ডার্ক ওয়েবের প্রেতাত্মা

রাতের অন্ধকারে কম্পিউটার মনিটরের নীল আলো ভেসে আসছে রিফাতের চোখে। সে গভীর মনোযোগ সহকারে কোডের পর কোড টাইপ করছে। আজ তার লক্ষ্য ডার্ক ওয়েবের রহস্যময় একটি রেড রুমের সন্ধান পাওয়া। রেড রুমগুলি সম্পর্কে শোনা কথাগুলো তাকে অনেকদিন ধরেই তাড়া করে ফিরছে, যেখানে নাকি মানুষের ওপর অত্যাচার করে লাইভ স্ট্রিম করা হয়।

একদিন তার বন্ধু, শাওন, হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায়। রিফাত বুঝতে পারে শাওন হয়তো ডার্ক ওয়েবের এই ভয়ানক জগতে হারিয়ে গেছে। শাওনের ল্যাপটপে কিছু চিহ্নিত ওয়েব লিঙ্ক খুঁজে পেয়ে রিফাত আরও সন্দিহান হয়ে ওঠে। তার নির্দিষ্ট দৃঢ় বিশ্বাস যে শাওন একটি রেড রুমে আটকানো আছে।

রাতের নির্জনতা ভেঙে, রিফাতের কোডের অনুসন্ধান সফল হয়। একটি রেড রুমের লিঙ্ক পেয়ে যায় সে। লিঙ্কে ক্লিক করতেই পর্দায় ভেসে আসে এক ভয়াবহ দৃশ্য। একটি ছোট ঘর, অন্ধকারে ঘেরা, আর সেখানে কেউ একজন চিৎকার করছে। সে শাওন! রিফাত বুঝতে পারে, তাকে দ্রুত কিছু করতে হবে।

রিফাত দ্রুত অ্যাকসেস গেইন করে রেড রুমের সিস্টেমে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অদ্ভুত কিছু অনুভব করতে শুরু করে। মনে হচ্ছে, ঘরের ভেতরের আত্মারা তার সাথে কথা বলছে। প্রতিটি আত্মা তার নিজের মৃত্যুর দৃশ্যকে আবার অভিনয় করছে। তারা জানায়, রুমটি থেকে পালানোর একমাত্র উপায় হল, একজন নতুন দর্শককে আটকে রাখা। রিফাত কিছু বুঝতে পারে না—সে এখানে কীভাবে জড়ালো!

আত্মারা একে একে তাদের কাহিনী শোনায়। তাদের মৃত্যুর সাথে তাদের প্রতিশোধ স্পৃহা যুক্ত হয়েছে। রিফাত ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, এই রুমটির স্বরূপ কেবল অত্যাচারের নয়, এটি প্রতিটি আত্মার একটি জিঞ্জির। তারা আটকে আছে, কিন্তু তাদের সাহায্য করার কেউ নেই। তাদের মুক্তি কেবল তখনই সম্ভব যখন তাদের প্রতিস্থাপন করা হবে অন্য কোন কেও দ্বারা।

রিফাত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু সে তার বন্ধু শাওনকে বাঁচানোর জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সে তাদের বলে, "আমি তোমাদের মুক্ত করতে চাই, কিন্তু আমার বন্ধুকেও বাঁচাতে হবে।" আত্মারা শর্ত দেয় যে রিফাতকে তার জায়গায় একটি নতুন দর্শক আনতে হবে।

রিফাত জানে, এটাই তার একমাত্র উপায়। কিন্তু সে কীভাবে এটি করবে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া তার জন্য অত্যন্ত কঠিন। তবুও, সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে রুম থেকে বের হয়ে আসে, এবং ফিরে যায় ডার্ক ওয়েবের পথে, যেখানে আরও একটি নিরীহ ব্যক্তিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য অপেক্ষা করে রেড রুমের আত্মারা।

শেষ কথা

রিফাতের মনে প্রশ্ন জাগে, নৈতিকতার এই দুরূহ লড়াইয়ে সে কী জিততে পারবে? তার বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে সে কি অন্য কাউকে এই অন্ধকারে ফেলে আসবে? রিফাত জানে, প্রতিটি সিদ্ধান্তের সাথে রয়েছে তার নিজের ভেতরের অন্ধকারের সঙ্গে লড়াই।

অবশেষে, তার সামনে আসে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত—সত্যিকারের মুক্তি কিসে নিহিত? নিজেকে সেই সত্যের মুখোমুখি করেই এগিয়ে যেতে হবে রিফাতকে। কিন্তু একমাত্র সময়ই বলে দেবে, সে এই অন্ধকারে আলো দেখতে পাবে কিনা।

এভাবেই রিফাতের যাত্রা চলতে থাকে। রেড রুমের ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে সে খুঁজে পায় এক মানবিকতার গভীর রহস্য, যা তাকে চিরদিন তাড়া করবে। এই গল্পের মূল বক্তব্য হল, অন্ধকার কখনও পুরোপুরি দূরীভূত হয় না, তবে আমাদের আলোর সন্ধানেই তাকে পরাভূত করতে হবে।