একটি সান্ধ্য গ্রামে একটি পুরনো বিরান বাড়ি ছিল যা গ্রামবাসীদের মনে ভয় সৃষ্টি করত। বাড়ির নাম ছিল “সুরের কুটির,” কারণ বলা হত সেখানে একটি পেত্নী বাস করে, যার গান শুনলে নাকি মৃত্যুর শিকার হওয়া নিশ্চিত। পেত্নীটির নাম ছিল লাবনী, এবং তার সুরের গান ছিল একটি রহস্যময় দুঃখের প্রতীক।
লাবনী ছিল একসময় একজন প্রতিভাবান গায়িকা। তার সুরের গান ছিল মনোমুগ্ধকর এবং শান্তির প্রতীক, কিন্তু একটি দূর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায় তার প্রেমিক মারা যায়। তার প্রেমিকের মৃত্যু পর লাবনী গভীর বিষণ্নতায় ডুবে যায় এবং তার গান ছিল ক্রমেই বিষাদময়। লাবনী মৃত্যুর পর তার আত্মা সুরের কুটিরে বন্দী হয়ে যায়, এবং তার গান গ্রামবাসীদের কাছে ভয়াবহ অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
একদিন, শহরের একটি প্রতিভাবান সুরকার, রাহুল, গ্রামে আসেন। রাহুল সুরের শিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি গানের মধ্যে থাকা রহস্য ও কাহিনী অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে লাবনীয়ের গান একটি ভুল বোঝাবুঝির ফল এবং তার আসল উদ্দেশ্য ছিল শান্তি ও সুখ প্রদান।
রাহুল সুরের কুটিরে প্রবেশ করলেন এবং পুরনো রেকর্ডিং, পাণ্ডুলিপি এবং সুরের চিহ্ন খুঁজতে লাগলেন। তিনি একটি পুরনো গান পেলেন যা লাবনীয়ের চিরকালীন প্রেমের কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছিল। গানটি ছিল দুঃখের সাথে প্রেমের একটি অনন্য মিশ্রণ, যা তাকে লাবনীয়ের দুঃখ ও অভিশাপের কারণ বোঝাতে সাহায্য করল।
রাহুল সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন, যেখানে লাবনীয়ের গান একটি নতুন সুরে সঞ্চালিত হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সুরের মাধ্যমে লাবনীয়ের আত্মা শান্তি লাভ করবে এবং তার অভিশাপ ভাঙবে।
পূর্ণিমার রাতে, রাহুল একটি বিশেষ কনসার্ট আয়োজন করলেন সুরের কুটিরে। গ্রামবাসীরা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে উপস্থিত হয়েছিল। রাহুল লাবনীয়ের পুরনো গানগুলো নতুন সুরে পরিবেশন করতে লাগলেন। তার সুর ছিল একেবারেই শান্তিদায়ক এবং সুন্দর, যা গ্রামবাসীদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলল।
অনুষ্ঠানের শেষে, সুরের কুটিরে একটি রহস্যময় আলো ছড়িয়ে পড়ল এবং লাবনীয়ের আত্মা এক কোমল এবং শান্ত মহিলারূপে প্রকাশিত হল। লাবনী রাহুলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন যে তার নতুন সুরের মাধ্যমে তার আত্মা মুক্তি পেয়েছে এবং তার দীর্ঘকালীন দুঃখের অবসান ঘটেছে।
রাহুলের কনসার্টের পর, সুরের কুটির গ্রামে একটি শুভ প্রেক্ষাপটে পরিণত হল। এটি একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করল, যেখানে গানের মাধ্যমে শান্তি ও সৃজনশীলতার প্রচার করা হলো।
লাবনী ও তার প্রেমের কাহিনী গ্রামে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রমাণিত হল, যেখানে সুর ও সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রেম এবং শান্তির অভিব্যক্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা উন্মোচিত হলো। রাহুল তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখলেন, যা সুরের শিল্প এবং প্রেমের শক্তি নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করল।
এভাবে, লাবনীয়ের সুরের গান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে রইল এবং রাহুলের কাজ প্রেম ও সঙ্গীতের মাধ্যমে আত্মার শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে রইল।
পেত্নী সুরের গান
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
150
Views
4
Likes
1
Comments
3.0
Rating