তোমার অপেক্ষায় (পর্ব ১৫)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
#তোমার_অপেক্ষায়
#পর্ব ১৫
আরাফ ড্রাইভ করছে,আরাফের পাশে পূর্ণতা চুপচাপ বসে আছে।পূর্ণতা আর চোখে বার বার আরাফকে দেখছে।
_এইভাবে বার বার আমাকে দেখার কী আছে? আমি জানি আমি সুন্দর। তাই বলে এভাবে চেয়ে থাকবি?আরাফের এমন কথায় পূর্ণতা বর বর চোখ করে আরাফের দিকে চায়।আরাফ গাড়ি ব্রেক কষে পূর্ণতার দিকে ঘুরে বসে।
_নে এবার যত মন চায় দেখ।আরাফের এমন কথায় পূর্ণতা চোখ মুখ কুচকে বলে _
_আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না আরাফ ভাই। আবোল তাবোল বকবেন না।এই বলে পূর্ণতা মুখ ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।পূর্ণতার এমন আচারনে আরাফ হোহো করে হেসে ওঠে।
পূর্ণ চোখমুখ কুচকে বসে আছে। আরাফ পূর্ণতার দিকে একবার চেয়ে ফের গাড়ি স্টার্ট দিলো।
_পূর্ণতা?আরাফের ডাকে পূর্ণতা আরাফের দিকে চাইলো,আরাফ এক মনে পূর্ণতার দিকে চেয়ে আছে,পূর্ণতা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো,আরাফ ফের প্রশ্ন করলো_
_আমি যখন বাসায় ছিলাম না তখন তোর আমাকে মনে পরে নাই?খারাপ লাগেনি আমার জন্য? আরাফের এমন প্রশ্নে পূর্ণতা কী বলবে ভেবে না পেয়ে বলেই ফেললো_
_হ্যা।পূর্ণতার উত্তর শুনে আরাফের মন মূহুর্তেই খুশি হয়ে গেলো।আরাফ সামনে মনোযোগ দিয়ে বললো_
_আমিও তোকে প্রতি মূহুর্তে মনে করেছি।আমার মনে হয়েছিল তোকে ছারা আমার এক মূহুর্তেও চলবে না।তারপর আবার নিজেই নিজেকে বুঝালাম এইতো কয়েকটা দিনের ব্যাপার।পূর্ণতা আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে..ওকে এত মনে করার কী আছে?আরাফ পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বললো_
_ কী ভাবছিস?পূর্ণতা ছোট করে জবাব দিলো_
_কিছুনা।
___________________________________________
আরিফ শেখ বসার ঘরে সবাইকে জমায়েত হতে বলেছে।তিনি নাকি কী জরুরি কথা বলবেন।সেই ক্ষেএে পূর্ণ তাকেও তিনি থাকতে বলেছেন।পূর্ণতা বসার ঘরে এসে দেখে সবাই এসে হাজির।পূর্ণতা এগিয়ে গিয়ে মাহমুদার পাশে দারালো।আরিফ শেখ এবার পূর্ণতার উদ্দেশ্য বললো_
_দিদিভাই তুমি আমাকে ভরসা করোতো?পূর্ণতা সাথে সাথে জবাব দিলো _
_হ্যা দাদুভাই আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি।আরিফ শেখ এবার কালাম এর উদ্দেশ্য বললেন_
আমি পূর্ণতার খারাপ চাই না।ওর ভালো চাই বলে আমি চাই ও শহরে গিয়ে পড়াশুনা করুক।এই গ্রামের থেকে শহরের পড়াশুনার মান অনেক ভালো।আমি শুধু পূর্ণতার সপ্ন পূরনে ওকে সাহায্য করতে চাই।আরিফ শেখ এর কথায় কালাম বললো_
_কিন্তু বাবা সম্পর্ন নতুন একটা জায়গায় ও একা একা থাকবে কিভাবে?মাহমুদাও এবার বললো_
_ওকে একা ছারি কীভাবে? ওতো বাড়ির বাইরেই কখনো একা বের হয়নি।তাহলে ওতদুর থাকবে কিভাবে? আরিফ শেখ এবার বললেন_
_কে বলেছে ও একা থাকবে ওখানে?কালাম বললো_
_তাহলে?আরিফ শেখ এবার বললেন_
_আমার সুরাইয়ার সাথে কাল রাত কথা হয়েছে পূর্ণতা সুরাইয়ার বাড়িতেই থাকবে।তাছারা ওদের বাড়ির সাথেই কলেজ।কোনো অসুবিধা হবে না আশা করছি।এবার মাহমুদা আর কালাম স্বস্থির নিশ্বাস ছারলেন কেননা তারা সুরাইয়া বেগম কে বেশ ভালো করেই চেনেন....সুরাইয়া পূর্ণতাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন।
আরাফ এতোক্ষণ চুপচাপ সবটা শুনছিল ও ভেবে পাচ্ছে না ও কী বলবে?পূর্ণতা ওর থেকে এত দূর চলে যাবে?সবাই একটি বারো ভাবলো না আরাফের কথা ও কীভাবে থাকবে ওর পূর্ণ কে ছারা?আরাফ নিজেকে শান্ত রেখে আরিফ শেখ কে বললো_
_দাদুভাই যেহুতো পূর্ণতা ওখানে থাকবে তাহলে ওকে একবার জিজ্ঞেস করলে ভালো হয় না?যে ও শহরে থেকে পড়াশুনা করতে চায় নাকি এখানে?আরিফ শেখ এবার পূর্ণতার দিকে চাইলো তারপর বললো_
_তুমি কী চাও দাদুভাই?পূর্ণতা মাথা নিচু করে জবাব দিলো_
_তুমি যেটা ভালো মনে করো দাদুভাই।আমি জানি তুমি আমার খারাপ চাইবে না।আরিফ শেখ পূর্ণতাকে বললো_
