প্রত্যাশা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মুখ নামিয়ে বসে আছে মারুফ। "লজ্জায় আমার মুখ দেখানো দায়..."-- বাবার বলা কথা গুলো এখনও কানে বাজছে।বসে বসে সে ভাবছে " এই কয়েকটি নম্বরই কি জীবনের শেষ কথা? সে যে ভালো আবৃত্তি করে , বক্তৃতা দিয়ে সুখ্যাতি লাভ করেছে ; বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিনে গল্প কবিতা লিখে সুনাম অর্জন করেছে, সেসবের কি কোনো মূল্যই নেই?"
আজ তিন দিন হলো তার মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে । ডিস্টিংসন পাওয়ার সমস্ত প্রত্যাশায় জল ঢেলে সে কোনোক্রমে প্রথম বিভাগে পাস করেছে।তবে সে বাংলায় রাজ্যসেরা ৯৫ নম্বর পেয়েছে। সে ভেবেছিল তার এই সফলতা তার অন্যান্য বিফলতাকে ঢেকে দেবে। কিন্তু না, তার বিফলতা তার সফলতাকেই ঢেকে দেয়।গত তিন দিনে সে পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়
-স্বজনদের কাছে চুড়ান্ত অপমানিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, মা-র কাছে দুই তিনটি চড়-থাপ্পড় ও খেয়েছে।

কিন্তু এই কিশোর মন আর কত সহ্য করবে ? কৈশোর কালের উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে । পরের দিনই সে জমানো কিছু টাকা নিয়ে পাড়ি দেয় অজানার উদ্দেশ্যে। এর পর অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায় নি।
এই ঘটনার অনেক বৎসর কেটে যায় । এমনিতে মারুফের বাবা সংবাদপত্র পড়েন না। তবে সেদিন সকালে বাজারে জনৈক মুদির দোকানে রাখা সংবাদপত্রের একটি সংবাদ মারুফের বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংবাদটি নিম্নরূপ :- " সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অতি অল্প বয়সে প্রাণত্যাগ করলেন কলকাতার তরুণ কবি ও ' সাহিত্য মঞ্চ,কলকাতা ' -র উপ-সভাপতি মারুফ আহমেদ। কবি বর্তমানে কলকাতায় থাকলেও জানা যায় কবির মূল বাড়ি অসমের করিমগঞ্জ জেলায় । কোনো অজানা কারণে কবি পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিকে তার পরিবার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় নি। তাই মৃত্যুর পর আর তার পরিবারের খোঁজ না করে ইসলাম ধর্মের রীতি - নীতি মেনে তাকে কবরস্থ করার ব্যবস্থা করেন সাহিত্য মঞ্চের কর্মকর্তারা।"
লোকভর্তি বাজারে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে সেদিন মারুফের বাবার মোটেই লজ্জাবোধ হয়নি।
151 Views
4 Likes
5 Comments
4.8 Rating
Rate this: