ভর্তি হয়েছো কোথায়?
চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে।
ওহ, আচ্ছা। ওখানে তো জিপিএ-টিপিএ লাগে না, তাই না? সবাই ভর্তি হতে পারে! ঢাবিতে চান্স পাইলা না। ঢাবিতে চান্স পেলে লাইফে আর কিছু লাগতো না!
শুনলাম ঢাবিতে চান্স পেয়েছো। কোন সাবজেক্ট?
সয়েল সাইন্স।
সেটা আবার কী?
মৃত্তিকা বিজ্ঞান।
এসব মৃত্তিকা-টিত্তিকা পড়ে চাকুরী বাকুরী কিছু হবে না। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পেলে কিছু একটা হতো!
এপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হয়েছো জেনে খুবই খুশী হয়েছি। মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওগুলোতে ট্রাই করো নাই?
জী করেছিলাম।
মেডিকেলে চান্স পেলে পেছনে ফিরে তাকাতে হতো না। পাও নাই, কি আর করার! দেখো পড়াশোনা শেষে একটা সরকারি চাকুরী পাওয়া যায় কি না!
তোমার বাবার কাছে শুনলাম রংপুর মেডিকেলে চান্স পেয়েছো। আমার এক ভাতিজা পড়তো খুলনা মেডিকেলে। এখন একটা ক্লিনিকে জব করে। মেডিকেলে পড়ে বিসিএস না হলে লাভ নাই। বুয়েট অথবা অন্ততপক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে কাজের অনেক সুযোগ। দেশে বিদেশে প্রচুর ডিমান্ড আছে।
.
একটা অসুস্থ সময় পার করছে দেশ! অসুস্থ প্রতিযোগিতা চারদিকে। পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। একমাত্র উপায় মৃত্যু! সে পথেই এগুচ্ছে অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন সুমন। সরকারি তিতুমীর কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ৪৪ তম বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ চাকুরী প্রার্থীদের ভীড় ঠেলে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জানা যায় স্ট্রোক করেছে। সেখান থেকে আগারগাঁও নিউরোসাইন্স হস্পিটাল। আইসিইউ। টানা আটদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সকালে হেরে গেছেন তিনি। জিতে গেছে বিসিএস। জিতে গেছে সমাজ। জিতে গেছে সিস্টেম।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করা এ শিক্ষার্থী আটটি সরকারি চাকুরীর সুযোগ পেয়েছিলেন। তারপরও গত তিনমাস রাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি। অপ্রাপ্তি, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা জেঁকে বসেছিলো মেহেদীর। সুইসাইড নোটে লিখেছেন, 'নিদ্রাহীনতা আর পারছি না'। মেহেদী মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেনি বলেই কি কেউ দায়ী নয়?
মেহেদীর সুইসাইড, ইমনের স্ট্রোক, অকালমৃত্যু। এসবের জন্য দায়ী এই দেশ, এই সিস্টেম। আমি আইনের লোক হলে এসব মৃত্যুর জন্য আসামি হিসেবে পুরো দেশের নাম লিখতাম। কারণ হিসেবে লিখতাম এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার, এক অসুস্থ সময়ের।