_ঠিক আছে দাদুভাই তাহলে সামনের সপ্তাহে তুমি শহরে যাচ্ছো।আরিফ শেখ এর কথা শেষে যে যার রুমে চলে গেলো।পূর্ণতা একমনে খুশি হয়েছে যে ও শহরে গিয়ে পড়াশুনা করবে ওর সপ্ন পূরন হবে আবার খারাপ ও লাগছে নিজের কাছের মানুষদের থেকে দূরে চলে যাবে ও....ভেবেই দ্বীর্ঘশ্বাস ছারলো পূর্ণতা।
___________________________________________
রাতের খাবারের জন্য পূর্ণতা গিয়েছে আরাফ কে ডাকতে। আরাফ চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে। পূর্ণতার কন্ঠ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায় আরাফ।পূর্ণতাকে ইশারায় কাছে আসতে বলে..... পূর্ণতা গুটিগুটি পায়ে আরাফের সামনে গিয়ে দাড়ায়।আরাফ পূর্ণতার দিকে তাকায়,,পূর্ণতার নরম তুলতুলে হাত খানা নিজের হাতে নেয়।পূর্ণতা খানিকটা ভরকে যায়।
_পূর্ণ? আরাফের ডাকে পূর্ণতা কাপাকাপা গলায় বলে_
_কিছু বলবেন ভাইয়া?আরাফ দুইদিকে মাথা নারায় যার মানে না।পূর্ণতা মাথা নিচু করে আছে।আরাফ পূর্ণতার হাত ছেরে দিয়ে দাড়িয়ে পরলো।পূর্ণতা দুইপা পিছিয়ে গেলো।
_কী জন্য এসেছিস?কিছু বলবি? পূর্ণতা ছোট করে জবাব দেয়_
_আপনাকে নিচে খেতে ডাকছে।আরাফ চেয়ার ছেরে উঠতে উঠতে বললো_
_তুই যা আমি আসছি।আরাফের কথা শুনে পূর্ণতা নিচে চলে গেলো।
_____________________________________________
ফায়াদের বাসায় প্রেয়শী,আকাশ, নিধিরাসহ সবাই আড্ডা দিচ্ছে।ফায়াদ ওদের থেকে খানিকটা দূরে বসে আছে....প্রেয়শী অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছে ফায়াদকে ওদের সাথে আড্ডা দিতে ফায়াদ এক কথাই বলেছে_মাথা ব্যাথা করছে তোরা আড্ডা দে।প্রেয়শী হলো সুরাইয়া বেগম এর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মেয়ে আবার ফায়াদের ক্লাসমেট আবার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই এই বাড়িতে মাঝে মাঝেই আসা হয় প্রেয়শীর।ফায়াদের ক্লাসমেট হলেও ফায়াদের দুই বছরের ছোট প্রেয়শী।
_মোবাইলে পূর্ণতাকে দেখছিস নাকি?আকাশের এমন খোচা মারা কথায় ফায়াদ আকাশের মুখে বালিশ ছুরে মারে।আকাশ হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো_
_সত্যি কথা বললেই দোশ?প্রেয়শী আকাশের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বললো_
_এই পূর্ণতা আবার কে?আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফায়াদ শাসিয়ে বলে_
_যদি উল্টোপাল্টা কিছু বলেছিস তো তোর খবর আছে।আকাশ চোখমুখ কুচকে বললো_
_পূর্ণতা ওর মামতো বোন।প্রেয়শী ছোট করে বললো_
_ওহ।বোকা প্রেয়শীতো আর জানে না তার সপ্নের পুরুষ অন্য এক রমনীকে মন দিয়ে বসে আছে।
____________________________________________
পূর্ণতা জামাকাপড় ভাজ করছে আর জান্নাত পূর্ণতার পাশে মন খারাপ করে বসে আছে।দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলে।কালকে পূর্ণতা শহরে চলে যাবে।এই নিয়ে জান্নাতের মন খারাপ। এই পুরো বাড়িতে পূর্ণতাই ওর একমাত্র সাথী।
_মন খারাপ করিস না বোন আমার।পূর্ণতার কথায় জান্নাত মুখ ঘুরিয়ে বললো_
_তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে গল্প করবো?কার সাথে ঘুমাবো?কার সাথে সব কথা মন খুলে বলবে?আমি একদম একা হয়ে যাবো আপু বলতে বলতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো জান্নাত।পূর্ণতা জান্নাত কে বুকে আগলে নিয়ে বললো_
_তুই একা হবি কেন?আমি কী মরে যাচ্ছি নাকি?আর ওখানে থাকলেই কী?বাড়িতে তো কয়েকদিন পর পরই চলে আসবো। আর তাছারা ফোন আছে না?আমাদের প্রতিদিনই কথা হবে।মন খারাপ করে না সোনা। জান্নাতের কান্না থামলেও হিচকি থামলো না।পূর্ণতা জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর এটা সেটা বলে শান্তনা দিচ্ছে। পূর্ণতার নিজেরও অনেক বেশি খারাপ লাগছে।
.
.
.
.
চলবে..🦋
((পরবর্তী পর্ব দিতে দেরি হবে))
402 Views
4 Likes
5 Comments
4.0 Rating
Rate this: