হার্ট বিট (শেষ পর্ব)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
শেষ পর্ব
রাজু হাজার পাঁচে টাকা নিয়ে ঢাকা রহনা দিল। এই এলাকায় আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। সবার কাছে বিদায় নিয়ে রহনা হলো।
গাবতলী আসতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে।
রাফি বলল-একটা হোটেলে বা বাসায় আজকে রাতটা কাটাতে।
ভোরে বাসে চড়ে গাবতলী আসতে। নিরুপায় হয়ে একটা হোটেল কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল- ভাই সিট খালি আছে?
আবাসিক হোটেলর ম্যানেজার বলল-ভাই একদম ফাষ্ট ক্লাস সিট খালি আছে।
রাজু:- ভাড়া কতো?
ম্যানেজার:- পাঁচ হাজার,দশ হাজার আরো ভালো মানের আছে।
রাজু:- এরে ভাই কম আছে কত? এতো টাকা আমার হবে না।
ম্যানেজার:- আব্দুল স্যারে কে 15 নং রুমে নিয়ে যা।
রাজু ঢুকতেই দেখলো একটা অল্প বয়সী মেয়ে। হয়তো কলেজে পড়ে পাশে ইস্কুল ব্যাগ রেখে বসে আছে।
রাজু দুরুত্ত বের হয়ে বলল- ম্যানেজার ভাই কোথায়?
ম্যানেজার:- কি হয়েছে জিনিস পছন্দ হয়নি বুঝি?
রাজু:- আরে ভাই আমি এক রাত ঘুমানোর জন্য জায়গা খুঁজি,এগুলো লাগবে না।
ম্যানেজার:- দূর মিঞা সাজ সকালে বক ধরতে আসছে। আগে বলবেন না, ভালো একটা কাষ্টমার আপনার জন্য মিস হয়ে গেছে। এখন সেই টাকা কে দিবে? আপনি দিবেন?
রাজু:- সরি ভাই একটা ব্যস্ততা করে দেন না?
ম্যানেজার:- আবদুল উপরে একটা খালি রুম দে তো।

রাজু কিছু খেয়ে রুমটা দেখে শুয়ে পড়লো।
রাতে সারা শরীর ফুলে উঠেছে, শুধু চুলকায়। বাতি জ্বালিয়ে দেখলো ছাড়া পোকা সম্পুর্ণ খাটে, মশারিতে।
কালো হয়ে আছে, রাজু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। খালি ফ্লোরে শুয়ে পড়লো শরীরে ব্যাথা করছে ঘুম আসছে না।

গাজীপুরে যেতে প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। রাফি একটা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে।
একটা ম্যাচ বাসায় থাকে। রাজু অনেক চেষ্টা করেও একটা চাকরি পেল না। অন্য বাসার একটি মেয়ে বলেছে চাকরি দিবে।তাই রাজু ভোরে চলে গেল।চকরি হলো বেতন ঠিক করলো আট হাজার টাকা। এক বড় স্যার জিজ্ঞেস করলো তুমি কি করো?
রাজু:- আমি লেখা পড়া করতাম,বিএ ফেল করেছি তাই..,
বড় স্যার‍‍:- তোমার চাকরী হবে না।
অনেক অনুরোধ করেও কাজ হলো না

রাফি সন্ধ্যায় রুমে এসে রাজু কে দেখেই বললো চাকরি হয়নি?
রাজু:- না , একটা সত্যি কথা বলছি তাই?
রাফি:- এই শহরে ভালো মানুষ হয়ে লাভ নাই।
রাজু:- আমার কপাল টাই পোড়া।
রাফি:- এতো চিন্তা করিস না, উপায় হয়ে যাবে।

অনেক কষ্টে একটা চাকরি হয়েছে কিন্তু রাজু ঠিক মতো কাজে যায় না।
রাতে ঘুমায় না বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়।
রাফির কোন কথাই শোনে না যা ইচ্ছে তাই করে।
এনির কাছে ফোন করে বলল- রাজু খারাপ ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়।
রাফি নিষেধ করে তাই অন্য জায়গায় থাকে।
গাঁজা, সিগারেট এগুলো নিয়ে পড়ে থাকে।
তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বল

**00**00**
লামিয়ার স্বামী একটা চাঁদাবাজি, ডাকাতির মামলায় পড়েছে। তাই গোপনে লামিয়া কে নিয়ে শহরে গেছে।
ঢাকা কারুণ বাজারে একটা বাড়ি আছে সেখানে থাকে। সারা দিন ঘরে বসে টিভি দেখে রাতে কোথায় যেন যায়। কাজের একটা লোক বাজার সদায় সব কিছু করে।

লামিয়া বসে বসে টিভি দেখছে হঠাৎ করে ইমা কল দিল। লামিয়া আড়ালে গিয়ে বলল- দিদি কেমন আছো তুমি?
ইমা:- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
লামিয়া:- যেমন থাকার তেমনি আছি।
ইমা:- আমার একটা অনুরোধ রাখবি?
লামি:- কি বলো?
ইমা:- আগে বল রাখবি কি না?
লামি:- ঠিক আছে বলো।
ইমা:- তুই একটু রাজু কে বুঝতে পারো তোর কথা ছাড়া পৃথিবীর কারো কথা শুনবে না।
লামি:- কেন কি হয়েছে রাজুর?
ইমা:- ও নেশা করে, সারা রাত বাহিরে থাকে।বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়।
এমন হলে ওর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
লামিয়া চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বলল-আমি কিভাবে বুঝাবো? কোথায় থাকে জানি না?আর আমার গুন্ডা স্বামী জানলে আমাকে মেরে ফেলবে।
ইমা:- তোর জন্যই ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকে তুই শুধু পারো খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। যদি না যেতে চাও তোর বিষয়ে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস ওর কিছু হলে তুই দায়ি থাকবি।
লামিয়ার বুকটা ফেটে যাচ্ছে,কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।গলা ধরে আসছে,ঢোক গিলে বলল-ঠিক আছে আমি যাবো।

মনে মনে ভাবছে আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে খারাপ পথে যেতে দিব না। আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। আমাকে কিছু করতে হবে।

ইমা ফোনে ঠিকানা পাঠিয়ে দিল ।লামিয়ার স্বামী প্রতি শুক্রবার রাতে জুয়া খেলে, নেশা করে ঘরে ফিরে অত্যাচার করে। লামিয়া ঠিক করলো ভোরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে। রাজুর কাছে যাবে যদি জেনেও যায় মাইর দিলে খাবে। কিন্তু রাজুর জন্য এই টুকু তার করতে হবে।
**00**00**
পরের দিন ভোরে লামিয়া স্বামীকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে। রাজুর খোঁজে বেরিয়ে পড়লো।
গিয়ে বাড়ি ভাড়াটিয়া কাছে জিজ্ঞেস করল।তারা বলল-ব্যাচেলর রুমে জিজ্ঞেস করে দেখো। চার পাঁচটা রুমে ব্যাচেলর থাকে সব গুলো জিজ্ঞেস করল। একটা ছেলে নাম রানা বলল-রাজু এখানে থাকে তবে সে সন্ধ্যা আসবে। লামিয়া নিরুপায় হয়ে সেখানে বসে রইল। রাজু রাতে সিগারেট পান করতে করতে আসলো। লামিয়া বসে আছে,

দেখে বলল- লামু তুমি কেন আসছো?
লামিয়া:- তোমাকে দেখতে আসছি? কেমন আছো তুমি?

লামিয়া তাকিয়ে দেখলো রাজু চোখগুলো লাল। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
চুলগুলো পাখির বাসার মত,বড় বড় নখ। গায়ে ময়লা একটা পোশাক। খুব কষ্ট হচ্ছে রাজু কে দেখে।

রাজু বলল- তোমাকে ছাড়া আমি কখনোই ভালো থাকতে পারিনি। আমার সম্পূর্ণ ভালো থাকা তোমার মাঝে হারিয়ে গেছে।
তুমি কেমন আছো?
লামি:- একটা স্বার্থপর,লোভী মেয়ে কখনো খারাপ থাকতে পারে না। আমার বুড়ো স্বামী আছে অনেক আদর করে। অনেক টাকা পয়সা আছে। তুমি তো গরিব আমাকে সুখ দিতে পারবে না।
রাজু:- একটুখানি হেসে বললো এখনো ভালোবাসা আমায়? কেন বাসো?
লামি:- না, আমি নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসি না।
রাজু:- তোমার চোখে জল কেন?
লামি:-আনন্দে । আমার একটা অনুরোধ রাখবা?
রাজু:- তুমি তো কথা রাখনি আমি কেন রাখবো?
লামি:- আমি তোমার ভালোবাসা তাই রাখবে।
কথা দাও কখনো আর নেশা করবে না। সিগারেট খাবে না।
রাজু:- তাহলে তুমিও কথা দাও আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না।
লামিয়া একটা চর দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল- কেন বুঝো না তোর জন্য আমার কষ্ট হয়?
রাজু:- একটা হাসি দিয়ে বলল তাহলে কেন ছেড়ে যাও?
যার নামে পুরো জীবনটাই দিয়ে দিছি। তাকে ছেড়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
বুকের শার্ট ধরে একটা টান দিয়ে খুলে ফেললো বলল- এই বুকের পুরোটা জুড়ে শুধু তুই আছো। আমার হার্টবিটের সাথে তুই মিশে গেছো। আমার প্রতিটি শিড়া উপশিরায় মিশে আছো। প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে তুই আসা যাওয়া করো। এই দেহে যতক্ষণ হার্টবিট আছে ততক্ষণ আমি বেঁচে আছি। কারণ তুই আমার দেহের "হার্টবিট "
লামিয়ার অশ্রুতে বুক ভিজে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে বলল- রাজু আমাকে মাফ করে দিস?
আমি পারিনি ওয়াদা রক্ষা করতে। আমি জঘন্য খারাপ মেয়ে ‌। কাঁদতে কাঁদতে রাজুর পায়ে পড়লো।
রাজু:- তোমাকে দোষ দিব না, আমার ভাগ্য কে মেনে নিয়েছি। কিন্তু বলনা নেশা ছাড়তে তা পারবো না।
লামিয়া চলে যাচ্ছে রাজু বলল- আমাকে ছেড়ে যেওনা তুমি ছাড়া আমি ভালো নেই।
আমার তোমাকে খুব প্রয়োজন।
**00**00**
লামিয়ার স্বামী রাজা অনেক অপেক্ষা করলো । কোথায় গেছে? হয়তো রাজু দেখা করতে এসেছে। লামিয়া ঘরে ঢুকতেই রাজা বললো- কোথায় গেছিলেন?
লামিয়া:-আমার কাজ ছিল
রাজা:- কি কাজ সোবহান বললো ভোর থেকে দেখে না
লামিয়া কিছু না বলে বাসায় রুমে ঢুকলো।
রাজা ফোনটা নিয়ে দেখলো একটা ঠিকানা লেখা। রাজা বলল- ঢাকা আসার সাথে সাথে নতুন স্বামী জোগাড় করে ফেলছো? এটা কার নাম্বার?কার ঠিকানা লেখা? সারা দিন কার সাথে শুয়ে এতো রাতে বাসায় আসলে।
লামিয়া বলল- অসভ্য জানোয়ার সবাই কি তোর মতো।

ঐ নাম্বারে কল দিতে ইমা বলল- লামিয়া রাজুর কাছে গেছিলি?ওর সাথে দেখা হয়েছে? রাজা কলটা কেটে দিয়ে বলল-
তুই তোর পুরানো ভাতার রাজু কাছে গেছিলি না। নতুন করে প্রেম জমাতে,
লামিয়া:- জানোয়ারের বাচ্চা! হ গেছি তুই কি করবি? আমার যখন ইচ্ছা করবে যাবো তুই পারলে ফিরাইস
রাজা:- খানকির বাচ্চা বলে আঘাত করলো। অনেক মারলো মা বাবা তুলে গালি দিলো। বলল- এখন থেকে তুই রুমের বাইরে জাইতে পারবি না।

**00**00**
রাজু অনেক বেশি ভেঙে পড়লো লামিয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে লামিয়া কে জোর করে তুলে নিয়ে আসতে। ভুল হয়েছে হয়তো আর একটু অনুরোধ করলে থেকে যেত। না হয় পা ধরে অনুরোধ করলে ফিরিয়ে দিতে পারতো না। নিজের জীবনে আপন করে পেতে এতটুকু করা উচিত ছিল।
আজকে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই কিছুটা নেশা করে, রাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়া হয়েছে। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে রাজু কে চাপা দিয়ে চলে গেল। সারা রাস্তায় রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে। রাজুর হাত পা গুলো লাফাচ্ছে। ঠোঁট দুটো কাঁপছে মুখ থেকে শুধু একটা শব্দ বের হয়েছিল। সেটা হয়তো লামু হবে

রাজা আর লামিয়া রুমে বসে আছে হঠাৎ একটা ফোন আসলো। রাজা হ্যালো কে?
অপরিচিত:- ভাই শেষ?
রাজা:- কি শেষ? কিছু শুনতে পরছি না।
অপরিচিত :- ভাই রাজু শেষ, গাড়ির নিচে চাপা দিসি।
রাজু:- রাজু ওহ্ ‌আচ্ছা পড়ে কথা বলবো।

লামিয়া এসে শুনলো কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না। তাই জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? কোন রাজু শেষ?
রাজা:- আরে কিছু না, আমার নাম রাজা তাই বলছে।

বিকেল রাজা ঘুমিয়ে পড়লো খুব নিশ্চিতে দিন যাবে। এখন আর নেই ঝামেলা শেষ।
হঠাৎ বিকেলে ইমার ফোন আসলো।
লামিয়া বলে কেঁদে উঠলো
লামিয়া:- কি হয়েছে দিদি?
ইমা:- কারা যেন রাজুকে গাড়ি চাঁপা দিয়ে মেরে ফেলছে।
লামিয়া:- রাজু বলে চিৎকার দিল।কি করবে কোথায় যাবে? বুঝতে বাকি রইলো না রাজা তাই ফোনে বলেছিল । একটা চাকু নিয়ে রাজার কাছে এসে বুকে আঘাত করলো।
আর বলল-রাজু কে তুই খুন করছো তাই না?
রাজা:- একটা ফুলদানি দিয়ে লামিয়ার মাথায় আঘাত করলো। ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
লামিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। একটুখানি পড়ে উঠে দৌড়ে এসে রাজার বুকে চাকু দিয়ে অনেক আঘাত করতে করতে মেরে ফেললো। রাজা দুই হাতে লামিয়ার গলা মুখ খামচে ধরে আছে। আস্তে আস্তে মাটিতে পড়ে গেল।

রাজুর লাশ নিয়ে গ্রামের রহনা হলো। সবাই কান্না কাটি করছে।মিম শুনেই বেহুঁশ হয়ে পড়ল।মা বোনদের অবস্থা ভালো নেই সবাই পাগলের মত ছটফট করছে।
লামিয়া কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।
লামিয়া স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে স্বামীকে খুন করেছে। নিজের মুখে ভুল স্বীকার করেছেন তাই ষোল বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
"সমাপ্ত"
255 Views
7 Likes
2 Comments
4.5 Rating
Rate this: