তোমার অপেক্ষায়

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
দেখতে দেখতে সিনথিয়ার বিয়েও হয়ে গেলো।আজকে বিকালে সুরাইয়া বেগমও চলে যাবেন,, যদিও আরিফ শেখ আরো কিছুদিন থেকে যেতে বলেছেন কিন্তু সুরাইয়া বেগম বলেছেন_অনেকদিন থাকলাম তো ফায়াদেরও আর ছুটি নেই।ওরা ছুটি পেলে আবারো আসবো বাবা।তাই আরিফ শেখও আর কিছু বলে নাই।ফায়াদরা আজ চলে যাবে যার জন্য বাড়িতে হরেকরকম রান্নার আয়োজন চলছে,, সুরাইয়া বেগমের বহু মানার পরেও তার কথার পাত্তা দেয়নি আরিফ শেখ।
__________________________________________
নিধি ফায়াদরা সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছে কেননা আজকেই তাদের এই বাড়িতে শেষ দিন।
_আমার না যেতে মন চাচ্ছে না।ফারিনের কথায় ফায়াদ বললো_
_তাহলে তুই থেকে যা।ফারিন এবার রেগে বললো_
_তুমি একদম কথা বলবে না ভাইয়া।তোমার জন্যেই আজকে যাওয়া হচ্ছে। নাহলে আরো কিছুদিন থাকতে পারতাম।
_আহারে আমার বনুটা তাহলে তুই থেকে যা আমি পরে তোকে দিয়ে আসবোনি।আরাফের কথায় ফারিন বললো_
_তার আর দরকার নেই ভাইয়া,, তুমি তোমার প্রানপ্রিও বন্ধু কেই রেখে দাও।নিধি পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে বললো _
_আমি তোমাকে অনেকক মিস করবো।পূর্ণতাও মন খারাপ করে বললে_
_আমিও তোমাকে অনেক মিস করবো নিধি আপু।
অনিকের বার বার কল আসছে কিন্তু রিসিভ না করে বার বার কল কেটে দিচ্ছে। ব্যাপারটা ফায়াদ খেয়াল করে বললো_
_ফোন ধরছিস না কেনো?ফায়াদের কথায় অনিক বললো_
_না এমনেই...ইম্পর্ট্যান্টস কেও না।
_ওর গার্লফ্রেন্ড বার বার ফোন করছে তাই আমাদের সামনে ধরছে না।আকাশের কথায় নিধি বললো_
_ফোনটা রিসিভ করে লাউডে দাওতো ভাইয়া..অনিক বললো_না না লাউডে দেওয়া লাগবে না ওদের কথার মধ্যেই অনিকের ফোন আবার বেজে ওঠে আকাশ অনিকের থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে লাউডে দিয়ে অনিকের সামনে ধরে...ওপাশ থেকে অনিকের গার্লফ্রেন্ড সুমি বলে_
_তুমি আমার ফোন ধরছো না কেনো?
_ব্যাস্ত ছিলাম।অনিকের কথায় সুমি বললে_
_তুমিতো সবসময়ই ব্যাস্ত থাকো। কি করো এখন?
_ফ্রেন্ডস দের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম... তুমি?সুমি বললো_
_আমি বসে আছি।আচ্ছা ফ্রি হয়ে আমাকে ফোন দিও।
_ঠিক আছে।
_আই লাভ ইউ বাবু.... উম্মাহ।সুমির কথায় আর কোনো উত্তর না দিয়ে কল কেটে দিলে অনিক। সবাই মিটি মিটি করে হাসছে।আরাফ মন খারাপের ভান করে বললো_
_তোমাদেরই দিন আমাদের কপালে গার্লফ্রেন্ড নাই।
_আই লাভ ইউ বাবু... উম্মাহ আকাশের অভিনয় দেখে সবাই হোহো করে হেসে উঠলো।অনিকতো লজ্জায় চোখমুখ কুচকে ফেললো।এই বিচ্ছুদের সামনেই সুমির ফোন দিতে হলো??
__________________________________________
সুরাইয়া বেগমরা চলে চলে যাচ্ছে। জান্নাত আর পূর্ণতা গুটি গুটি পায়ে সিড়ি কোঠায় দাড়িয়ে আছে তাদের ভীষণ খারাপ লাগছে এত দিনে বাড়িটায় কী হৈচৈ আনন্দ ছিলো আর এখন ওরা চলে গেলে একদম নিরিবিলি জনমানবশূন্য হয়ে যাবে বাড়িটা।
_তোরা কী ওখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি? ফুপিকে বিদায় দিবি না?সুরাইয়া বেগম এর ডাকে।দুইজনই এগিয়ে আসে। সুরাইয়া বেগম দুইজনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন_
_মন খারাপ করিস না মা।আবার আসবো।আর কয়েকদিন পর তোরাও চলে আসবি আমার কাছে কয়েকদিন থেকে আসবি ঠিক আছে?পূর্ণতা আর জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো_
_ঠিক আছে ফুপি।সুরাইয়া বেগম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো।ফায়াদ পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা।ফায়াদের ভীষণ মায়া হলো।ফায়াদ ওখানে গিয়ে পূর্ণতাকে যতটা মনে করবে... পূর্ণতার কী ফায়াদের কথা মনে পরবে??নাকি ভুলে যাবে?মূহুর্তেই পূর্ণতার চোখের সামনে রাস্তা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে সাই সাই করে গাড়ি দুটি গন্তব্যের উদ্দেশে চলে যায়।পূর্ণতা একমনে চেয়ে থাকে গাড়ি যাওয়ার দিকে।
_________________________________________
ফায়াদরা চলে গিয়েছে আজকে তিনদিন হলো। বাড়িটা আবারো কেমন নিরিবিলি হয়ে গিয়েছে। পূর্ণতা জানালার ধারে বসে আছে। দৃষ্টি তার আকাশের দিকে।ফায়াদ ওইদিন ওর কীভাবে চুল খুলে দিলো আবার ফায়াদের সেই শীতল দৃষ্টি..... কথাগুলে মনে করতেই মেরুদণ্ড বয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় পূর্ণতার।নিজে নিজেই লজ্জা পায় পূর্ণ। লেকটাকে ভীষণ মনে পরছে পূর্ণতার।আচ্ছা ফায়াদও কী পূর্ণতাকে মনে করছে নাকি ভুলে গিয়েছে?? মূহুর্তেই মন খারাপ হয়ে যায় পূর্ণতার।তখনিই নিচ থেকে ডাক আসে পূর্ণতার।মাহমুদার ডাক কানে আসতেই তড়িঘড়ি করে বের হয় পূর্ণতা।

নিচে গিয়ে দেখতে পায় তার মামাতো ভাই সিমন এসেছে।সিমন পূর্ণতাকে আপন বোন এর থেকে কম আদর করে না।পূর্ণতাও সিমন কে আপন ভাইয়ের মতোই দেখে।তাইতো সিমন কে দেখে পূর্ণতার মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়।এগিয়ে যায় সিমন এর দিকে।

_কেমন আছো ভাইয়া।পূর্নতার কথায় সিমন বললো_
_ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
_আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো।সিমন এর পাশে আরাফ ও বসে ছিলো।
_কী মনে করে এলে?হঠাৎ?? পূর্ণতার কথায় সিমন বললে_
_কেন আসতে পারি না?
_না আমি সেটা বলিনি। তুমিতো এমনিতে আসো না,, কোনো কাজে আসছো নাকি ওইটা বললাম।পূর্ণতার কথায় সিমন বললো_
_হ্যা একটা কাজে এসেছি।
_কী কাজ?
_তোকে নিতে এসেছি।দাদুর শরীরটা বেশি ভালো না.. বার বার তোকে দেখতে চাইছে।তাই তোকে নিতে আসলাম।ফুপি আর আঙ্কেল কে বলেছি দাদু কেও বলেছি। তুই এখন ফটাফট রেডি হয়ে নে।ওদের কথার মধ্যেই মাহমুদা ট্রেতে খাবার নিয়ে আসে সিমন এর জন্য।
_এসব এর কী দরকার ছিলো ফুপি?সিমন এর কথায় মাহমুদা বললো_
_সেকি না খেয়ে যাবি নাকি?পূর্ণতা তৈরি হতে হতে তুই কিছু খেয়ে নে।মাহমুদা খেয়াল করলো পূর্ণতা তার দিকে তাকিয়ে আছে।মাহমুদা পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য করে বললো_
_যা তৈরি হয়েনে।তোর দাদু অনুমতি দিয়েছেতো যা যা।পূর্ণতা এবার একটু স্বস্থির নিশ্বাস ছারলো।পূর্ণতা তৈরি হতে চলে গেলো।আরাফ মন খারাপ করে বসে আছে। এই দুইদিন সে পূর্ণতাকে না দেখে কীভাবে থাকবে??আবার কিছু বলতেও পারছে না কেননা যেখানে আরিফ শেখ নিজেই অনুমতি দিয়েছে সেখানে আরাফ এর আর কী বলা থাকে??
