প্রতিদিনের মতোই আজও রূপা স্কুল শেষে বাড়ির পথ ধরে হাঁটছিলো । কিছুদূর হাঁটতেই সে দেখলো হাইওয়ে রোডের মাঝে একটা ভিড় জমে আছে।
তাহলে কি কোনো দুর্ঘটনা ঘটলো নাকি! এমনটা আশঙ্কা করেই রূপা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো সেই ভিড়ের কাছে। বহু কষ্টে ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে রূপা যেন এক নির্মম দৃশ্যের সাক্ষী হলো।
সে দেখতে পেলো একটা মা কুকুর ট্রাক দুর্ঘটনায় মারা পড়ে আছে রাস্তার ওপর। তার থেতলে যাওয়া মুখ এবং ট্রাকের চাপায় চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া শরীর দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিলো কতটা যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু পেয়ে বেচারীকে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে। সারা রাস্তা যখন মা কুকুররের রক্তে ভিজে গেছে তখন তার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই যেন রূপার চোখ জলে ভরে উঠলো। কোনো এক অজানা মমতার কারণেই সে যেন এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারছে না। আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে যে এমন এক নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে তা হয়তো রূপা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
রূপার চারপাশের ভিড় ততক্ষণে কমে গিয়েছি। রাস্তায় থাকা লোকজন যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে। একটা রাস্তায় মরে পড়ে থাকা কুকুরের জন্য কারই বা আর অতো মায়া বা দরদ রয়েছে।
রূপাও এক বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ির পথে আবার রওনা দেবে ঠিক এমন সময় তার কানে একটা আওয়াজ ভেসে আসলো। তবে আওয়াজটা কোনো মানুষের নয়।
আওয়াজটা শুনে রূপা পিছনে ফিরতেই দেখলো একটা ছোট্ট কুকুর ছানা রাস্তার পাশে থাকা ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো। বয়স হয়তো খুব সম্ভবত এক সপ্তাহ কিবা তার থেকে দু-তিনদিন বেশি হবে।
রূপা দেখলো ঐ কুকুর ছানাটা রাস্তায় পড়ে থাকা ওর মৃত মায়ের কাছে এসে ঘুরতে লাগলো। আওয়াজ করে মা কে ডাকতে লাগলো। হয়তো বলতে চাচ্ছিলো-" মা ওঠো। আমি আর খেতে চাইবো না ।কিন্তু তাও তুমি ওঠো। এভাবে চুপ করে শুয়ে থেকো না। মা এইতো আমি। আমার সাথে কথা বলবে না মা! মা....."
অবুঝ ছানাটা হয়তো তখনও বুঝতে পারছিলো না যে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তাকে একা ফেলেই তার মা কে চলে যেতে হয়েছে অন্য আরেক দুনিয়ায়। যেখানে গেলে কেউ আর কখনোই ফিরে আসতে পারে না।
সদ্য মাতৃহারা অবুঝ ছানাটাই বা এসবের আর কি বুঝবে। ও তো তখনও নিজের মায়ের জেগে ওঠার আশায় মায়ের গা চেটে দিচ্ছিলো বার বার। আর নিজেকেই নিজে এই ভেবে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো যে এই হয়তো এখনই আমার মা জেগে ওঠবে।
সদ্য মাতৃহারা অবুঝ ছানাটা এখন যেন এই নির্দয় পৃথিবীতে সবচেয়ে একা হয়ে পড়েছে। তার বেঁচে থাকার জন্য এখন তাকে নিজেকেই এই কঠিন পরিবেশের সাথে প্রতি মূহুর্তেই লড়াই করে টিকে থাকতে হবে।
এমন একটা করুণ দৃশ্য রূপার মনে গভীর কষ্টের দাগ কেটে যায়। সে যেন আর কিছুতেই ছানাটিকে রাস্তায় একা ফেলে বাড়ি ফিরে যেতে পারছিলো না। কারণ এমনটা করতে তার মনই সায় দিচ্ছিলো না। তৎক্ষণাৎ সে সিদ্ধান্ত নিলো কুকুর ছানাটিকেও সে নিজের সাথে করেই বাড়িতে নিয়ে যাবে। এই কঠিন বাস্তবতার মাঝে একা একটা অবুঝ ছানাকে ছেড়ে যাওয়া কখনোই কোনো মানবিকতার কাজ হতে পারে না।
এসব ভেবেই রূপা তখন কুকুর ছানাটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ করেই রূপাকে এগিয়ে আসতে দেখে ছানাটি মায়ের পাশ থেকে দৌঁড়ে গিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। কিন্তু রূপা তখন ঝোপের কাছে গিয়ে ছানাটিকে ডাকতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকা ডাকির পর ছানাটা যেন নিজের ভয় কাটিয়ে এবার ঝোপের আড়াল থেকে মুখ তুলে চাইলো রূপার দিকে। ছানাটিকে দেখতে পেয়ে রূপাও বেশ আনন্দিত হয়ে উঠলো।
এরপর রূপা ছানাটিকে কাছে ডাকলো আর ওর টিফিন বক্সে থাকা এক টুকরো কেক খেতে দিলো ছানাটিকে। ছানাটাও এবার ভয় কমিয়ে আস্তে আস্তে রূপার দিকে এগোতে শুরু করলো। রূপা পরম যত্নে হাসিমুখে ছানাটিকে নিজ হাতে খাওয়াতে লাগলো। ছানাটিও এবার রূপার কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করতে শুরু করলো। কেক খাওয়ানোর পর রূপা নিজের স্কুল ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে ছানাটিকে জলও খাওয়ালো। এবার রূপা কুকুর ছানাটিকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলো আর বললো-" এবার থেকে তুই আমার সাথেই থাকবি। আমরা দুজন একসাথে একই বাড়িতে থাকবো। তোকে আর রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে না।"
রূপা যখন এসব বলছিলো তখন ছানাটিও রূপার হাত চেটে দিয়ে তার কথায় সম্মতি জানাচ্ছিলো।
এরপর সারাটা রাস্তা রূপা ছানাটিকে কোলে নিয়ে চলতে লাগলো। চলতে চলতে অবশেষে রূপা তার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো।
চলবে.......
###
(গল্পটা এই পর্যন্ত কেমন লাগছে দয়া করে জানাবেন। আর সেই সাথে সাথে গল্পটি পড়ে আপনাদের মূল্যবান মতামত এবং রেটিংয়ের মাধ্যমে গল্পটিকে মূল্যায়ন করার বিশেষ অনুরোধ রইলো 🥰)
গল্পটা নতুন তবে বেশ ভালো লাগলো প্রথম পর্বটা পড়ে।
ধন্যবাদ 🥰 খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব আসছে
তন্ময়
অসাধারণ লাগলো পর্বটা পড়ে
তমাল কৃষ্ণ মৃধা
অসংখ্য ধন্যবাদ 🥰