কিন্তু মুখ ফুটিয়ে ছেলেটা সময় আর সুযোগের অভাবে এবং পরিবেশ আর পরিস্থিতির কারণে কখনো নিজের মনের কথাটা মেয়েটাকে যথাযথ সময়ে বলতে পারেননি। এর মাঝে দু-মাসের মাথায় গিয়ে মেয়েটিও মাঝেমধ্যে তাঁর বাড়ির ভেতর থেকে প্রধান প্রবেশপথের দ্বারে এসে যখন আড়ি পেতে বাহিরে তাকাতেন, তখনই ছেলেটাকে তাঁর বাড়ির সামনে দেখতে পেতেন। ছেলেটা মেয়েটির আগমন টের পেয়ে মনে মনে মহা খুশিতে মেতে উঠতেন। প্রায় সময় এমন কাণ্ড হতো যে, মেয়েটির কখন থেকেই নিজ বাড়ির মূল দরজার পাশে এসেই আড়াল থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকেন, তা হয়তো ছেলেটা নিজেও বুঝতে পারতেন না। এমনও অনেক সময় গেছে যে স্বয়ং সেই মেয়েটিই গেটের পাশে এসেই এক ধরনের টুন টুন শব্দ করে আড়ালে নিজের উপস্থিতির ইঙ্গিত ছেলেটাকে অবগত করতেন এবং তাঁর দিকে অনেকক্ষণ যাবত চেয়ে থাকতেন। কিন্তু ছেলেটা বোকার মতো করে থাকতে থাকতে সত্যি সত্যি যেনো বোকা হয়ে যায়। কারণ এর মাঝে সেই মেয়েটি ছেলেটাকে অনেকবার ইঙ্গিত দিয়ে সুযোগ করে দিয়েছেন যে, কিছু না কিছু বলতে। নীরবে অসহায়ের মতো চেয়ে থাকতেন এবং মনে মনে ভালোবেসে যেতেন। এ যেনো একধরনের পাগলামি ছিলো ছেলেটার। এভাবে ছেলেটা মেয়েটিকে চার মাসের মাথায় গিয়েও কিছু বলতে পারেননি। ছেলেটা মনে মনে ভাবতেন এবং একপ্রকার ভয়ে থাকতেন যে, যদি সে মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা বলেন, তা শুনে যদি মেয়েটি নাকচ করে দিয়ে বা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে উল্টো ছেলেটাকে যা তা বলে দেয়, তখন সে কি করবে; হয়তো মেয়েটাকে হারিয়েও ফেলতে পারেন এই ভয় নিয়ে সে অনেক সুযোগ পেয়েও মেয়েটাকে মনের কথাটা যথাযথ সময়ে বলার ইচ্ছা থাকলেও বলতে অক্ষম হন।
এমনিভাবে দিন যায়, মাস যায় এবং এভাবে বছরও শেষ হয়ে যায়। একদিন ছেলেটা নিজের বুকের সব সাহস একত্র করে এমন একটা সিন্ধান্ত নেয় যে, যেভাবেই হউক মেয়েটিকে তাঁর মনের কথাটা ব্যক্ত করবেন। ছেলেটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক চেষ্টা করেন মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে নিয়তি ছেলেটাকে সঙ্গ দেয় নি। তাই ছেলেটা পাগলামি করতে করতে পরোক্ষভাবে চেষ্টা করেন যে, লজ্জাশরম পেলে সে অন্য দু-এক জন মেয়েকেও নিজের এই ব্যাপারটা বলেছিলেন এবং সেই মেয়েটি বরাবর তাঁর একখানা চিঠি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিনয়ের সাথে প্রচুর অনুরোধ করেন। কিন্তু পরোক্ষভাবেও নিয়তি হয়তো ছেলেটার সঙ্গ দেয়নি। কারণ সেই মেয়ে দু'টো তাকে যথেষ্ট আশ্বাস দেওয়ার পরও তাঁর মনের অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করেনি। ছেলেটা পড়ালেখায় বেশ মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন, কলেজ পড়ুয়া ছিলেন এবং পাশাপাশি একটা পার্ট টাইম চাকরি করতেন। ছেলেটার পরিবার ততটা উচ্চবিত্ত না হলেও তাঁদের কোনো অভাব অনটন দেখা দেয় না। ছেলেটা তাঁর মেধার সর্বোচ্চ দিয়ে মেয়েটার জন্য একটা চিঠি লেখন এবং ঠিক করেন যে, যা করার তা তাঁর নিজেকেই করতে হবে। তাই ছেলেটা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, যখন মেয়েটি বিকেলের দিকে পাঠশালায় যাবেন, যাওয়ার পথে তাঁকে দাঁড় করিয়ে সে চিঠিটা নিজেই নির্ভয়ে প্রদান করবেন। মেয়েটি তখন নিম্ন মাধ্যমিকে অধ্যয়ন করতেন। এভাবে প্রায় একটি বছর শেষ হয়ে গেলো। এর মাঝে এই এক বছরে মেয়েটির প্রতি ভালোবাসার মোহতে আটকে গিয়ে তীব্র আসক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে সেই ছেলেটা তাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেন।
ছেলেটা তাঁর কলেজ জীবন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার ইচ্ছা হারিয়ে পেলেন এবং পরিবার থেকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অনেক ভালো মানের চাকরির সুযোগ পেয়েও না করার অনিহা প্রকাশ করেন। পার্ট টাইম চাকরি করে যে মাইনে পেতেন, সেই সবিও উক্ত বিপণিতে বসে বসে কত কিছুই খেয়ে এবং অন্যদের খাওয়াতে খাওয়াতে অনায়াসে ব্যয় করে পেলেন। একদিন রাতে ছেলেটা একটা কাগজের মধ্যে মেয়েটির প্রতি তাঁর জমে থাকা সমস্ত কথা, আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও ইচ্ছা প্রভৃতির কথা সুন্দর করে প্রাঞ্জল ভাষায় ভেবেচিন্তে নিখুঁতভাবে লেখে তা সযত্নে আগলে রাখেন এবং পরদিন মেয়েটিকে সরাসরি নিজ হস্তে তা প্রদান করবেন এমন পরিকল্পনায় বদ্ধপরিকর হন। পরদিন যথা সময়ে ছেলেটি তাঁর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েটির পাঠশালার পাশের এক রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টা দেড় এক পরে মেয়েটি নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের পথ দিয়ে প্রাইভেট পড়ার লক্ষ্যে চুপিচুপি করে হালকা প্রফুল্লচিত্তে ছুটে যাচ্ছিলেন তাঁর বিদ্যালয়ের দিকে। বিদ্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতেই দেখেন ছেলেটা তাঁর দিকে প্রীতির নয়নে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় ছেলেটা মেয়েটিকে না থামিয়ে এবং কিছু না বলে আপাতদৃষ্টিতে তাঁর দিয়ে চেয়ে চেয়ে যেনো নীরবতা পালন করতে ছিলেন। মেয়েটি ধীর গতিতে ছেলেটার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে গেলেন।
ছেলেটা সেই রাস্তার মোড়ে তখনো নিজের অবস্থান পরিবর্তন না করে স্থির হয়ে আছেন। কারণ মেয়েটির চোখ রাঙানো এবং প্রফুল্লচিত্তের প্রভাব বুঝতে পেরে ছেলেটি কি যেনো ভাবনায় পড়ে গেলেন। মেয়েটি ধীরে ধীরে চলতে চলতে রাস্তার মোড় থেকে আড়াল হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথের কাছাকাছি গেলেন। ছেলেটা মেয়েটি আড়াল হয়ে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরে বিদ্যালয়ের দিকে ছুটে গেলেন। বিদ্যালয়ের কাছাকাছি প্রধান প্রবেশপথের ফটকের নিকটে গিয়ে ছেলেটা যা দেখলেন, তাতেই যেনো ছেলেটার মাথার উপরে দিয়ে একটা চলন্ত রেলগাড়ি চলে যাচ্ছিলো বোধ হলো। সেই মুহূর্তে ছেলেটা তৎক্ষনাৎ যেনো বিচলিত মনে বাক প্রতিবন্ধী হয়ে পেঁচার মতো চোখ বড়ো বড়ো করে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। একদিকে তাঁর বুকের মাঝে খুবই ভয়ংকর এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প যেনো প্রবাহিত হয়ে তাঁর ভেতরের সমস্ত স্বপ্ন, ইচ্ছা, আশা, ভরসা ও বিশ্বাস মুহূর্তেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে কলিজায় ক্ষত হতে শুরু করলো। অন্যদিকে সেখানে যা দেখলেন তাতে তাঁর রাগ ওঠে পুরো শরীর প্রকম্পিত হয়ে প্রচণ্ড ক্রোধের প্রভাব তীব্র হতে তীব্রতরে রূপ নিতে লাগলো। কারণ বিদ্যালয়ের মূল প্রবেশ পথের প্রধান দরজার সেখানে গিয়ে ছেলেটা দেখলেন যে, বিদ্যালয়ের প্রধান গেইটটি তালাবদ্ধ করা এবং সেই মেয়েটি অন্য একটা ছেলের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেছিলেন। ঐসব দেখে ছেলেটা.................
বিঃদ্রঃ উপরিউক্ত গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে বাস্তব জীবনে থেকে নেওয়া এক দৃষ্টান্ত কাহিনী। কাহিনীর অবশিষ্টাংশ পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে। সাথেই থাকুন ধন্যবাদ!
রূপসি বালিকার ছলাকলা (পর্ব ২)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
456
Views
7
Likes
4
Comments
5.0
Rating