মাইশা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ দিয়ে যেন কোন কথা বের হচ্ছে না। আরিয়ান অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মাইশার মুখ থেকে কাঙ্খিত উত্তর টার আশায়। কিন্তু তার আশা টা নিরাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। মাইশা আরিয়ানের বাহু ডোর থেকে নিজেকে নিজেকে বারবার ছোটানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরিয়ান তার সবটুকু শক্তি দিয়ে মাইশা কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। প্রকৃতি ও যেন অশান্ত হয়ে উঠেছে,চারিদিকে বাতাস বইছে। পুরো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে হালকা বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে।
মাইশা আকাশের দিকে এক নজর তাকিয়ে আরিয়ান কে বলল,
------- নিচে চলো এখনই বৃষ্টি চলে আসবে।
আরিয়ান মাইশা কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
------- আসুক,আজ এই প্রকৃতির বৃষ্টিতে আর আমার প্রেম ময় বৃষ্টিতে আজ তোমাকে ভিজিয়ে একাকার করে দেবো।
আরিয়ানের প্রেমের বৃষ্টিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে চাইলে ও মাইশার পিছুটান ওকে আঁটকে দেয় বারবার।ক্ষনে ক্ষণে মনে করিয়ে দেয় কে সে।
মাইশা কিছুটা নির্লিপ্ত গলায় বলল,
------- কেন আমার সাথে নিজের জীবনটা জড়িয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছো। নিজের সর্বনাশ কেন ডেকে আনছ।
আরিয়ান মাইশার দু গালে আলতো করে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আমার মন জুড়ে
শুধু তোরই আভাস,
তোর চোখেই এঁকে নিলাম
আমার সর্বনাশ।
আরিয়ান মাইশা কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল।
------- তোমার প্রেমের পিপাসায় আমার এই মনটা আকুল হয়ে আছে। তোমার ভালবাসাই শুধু আমার প্রয়োজন। আমি আর কিছুই চাই না।
মাইশার চোখ দুটো ছলছল করছে।তবে কষ্টে নয় আনন্দে। আরিয়ানের টি-শার্টের এক পাশ টা মাইশার চোখের গরম পানিতে খানিকটা ভিজে গেছে। আরিয়ান মাইশার চোখের পানি টা মুছে দিয়ে হাঁটু গেড়ে মাইশার সামনে বসে পড়ল। অফিস থেকে আসার সময় মাইশার জন্য লাল গোলাপ নিয়ে এসেছিল।
পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করে মাইশার সামনে ধরে বলল,
" তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ,
তুমি হাজার তারার মাঝে ,একটি যে চাঁদ
তুমি যে আমারই।
Do you love me.
মাইশার আজকে আরিয়ান কে ফেরানোর মতো কোনো ক্ষমতা হলো না। হয়তো এটাই তার নিয়তি ছিল। সে ভেসে আসা মেঘের মতো ভেসে এসেছিল এখানে। আরিয়ানের হৃদয়ের মনিকোঠায় চিরস্থায়ী বাসিন্দা হওয়াটাই হয়তো বা তার নিয়তির লিখুন। মাইশা হাত বাড়িয়ে আরিয়ানের হাত থেকে গোলাপ টা নিয়ে আরিয়ানকে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানালো।
খুশিতে আরিয়ানের বক্ষ পিঞ্জিরায় আজ খুশির জোয়ার চলছে।চোখ মুখ তার আনন্দে জ্বল জ্বল করছে। এই প্রথম তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে তার মনের কথা ব্যক্ত করেছে। আজ এই ধরনীর বুকে সব থেকে খুশি মানুষ আরিয়ান। জীবনে আরিয়ানের আর কিছুই পাওয়ার নেই। মাইশা কে পেয়ে তোর পিপাসিত অন্তর খানা আজ পরম শান্তিতে জুড়িয়ে গেছে।
মাইশা কে আরিয়ান তার বুকের সাথে পরম যত্নে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশিয়ে নিল।আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ঐ আকাশের বিশাল বুকে যেন কাউকে খুঁজে চলেছে আরিয়ান চোখ জোড়া। মুহূর্তেই ওর চোখের দু'টো ঝাঁপসা হয়ে এলো।চোখের কোন জমা পানি টা অন্তরালে মুছে নিলো।আজ আরিয়ানের একজনের স্মৃতি বারবার মনের ভেতর উঁকি দিয়ে উঠছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন হুঁ হুঁ করছে তার। কলিজা টার ভিতরে কেমন যেন একটা ছ্যাত করে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে।
খুব প্রিয় কিছু হারানোর কষ্ট টা আরিয়ান কে যেন গ্রাস করে নিচ্ছে।আরিয়ান অনেক কষ্টে বুকের ভেতরে কষ্ট টা কে চাপা দিয়ে নিজ মনে আওড়ালো,
" আমি একবার আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। তোমার মাঝে আমি আবার তাকে ফিরে পেয়েছি।আর কোনো দিন ও আমি আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে যেতে দেবো না।এই পৃথিবীর বুকে সারা জীবন তুমিই ই আমার মাইশা হয়ে, আমার প্রেম হয়ে বেঁচে থাকবে।ওকে আমি সারাজীবন তোমার মাঝেই খুঁজে নেব। অনেক কষ্টে তোমাকে আমি আমার করে পেয়েছি আর হারাতে দেবো না প্রেম আমার।
*****************
আলিয়া রাফাতের কাঁধে মাথা একটা দিয়ে পার্কে বসে আছে। যেখানে রাফাত আলিয়া কে প্রথম তার মনের ভালোবাসা ব্যক্ত করে প্রপোজ করেছিল। আর সেই ভালোবাসা ডাকে সাড়া দিয়ে আলিয়া রাফাতের হয়ে গিয়েছিল। রাফাত আলিয়ার হাত দুটো কে তার হাতের মুষ্টিবদ্ধে আবদ্ধ করে বসে আছে।
আলিয়া একদম নিশ্চুপ কোন কথা বলছে না। ওর এই নিশ্চুপ ভঙ্গি রাফাতের মনটাকে কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত করছে। রাফাত তার এক হাত দিয়ে আলিয়াকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-------- কি হয়েছে তোমার। আজ তুমি এতটা নিশ্চুপ হয়ে আছো।
আলিয়া এখনও নিশ্চুপ। আজ যেন তার মুখের বুলি গুল কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আলিয়া নিরব হয়ে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে রাফাতের বুকের একপাশে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
রাফাত আলিয়ার মুখটাকে তার দিকে ঘুরিয়ে আলিয়াকে করল,
------- এই সুন্দর চাঁদ মুখে যদি অমাবস্যা গ্রহণ দেখা দেয় তাহলে কি এই প্রেমিকের ভালো লাগে বলতো। আমার এই চাঁদ মুখে কেন অমাবস্যার গ্রহণ লাগলো সেটা আমাকে কি বলবে মহারানী।
আলিয়া ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে। চোখে তার অনেকটা পানি জমা হয়েছে একটু পরেই যেন টুপ করে পানিটা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়বে। আলিয়া আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। রাফাতের কলার চেপে ধরে আলিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-------- একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। যদি বাঁচতে হয় তোমাকে নিয়ে বাঁচবো। আর যদি তোমাকে না পাই তাহলে সারা জীবনের জন্য এই পৃথিবী থেকে চলে যাব।
রাফাত আলিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলল,
------- আলিয়া ছাড়া এই রাফাত নিঃস্ব এটা মনে রাখবে। খুব দ্রুত তোমাকে আমি আমার ঘরের ঘরণী করে নিয়ে যাব। খুব দ্রুত বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসছে। বাবা ফিরে আসা মাত্রই আরিয়ানের সাথে আমাদের ব্যাপারে কথা বলাবো।
আলিয়া জোর করে ঠোঁটের কোণে একটু শুকনো হাসি আনার চেষ্টা করল। কিন্তু তার সেই হাসিটা যেন ঠোঁট চিরে বের হতে চাইছে না।
রাফাত নিজের ঠোঁটটা আলিয়ার ঠোঁটে আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
------- একটু হাসো না আমার মহারানী। আমার মহারানী এ গোমরা মুখটা যে আমাকে খুব ব্যথা দেয় এটা বোঝনা। আমাকে কষ্ট দিতে বুঝি তোমার ভালো লাগে।
আলিয়া এবার না হেসে পারল না।ও খানিকটা হেসে দিল। আলিয়ার হাসিতে আরাফাতের মনে জমে থাকা কালো মেঘ টা যেন মুহূর্তের মধ্যেই সরে গেল।
*********************
পর দিন সকালে,
মাইশা কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছিল। আচমকা কেউ মাইশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।মাইশা সম্পূর্ণ ভাবে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। পিছন তাকিয়ে দেখে আরিয়ান।
মাইশা আরিয়ানকে কনুই দিয়ে একটা গুতা মারলো। আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
------- তুমি এখানে কি করছো।
------ কেন আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি।
-------- দ্রুত এখান থেকে চলে যাও মামী চলে আসবে।
-------- আসলে আসবে।
মাইশা চোখ মুখ খিঁচে তাকিয়ে আছে আরিয়ানের দিকে। মাইশা একটা ডিম হাতে নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
------- তুমি যদি এখন এখান থেকে না যাও আমি কি করবো জানো।
------- কি করবে বউ।
------- এই ডিমটা করাইতে না ভেঙে ডাইরেক্ট তোমার মাথায় ভাঙবো।
------- মানে!
------- মানে দেখাচ্ছি দাঁড়াও।
এই বলে মাইশা আরিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে যেই না আরিয়ানের মাথায় ডিম ভাঙতে যাবে অমনি আরিয়ান ওখান থেকে দৌড়ে পালালো। মাইশা আরিয়ানের এরকম কান্ড দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর মনে মনে বলছে,
"পাগল একটা যাকে দেখে পুরো পরিবারের লোক ভয় পায় সে কিনা একটা সামান্য ডিমের ভয়ে দৌড়ালো। পাগল একটা। সত্যি এই পাগলটার ভালোবাসার জাদু আছে। যে কেউ ওর ভালবাসায় হার মানতে বাধ্য।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আয়েশা একটু মুচকি হাসলো। তারপর আবার কাজে মনোযোগ দিল।
কিছুক্ষণ পর, সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসেছে। রেহানা বেগম সবাইকে নাস্তা করে দিচ্ছেন। সবাই কমবেশি নাস্তা করছে কিন্তু আলিয়া নাস্তার প্লেটটা নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে কিছুই খাচ্ছে না।
রেহেনা বেগম আলিয়াকে হাত দিয়ে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললেন,
------- কিরে আলিয়া, তুই কিছু খাচ্ছিস না কেন এভাবে প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছিস কেন।
রেহানা বেগমের আলিয়া তার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
------- আসলে মা খেতে ইচ্ছা করছে না।
------- কেন শরীর খারাপ করলো নাকি তোর।
রেহানা বেগম আলিয়ার মাথায় আর গলায় হাত দিয়ে শরীরে টেম্পারেচার চেক করলেন। আলিয়া তার মায়ের হাতটা কি সরিয়ে দিয়ে বলল,
------- উফ্ মা কি করছো বলতো? বললাম তো আমার কিছু হয়নি।
আলিয়া মাইশার দিকে তাকালো। মাইশা চোখের ইশারায় আলিয়াকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করল। আলিয়ার অস্থিরতা কিছুটা কমলো মাইশার চোখের ইশারার ভঙ্গিতে।
মাইশা গলাটা ঝেড়ে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
-------- সবার সাথে আমার একটা কথা ছিল।
আরিয়ান জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে জুসের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে মাইশার দিকে তাকাল।আরিয়ান হাত ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে দেখলো অফিসের সময় হয়ে এসেছে।
মাইশাকে তাড়া দিয়ে বলল,
------- কি বলবে দ্রুত বলো।
মাইশা কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠোঁটটা একটু ভিজিয়ে নিয়ে মাইশা বললো,
------- আলিয়ার জন্য ছেলে দেখার কি দরকার। হয়তো আমাদের আশে-পাশেই এমন কোনো ভালো ছেলে আছে আমরা একটু চোখ ঘুরিয়ে দেখলেই খুঁজে পাবো।
মাইশার কথা শুনে আরিয়ান কিছুটা ভ্রু কুঁচকালো। জুসের শেষ অংশটা খেয়ে গ্লাস টা টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে মাইশা কে বলল,
------- আলিয়ার জন্য কোন ছেলে খোঁজার দরকার নেই ওর জন্য আমি ছেলে ঠিক করে রেখেছি আজকে সন্ধ্যায় ওরা ওকে দেখতে আসবে। আর আমার বিশ্বাস ওকে তোমাদের সবার পছন্দ হবে। এমনকি আলিয়ার ও।
আরিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই ওর দিকে তাকালো। আমজাদ সাহেব আরিয়ান কে বলে উঠলো,
------- কই আমাদের কাউকে তো কিছু বলিস নি।
------- এখন তো বললাম তোমরা সবাই সন্ধ্যার দিকে রেডি হয়ে থাকবে।
মাইশা আলিয়ার দিকে তাকালো। আলিয়ার চোখ মুখ একদম বিষন্নতায় ভরে গেছে। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি রেখা ফুটে উঠেছে। হয়তো সেই বিরক্তিটা এখনই প্রকাশ করে দেবে আলিয়া সবার সামনে। আলিয়া কিছু বলে ওঠার আগেই মাইশা আরিয়ান কে বলল,
------- এটা কিন্তু তুমি একদম ঠিক করেছো না আমি আর ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই ভাবে......
মাইশা পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আরিয়ান বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো,
------- আমি এই বিষয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল।
কথাটা বলে আরিয়ান বেরিয়ে গেল। আরিয়ান বেরিয়ে যেতেই আলিয়া সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা চেঁচিয়ে রেহানা বেগমকে বলল,
------- ভাইয়া যা বলবে সেটাই কি হবে নাকি। আমি তোমাকে ভালোভাবে জানিয়ে দিচ্ছি মা আমি এই বিয়ে করবো না।
কথাটা বলে আলিয়া রাগ দেখিয়ে ওখান থেকে হন হন করে চলে গেল। রেহানা বেগম কয়েকবার আলিয়া কে পেছন থেকে ডাক দিল কিন্তু আলিয়া ওনার ডাকে সাড়া দিল না।
রেহানা বেগম রাগ দেখিয়ে তার স্বামী আমজাদ সাহেব কে বললেন,
------- দেখেছ তোমার মেয়ের কান্ড।কি রকম রাগ দেখিয়ে চলে গেল।
আমজাদ সাহেব কিছুটা রেগেই রেহানা বেগমের কথার প্রতিবাদ করে বললেন,
------- সব দোষ তোমার ছেলের ও এখন বড় হয়েছে ওর তো মতামত নেবার দরকার ছিলো।
রেহানা বেগম চোখ পাকিয়ে বললেন,
------- তোমার আশকারা পেয়ে ও এমন মাথায় উঠেছে।
রেহানা বেগম আর আমজাদ সাহেবের মধ্যে তর্কাতর্কি চলতে লাগলো।মাইশা ওখানেই ঠাঁয় চুপচাপ বসে আছে। মাইশা বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে। কিন্তু মাইশা এটা বুঝতে পারছে না আরিয়ান কি করে এতটা শিওর হচ্ছে যে তার পছন্দ করা ছেলেকে আলিয়ার পছন্দ হবে।
********************
আরিয়ান অফিসে ঢুকতে দেখল রিয়াদ তার কেবিনে বসে কাজ করছে। আরিয়ান চোখ বড় বড় করে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরিয়ান ভাবছে,
"এখানে কি করে এলো। এত দ্রুত সুস্থ হয়ে গেল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তো ওর তো এতটা স্বাভাবিক আর সুস্থ হয়ে এখানে কাজ করা অসম্ভব। তাহলে....
কথাগুলা ভাবতে ভাবতে আরিয়ান নিজের কেবিনে চলে গেল। কেবিনে ঢুকেই পিয়ন কে পাঠালো রিয়াকে ডেকে পাঠানোর জন্য।
কিছুক্ষণ পর রিয়াদ আরিয়ানের কেবিন আসলো। রিয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াদের সেই বাঁকা হাসিটা আরিয়ানের চোখ এড়ালো। আরিয়ান তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে।
রিয়াদ কিছুটা খোঁচা মারার ভঙ্গিতে বলল,
------- স্যার আপনার শরীর স্বাস্থ্য টা ভালো আছে তো। একটা কথা আছে জানেন তো স্যার রাখি আল্লাহ মারে কে।
আরিয়ান বুঝতে পারল রিয়াদ তাকে খোঁচা মেরে কথাটা বলেছে।আরিয়ান রিয়াদের কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল,
------- আপনি এই দুইদিন অফিসে আসেন নি কেন। আপনাকে সেই জন্য শোকজ করা হয়েছে।
এই বলে আরিয়ান রিয়াদের সামনে একটা শোকজ রাখল। তারপর আবার বলল,
------- নিন এর সঠিক উপযুক্ত উত্তর নিয়ে আমার কেবিনে আসবেন। তা না হলে আপনাকে কোম্পানি থেকে ফায়ার করা হবে।
আরিয়ানের কথা শুনে রিয়াদ হো হো করে হেসে দিলো। আরিয়ান রিয়াদকে এভাবে হাসতে দেখে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান রিয়াদের এই হাসির মানেটা বুঝে উঠতে পারছে না।
রিয়াদ তার হাসিটা থামিয়ে আরিয়ানের দিকে কিছুটা চোখ গরম করে বলল,
------- মিস্টার আরিয়ান স্যার আপনি কি মনে করেন নিজেকে। যাকে ইচ্ছে হবে খুন করবে যাকে ইচ্ছা হবে গুম করবেন আর কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না।
রিয়াদের মুখে কথাটা শুনে আরিয়ান কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। হালকা কিছু ঘাম আরিয়ানের কপালে জমা হলো। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে আরিয়ান বলল,
-------- কি বলতে চাইছো তুমি।
-------- তেমন কিছু না আপনি যে আমাকে গুন্ডা ভাড়া করে গুম করে ফেলতে চেয়েছিলেন সেটা কিন্তু আমি ভালো মতোই জানি।
আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে তার দুই হাত টেবিলের উপরে জোরে থাপ্পড় মেরে বলল,
-------just shut up rascal, একদম উল্টাপাল্টা কোন কথা বলবে না।
-------- উত্তেজিত হয়ে কোন লাভ নেই স্যার। পুলিশ ওদের খোঁজ চালাচ্ছে খুব দ্রুত ধরা পড়ে যাবে। তখন কি হবে আপনার স্যার।
আরিয়ান একটু হাসলো। পকেটে হাত দিয়ে শিশ বাজাতে বাজাতে রিয়াদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
-------- তুমি খুব বোকা জানো তো। এই আরিয়ান চৌধুরীকে ধরাটা এত সহজ নয়। যাই হোক তোমাকে একটা কথা জানিয়ে রাখি। বাংলায় একটা কথা আছে জানো তো প্রেমে আর যুদ্ধে অন্যায় বলে কিছু নেই। তুমি আমার ভালবাসার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলে তাই আমি তোমাকে একটু বুঝিয়ে দিলাম আগুনে হাত বাড়ালে ঠিক কি পরিণতি হয়।
-------- দেখুন স্যার কাউকে ভালোবাসি বললেই সে কিন্তু কারো হয়ে যায় না। সেই জন্য দুটো মনের সম্মতি থাকা লাগে।
আরিয়ান তার এক হাত রিয়াদের কাঁধে দিয়ে রিয়াদের খুব কাছে এসে বলল,
------- তোমাকে না একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি কিছুদিন পর আমার আর মাইশার বিয়ে তুমি হবে আমাদের স্পেশাল গেস্ট রেডি থেকো।
কথাটা শোনামাত্র রিয়াদের পুরো মুখটা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। তারপরে পৃথিবী যেন উলট পালট হয়ে যাচ্ছে। তার পায়ের নিচে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। সেজন্য এক মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে তার মুখ দিয়ে যেন আর কোন কথা বের হচ্ছে না।
আরিয়ান রিয়াদ কি কিছুটা শান্ত বলায় বলল,
------- দেখো রিয়াদ তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা কখনো ছিল না আজও নেই। মাইশা সারাজীবন আমার ছিল আছে সব সময় থাকবে। মাঝখান থেকে তুমি কাবাবের হাড্ডি হয়ে আমাদের মাঝখানে ঢুকে পড়তে চেয়েছিলে। কিন্তু তুমি একটা কথা ভুলে গিয়েছিলে কাবাব এর মধ্যে হাড্ডি মানায় না। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা। এমন কেউ আছে যে তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। একটু নজর ঘুড়িয়ে দেখলেই তুমি সেটা বুঝতে পারবে। তাই তোমার উচিত হবে যে তোমাকে ভালবাসে তার ভালোবাসার সাড়া দিয়ে তার দিকে ফিরে যাও।
আরিয়ানের শেষ কথাগুলো রিয়াদের কাছে বোধগম্য হলো না। রিয়াদ আশ্চর্যজনক চাহনিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান রিয়াদের এই আশ্চর্যের ঘোর কাটানোর জন্য রিয়াদের হাতে একটা পেনড্রাইভ দিয়ে বলল,
-------- এই পেনড্রাইভ টা ওপেন করে দেখলে তুমি অনেক কিছু বুঝতে পারবে আর তোমার আশ্চর্যের ঘোর টাও কেটে যাবে।
রিয়াদ বাধ্য ছেলের মত পেন ড্রাইভটা হাতে নিয়ে আরিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আরিয়ান রিয়াদের যাবার পারে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
------- আমরা অনেক সময় অনেক কিছু দেখেও অন্ধ হয়ে থাকি। বুঝেও বোঝার চেষ্টা করি না। তার মধ্যে তুমিও একজন রিয়াদ।
********************
সকাল ১১ টার দিকে,
সাব্বিরের অফিসে ৭ সদস্যের একটা টিম নিয়ে হাজির হলো এসআই রাকিব। সাব্বির কিছু ফাইল সবার মাঝে বন্টন করে দিয়ে বলল,
------- এগুলো সব চেক করে দুই দিনের মধ্যে আমি এর ফলাফল জানতে চাই।
সবাই ফাইলগুলো নিয়ে সাব্বিরের রুম থেকে চলে গেল। সাব্বির মনে মনে বলল,
"আমি এই মিশনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। তবে আমি যা ভাবছি তা যেন না হয়। যদি তা হয় তাহলে যে কি হবে তা আমি নিজেও জানিনা।
কথাগুলো ভেবে বড় একটা নিশ্বাস ফেললো সাব্বির। আর আতঙ্কে তার পুরা মুখটা ছেয়ে গেল। সাব্বির জানে যদি তার ধারণা ঠিক হয়ে থাকে তাহলে এর পরিণতি খুব ভয়াবহ হতে চলেছে। আর এই ভয়াবহতা থেকে কাকে রক্ষা করার ক্ষমতা সাব্বিরের নেই।
**********************
এদিকে,আলিয়া বেশ কয়েকবার রাফাতের নাম্বারে ফোন দিল। কিন্তু রাফাত একবারও ফোন ধরল না। আলিয়া চোখের সামনে যেন সবকিছু অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিল। আলিয়া রেগে ফোনটা বিছানার ওপর ছুড়ে মারল। নিজে নিজে বললো,
------- যদি আমি তোমাকে না পাই আমি আর কারো হবো না। দরকার হলে আমি নিজেকে শেষ করে দেব।
কথাগুলো বলে আলিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ল। সেই মুহূর্তে মাইশার আগমন ঘটলো। মাইশা এসে আলিয়ার পাশে বসলো। আলিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে মাইশার দিকে তাকালো। আলিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
------- সব ঠিক হয়ে যাবে কাঁদিস না।
-------- কি ঠিক হবে সন্ধ্যার সময় ভাইয়া বলেছে আমাকে নাকি দেখতে আসবে আমাকে পছন্দ হয়ে গেলেই তো ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলবে। তখন আর কি ঠিক হবে বলতো তুই।
-------- দেখ আলিয়া পছন্দ হয়ে গেলেই বিয়ে হয়ে যায় না। আমার উপর একটু ভরসা রাখ আমি তো আছি।
আলিয়া মাইশা কে জড়িয়ে ধরল। আলিয়া অঝোরে কাছে মাইশা কে জড়িয়ে ধরে। মাইশা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল,
"যেভাবেই হোক তাকে আরিয়ানকে বোঝাতেই হবে। আর যদি আরিয়ান না বোঝে তাহলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সে সাক্ষী হয়ে ওদের বিয়ে দেবে তারপরে যা হবার দেখা যাবে।
বিকালের দিকে আরিয়ান বাসায় এসে মাইশার চলে গেল।রুমে গিয়ে দেখল মাইশা বারান্দার গ্রিল ধরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান পিছন থেকে মাইশা কে ডাক দিলো।মাইশা আরিয়ানের দিকে ঘুরে তাকালো। আরিয়ান মাইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মুখ টা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে।
আরিয়ান মাইশা কে জিজ্ঞেস করল,
------ তোমাকে এমন দেখাচ্ছ কেন আমার মাছরাঙ্গা পাখি।
মাইশা আরিয়ানের কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
------- তুমি এখন এখানে।
আরিয়ান মাইশার হাতে দুই টা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
------- সন্ধ্যার সময় এটা পড়বে তুমি। আর একটা আলিয়ার জন্য ওকে দিয়ে এসো।
মাইশা শপিং ব্যাগ টা একটু ফাঁক করে দেখলো একটা মিষ্টি কালারের জরি সুতার কাজ করা হাফ সিল্কের একটা শাড়ি। আর একটা শপিং ব্যাগের মধ্যে গোল্ডেন কালার এর ভেতর সাদা রংয়ের কনস্টাট করা জরি সুতা প্লাস হোয়াইট স্টোন বসানো একটা গাউন।
মাইশা আরিয়ানের হাতে শপিং ব্যাগ দুইটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,
------- আমার এটা লাগবে না। তোমার শাড়ি তুমিই রাখো। আর তোমার বোনকে তোমার কিছু দেওয়ার হলে নিজে গিয়ে দিয়ে আসো। বোনের মনের কথা বোঝ না আবার এসেছে তাকে শপিং করে দিতে।
আরিয়ান মাইশার হাতে শপিং ব্যাগ গুলো পুনরায় ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-------- চুপ কোন কথা বলবে না আমি যেটা বলেছি সেটাই করো। আর আমি কি বুঝি আর না বুঝি সেটা সময় আসলেই বুঝতে পারবে মাই সুইট হার্ট।
কথাটা বলে আরিয়ান মাইশার গালে আচমকে একটা চুমু দিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। মাইশা গালে হাত দিয়ে আরিয়ানের যাওয়ার পানি তাকিয়ে রইল।
সন্ধ্যার দিকে,
আলিয়া কিছুতেই রেডি হয়ে ছেলে পক্ষের সামনে যেতে চাইছিল না। আলিয়া কে অনেক বুঝিয়ে সাজিয়ে মাইশা রেডি করলো। কিছুক্ষণ পরে মাইশা আলিয়া ওদের সামনে নিয়ে গেলো।
ওখানে যাওয়া মাত্রই......
চলবে.......