একটু পরেই দেখি অয়ন্তি আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি মুখে আমার পাশে এসে বসলো। আমি তখন রীতিমতো ঘামতে শুরু করি। এই প্রথম কোনো মেয়ে আমার পাশে বসে আছে তাও কিনা সেই মেয়ে যাকে আমি মনে মনে খুব পছন্দ করি।
এরপর অয়ন্তি আমার সাথে কিছু বলার আগেই কোচিংয়ে স্যার এসে উপস্থিত। আজকে আবার কোচিংয়ে অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। তাই স্যার এসেই তৎক্ষণাৎ আমাদের হাতে উত্তরপত্র আর প্রশ্ন ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা করে দিতেই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
এদিকে অয়ন্তির আজ কোচিংয়ে প্রথম দিন। বেচারী হয়তো জানতো না যে আজ অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। তাই প্রস্তুতিবিহীন পরীক্ষা দিতে গিয়ে বেচারীর নাজেহাল অবস্থা। এদিকে ও তখন আমার পাশেই বসে ছিল। তাই ওর এমন করুণ অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো।
এদিকে আমার দিকে অয়ন্তির চোখ পড়তেই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো যেন ওকে একটু সাহায্য করি। তাই তখন অয়ন্তিকে চুপিসারে আমি আমার করা অঙ্কগুলো দেখাতে লাগলাম। যাতে অন্তত মেয়েটার প্রস্তুতিবিহীন পরীক্ষা কিছুটা হলেও ভালো হয়।
কিন্তু বিধি বাম। অয়ন্তিকে যখন আমি আমার খাতায় করা অঙ্কগুলো দেখাচ্ছিলাম তখন সেই দৃশ্য পড়ে যায় স্যারের চোখে। তাইতো শাস্তিস্বরূপ স্যার আমার খাতাটা কেড়ে নিয়ে আমাকে কোচিং ক্লাস থেকে বের করে দেয়।
কিই বা আর করার আমিও তখন নিরাশ হয়ে কোচিংয়ের বাইরে বেরিয়ে আসলাম। এদিকে আমার এমন পরিণতি দেখে অয়ন্তি নিজেই নিজেকে এর জন্য দায়ী ভেবে খুব কষ্ট পাচ্ছিলো সেটা বেচারীর মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।
কোচিংয়ের পরীক্ষা শেষে যখন সবাই বের হয়ে গেলো তখনও আমি দাঁড়িয়ে রইলাম অয়ন্তির আসার অপেক্ষায়। বেচারী পরীক্ষা ঠিকমতো দিতে পারলো কিনা সেটা জানার জন্যেই দাঁড়িয়ে থাকা।
অবশেষে প্রায় সবার বেরিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পেলাম অয়ন্তি কোচিং থেকে বের হয়ে গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ওকে দেখে এগিয়ে কিছু বলতেই যাবো তখনই অয়ন্তি বলে উঠলো -" সরি ধ্রুব। আজ আমাকে হেল্প করতে গিয়েই তুমি পরীক্ষাটা দিতে পারলে না। তোমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।"
আমি তখন মৃদু হেসে বলে উঠলাম - " আরে ধুর বোকা। এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। তুমি তো ইচ্ছে করে আমার কোনো ক্ষতি চাওনি আর যেটা হয়েছে সেটা একটা দুর্ঘটনা। আর পরীক্ষা দিতে পারিনি বলে আমার কোনো আফসোস নেই। এবার বলো তুমি পরীক্ষা কেমন দিলে?"
অয়ন্তি তখন মাথা নিচু করে বললো - " আসলে আমি তো জানতাম না আজ কোচিংয়ে অঙ্ক পরীক্ষা। তাই তেমন প্রস্তুতি নিতে পারিনি। তবে তুমি হেল্প করাতে পরীক্ষাটা একেবারেও খারাপ হয়নি। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। তবে তুমি আজ হেল্প না করলে সত্যিই আমার পরীক্ষাটা খুব খারাপ হতো। "
তখন আমি বলে উঠলাম - " আরে ঠিক আছে। কোনো ব্যাপার না। বন্ধুই তো বন্ধুর বিপদে হেল্প করবে। এ আর এমন কি বড় ব্যাপার।"
কথাটা শোনা মাত্রই অয়ন্তি যেন বিস্মিত হয়ে গেলো আর প্রফুল্ল মনে বলে উঠলো -" তাহলে তুমি আমাকে তোমার বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছো তো? তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু, কি তাইতো?"
অয়ন্তি কথাটা বলেই আমাকে কিছু বলার আগেই ওর হাত টা বাড়িয়ে দিলো। আর বললো হাত মিলাতে। তখন বাকি বন্ধুদের দৃষ্টিও আমাদের ওপরেই ছিল। এতগুলো বন্ধু বান্ধবের সামনে আমি তখন অয়ন্তির সাথে হাত মেলাতে বেশ ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম। কিন্তু অয়ন্তির সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। সে আমাকে বার বার বলতে লাগলো হাত মিলাতে। অবশেষে আমি বাধ্য হয়ে শত লজ্জা পাওয়া সত্ত্বেও অয়ন্তির সাথে হাত মেলালাম। সেইই প্রথম অয়ন্তির স্পর্শ অনুভব করি আমি।
চলবে......
###
( গল্পটা পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই জানাবেন এবং সেই সাথে সাথে গল্পটি পড়ে লাইক, কমেন্ট এবং রেটিংয়ের মাধ্যমে গল্পটিকে মূল্যায়ন করার অনুরোধ রইলো। পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে। সবাইকে তাই গল্পটি পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ 🥰)
স্বপ্ন
অসাধারণ 💚
তমাল কৃষ্ণ মৃধা
অসংখ্য ধন্যবাদ 🥰