আরাফ এর ভাবনার মাঝেই পূর্ণতা এসে হাজির।পূর্ণতার পরনে কালো থ্রিপিস,, হাটু অবদি চুলগুলো বেনি গাথা মাথায় ঘোমটা টানতে টানতে সিমন এর কাছে এসে বললো_
_আমি তৈরি ভাইয়া।সিমন এবার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পূর্ণতাকে নিয়ে রওনা করলো।
________________________________________
ফায়াদ নিজ চেম্বারে বসে আছে।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে একমনে কিছু ভেবে চলছে ফায়াদ।পূর্ণতাকে দেখে না আজ চার দিন।এই চারদিনই কেমন হাসফাস করে কেটেছে ফায়াদের।তাহলে বাকি জীবন কেমনে থাকবে এই মেয়েকে ছাড়া?? এই মেয়েকে ফায়াদের চাই চাই যাই হয়ে যাক।
_স্যার??নার্স এর ডাকে ধ্যান ভাংলো ফায়াদের।
_হ্যা বলো।
_আপনি লাঞ্চ করবেন না?
_নাহ পরে করবো
_ঠিক আছে স্যার।এই বলে নার্স চলে গেলো।তখনই ফায়াদের চেম্বারে হুরমুরিয়ে ঢুকলো প্রেয়সী। ফায়াদ প্রথমে হকচকিয়ে উঠলো পরক্ষনে প্রেয়সী কে দেখে স্থীর হলো।
_এভাবে দৌড়ে আসার মানে কী প্রেয়সী??তুই কী বাচ্চা নাকি?ফায়াদের কথায় প্রেয়সী বললো আগে পানি দে।
ফায়াদ দেখলো প্রেয়সী রিতীমত হাঁপাচ্ছ। ফায়াদ পানির বতল এগিয়ে দিলে প্রেয়সীর দিকে। প্রেয়সীও ঢক ঢক করে পানি খেয়ে পুরো বতল খালি করে ফেললে।
_কী হয়েছে বল এই সময় এখানে আসলি কেন??ফায়াদের কথায় প্রেয়শী ফায়াদের দিকে পিটপিট করে চাইলো ফায়াদ এখনো প্রেয়সীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রেয়সী পানির বোতল টা টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললে_
_তোকে দেখতে মন চাইলো তাই চলে আসলাম।ফায়াদ আগে থেকেই জানতো প্রেয়সীর উত্তর সম্পর্কে। আজকাল এই মেয়েটা ফায়াদের জন্য একটু বেশি পাগলামো করছে।ফায়াদ বেশ বিরক্ত হয় কিন্তু কিছু বলে না কারন একটাই ফায়াদের ছোট বেলার বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা।ফায়াদ প্রেয়সীকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবলেও প্রেয়সী ফায়াদকে অনেকক ভালোবাসে।প্রেয়সী যত বার ফায়াদকে ভালোবাসার কথা বলেছে ফায়াদ তত বারি এড়িয়ে গিয়েছে।
_এই পর্যন্ত কতগুলো বিয়ে ভাংলাম জানিস??ফায়াদ ফোনে দৃষ্টি রেখেই বললো_
_বিয়ে করে নে।এমন পাগলামো করিস না।প্রেয়সী পাত্তা না দিয়ে বললো_
_চল কোথাও ঘুরে আসি।
_ব্যাস্ত আছি আমি।তাছারা দেখিস না বাইরে কেমন রোগীর সিরিয়াল লেগে আছে।প্রেয়সী রাগে দুঃখে ফায়াদ কে বকতে বকতে চলে গেলো।কেননা প্রেয়সী খুব ভালোভাবেই জানে প্রেয়সী এখন কান্নাকাটি করে মরে গেলেও ফায়াদ এখন ওর সাথে যাবে না।প্রেয়সীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়াদ দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললো।
মেয়েটার পাগলামি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
.
.
.
.
চলবে.... 🦋
173 Views
2 Likes
2 Comments
5.0 Rating
Rate this: