পর্ব ১: শুরুর ভুল
ফাইসা ছিল একাধারে মেধাবী এবং কর্মঠ। পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধব, আর পরিবার—সবকিছুতেই সে ব্যালান্স রাখত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে সে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছিল, আর নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ তার জীবনে এমন কিছু ঘটল যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।
সেই দিনটি ছিল পরীক্ষার আগের রাত। ফাইসা তখন নিজের রুমে বসে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎই তার এক বন্ধু, সুমন, ফোন দিল। সুমন বলল, “ফাইসা, তোর কিছু নোট আমার দরকার। আমার নোটগুলো ঠিকমতো তৈরি হয়নি। একটু হেল্প কর।”
ফাইসা সাধারণত সাহায্য করতে পিছপা হতো না, কিন্তু সেদিন সে খুবই ব্যস্ত ছিল। সে সরাসরি বলল, “আমি এখন খুব ব্যস্ত, পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে। নোটগুলো পরে দেব।” সুমন প্রথমে মেনে নিল, কিন্তু পরে সে এসে ফাইসার সাথে জোর করে নোটগুলো নিল।
পরীক্ষার দিন সকালে, ফাইসা খুবই নার্ভাস। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে সে দেখল, তার নোটগুলো হুবহু সুমনের পরীক্ষার খাতায় নকল করা হয়েছে। এই বিষয়টা শিক্ষক ধরা পড়লেন এবং ফাইসার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইলেন। ফাইসার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে নিজে কিছু করেনি, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সে ফেঁসে গেল।
---
পর্ব ২: অপরাধীর মতন
ফাইসার জীবনে এই প্রথমবার এমন কিছু ঘটল। শিক্ষক সন্দেহ করতে লাগলেন যে, ফাইসা আর সুমন পরীক্ষায় একে অপরকে সাহায্য করেছে। ফাইসার কাছে এ ছিল বিশাল আঘাত। সে জানত, তার কোনো দোষ নেই, কিন্তু কীভাবে প্রমাণ করবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার কমিটি এই ঘটনার তদন্ত শুরু করল। তারা দুজনকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। ফাইসা পুরো ঘটনা খুলে বলল—কীভাবে সুমন নোট নিয়েছিল, কিন্তু সে জানত না যে সুমন ওগুলো হুবহু লিখবে। কিন্তু কমিটি খুব একটা বিশ্বাস করতে চাইছিল না।
ফাইসার মনে হচ্ছিল, সে এক অদ্ভুত ফাঁদে পড়ে গেছে। অপরাধী না হয়েও সে যেন অপরাধী হয়ে গেছে। বন্ধুর সাহায্য করতে গিয়ে আজ তার নিজের ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে।
---
পর্ব ৩: পরিবার এবং বন্ধুরা
ফাইসা বাড়িতে এসে তার পরিবারকে সব বলল। তার মা-বাবা প্রথমে হতবাক হয়ে গেলেন। তারা মেয়েকে জানতেন, সে কখনো নকল করতে পারে না। তারা ফাইসাকে সমবেদনা জানালেন, কিন্তু মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত শঙ্কা কাজ করছিল।
ফাইসার বন্ধুরাও এই ঘটনা শুনে অবাক হলো। তারা জানত, ফাইসা একজন ভালো ছাত্রী এবং কখনো এমন কিছু করার মতো মেয়ে নয়। সবাই মিলে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ফাইসার মন থেকে দুশ্চিন্তা কিছুতেই কাটছিল না। তার মনের মধ্যে বারবার একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল: “আমি কেন ফেঁসে গেলাম?”
---
পর্ব ৪: আত্মবিশ্বাসের লড়াই
ফাইসা ঠিক করল, সে হার মানবে না। তার সামনে দুটি পথ ছিল—অন্যায়ভাবে দোষী হিসেবে মেনে নেওয়া, বা নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করা। ফাইসা ঠিক করল, সে লড়বে। সে সবার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের সাথে দেখা করে ফাইসা বিস্তারিত বলল। তার সাথে সাক্ষাতের সময় সে প্রমাণ হিসেবে তার ফোনের ম্যাসেজ এবং অন্য বন্ধুদের সাক্ষী হিসেবে হাজির করল। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বুঝতে পারল, ফাইসা সত্য বলছে। সুমনই মূল অপরাধী, আর ফাইসা কেবল তার নির্দোষ বন্ধু।
কমিটি সিদ্ধান্ত নিল, ফাইসাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না, তবে সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
---
পর্ব ৫: মুক্তি ও শিক্ষা
ফাইসা অবশেষে নিজের নির্দোষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তার জীবন আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠল, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল। সে বুঝতে পারল, ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের জন্যও নিজেকে কখনো বিপদে ফেলতে নেই। সতর্কতা সব সময়ই প্রয়োজন।
ফাইসার গল্প শেষ হলো, কিন্তু তার জীবনের এই অধ্যায় থেকে সে শিখল যে, জীবনে অনেক সময় আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ি যেখানে দোষী না হয়েও ফেঁসে যাই। তখনই সত্যিকারের সাহস আর আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা হয়। ফাইসা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
---
শেষ:
গল্পটি শুধু একটি পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কাহিনী নয়, বরং একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস আর সততার গল্প, যে সব বাধা অতিক্রম করে নিজের অধিকার এবং নির্দোষতা প্রমাণ করতে পেরেছে।
আমি ফেঁসে গেছি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
194
Views
2
Likes
0
Comments
1.0
Rating