অন্ধকারে প্রেমের শিখা পেত্নী

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
একটি প্রাচীন গ্রামে, যেখানে রাতের অন্ধকার এবং ঘন কুয়াশার মধ্যে একটি পুরনো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছিল, গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করত যে সেখানে একটি পেত্নী বাস করে। পেত্নীটির নাম ছিল রূপা, এবং তার কাহিনী ছিল হারানো প্রেমের এবং চিরকালীন অপেক্ষার।

রূপা ছিল একসময় একটি সুন্দরী যুবতী, যার প্রেমিক ছিল একজন সাহসী যোদ্ধা, অরণ্য। তাদের প্রেম ছিল গভীর এবং অটুট, কিন্তু একটি দুষ্ট শত্রুর আক্রমণে অরণ্য মৃত্যুবরণ করে। রূপা তার প্রেমিককে হারিয়ে গভীর দুঃখে ডুবে যায় এবং তার আত্মা দুর্গে বন্দী হয়ে যায়। তার আত্মা প্রেমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, যা তার অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

একদিন, শহরের একজন জনপ্রিয় লেখক, নীল, গ্রামে এসে পৌঁছলেন। নীলের কাহিনী ছিল প্রেম এবং রহস্যের উপর, এবং তিনি একটি নতুন উপন্যাস লেখার জন্য প্রেরণা খুঁজছিলেন। গ্রামবাসীরা তাকে রূপা এবং তার প্রেমের কাহিনীর সম্পর্কে বলল, যা তার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিল।

নীল দুর্গের ধ্বংসাবশেষে প্রবেশ করল এবং পুরনো চিঠি, স্মৃতি এবং ঐতিহাসিক নথি খুঁজতে লাগল। সে একটি পুরনো পাণ্ডুলিপি পেল, যা রূপা ও অরণ্যের প্রেমের গল্প এবং তাদের বিচ্ছেদের কারণ বর্ণনা করছিল। পাণ্ডুলিপিতে বলা হয়েছিল যে রূপার অভিশাপ ভাঙার জন্য একটি বিশেষ পূর্ণিমার রাতে প্রেমের শিখা জ্বালাতে হবে।

নীল সিদ্ধান্ত নিল যে সে পূর্ণিমার রাতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করবে, যেখানে রূপার প্রেমের শিখা জ্বালানো হবে। তিনি গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে একটি বিশেষ আয়োজন প্রস্তুত করলেন। পূর্ণিমার রাতে, নীল দুর্গের সামনে একটি উজ্জ্বল মঞ্চ তৈরি করলেন এবং সেখানে প্রেমের প্রতীক হিসেবে একটি আলোর শিখা স্থাপন করলেন।

অনুষ্ঠানের সময়, পূর্ণিমার চাঁদের আলো দুর্গের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল এবং একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হল। নীল প্রেমের শিখা জ্বালাতে লাগলেন এবং বিশেষ মন্ত্র পাঠ শুরু করলেন। ধীরে ধীরে, দুর্গের ভিতর একটি কোমল আলো ছড়িয়ে পড়ল এবং রূপার আত্মা দৃশ্যমান হয়ে উঠল।

রূপা একটি শান্ত ও সুন্দর মহিলারূপে প্রকাশিত হলো, যার মুখে সুখ ও শান্তির প্রতিচ্ছবি ছিল। রূপা নীলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল যে তার প্রেমিক অরণ্যের আত্মাও শান্তি পেয়েছে এবং তার দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুক্তি লাভ করেছে।

নীল এবং গ্রামবাসীরা আনন্দিত হলেন এবং দুর্গের অভ্যন্তর শান্তির এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল। দুর্গটি এখন একটি ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করল, যেখানে প্রেমের শিখার আলো সারা গ্রামে প্রেম ও শান্তির বার্তা বহন করে।

নীল তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন, যা রূপা এবং অরণ্যের প্রেমের কাহিনী এবং তাদের মুক্তির গল্প তুলে ধরবে। তার লেখা বই গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয়তা লাভ করল এবং এটি প্রেমের অমরত্ব এবং আত্মার শান্তি নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করল।

এভাবে, রূপা এবং অরণ্যের প্রেমের কাহিনী চিরকাল স্মরণীয় হয়ে রইল এবং নীলের কাজ প্রেমের আলো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হল।
132 Views
2 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: