের পালানোর কোনো উপায় নেই।"

এই ঘটনার পর থেকে কেউ তাদের আর কখনো খুঁজে পায়নি।


মন্তব্য

রেটিং দিন