এক রিক্সাওয়ালার জীবন

স্নেহা
স্নেহা
লেখিকা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রিক্সা চালাই। বিয়ে করেছিলাম আজ থেকে এক বছর আগে।আমার মতই এক গরীবের মেয়েকে বউ করে এনেছিলাম আমি।

অভাবের সংসারটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছিলো ও।বুঝতে পারি বউ আমায় খুব ভালবাসে।

আমি যখন রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরি,ও আমার জন্য গোছলের পানি তুলে দেয়।মাঝেমাঝে আমিও অবশ্য তুলে দেই।

বাড়িতে কারেন্ট নাই,খেতে বসলে ও পাখা দিয়ে বাতাস করে।

গরমের রাতে দুজনে অদল বদল করে পাখা দিয়ে বাতাস করি,ভবিষ্যৎটাকে সাজানোর গল্প করি দুজনে।

গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যেতাম বুঝতে পারতামনা।

রিক্সায় বড়বড় সাহেবরা তাদের বউকে নিয়ে উঠত।

দুজনে মিলে অনেক গল্প করত। সাহেবদের কাছে শুনতাম তারা যেদিন বিয়ে করেছে সেদিন আসলে তারা নাকি অনুষ্ঠান, পার্টি না কি জানি করে,

এই সব আমার জানা নেই। যখন শুনতাম আমারো ইচ্ছে করত বউকে একটা শাড়ী কিনে দিতে।বউকে যে খুব ভালবাসি আমি।

কিন্তু পারিনা।অভাবের সংসার, দিন আনি দিন খাই।তাই একটা মাটির ব্যাংক কিনেছিলাম।

ওটাতে রোজ দুচার টাকা করে ফেলতাম।

দেখতে দেখতে অভাবের সংসারে আজ একটা বছর হয়েগেল।

আজ সকালে রিক্সা নিয়ে বের হবার আগে বউ যখন রান্না ঘরে গেল তখন বউকে না জানিয়ে লুকিয়ে রাখা মাটির ব্যাংকটা বের করে ভেঙ্গে দেখলাম সেখানে প্রায় ৪৮০ টাকা হয়েছে।

বাসা থেকে বের হবার আগে বউকে বলেছিলাম, আজ বাড়িতে ফিরতে দেরী হবে। বউ মাথা নাড়ে,বলে ভালো কইরা থাকবেন।

চলেগেলাম রিকশা নিয়ে। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় মার্কেটে গিয়েছিলাম বউয়ের জন্যে একটা শাড়ী কেনার জন্য। আজরাতে বউকে দিব।

ঘুরে ঘুরে অনেক শাড়ীই দেখছিলাম,পছন্দ হয় কিন্তু দামের জন্য বলতে পারিনা।

অবশেষে দোকানীকে বললাম,

ভাই এই কাপড়টার দাম কত

১৫০০ টাকা।

আমার কাছে তো আছে মাত্র ৪৮০ টাকা।তাই ফিরে আসলাম।

মার্কেট থেকে বের হয়ে বাহিরে বসে থাকা দোকানদারদের থেকে ৪৮০ টাকায় একটা শাড়ী কিনে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।

মাঝেমধ্যে ভাবি,এই দোকান গুলো যদি না থাকত,তাহলে কত কষ্ট হত আমাদের মত গরিবদের।

ফুরফুরে মেজাজে বাড়িতে ঢুকলাম। অনেকদিন পর বউকে কিছু একটা দিতে পারব,ভাবতেই বুকটা খুশিতে ভরে উঠছে বারবার।

রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরার ভান করে শুয়ে আছি।

বারটা বাজার অপেক্ষায় চোখ বন্ধ করে আছি। কল্পনার জগতে ভাসছিলাম,বউকে দেবার পর বউ কি বলবে
কতটা খুশি হবে

__ রাত বারটা বেজে গেল।বউকে ডেকে তুললাম। ডেকে তুলে বউয়ের হাতে শাড়ীটা তুলে দিয়ে বললাম, বউ আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।

আজকের তারিখে তুমি আমার এই কুড়ে ঘরটাতে এসেছিলে।

আমার পক্ষথেকে তোমার জন্য এই ছোট্ট উপহার।

বউ শাড়িটা বুকে জড়ায়,চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে ওর।

তারপর উঠে গিয়ে ট্রাঙ্কটা খুলে শাড়িটা রেখে দেয়।

তারপর কি যেন বের করে। আমি উকি মেরে দেখার চেষ্টা করেও দেখতে পাইনা।

বউ ট্রাঙ্কটা বন্ধ করে আমার হাতে একটা লুঙ্গি দিল।কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম আমি।

কারন টাকা পেল কোথায়
জিজ্ঞাসা করলাম,

টাকা পেলে কোথায় তুমি

অনেকদিন আগে থেকে প্রত্যেকদিন একমুঠ করে চাল খাবারের চাল থেকে আলাদা করে জমিয়ে রাখতাম।জমিয়ে জমিয়ে কিছুদিন আগে পাশের বাসার ভাবির কাছে বিক্রি করে দিছি।

সেই টাকা দিয়ে লুঙ্গি কিনছি।ভাবছিলাম আজকে দিব, আপনি তো এসেই ঘুমিয়ে পরলেন।তাই ঠিক করছিলাম কাল সকালে দিবো।

আমি কিছু বলতে পারলামনা।শুধু লুঙ্গিটা উল্টিয়েপাল্টিয়ে দেখছিলাম।

তারপর বললাম,শুনছি বড় সাহেবরা নাকি বিয়ের দিন তারিখে কেক কাটে।

বউ বলে,আমাদের কি অত টাকা আছে

বাসায় মুড়ি আছে।

আছে।

যাও সরিষার তেল দিয়ে মুড়ি নিয়ে এসো।সাথে একটা কাঁচামরিচ আর একটা পিয়াজ আনিও।

আচ্ছা দাড়ান আনতেছি। টিনের ফাক আর জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসতেছে।দুজন জানালার পাশে বসে মুড়ি খাচ্ছি,

আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী পালন করছি __ ছোট ছোট গিফট আর অফুরন্ত ভালবাসায় বেঁচে থাকুক আমাদের মত রিকশা ওয়ালাদের জীবন.........

সমাপ্ত
155 Views
6 Likes
1 Comments
4.2 Rating
Rate this: