তুমি হীন পাট ৪
(মানুষ হাসলে বুঝি অদ্ভুত সুন্দর লাগে) লাকি কেমনে হাসতেছে সেইটা কল্পনা করতেছে নিলয়।
হঠাৎ হাসি থেমে গেলো কথা বলা ও বন্ধ হয়ে গেলো। লাকি অজ্ঞান হয়ে গেছে। নিলয়ের বুকটা কেঁপে উঠল লাকি কে ডাকতেছে কিন্তু লাকি চুপচাপ হয়ে আছে। নিলয়ের চোখে পানি চলে এসেছে। লাকি কে হারানোর এক অদ্ভুত কষ্ট মনে নাড়া দিতেছে ভয় লাগতেছে কি হলো কি থেকে। বারবার লাকি কে ডাকতেছে কিন্তু কোনো নড়াচড়া নাই। এবার আর নিলয় কান্না কন্ট্রোল করতে পারলো না কান্না করেই দিলো। লাকি কে জরিয়ে ধরে কান্না করতেছে। রিকশাওয়ালা মামাকে হাসপাতালে নিতে বললো নিলয়। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম আশেপাশে কোনো মেডিকেল ও নাই। নিলয় ভেবে কুল পায়না কি করবে সে। কি করা উচিত। বারবার শুধু আল্লাহ কে ডাকতেছে লাকির যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
যে মানুষটা সবসময় হাসিখুশিতে কোথায় মাতিয়ে রাখতো আজ সেই মানুষটা এখন নিশ্চুপ হয়ে আছে। নিলয়ের চোখ যখনই লাকির মুখের দিকে পড়ে তখনই কেমন করে জানি বুকটা কেপে উঠে। কান্নায় মনে হয় চোখ দুটোও বের হওয়ার মতো অবস্থা।
রাস্তায় জ্যাম খুলছে।
রিকশা থেকে নেমে লাকি কে কোলে নিয়ে হাসপাতালে ঠুকলো নিলয় ডাক্তার কে ডাকতেছে কিন্তু কোনো কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। তবুও নার্স গুলো বুঝে গেলো। জুরুরি বিভাগে এডমিট করা হলো ডাক্তার দেখতেছে লাকি কে। নিলয় বাইরে বসে আছে নিজের মধ্যে নিজেই নাই। কোনোভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। কিছু ক্ষণ পর ডাক্তার বের হলো নিলয় ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলো ডাক্তার লাকি কেমন আছে, তার জ্ঞান ফিরেছে।
"মিয়া এখন আর অবহেলা করা যাবে না আপনার Wife কে এবার একটু বেশি কেয়ার করবেন, ভারি কাজ করতে দিবেন না। আর এখন মিস্ট্রি আনুন। ( ডক্টর বললো)
নিলয় কিছুই বুঝলো না। তবুও জিজ্ঞেসা করলো ডক্টর লাকি কেমন আছে তার জ্ঞান ফিরেছে তো, আর আপনি কি বলতেছেন কিছু বুঝতেছিনা।
বুঝতে হবে না। আপনার Wife ভালো আছে, আর আগে মিস্ট্রি মুখ করান, আচ্ছা শুনেন তাহলে নতুন সদস্য আসতেছে আপনাদের মাঝে, তাই লাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিলো (ডক্টর বললো)
নিলয়ের মাথার উপর দিয়ে সব কথা গেলো। কিন্তু মনের ভিতর কোনো কষ্টের আভাস নাই সব দূর হয়ে গেছে এক সেকেন্ডই নিলয় অনুভব করলো কোনো কষ্ট হচ্ছে না তার কিন্তু চোখে পানি এসেছে, এই পানি কষ্টের না সুখের পানি তাদের নতুন সদস্য আসতেছে এই খুশিতে, লাকির জ্ঞান ফিরেছে। ডক্টর আমি লাকির সাথে দেখা করতে পারি।
ডক্টর : জ্বি অবশ্যই। আপনি করবেন না তো আমি করবো যান।
নিলয় দৌড়ে লাকির কাছে গেলো। লাকি গেইটের দিকে তাকায় ছিলো দেখলো যে নিলয় দৌড়ে আসতেছে। লাকির ঠোঁটে মুচকি হাসি। নিলয় তাকিয়ে আছে। কারো মধ্যে কোনো কথা নেই। নিলয় লাকির মাথায় একটা চুমু দিল। লাকি লজ্জা পেয়ে গেলো। এই প্রথম নিলয় এতো আদর করে কপালে চুমু দিলো।
কিহ ম্যাডাম জ্বী কি অবস্থা ভালো আছেন তো। ডক্টর কি বললো শুনছেন কিহ..( নিলয় বললো)
লাকি কিছু বললো না। শুধু নিলয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষটাকে আজকের মতো এততোটা খুশি কোনোদিন ও হতে দেখেনাই। নিলয়ের মুখে খুশির এক অন্য মায়া জমে গেছে। নিলয় কে ও আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগতেছে।
কিহ কথা বলবেন না..( নিলয় বললো)
হুম ডক্টর বলছে। শুনছি। খুশি হয়েছেন।
হুম অনেক ।
*আচ্ছা আপনি ছেলে বাবু হলে খুশি হবেন না-কি মেয়ে হলে। ( লাকি বললো)
নিলয়: এটা আবার কেমন প্রশ্ন ছেলে বাবু আসুক আর মেয়ে, যেটাই আসুক আসবে তো তাই আমি অনেক হ্যাপি। কারণ আল্লাহর সৃষ্টি দু'টোই বুজলে মহারানী।
লাকি: হুম। বুঝছি। বাসা কখন যাবো এখানে থাকার ইচ্ছে করতেছে না।
নিলয়: দেখি ডক্টর কি বলে।
নিলয় বের হলো বের হয়ে দেখতেছে রিকশাওয়ালা মামা। নিলয়ের রিকশাওয়ালা মামার কথা এক বিন্দু ও মনে ছিল না।
সরি মামা আপনার কথা তো ভুলেই গেছিলাম। আপনিও কেমন আমার কাছে গিয়ে তো বলতে পারতেন। শুধু শুধু এতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হইলো।
* কোনো সমস্যা নেই মামা। মামি ভালো আছে সেটাই অনেক। ডক্টরের কাছে শুনলাম। তো মিস্ট্রি কখন খাওয়াবেন।
* হুম দোয়া করবেন। নিলয় পকেট থেকে যতো ভাড়া হয়ছিল সেটা বের করলো। এই নেন মামা আপনার ভাড়াটা শুধু শুধু এতোক্ষণ অপেক্ষা করলেন তখনই যদি দেখা করতেন তাহলে তখনই দিয়ে দিতাম।
* মামা তখন যাচ্ছিলাম, ভাবলাম যে আপনার কাছে টাকা আছে কি নাই আবার এখানে দিতে হবে তাই শেষে টাকা থাকলে নিবো না হলে নাই সেটার জন্য।
* আরে মামা টাকার সমস্যা নাই এই নেন আপনার টাকা আর এই ২০০ টাকা বকসিস নেন বাসায় মিস্ট্রি নিয়ে যাইয়েন। মামির জন্য।
* আচ্ছা মামা তাহলে যাই ভালো থাকবেন।
রিকশাওয়ালা মামা চলে গেলো নিলয় তাকিয়ে আছে আর ভাবতেছে, মানুষের মন সত্যি অনেক ধনী রাও এতোটা ভাবতোনা কারো ব্যাপার নিয়ে। যাইহোক
নিলয় ডক্টর এর কাছে গেলো। ডক্টর কিছু ওষুধ লিখে দিলো আর বললো টাইমলি ওষুধ খাইতে মিস যেনো না হয়।
জ্বী আচ্ছা।
লাকিকে নিয়ে বাসায় আসলো সাথে ২ কেজি মিস্ট্রি। নিলয় বাসায় ঢুকতেই বাবা-মা বলে ডাকতে লাগলো।
নিলয়ের মা আমেনা বেগম বারান্দায় বের হয়ে আসলো, কি হয়েচে বাবা এভাবে ডাকতেছিস কেন। আর হাতে মিস্ট্রি কোনো।
* মা- বাবা কোথায়, এই রে নিলয় এখন হুস ফেরলো এই খবর টা কেমনে দিবে। কি বলবে মা আমি বাবা হতে চলিতেছে, বাবা আমিও এখন তোমার মতো বাবা হতে চলছি। আমিও বাবা ডাক শুনতে পারবো। না না না নিলয় একটু লজ্জাবতী ছেলে অনেক লজ্জা পায়।
মায়ের হাতে মিস্ট্রি দিয়ে মাথা নিচু করে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। নিলয়ের মা কিছুই বুঝতেছে না। লাকি কে জিজ্ঞেসা করলো কি হয়েছে বউমা।
লাকি ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তারপর বললো মা আপনি দাদী হতে চলেছেন। এই বলে লাকি ও রুমে চলে আসলো কিন্তু দরজা বন্ধ। নিলয় কে ডাকা শুরু করলো এই দরজা খুলেন আমি ভেতরে যাবো।
কয়েকবার বলার পর নিলয় দরজা খুলে দিল। লাকি কে ভেতরে নিয়ে দরজা আবার বন্ধ করে দিল।
* এই দরজা কেন বন্ধ করলেন।
কথাটা শেষ না হতেই নিলয় লাকিকে জরিয়ে ধরলো। আর কি*স করতে লাগলো। লাকি কিছু বলতে যাবে বাট আর পারলো না।
এদিকে নিলয়ের মা আমেনা বেগম এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে ও হাসি।
কেটে গেলো ৩ টা মাস। নিলয় লাকিকে অনেক যত্নে রাখে। অফিস থেকে এসে যেটুকু সময় পায় সেটুকুই অনেক কেয়ার করে। লাকি কে কোনো কাজ করতে দেয়না আমেনা বেগম। তবুও লাকি জোর করে রান্নার কাজে সাহায্য করে। বাসার সবাই লাকিকে অনেক যত্নে রাখে। কোনো কিছুর কমতি হতে দেয়না। লাকি কখনো কখনো আমেনা বেগমের ব্যবহারে চমকে যায়। একটা মানুষ কেমনে এততো টা সুন্দর মনের মানুষ হতে পারে সেই মানুষ টার কোনো যায়গায় হিংসা বলতে কোনো কিছু নাই।
লাকি কে প্রতিদিন জিজ্ঞেসা করবে কোনো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে করতেছে নাকি। লাকি ও বলে মাঝে মধ্যে তখন সেটাই রান্না করে খাওয়ায়।
লাকি আজো ভীষণ অবাক হয় এমন শ্বাশুড়ি পেয়ে। নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে। আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
নিলয়ের পরিবারে কোনো দুঃখের ছায়া নাই। কোনো হিংসা নেই কারো মনে। সবাই ফ্রী মানুষ। সবসময় হাসিখুশি তে হইহট্টগোলে কেটে যায় সময়।
***🚫 জীবনে সুখী হতে হলে বেশি কিছু করতে হয়না শুধু মনে যে হিংসা টা আছে সেটা থেকে দূরে থাকলেই জীবন সুন্দর, সুন্দর আসেপাশের মানুষ, সুন্দর জীবনের পথ চলা।🚫***
আজকে শুক্রবার বার নিলয়ের অফিস বন্ধ আছে। আজকে লাকি আর শান্তিতে থাকতে দেবেনা। সারাদিন সারাক্ষণ শুধু লাকি কে প্রশ্ন করতে করতে মাতিয়ে রাখবে। লাকি সহ্য ও করতে পারেনা তবুও সহ্য করে নিতে হবে। যদি বলে যে বিরক্ত করিয়েন না আর তবে তখন আরো বেশি করে বিরক্ত করবে।
যেমন একদিন বলছিলো* সেদিন ও শুক্রবার ছিলো দুপুর বেলা বিছানায় শুয়ে ছিল লাকি নিলয়। নিলয় একটা থেকে একটা প্রশ্ন করতেছেই আর লাকি শুধু হুম, হুম, হুম উওর দেয় যদি ও হুম উওর না। অনেক বিরক্ত হওয়ার পর লাকি শুধু বলছিল যে আর বিরক্ত করিয়েন না প্লিজ। এবার চুপ করে ঘুমিয়ে পরেন।
হায় হায় তখন আরো বেশি বেশি প্রশ্ন করতে লাগলো কথা বলতে লাগলো। আগে হুম উওর দিলেই হইতো আর এখন রচনার মতো উওর দিতে হবে না হলে যতগুলোর উওর দেবে না ততোগুলো কি*স দিতে হবে।
আরেক দিন সেম সেটাই করছিলো।
সেইদিন থেকেই এই ভুল আর করবে না বলেই সেদিনেই কানে ধরছিল লাকি।
লাকি শুয়ে আছে আর নিলয় তার পাশে বসে আছে একটার পর একটা কথা বলতেছেই।
লাকি শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। আর ভাবনায় সেই মানুষটা পাগলামির বিষয় গুলো কথা গুলো প্রশ্ন গুলো। মানুষ টা এততোটা ভালো কোনো।
নিলয় যত বড়ো প্রশ্ন করুক না কেন উওর শুধু হ্যা/ না রাখবে। আর লাকিও জবাব দেয়।
এভাবেই পাগলামি/ ভালোবাসায় কেটে যায় দিন গুলো।
তাসফিয়ার কথা মনে আছে। মুমমুম এর বান্ধবী। ডাক নাম তাসু। চলেন এবার তাসুর কি অবস্থা জেনে আসা যাক।
তাসুর আজকে ভীষণ মন খারাপ। কোনো কিছুতেই মন বসে না। বার বার শুধু মুমমুম এর কথা মনে পড়তেছে। মুমমুম কে দেয়া কথা সে এখনো পূরন করতে পারে নাই। নিলয়কে একটা চিঠি দিতে বলছিল। সে বলছিল নিলয়ের বিয়ের পর সেই চিঠিটা তার হাতে দিতে কিন্তু নিলয়ের ও বিয়ে হয়ে গেছে এখনো দেয়া হয় নাই। নিলয়ের ফোন নাম্বার ও নাই যে ফোন করবে। তাসু বাইরে বের হলেই নিলয় কে খুঁজতে থাকে যদি দেখা হয় সেই চিঠিটা দিয়ে দিবে।
অজান্তেই চোখের কোণো পানি চলে এসে গেছে। এইটা ভেবে যে মুমমুম কেমন আছে। কতদিন তার সাথে দেখা হয়না। কথা হয়না। দুই বান্ধবী মিলে আড্ডা দেওয়া হয়না। মুমমুম কে দেখার এক আকাশ সমান ইচ্ছে কিন্তু করার কিছু না-ই। কারণ যেই মানুষটা এই দুনিয়াতেই নাই তাকে দেখতে পাবে কেমনে।
মুমমুম মারা গেছে। 😶 সেইটা এখনো নিলয় জানে না। মুমমুম নিলয় কে তার মৃত্যুর খবর কখনো জানাতে দেয়নাই। যেনো নিলয় কোনো ভাবে তার মৃত্যুর খবর জানতে ও না পারে। মুমমুম জানে তার মৃত্যুর খবর শুনলে নিলয় আরো ভেঙে পড়বে। এমনকি তার সাথে উপরে দেখা করার নাম করে সে সুইসাইড করার ও দ্বিধা করবে না। নিলয়ের পাগলামি কেমন, আর কতটা তার জন্য পাগল সে জানে। শুধু বিয়ের পর সেই চিঠিটা দিতে বলছে। তাসু কে ও পড়ার অনুমতি দেয় নাই। তাই তাসু ও তার শেষ কথা রাখছে। একবার ও পড়েনাই। তাসুর চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পানি ঝড়ে পড়তেছে।
নিলয় আজকে লাকি কে ডক্টরের কাছে নিয়ে আসছে। ডক্টর দেখে চেক করে বললো যে বাচ্চা- মা দু'টোই ভালো আছে কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে।
নিলয়: কি সমস্যা ডক্টর কি হয়েছে।
ডক্টর: তেমন বড় ধরনের কিছু না ওষুধ লিখে দিচ্ছি টাইমলি খাওয়াবেন। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন যেনো বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হয়।
নিলয়: আচ্ছা। ডক্টর কি সমস্যা হয়েছে সেটা তো বলেন।
ডক্টর; তেমন কিছু না ওষুধ খেলেই সেরে যাবে।
তারপর বাসার দিকে রওনা হলো। হঠাৎ পিছন থেকে মেয়ের কণ্ঠে ভেসে এলো * আপনি কি নিলয় ভাইয়া।
নিলয় পিছনে ঘুরে তাকালো কিন্তু মেয়েটা তার অচেনা। জ্বী আপনি কে।
** আমি তাসফিয়া মুমমুম এর বান্ধবী।
মুমমুম নামটা শুনে নিলয়ের বুকটা কেপে উঠলো। নিজেকে অন্য রকম লাগতেছে। লাকি পাশে ছিল লাকি বুঝতে পারলো নিলয় অন্য রকম করতেছে। নিলয়ের হাতে হাত রাখলো লাকি। নিলয় কারো স্পর্শ পেয়ে ভম কেটে গেলো তারপর লাকির দিকে তাকালো কিন্তু এখন আর কষ্ট হয়না। মুচকি হাসি দিয়ে তাসফিয়া কে জিজ্ঞেসা করলো কেমন আছেন।
** হুম ভালো আছি আপনি কেমন আছেন। আর এটা কে ভাবি নাকি।
** জ্বী
" ওহ আচ্ছা। ভাবি ভালো আছেন।
** হুম ভালো আছি।
**আচ্ছা তো ভালো থাকিয়েন। এখন বাসায় যাইতে হবে। ( নিলয় বললো)
** আচ্ছা আপনি ও ভালো থাকবেন।
তাসফিয়া বলতে চেয়েও বলতে পারলো না * ভাইয়া আপনার সাথে কথা ছিল। মুমমুম একটা চিঠি দিয়েছে সেই চিঠিটা দিবো। পাশে লাকি থাকায় আর আজকে ও দেয়া হলো না। কবে যে দেয়া হবে চিঠিটা।
কেটে গেলো ৩ টা মাস।
নিলয় অফিস থেকে আজকে বিকাল ৫ টায় ছুটি নিয়েছে। লাকি যেতে বলছে ছুটি নিয়ে। আর নিলয় তো লাকির কথা ফেলতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে ছুটি নিতে হয়েছে।
অফিস থেকে একটু হেঁটে গেলেই বাসস্ট্যান্ড। তাই হেঁটে চলেছে। আর ভাবনায় লাকি।
হঠাৎ মনে হলো কেউ ডাকতেছে। তাই ভাবনা থেকে ফিরে আসে। পিছন ঘুরেই দেখতে পেলো একটা মেয়ে।
** ভাইয়া কেমন আছেন।
** জ্বী ভালো আছি। আপনি কে চিনলাম না।
** আমি তাসফিয়া, মুমমুম এর বান্ধবী।
-- আবার ও এভাবে মুমমুম নাম শুনতে হবে সেটা ভাবনার বাইরে ছিলো এখন তো লাকি ও নেই কে হাতে হাত রেখে নিজেকে নিজের ভেতরে এনে দিবে।--
কিছু বলছে না নিলয় দাড়িয়ে আছে পাথর হয়ে গেছে দেখে বোঝা যাচ্ছে। কোনো নড়াচড়া নাই।
** ভাইয়া কি হলো।
** এবার নিলয় স্বাভাবিক হয়ে বললো, হুম মুমমুম কেমন আছে।
** ভাইয়া মুমমুম। এর কথা বলার জন্য ডাক দিলাম আপনাকে।
** ওও কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি মুমমুম এর। ভালো আছে তো।
তাসফিয়া কিছু বললো না। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
** আচ্ছা ভাইয়া আপনাকে কিছু দেয়ার ছিল। মুমমুম আপনাকে দিতে বলেছে। চলেন কোনো এক জায়গায় বসি।
** নিলয় অবাক হলো মুমমুম তার জন্য কিছু দিয়েছে।
সেটা দেখার জন্য রাস্তায় ঐপাশে একটা বসার জায়গা ছিলো সেখানে গিয়ে বসলো।
** হুম বলো কি অবস্থা মুমমুমের ভালো আছে তো।
নিলয় আবারো জিজ্ঞেসা করলো। তবুও তাসফিয়া কিছু বললো না।
ভাগ্য ক্রমে আজকে ব্যাগে চিঠি টা নিয়ে এসেছে। অবশ্য যখনই বাইরে বের হয় সাথে চিঠি টা ও নিয়ে বের হয়। কারণ যদি নিলয়ের দেখা হয়ে যায়। যেমন আজকে দেখাও হয়ে গেলো।
তাসফিয়া ব্যাগ থেকে চিঠিটা বের করে নিলয়ের হাতে দিলো। নিলয় আরও অবাক হলো চিঠি কেনো।
** এই চিঠি টা কি মুমমুম দিয়েছে আমাকে।
** হুম এটাই। এটাই দেয়ার ছিলো। আপনি কি এখানে পড়বেন নাকি বাসায় গিয়ে।
** আগে বাসায় যাই তারপর বাসায় পড়তে হবে।
** আচ্ছা তো ভালো থাকিয়েন বায়।
** আচ্ছা আপনিও।
এই বলে নিলয় বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
আর তাসফিয়া অন্য দিকে।
তাসফিয়া আজকে অনেক বড়ো ওয়াদা থেকে মুক্তি পেলো। কিন্তু মনে একটা কথা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই চিঠিতে কি মুমমুম তার মৃত্যুর কথা লিখছে। নাকি অন্য কিছু। যদি মৃত্যুর কথা লিখছে সে যদি জানাতেই চায় তাহলে আমাদোর কে কেনো জানাতে দিলো না। তাসফিয়া এই প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই উওর খুঁজে পাচ্ছে না।
নিলয় খুব যত্ন করে বুকের বা পাশের পকেটে রেখে দিলো চিঠিটা।
বাস চলতেছে নিজ গন্তব্যে। আজকে নিলয়ের ভাবনায় লাকি নেই আছে মুমমুম। অনেক দিন পর মুমমুম কে এতোটা গভীর ভাবে ভাবতেছে। মনে পড়তেছে পুরনো দিনের সৃতি গুলো। এ যেনো কোনো এক নতুন ভাবনা। নতুন রাজ্য। মুমমুমের হাসি ভরা মুখটা ভেসে আসতেছে। আসতেছে তার সাথে কথা বলার মূহুর্ত গুলো। মনে পড়তেছে তার সাথে দেখা স্বপ্ন গুলো। এই বাসের কথা তো বলছিল যে একদিন শুধু বাস এ করে ঘুরবে। পাশে বসবে। মাথা রাখবে কাঁধে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে হবে। গল্প শোনাতে হবে। ঘুমিয়ে পড়লে ডাকে তুলতে হবে। বাদামের খোসা তুলে দিয়ে খাওয়ায় দিতে হবে। সে-ই আরো কত রকমের স্বপ্ন ছিলো। সেই সব স্বপ্ন স্বপ্নই আছে। শুধু পূরণ করার মানুষটা নেই।
এলোমেলো সব দিন গুলো সাজাতে হবে মনের মতো করে। এটা ছিলো মুমমুমের ডাইলোক। যখনই কিছু হবে এটা বলবে আর জ্ঞান দিতে থাকেবে।
চোখ বন্ধ করে খুব করে ভাবতেছে। সে যেনো বাসের সিটে বসে আছে মৃত কোনো ডেড বডি।। কোনো নড়াচড়া নেই চোখের পাতা গুলো ও নড়ে না। কিন্তু দেহ টা পড়ে থাকলে ও চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসতেছে। চোখের কোণো পানি এসে জমেছে। তবে গড়িয়ে পড়তেছেনা। চোখের সাথেই আটকে আছে। এভাবে যদি মুমমুম ও আটকে থাকতো।
**/ ভালোবাসার মানুষ যতই থাকনা কেনো যদি ভালোবাসতে জানেন তাহলে প্রথম ভালোবাসার মানুষটাকে কোনোদিন ও ভুলতে পারবেন না। ভুলতে পারবেন না তার সাথে কথা বলার প্রত্যাকটা মুহূর্ত। যেকোনো দিন যেকোনো সময় তার কথা গভীর ভাবে মনে পড়লে চোখের কোণো পানি আসবেই।/**
চলবে...
⚠️ এই গল্পটি এবং আমার সব গল্প অন্য কোথাও পাবেন না। শুধু আমি আমার লেখা গল্প গুলো "গল্প সমাহার" অ্যাপ এ পোস্ট করি।
তুমি হীন (পর্ব ৪)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
223
Views
7
Likes
2
Comments
5.0
Rating