মাহিম : কিগো আজকে কি আমাদের খেতে ডাক দিবে না ।
অন্তরা : দাঁড়াও আমি যেয়ে দেখে আসি । ফাহাদ হইতো পায়েলকে খাওয়াচ্ছে। পায়েলকে খাওয়াইয়ে হয়তো ফাহাদ আমাদের সাথে , একসাথে মিলে খাবার খাবে ।
এই কথা বলে অন্তরা ডাইনিং টেবিলের কাছে যেয়ে দেখলো খাবার টেবিল পড়ে আছে ,কিন্তু ফাহাদ আর পায়েল সেখানে নেই ,,তারা তাদের মতো খাওয়া দাওয়া করে তাদের রুমে চলে গিয়েছে । এটা দেখে অন্তরা তাদের রুমে যেয়ে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
মাহিম : কিগো তোমার কি হয়েছে ? এমন মন খারাপ কেন গো তোমার ।
অন্তরা : এমনি কিছু হয়নি চলো তোমাকে খাবার খাইয়ে আসি ,,,।
অন্তরার এই কথা শুনে মাহিম বুঝতে পারলো ছেলে ছেলের বউ আমাদের জন্য না খেয়ে বসে রইনি ,,বরং তারা খেয়ে চলে গিয়েছে ।
মাহিম : সমস্যা নাই চলো আমরা আজকে মজা করে খাব । তুমি বুড়ি আমাকে খাওয়াইয়ে দিবে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো । চলতো তাড়াতাড়ি এই কথা বলে দুইজনই খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলে গেল কিন্তু সেখানে কোন খাবার রাখা নেই ।
অন্তরা : দাঁড়াও হয়তো ফ্রিজে রেখে গিয়েছে আমি নিয়ে আসছি তুমি এখানেই বসে থাকো । এই কথা বলে অন্তরা ফ্রিজের কাছে গেল ফ্রিজ খোলার সাথে সাথে দেখতে পেল অল্প কিছু ভাত রাখা ,, আর একটু তরকারি রাখা । অন্তরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওই খাবারগুলো নিয়েই মাহিম এর কাছে গেল ।
মাহিম : কিগো খাবার আনছো? দাও আমাকে তাড়াতাড়ি খাবার দাও। আমি খিদেয় একদম পাগল হয়ে যাব । সত্যি কথা বলতে আমার অনেক খিদে পেয়েছে ।
অন্তরা মাহিমকে খাবার দিলো ।
মাহিম : কি গো তোমার প্লেট কই তোমার জন্যও বারো খাবার । বললাম তো একসাথে বসে খাব এক কথা কেন তোমাকে বারবার বলতে হয় । যদি বকা দেই তারপর রুমে যেয়ে বাচ্চাদের মতো শুয়ে শুয়ে কান্না করবে । এক কথা যেন আর কোনদিন বারবার আমাকে বলতে না হয় ।
এই কথা বলে মাহিম আরেকটি প্লেট ধুয়ে সামনে দিল । আর বলল আমাকে কি ভাতও বেরে দিতে হবে।
অন্তরা : জানো আমার খেতে একদম ইচ্ছে করছে না আজকে আমি এখন খাব না তুমি খেয়ে নাও । কেমন যেন ডাইবেটিক্স এ বেশি সমস্যা লাগছে আজকে । এখন ভাত খেলে আমার ডাইবেটিক্স বেশি হবে আমি এখন আর ভাত খাব না ।
মাহিম : তাহলে রুটি খাও সমস্যা কি ,,আমি হলাম মাহিম চৌধুরী আমার বউ যা ইচ্ছে তাই খাবে । আমার কি টাকা পয়সার অভাব নাকি । যাও বৌমাদেরকে ডাক দাও বল তোমাকে রুটি বানিয়ে দিতে ।
অন্তরা : নাগো বুড়া বৌমারা এখন ঘুমাচ্ছে তাদেরকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না । তুমি খাও তো প্যাচাল বাদ দিয়ে এত কথা বলতে তোমার কেমন লাগে । বয়স যে বাড়ছে সেদিকে খেয়াল দাও,, এত টেনশন করতে হবে না আমাকে নিয়ে । সকালে আমাকে হাটতে নিয়ে যেও দেখবে ইনশাল্লাহ আমি সুস্থ হয়ে যাব ।
মাহিম : না এটা হয় না চলো রান্নাঘরে আমি তোমাকে রুটি বানিয়ে দিব । আমি সব রান্না পারি । তোমার মনে আছে আমি তোমাকে কত রান্না করে খাইয়েছি আগে ।
অন্তরা : তুমি আর সেগুলো কথা মনে করিয়ে দিও না আমার মনে হলেই হাসি পায় । কত কিত্তিই না করছো তুমি, কত লজ্জায় আমায় পড়তে হয়েছে তোমার জন্য । তোমার আসলে এতো লজ্জা কম কেন ? আগে তো শাশুড়ি ননদ সবার সামনে লজ্জায় ফেলিয়ে দিয়েছো । এখন আবার ছেলে ছেলের বউ আর নাতিদের সামনে লজ্জায় ফেলিয়ে দিও না ।
মাহিম : কি এমন করছি আমি হ্যাঁ ,,আমাকে নিয়ে যে তোমাকে এতো লজ্জায় পড়তে হয়েছে ।
অন্তরা : অন্তরা তো হাসতেই লাগছে । আমাদের বিয়ের পাঁচ দিন পর তুমি কি করেছিলা এত তাড়াতাড়ি কেমন করে ভুললে। আমি এই চৌধুরী বাড়ির তখন নতুন বউ ছিলাম । আমার অনেক লজ্জা ছিল সবার সামনে লজ্জায় আমি খেতে পারিনি । কিন্তু আমার অনেক খিদে পেয়েছিল একদিন রাতে ,, অনেক খিদে প্রচুর খিদে । তোমাকে আমি বলছিলাম ওগো আমার অনেক খিদে লেগেছে আমাকে কিছু খাবার এনে দিবে । তুমি বলছিলা এটা কোন ব্যাপার দাঁড়াও আমি এক সেকেন্ডে যাব আর এক সেকেন্ডটে আসবো দেখবে আমার হাত ভর্তি খাবার নিয়ে আসছি ।
এই কথা বললে অন্তরা হাসতে লাগলো । কিগো আরো শুনতে চাও ।
মাহিম : হ্যাঁ বুড়ি শুনতে চাই তোমার মুখে এগুলো কথা আমার অনেক ভালো লাগছে । বলোনা প্লিজ ,,আমার টুকটুকি বুড়ি ।
অন্তরা : হ্যাঁ বলছি আমার মিষ্টি বুড়া । তুমি বললা এক সেকেন্ডে আমি তোমার জন্য খাবার এনে দিবো এই কথা বলে তুমি কিচেন রুমে গেলে । কিচেন রুমে গিয়ে দেখলে আজকে কোন খাবারই রাখা নেই ।
অনেক আত্মীয় আসছিলো সেদিন এই কারণে সব খাবার ফুরিয়ে গিয়েছে । তুমি তো আবার মুখ দিয়ে যা বলো তা করতে না পারলে তুমি নাকি অনেক লজ্জাবোধ করো ।
এখন তো তুমি আমার জন্য খাবার আনতে পারো নাই এজন্য তুমি মাথা নিচু করে আমার পাশে যেয়ে বললা সোনা আজকে তোমার জন্য কোন খাবার আনতে পারলাম না আমার কিছু ভালো লাগছে না ।
আমারতো তখন বয়স অনেক কম ছিল ,,আমি তো না না করতে লাগছি । না আমাকে খাবার এনে দাও আমার অনেক খিদে পেয়েছে আমার রাত তো কোনোভাবেই ফুরাবে না খিদেতে ।
তুমি বললে দাঁড়াও আমি তোমাকে খাবার বানিয়ে দিব,, তুমি কি খাবার খেতে চাও ।
আমি তো এ কথা শুনে বললাম আমাকে পরোটা বানিয়ে দাও আর ডিম ভাজি । এই খাবার আমার অনেক প্রিয় ।
তুমি বললা আমি তোমাকে পরোটাই বানিয়ে দিব তুমি মনে করছো তোমার বর কোন রান্না পারেনা চলো আমার সাথে । এই কথা বলে তুমি আমার হাত ধরে টেনে টেনে কিচেন রুমে নিয়ে গেলে । কিচেন রুমে নিয়ে আমাকে উঁচু একটি টেবিলের উপর,, তুমি আমাকে উঁচু করে বসিয়ে রাখলে আর বললে বসে বসে তুমি দেখো আমি কিভাবে রান্না করি ।
টেবিলটি এতো উঁচু ছিল আমি একাই কোনভাবে নামতে পারব না যদি তুমি আমাকে আবার উঁচু করে নামিয়ে না দাও । আমিও মজা করে বসে বসে দেখতে লাগলাম ।
যখনই তুমি কিচেন রুমের ময়দার ডিব্বাটি হাতে নিলে তখনই তোমার হাত ফসকে ময়দার ডিব্বাটি পরে সম্পূর্ণ কিচেন রুম ছড়িয়ে গেল । সবাই যার যার রুম থেকে বলতে লাগলো কে কে? কিচেন রুমে বিড়াল ডুকছে কি । তুমি বললে তাদেরকে কেউ না বিড়াল আসছিল আমি তাড়িয়ে দিয়েছি ।
আমার শাশুড়ি মা রুম থেকে বলল মাহিম বিড়ালটা ভালোভাবে তাড়িয়ে দিস । এই কথা বলে সবাই যার যার মত আবার ঘুমিয়ে পরল ।
তুমি যখন ময়দা তুলতে লাগলে আমি বললাম ময়দা পরে তুলবে আগে তুমি এখান থেকে কিছু ময়দা নিয়ে আমার জন্য পরোটা বানিয়ে দাও ।
তুমি এই কথা শুনে তাই করতে লাগলে কিন্তু বিপদ আসলে সব দিক দিয়ে আসে কথায় আছে না ,,আমাদের কপালে সেটাই ছিল । যখন তুমি উঁচু থেকে করাই নিতে গেলে তখন কড়াইটা তোমার হাত ফসকে ফ্লোরে পড়ে অনেক জোরে একটি শব্দ হলো । এই শব্দে তো আর কেউ রুমে রইলো না সবাই একে একে কিচেন রুমে আসলো । আর আমাকে তুমি এমন উঁচুতে বসিয়ে রাখছো কোনভাবেই আমি নামতে পারছি না ।
এরপর কি হলো সবার যদি জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে প্লিজ সুন্দর একটি রিভিউ দিয়ে আমার পাশে থাকার অনুরোধ রইলো ।
আমার গল্পটি ভালো লেগে থাকলে প্লিজ অনুসরণ করে পাশে থাকবেন যাতে নতুন পর্ব দেওয়ার সাথে সাথে আপনার মোবাইলে নোটিফিকেশন চলে যায় ।
চলবে,,,,,,
তুমি আছো তাই (পর্ব ৫)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
194
Views
4
Likes
0
Comments
5.0
Rating