একতরফা ভালোবাসা স্বপ্নের ভাঙ্গন

পলাশের ছোটবেলা থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল—বিয়ের স্বপ্ন। সে সবসময় নিজের কল্পনায় এক সুন্দরী বউয়ের ছবি আঁকত। এই কল্পনার জগতে সে নিজেকে একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে দেখত, যে তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসে এবং সবসময় তার পাশে থাকে। ছোটবেলা থেকেই পলাশ রূপকথার গল্প, সিনেমা, এবং নাটকে দেখত কিভাবে প্রেমে পড়া হয় এবং কিভাবে তা বিবাহে পরিণত হয়। তার এই স্বপ্ন তাকে আরও উৎসাহী করে তুলত, ভবিষ্যতে এমন একজন মেয়ে খুঁজে পাবে যাকে সে তার বউ বানাতে পারবে।

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পলাশের স্বপ্ন আরও গভীর হয়। সে অনলাইনে একটি মেয়ের সাথে পরিচিত হয়, নাম অনিয়া। প্রথমদিকে অনিয়ার সাথে কথা বলার সময় পলাশের মন খুব ভালো থাকত। তারা অনেক বিষয়ে কথা বলত—পড়াশোনা, পরিবার, বন্ধুত্ব, এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। অনিয়ার সাথে পলাশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে।

পলাশ এবং অনিয়ার বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয়। অনিয়ার সাথেই পলাশ তার বউয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারা একসাথে সময় কাটায়, পরিকল্পনা করে কিভাবে তাদের ভবিষ্যৎ সাজাবে। অনিয়া পলাশের জীবনে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেয় যে সে ভাবতে শুরু করে, এই মেয়েই তার ভবিষ্যতের বউ হবে। কিন্তু পলাশের মনোজগতে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—অনিয়া কি তাকে সত্যিই ভালোবাসে?

একদিন পলাশ সিদ্ধান্ত নেয় অনিয়ার কাছে তার মনের কথা বলার। সে খুব ভালোভাবে প্ল্যান করে কিভাবে প্রপোজ করবে। ফুল কিনে, একটি সুন্দর রেস্তোরাঁ বুক করে, এবং তার প্রিয় গানগুলো প্লেলিস্টে সাজায়। যখন অনিয়ার সামনে প্রপোজ করতে যায়, তখন অনিয়া একটু অস্বস্তি অনুভব করে। পলাশ তার মনের কথা খোলাখুলি জানায়—সে অনিয়াকে অনেক ভালোবাসে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়।

অনিয়া পলাশকে জানায় যে সে তাকে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে দেখে, কিন্তু প্রেমিক হিসেবে নয়। অনিয়ার কথায় পলাশের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। তার মনে আঘাত লাগে। সে বুঝতে পারে যে তার স্বপ্ন কেবলমাত্র একতরফা ছিল। অনিয়া পলাশকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার কোন খারাপ ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু পলাশ বুঝতে পারে যে সে অনিয়ার প্রতি তার স্বপ্ন আরোপিত করেছিল।

কিছুদিন পর, পলাশ অনিয়ার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সে বুঝতে পারে যে একতরফা স্বপ্ন বাস্তবতা হতে পারে না। সে নিজেকে সময় দেয় এই আঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। সে নতুন করে জীবন শুরু করে, নতুন বন্ধু বানায়, এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখে।

বিঃদ্রঃ পলাশের গল্প আমাদের শেখায় যে সম্পর্ক শুধুমাত্র একতরফা হতে পারে না। সম্পর্কের জন্য উভয় পক্ষের সম্মতি এবং বোঝাপড়া প্রয়োজন। স্বপ্ন দেখা ভালো, কিন্তু বাস্তবতা মেনে নেয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।