এক ছোট্ট গ্রামে, নাল্লাপাড়ায়, এক মানুষ বাস করত, নাম ছিলো পলাশ। পলাশের জীবন খুবই সাধারণ ছিলো। তার একটি ছোট্ট খুঁটে বাড়ি, কিছু মুরগি আর একটি পুরনো ঘোড়া ছিলো। কিন্তু তার একটি বড় দুঃখ ছিলো – সে কখনোই ভালোবাসা খুঁজে পায়নি।
গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী, পলাশের মনে একটি গোপন কামনা ছিলো। তার ইচ্ছা ছিলো টাকা সংগ্রহ করা, যেন তার জীবন সুন্দর হয়। সে একদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, টাকা উপার্জনই তার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
পলাশ দিন-রাত পরিশ্রম করতে শুরু করে। প্রতিদিন সে নিজের ঘোড়ায় চড়ে বাজারে যেতো, পণ্য বিক্রি করতো, আর ব্যবসায়ী হতে শুরু করেছিলো। তার প্রচেষ্টা দিন দিন সফল হয়, এবং পলাশ দ্রুত ধনী হয়ে ওঠে।
যখন পলাশের হাতে প্রচুর টাকা আসে, তখন সে সোনালী গয়না, দামি কাপড় আর বিশাল প্রাসাদ কিনতে শুরু করে। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটেছিলো যখন সে বুঝতে পারে – তার পক্ষে এখন আর কোন সৎ বন্ধুর প্রয়োজন নেই, কারণ তার কাছে এত টাকা আছে যে, সে শুধুমাত্র টাকার মধ্যেই সুখ খুঁজে পায়।
একদিন, পলাশের পুরনো বন্ধু, রবি, তার বাড়িতে এসে দেখে পলাশের চারপাশে অনেক লোক জমে আছে, কিন্তু তার পাশে কেউ নেই। রবি পলাশকে বললো, “তুমি এত টাকা উপার্জন করেছো, কিন্তু তোমার চারপাশে এত লোক থাকা সত্ত্বেও, তুমি একা কেন?”
পলাশ হেসে বললো, “তারা সবাই আমাকে আমার টাকার জন্য ভালোবাসে। আমি টাকা দিয়ে তাদের ব্যবহার করি, কিন্তু ভালোবাসা আমার কাছে বিলুপ্ত।”
রবি হাসিমুখে বললো, “তুমি তো জানো না, মানুষের জীবন ভালোবাসা দিয়েই সুন্দর হয়। টাকা দিয়ে মানুষের হৃদয় কেন কেনো না, কিন্তু ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। তুমি যদি ভালোবাসা পাওয়া ভুলে যাও, তবে টাকার জন্য তুমি যে খোঁজে ছিলে, তা কোনোদিনই পাবে না।”
পলাশের মনে গুমোট লাগলো। সে বুঝতে পারলো, তার পুরো জীবন অর্থের জন্য ব্যয় হয়েছে, কিন্তু ভালোবাসার প্রকৃত মূল্য সে কখনোই বুঝতে পারেনি। টাকা তার জীবনকে সাজিয়েছে, কিন্তু ভালোবাসা তাকে একাকিত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারতো।
তখন থেকে পলাশ নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করলো। সে তার টাকা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিলো, বন্ধুদের সাথে সময় কাটালো এবং সঠিক অর্থে ভালোবাসার মর্ম বুঝতে পারলো। একদিন, সে খুঁজে পেলো সেই সুখ, যা আগে কখনোই অনুভব করতে পারেনি।
( শেষ। )
বিঃদ্রঃ এই গল্পের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, টাকার মাধ্যমে যতই সুখ পাওয়া যাক না কেন, সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য অমূল্য।