আয়নার প্রতিচ্ছবি (পাঠ ২)

দিন কেটে যায়, আর নীলা মাঝে মাঝে লক্ষ্য করে, আয়নার সামনে দাঁড়ানো তার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিন রাতে, যখন ঘরের সব আলো নিভে যায় এবং সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে আবার আয়নার দিকে টেনে যায়।

একদিন রাতে, যখন সারা বাড়ি নিশ্চুপ ছিল, নীলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। কাঁপা কাঁপা হাতে আয়নার দিকে তাকিয়ে সে প্রতিচ্ছবির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো।

"আমি এখানে থাকবো না। তোমার কথাগুলো আমায় ভয় দেখায়," নীলা বললো।

"ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই," প্রতিচ্ছবি শান্ত স্বরে বললো। "আমি শুধু তোমার সহায়তা চাই। এই বয়সী, পুরোনো আয়না আমাকে পৃথিবীর বাইরে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু তুমি যদি সাহায্য করো, আমি মুক্তি পাবো।"

নীলা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, তাকে এই রহস্যের সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। "কিভাবে তুমি মুক্তি পাবে?" সে প্রশ্ন করলো।

"আমার মুক্তির জন্য তোমাকে এই আয়নার সাথে একটি চুক্তি করতে হবে। তুমি যদি আমার সাথে চলে আসো, তাহলে আমার সব কষ্টের অবসান হবে," প্রতিচ্ছবি বললো।

নীলা আতঙ্কিতভাবে ভেবে দেখলো। সে জানে না এই চুক্তি কী পরিণতি নিয়ে আসবে, কিন্তু প্রতিচ্ছবির কথাগুলো অদ্ভুতভাবে তাকে আকর্ষণ করছে।

পরদিন সকালে, নীলা তার মাকে বললো, "মা, আমি আয়নার সাথে কিছু সময় কাটানোর পরিকল্পনা করেছি। আমি ভাবলাম, পুরোনো জিনিসগুলো নিয়ে একটু সময় কাটালে ভালো হবে।"

মা কিছুটা অবাক হলেও, নীলা তার এই নতুন শখকে সম্মান জানিয়ে সায় দিলো।

রাতের অন্ধকার আবার ফিরে এলো। নীলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রতিচ্ছবি আবার তার সামনে উপস্থিত হলো।

"তুমি প্রস্তুত?" প্রতিচ্ছবি প্রশ্ন করলো।

নীলা গাঢ়ভাবে নিঃশ্বাস টেনে বললো, "হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত।"

প্রতিচ্ছবি একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, "অসাধারণ। এবার আমাকে অনুসরণ করো।"

নীলা আয়নার দিকে আরো গভীরভাবে তাকালো। হঠাৎ করে, সে অনুভব করলো, আয়নার কাঁচে একটি শক্তিশালী টান তাকে দিকভ্রষ্ট করছে। তার শরীরের প্রতিটি কোষ যেন এই আকর্ষণে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছে।

"এটা কী হচ্ছে?" নীলা ভয়ে চিৎকার করলো।

"আমার জগতে প্রবেশ করতে হবে, তোমাকে নিজেকে হারাতে হবে," প্রতিচ্ছবি বললো।

আয়নার কাঁচের ভেতর থেকে একটি ঝলক দেখা দিলো, আর নীলা অনুভব করলো যে সে নিজেকে সেই রহস্যময় জায়গায় প্রবেশ করছে, যা প্রতিচ্ছবি বলছিল।

পর্দার অন্তরালে, নীলার চোখে অদ্ভুত দৃশ্য উন্মোচিত হতে লাগলো। এই নতুন জগতের অন্ধকার, অদ্ভুত আলো আর অচেনা প্রতিচ্ছবির মাঝে সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

"আমি কোথায়?" নীলা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো।

প্রতিচ্ছবি মৃদু হেসে বললো, "তুমি এখন আমার জগতে। এখানে তোমার সঙ্গী হতে হবে।"

নীলা বুঝতে পারলো যে, তার জন্য কোনো ফিরে যাওয়ার রাস্তা নেই। সে এখন এক অদ্ভুত, রহস্যময় পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে, যেখানে তার সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো অপেক্ষা করছে, তা সে জানে না।

(চলবে...)