মাইশা তার মামীর রুমের দিকে যাচ্ছিল হঠাৎই আরিয়ানের সাথে প্রচন্ড জোরে একটা ধাক্কা খায়। মাইশা পড়ে যাচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ান ওর হাতটা ধরে সজোরে টান দেয়। মাইশা হুরমুর করে এসে আরিয়ানের ওপরে পড়ে যায় এবং তার মাথার সাথে মাইশার মাথায় জোরে একটা বাড়ি খায়।
আরিয়ান মাইশা কে খুব সুন্দর তার বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। মাইশা ওর মাথায় বেশ খানিকটা ব্যথা পেয়েছে। হাতের তালু দিয়ে মাইশা ওর মাথা ঢলছে।
মাইশা বিরক্তি নিয়ে চোখ পাকিয়ে আরিয়ান কে বলল,
" উফ্ চোখে দেখতে পাও না চোখ দুটো কি পকেটে নিয়ে হাটো। আমার মাথাটা বোধহয় ফেটেই গেল।
হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার জন্য মাইশার চুলগুলো সামনে এসে পড়েছে। আরিয়ান ওর চুলগুলো কানের কাছে গুজিয়ে দিয়ে বলল,
" এত্তো কিউট একটা বউ যদি সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে কি আর চোখে দেখতে পাওয়া যায়।
মাইশা একটা ভেংচি কেটে বলল
" ঢং।
মাইশা উঠে যেতে নেবে তখনই আরিয়ান তাকে আরো শক্ত করে জাপটে ধরলো।
" কি হলো কোথায় যাচ্ছ আমার সুন্দরী বউ।
" ছাড়ো তো আমার কাজ আছে।
"না, ছাড়বো না আগে একটু আদর করো।
"ইশ্ সখ কতো, পারবো না।
"ঠিক আছে তাহলে আমি ও ছাড়বো না।
মাইশা যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আরিয়ান ততই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। সেই মুহূর্তে আজমত সাহেব যাচ্ছিলেন সেই দিক দিয়ে মাইশা আর আরিয়ান কে এই অবস্থায় দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললেন,
"নাহ্ ওদের নিয়ে আর পারা যায় না। দুই টা কে দ্রুত এক করে দিতে হবে।
আজমত সাহেব বেশ কিছুটা জোরে গলা খাঁকানি দিয়ে বললেন,
"আরিয়ান একটু আমার রুমে এসো তো তোমার সাথে কথা আছে।
বাবার গলা পাওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো মাইশা আর আরিয়ান। মাইশার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। আরিয়ান কে একটা মুখ ঝামটা মেরে মাইশা চলে গেল। আরিয়ান মাথা নিচু করে আজমত সাহেব কে আসছি বলে অন্য দিকে চলে গেল।
মাইশা তার মামী রেহেনা বেগমের রুমে ঢুকতেই রেহানা বেগম মাইশাকে হাত দিয়ে ইশারা করে তার কাছে ডাকলো।মাইশা খাটের এক কোনায় গিয়ে বসালো।
মাইশার সামনে কিছু গয়নার বাক্স আর শাড়ি রেখে বলল,
------- মাইশা এই শাড়ি গুলোর মধ্যে থেকে দেখ তোর কোন শাড়ি গুলো পছন্দ।
মাইশা প্রত্যেকটা শাড়ি তে চোখ বুলিয়ে দেখলো শাড়ি গুলো খুব সুন্দর। তবে মনে হচ্ছে শাড়ি গুলো অনেক আগের।কারন শাড়ি গুলো মোটামুটি পুরাতন ডিজাইনের।তবে একদম সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা।মনে হয় তেমন কেউ পড়ে নি শাড়ি গুলো যেভাবে ভাঁজ করে রাখা ছিল ঠিক সেই ভাবেই ভাঁজ করে রাখা আছে এখনো।
মাইশা নীল রঙের একটা জামদানি শাড়ি হাতে নিলো। মাইশা শাড়ি টার ভাঁজ খুলে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখছে।শাড়ি টাতে খুব সুন্দর কারুকাজ করা।সব চেয়ে সুন্দর শাড়ির পায়ের টা।
মাইশা শাড়িটা ভালো করে দেখে রেহানা বেগম কে বলল,
------- মামি এই শাড়িটা কি তোমার খুব সুন্দর শাড়িটা দেখতে।
রেহানা বেগম শাড়ির উপর হাত বুলিয়ে বললেন,
"নারে এটা তোর মায়ের শাড়ি।
মায়ের সাথে কথাটা শুনে মাইশা পরম যত্নে শাড়ি টার উপর হাত বুলিয়ে আরো ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। শাড়িটা যেমন ভাঁজ করা ছিল আজ অবধি ঠিক সেইরকম ভাঁজ করা হয়তো তার মামী এই শাড়িটা আজ পর্যন্ত ভাঁজ খুলে নি।
রেহানা বেগম আরো কয়েকটা শাড়ি মাইশাকে দিয়ে বলল,
"এই সব গুলোই তোর মায়ের স্মৃতি।এতো দিন আমি আগলে রেখেছিলাম আজ থেকে এই গুলো আগলে রাখার দায়িত্ব তোর। কারণ কয়েকদিন পর তুই এই বাড়ির বউ হতে চলে ছিস। তাই এখন থেকে সবকিছু দেখে শুনে রাখার দায়িত্ব তোর মা।
মাইশা তার মামীর কাছে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে বলল,
"না মামী এই সংসার তোমার ছিল আর সারা জীবন তোমারই থাকবে। তুমি অবসর নিলে তোমার এই মেয়েকে সুন্দর করে কাজ গুলোকে শেখাবে বলতো।
মাইশার এমন আবেগ মাখানো কথাগুলো শুনে রেহানা বেগমের মনটা খুশিতে ভরে গেল। রেহেনা বেগম মাইশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
"তুই একদম তোর মায়ের মত হয়েছিস।দোয়া করি মা তুই চির সুখী হও।
মাইশা একটু হাসলো। কিন্তু যতবারই তার মামি তার মায়ের কথা বলে ততবারই তার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। খুব ইচ্ছে করে তার মাকে এক নজর মন ভরে দেখতে কিন্তু সেই দেখা থেকে সে সারা জীবনের জন্য বঞ্চিত হয়েছে। মায়ের গায়ের গন্ধ, মায়ের ভালোবাসা,আদর, স্নেহ কেমন হয় তা আজ পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারেনি মাইশা।তার মা কে কোনদিন চোখের দেখাটাও দেখতে পারে নি। শুধু তার মায়ের পুরানো একটা ছবি কে বুকে আগলে ধরে রেখেছে। কিন্তু সেটা ও এমন পুরাতন যে তার মায়ের মুখ টা স্পষ্ট বোঝা ও যায় না। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে মাইশা ছোট করে একটা নিশ্বাস ফেলল।
এদিকে আরিয়ান আজমত সাহেবের কাছে গিয়ে দেখল উনি কিছু একটা লিস্ট করছেন। আরিয়ান গিয়ে আজমত সাহেবের পাশে বসলো। আজমত সাহেব আরিয়ানের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার লিস্টের দিকে মনোযোগ দিলেন। ওনারা লিস্ট করা শেষে আরিয়ানের হাতে লিস্ট টা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
"এটা ভালো করে চেক করে নাও দেখো সব আত্মীয়-স্বজন আর তোমার বন্ধু-বান্ধবদের নাম ঠিকমতো লিস্ট করা হয়েছে কিনা। যদি বাদ পড়ে থাকে তুমি এর সাথে এড করে নিও।
আরিয়ান ভালো করে লিস্ট উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিল। আরিয়ানের চোখে কারো একজনের নাম মিসিং পরল। আরিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে বলে উঠলো,
"বাবা এখানে একজনের নাম মিসিং আছে। তুমি তো আমাদের ম্যানেজার রিয়াদের নাম এই লিস্ট টে ধরতেই ভুলে গেছো।
রিয়াদের কথা আরিয়ানের মুখে এতটা সাবলীল ভাবে শুনে আজমত সাহেব আরিয়ানের দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।
উনি মনে মনে ভাবছেন,
"যে ছেলেটা রিয়াদের কথা শুনতেই পারতো না রিয়াকে দেখতে পারত না সে এতটা নরমাল ভাবে রিয়াদের কথা বলছে। আবার রিয়াদকে ওর বিয়েতে দাওয়াতের ও কথা বলছে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি আশা করি আমার এই ছেলেটা ও সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবে মাইশার ছোঁয়াতে।
আজমত সাহেব আরিয়ানের দিকে কলম এগিয়ে দিয়ে বলল,
"নাও তুমি রিয়াদের নাম নিজে অ্যাড করে নাও।
আরিয়ান খুব সুন্দর করে লিস্টের একপাশে রিয়াদের নাম লিখে নিল।
এদিকে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রিয়াদ এখনো ঠাঁয় সেই এতিমখানার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। সীমা একটু পরপর জানলা খুলে উঁকি দিয়ে রিয়াদকে দেখছে। রিয়াদের মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। ফর্সা চেহারাটা কেমন কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এই রোদে সারাদিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে সীমার জন্য এক নাগারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সীমার কাছ থেকে কাঙ্খিত উত্তর টার আশায়। সীমার খুব ইচ্ছে করছে হ্যাঁ বোধহয় সম্বোধন দিয়ে তাকে আপন করে নিতে। কিন্তু তার অভিমানের প্রাসাদের প্রাচীর সে কিছুতেই ভেদ করতে পারছে না। সীমার হৃদয়ের ভেতরটা ডুকরে কেঁদে উঠছে। সীমার চোখ দুটো মুহূর্তের মধ্যে ভিজে এলো।
কেউ সীমার কাঁধে হাত রাখল। সীমা দ্রুত ও তার চোখ দুটো মুছে নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল রুবিনা বেগম দাঁড়িয়ে আছে। রুবিনা বেগম এখানকার সমস্ত ছেল মেয়েদের দেখাশোনা করে এমনকি সীমা কেও সে ছোটবেলা থেকে বড় করেছে।
সীমা রুবিনা বেগমের দিকে ঘুরে বলল,
"কিছু বলবে খালা।
রুবিনা বেগম তাকিয়ে আছে সীমার দিকে। সীমার চোখে মুখের এই আকুলতা,কষ্ট আর কেউ বুঝতে না পারলেও রুবিনা বেগম ঠিক বুঝতে পারছে। কারণ সীমাকে যে উনি ছোটবেলা থেকে মায়ের আদর দিয়ে বড় করেছেন সেই মেয়ের মনের কথা বুঝতে পারবে না এতটা অবুঝ রুবিনা বেগম নয়।
রুবিনা বেগম সীমাকে খুব শান্ত কণ্ঠে বললেন,
"কেন এমন করছিস মা। কেন ছেলেটাকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছিস আর নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস বল তো।
সীমা তার ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম শুকনো হাসি আনার চেষ্টা করে রুবিনা বেগমকে বলল,
"তুমি যে কি বলো না খালা আমি কোন কষ্ট পাচ্ছি না আর উনি যেটা করছে এটা উনার মনের আবেগ দেখবে সময়ের সাথে সাথে তার এই আবেগ একদম ঠিক হয়ে যাবে।আর উনি নিজের ইচ্ছাতে এসেছিল আবার নিজের ইচ্ছাতেই ফিরে যাবে।
রুবিনা বেগম একটু হেসে বললেন,
"মা রে আমার এই চুলগুলো না বাতাসে পাঁকে নি বয়সের সাথে সাথে পেঁকেছে। তোর এই বয়সটা না আমিও পার করে এসেছি। তোকে আমি একটা কথা বলি শোন। তুই ছেলেটার ডাকে সাড়া দে। হয়তোবা সত্যিই ছেলেটা তোকে মনে প্রানে চায়। আর মানুষ মাত্রই তো ভুল করে দেন ওকে একটা সুযোগ ওর ভুল টাকে শুধরানোর জন্য।
সীমা রুবিনা বেগমের কথার উত্তরে কিছু বলল না শুধু একটু মৃদু হাসলো। রুবিনা বেগম সেখান থেকে চলে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সে সীমা কে বলল,
"যদি পারিস একটু মনের গভীর থেকে অনুভব করে দেখিস ছেলেটা যদি তোকে সত্যি ভালো নাই বাসত তোকে যদি না চাইতো তোর জন্য এতটা পরিমাণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতো না। তুই ভেবে দেখ একটা মানুষের শুধু শুধু কি দরকার অন্য একজনের জন্য নিজেকে কষ্ট দেবার। মানুষ তার জন্য কষ্ট পেতে বেশি ভালোবাসে যে তাকে মনে প্রাণে চায়।
কথাগুলো বলে রুবিনা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন। সীমা তার জানলার একটা পার্ট খুলল। জানলা খোলার আওয়াজ পেয়ে রিয়াদ খুব আগ্রহী দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে তাকালো। কিন্তু তার সেই আগ্রহ নিয়ে তাকানো টা সম্পূর্ণ বৃথা হয়ে গেল সীমার চোখে তার চোখ পড়তেই সীমা আবার জানালা বন্ধ করে দিল।
রিয়াদ জানলার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে বিড়বিড় করে বলল,
"আমার ভালবাসায় তোমাকে সাড়া দিতেই হবে। কারন আমি জানি তুমি আমাকে এখনও ভালোবাসো আর আমি জানি আমার কষ্ট তুমি কখনো সহ্য করতে পারবেনা। আমার কাছে তুমি ফিরে আসবেই।আর একবার যদি তোমাকে আমি আমার জীবনে ফিরে পাই নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখব কথা দিলাম।
মাইশা তার মামীর রুম থেকে নিয়ে আসা গয়না এবং শাড়ি গুলো এক এক করে আলমারিতে তার তুলে রাখছিল। তখনই মাইশার রুমে আলিয়া প্রবেশ করল। আলিয়া নীল রঙের শাড়ি টা দেখেই হাতে তুলে নিল। শাড়িটা উল্টে পাল্টে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে আলিয়া।
আলিয়া মাইশা কে বলে উঠলো,
"বাহ্ মাইশা শাড়িটা খুব সুন্দর তো। কে দিয়েছে রে ভাইয়া।
মাইশা বুঝতে পারল আলিয়ার শাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে। মাইশা আলিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে আলিয়া কে বলল,
"তোর কি শাড়িটা পছন্দ হয়েছে।
আলিয়া প্রথমে বলতে না চাইলেও। পরে বলতে বাধ্য হলো। মাইশা শাড়িটা হাতে নিয়ে শড়ির ভাঁজ খুলে আলিয়ার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে তাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,
"ওয়াও তোকে তো শাড়ি টাতে অনেক সুন্দর মানিয়েছে রে।
মাইশা পুনরায় শাড়িটা ভাঁজ করে আলিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
"নে এটা এখন থেকে এটা তোর।
"ধুর কি বলছি, এটা তো তোর পছন্দের জিনিস আমি কেন নেব।
"পাগলি এটা তোর মানে তো আমার,আর আমার মানে তো তোর।
"কিন্তু
মাইশা আলিয়া কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
"না আর কোন কথা না। এটা আমি তোকে তোর বিয়ে উপলক্ষে ভালোবেসে দিলাম।
আলিয়া খুব অবাক হয়ে যাচ্ছে মাইশার এইরকম ব্যবহার দেখে। আলিয়া যতটুকু জানে মাইশা তার পছন্দের জিনিস কাউকে কখনো দেয় না। কারণ এই রকম অনেক বার হয়েছে ছোটবেলায় আলিয়া মাইশার অনেক জিনিস পছন্দ করে নিতে চাইতো কিন্তু মাইশা কখনো তাকে দিত না উল্টো তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখত। সেই মাইশা আজ এতটা চেঞ্জ। কিছুতেই যেন হিসাবটা মিলিয়ে উঠতে পারছে না আলিয়া।
আলিয়া মাইশার দিকে তাকিয়ে এক মনের কথাগুলো ভাবছিল। মাইশা আলিয়া কে অষ্ট করে নাড়া দিয়ে বলল,
"কিরে কি ভাবছিস এভাবে।
মাইশার ডাকে আলিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটলো। আলিয়া ডানে বামে বাসা বানাইয়া বোঝাল কিছু না। এই মুহূর্তে আলিয়ার ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফাত ফোন দিয়েছে। আলিয়া মাইশার রুম থেকে বেরিয়ে রাফাতে ফোন রিসিভ করতেই রিফাত বলে উঠলো,
"একটু বাহিরে জান।
"হঠাৎ বাহিরে কেন?
"তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আসো না প্লিজ।
আলিয়া কথা বলা শেষে বাহিরে চলে গেল। আলিয়া বাহিরে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু রাফাতকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেল না। হঠাৎ এ কেউ আলিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আলিয়া রীতিমত ভয় পেয়ে গেল। আরিয়া বুকে থুতু দিয়ে পিছনের কিছুটা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রাফাত। আলিয়ার এই ভীতু ভীত মুখ দেখে রাফাত হেসে দিল।
আলিয়া আরাফাতের হাতে জোরে একটা চিমটি কেটে বলল,
"এই রকম কেউ করে কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো।
রাফাত আলতো করে তার কানদুটো ধরে বলল,
"সরি ভুল হয়ে গেছে জান আমি বুঝতে পারি নি।
রাফাতের মুখ টাখুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কপালে আর মুখের আশেপাশে ঘাম লেগে আছে। আলিয়া বুঝতে পারল সারাদিন অফিস শেষ করে আলিয়াকে এক নজর দেখার জন্য রাফাত ছুটে এসেছে এখানে। আমিও তার ওড়না দিয়ে রাফাতের ঘাম মুছে দিয়ে বলল,
"কি দরকার ছিল সারাদিন অফিস করে এত কষ্ট করে আসার।
রাফাত আলিয়ার গলায় দুহাত বেঁধে বলল,
"তোমার ওই চাঁদ মুখটা দেখে আমার সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেছে মহারানী।
আলিয়া আরাফাতের নাকটা টেনে দিয়ে বলল,
"ওরে আমার পাগল টারে।
"হুম তোমার পাগল।
এইদিকে অনেকদিন খাওয়া-দাওয়া ঘুম একেবারেই সাব্বিরের জীবন থেকে যেন বিদায় নিয়ে চলে গেছে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না খেতে পারে না বারবার মাইশার কথা মনে পড়ে। তার এক একটা দিন যেন এক যুগের সমান লাগে। ছেলের এই রকম অবস্থা সাবিনা আর বেগম সহ্য করতে পারছেন না।
সাব্বিরের কাছে গিয়ে অনেকটা রাগান্বিত ভাবেই সাব্বির কে বলল,
"আর কতদিন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি বল তো। যে তোর জীবন থেকে চলে গেছে সে কখনো তোর জীবনে ফিরে আসবে না এটা একবার মেনে নেবার চেষ্টা কর বাবা।
সাব্বির নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তার মাকে খুব র্নিলিপ্ত গলায় বলল,
"আমার কিছু হয়নি মা আমি একদম ঠিক আছি আমাকে নিয়ে তুমি টেনশন করো না।
"হ্যাঁ দেখতেই তো পাচ্ছি কতটা ঠিক আছে। ওই মেয়েটা নিজের নতুন জীবন শুরু করার জন্য খুব আনন্দে আছে আর তুই এখানে কষ্ট পাচ্ছিস এর কোন মানে হয় না সাব্বির। তোকে তো আমি এই শিক্ষা দিয়ে বড় করিনি।
"প্লিজ মা এই সব বলো না ওর তো কোন দোষ নেই ও তো জানতো না আমি ওকে পছন্দ করি। আচ্ছা যাই হোক শোনো আমারে কেসটা সলভ হয়ে গেলেই আমি এ শহর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। কারণ এই শহর আমাকে শুধু কষ্ট দিয়েছে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিনিময় আমি কিছুই পাইনি।
সাব্বিরের মা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে হবে খুব দ্রুত তার ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে তাহলে হয়তো বা স্বাভাবিক জীবনে তার ছেলেটা আবার ফিরে আসতে পারবে।
রাত্রের বেলা খাওয়া-দাওয়া শেষে মাইশা শোবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখনই আরিয়ান মাইশার রুমে প্রবেশ করল। মাইশা
আরিয়ানকে দেখে বলল ,
"কি ব্যাপার তুমি এখানে কেন।
"তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না।
"কেন?
"বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে তাই সবসময় মিস করি।
মাইশা একটু হেসে বলল,
"আর তোমাকে কয়েকটা দিন তারপরেই....
বাকি কথাটা না বলে আমার সাথে থেমে গেল। আরিয়ান মাইশা কে বলল,
"কি হলো থেমে গেলে কেন তার পরে কি বলো।
"কিছু না।
"না বলো কি।
"জানিনা যাও।
" আমি বলবো।
"না নিজের ঘরে যাও।
"না আজকে আমি তোমার সাথে শোবো।
আরিয়ানের কথা শুনে মাইশা আরিয়ানের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মাইশা চোখ পাকিয়ে মাজায় হাত দিয়ে আরিয়ান কে বলল,
"কি বললে তুমি।
"বললাম আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে চলো ছাদে যাই।
"এখন।
"হুম
"না এখন আমি ঘুমাবো কোথাও যাবো না।
আরিয়ান হাই তুলতে তুলতে আরমোড়া দিয়ে মাইশার খাটের কাছে এসে বলল,
"ঠিক আছে তাহলে আমিও আর আজকে এখান থেকে যাব না এখানেই শুয়ে পড়লাম।
মাইশা সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ান কে বাঁধা দিয়ে বলল,
"এই না না ঠিক আছে চলো যাচ্ছি।
মাইশা যেতে নেবে তখনই......
চলবে ......