রাজু পুকুর পাড়ে বসে আছে একা নিরবে । পুরানো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে আছে।এখানে দাড়িয়ে ইমার সাথে কথা বলে ছিলাম।তাই লামিয়া রাগ করে ছিলো। এখানে বসে ঘাস ফুল দিয়ে জীবনে প্রথম প্রোপজ করে ছিলাম।এখানে বসে প্রথম বাহানা করে তার আঙ্গূল শ্পর্শ করে ছিলাম।কতো কথা কতো শত স্মৃতি সব কি ভুলে গেছো।রাজু ভাবতে-ভাবতে দুই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে বিলের দিকে তাকিয়ে বলল- লামিয়া! আজ কোথায় তুমি? কোথায় তোমার ভালোবাসা? সব কিছুই কি ভুলে গেছো তুমি? সারাটা জীবন পাশে থাকবে বলে শপথ করে ছিলে ,কোথায় তোমার শপথ?মনে হচ্ছে কষ্টের ওজন আর শরীরে বহন করতে পাড়ছে না ।তাই হাটু গিড়ে বসে পড়লো।
মিম আসলো কাকিমা রাজু কোথায়?
কাকী:- পুকুর পাড়ে বসে আছে সেই সকাল থেকে। এখনো কিছুই খায়নি।
মিম:- আমি দেখি কি করে?
বলে পুকুর পাড়ে চলে আসলো। রাজু মাটির উপর বসে আছে। বিলের সবুজ ধান ক্ষেত দিকে তাকিয়ে আছে ।
মিম কাছে গিয়ে বলল তুমি এখানে বসে কি করো? কিছুই খাওনি কেন?
রাজু মিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো কিছুটা রেগে কথা বলছে। একটুখানি তাকিয়ে বললো-
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
মিম:- আমি কিছু বলি না তাই যা ইচ্ছে তাই করবা? তা হবে না। এখুনি চলো খেতে হবে।
রাজু একটুখানি অবাক হয়ে বললো- ঠিক আছে চল।
রাফি সাথে এনির ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। দুজনে জমিয়ে প্রেম করছে।এনি বিয়ে করতে চায় কিন্তু রাফি বিয়ে করতে পারবে না বলে দিয়েছে।
রাফি রাজুর কাছে গেল বলল- রাজু অনেক দিন হলো দুই ভাই এক সাথে ঘুমাই না। তোর সাথে অনেক কথা আছে রাতে ঘুমাতে আসবি কিন্তু?
রাজু:- এখন বল কি কথা?
রাফি:- না, রাতে বলবো। তুই আসিস কিন্তু
রাজু:- ঠিক আছে।
রাতে রাফি বলল- ভাই আমি একটু সমস্যায় আছি?
রাজু:- কি সমস্যা?
রাফি:- এনি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে,বলে আর প্রেম করতে পারবে না। তাকে পেতে হলে বিয়ে করতে হবে।
রাজু:- তুই কি বললি?
রাফি:- আরে মা বাবা মেনে নিবে না যে?
রাজু:- তাহলে প্রেম করবি বিয়ে করবি না।
রাফি:- ভাই প্যারা পছন্দ করি না। একটা যাবে আবার নতুন করে একটা চাই। লাইফটা ভালো ভাবে এনজয় করতে হবে তো।
রাজু:- তাহলে ব্রাকআপ করে দেয়।
রাফি:- কিন্তু এই কষ্ট ভুলতে অন্য কাউকে লাগবে।তাই যদি তোর বেয়াইন এর সাথে প্রেম করি আপত্তি নাই তো?
রাজু:-এটা উচিত হবে না, যখন তাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবি তখন আমার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। আমি চাইনা আত্মীয় সম্পর্ক নষ্ট হোক।
রাফি:- কি আর করার এতো মায়া।
রাত দুপুরে রাফির ঘুম ভেঙ্গে গেল তাকিয়ে দেখলো রাজু জানালার পাশে বসে আছে।
রাফি:- কি হলো ঘুমাও না কেন?
রাজু:- ঘুম আসছে না, তুই ঘুমিয়ে পড়।
রাফি:- না ঘুমালে শরীর খারাপ হবে তো? পাগলামি করিস না।
রাজু:- অভ্যাস হয়ে গেছে, আমার কিছু হবে না। আর যদি শুয়ে থাকি ঘুম আসবে না,তার চেয়ে অন্ধকার দৃশ্য দেখি।
রাফি অনুরোধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। রাজু রাত জাগা পাখির মতো চুপটি করে বসে আছে।লামির কথা ভাবতে না চাইলেও চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নির্জন রাতের নিস্তব্ধতা, রাস্তা আর পাখিরা জানে। কতটা রাত এভাবে নির্ঘুম কাটিয়েছে। একটা নির্ঘুম রাত কতটা কষ্টের হয় তা শুধু নিরব অন্ধকার জানে।
***000***000***
লামিয়া বিকেল বেলা বাগানে একটা গাছের উপর বসে আছে। রকি রুমের ভিতর বসে বই পড়ে। হঠাৎ রিমা বললো- ভাইয়া তুই এতো বোকা কেন?
রকি:- আমি আবার কি করলাম?
রিমা:- আরে বোকা লামিয়া বাগানে একা বসে আছে। এখন পটানোর একটা ভালো সুযোগ যা তারাতাড়ি।
রকি:- হাসি দিয়ে বলল তোর মাথায় তো অনেক বুদ্ধি আছে ।আচ্ছা শোন না?
রিমা:- আবার কি হলো?
রকি:- গিয়ে কি বলবো?
রিমা:- ইয়া আল্লাহ তুই এতো বোকা কেন? ভালো ভালো কথা বলবি, প্রশংসা করবি, মজার মজার গল্প করবি।
রকি:- এই শোন না কাজ হবে তো?
আমি কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে ভয় পাই।
রিমা:- দুর এতো বোকা হলে চলে।যাও তাড়াতাড়ি।
রকি অনেক আশা নিয়ে চলে গেল, রিমা ভাবছে ভাইয়া এমনে তো মাস্তান টাইপের, তবে মেয়েদের সাথে কথা বলতে এতো ভয় পায় কেন।আসলে ও একটা বোকা।
গাছ তলায় একা বসে আছো কেন?
পিছনে তাকিয়ে দেখলো রকি চলে আসছে।
কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো- এমনি বসে আছি।
রকি:- রাজু কে মিস করছো বুঝি?
লামি:- না, তেমন কিছু না।
লামিয়া চুপচাপ বসে আছে,রকি কিভাবে কথা বলবে ভেবে পাচ্ছে না। রিমা বলছে প্রশংসা করতে দেখি ট্রাই করে লাভ হয় কি না।
রকি:- আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। নীল রঙের পোশাকে পরীর মতো সুন্দর চিনায়।
লামি:- ভালো। আজকে খুব হাসি খুশি মনে হচ্ছে কারণ কি?
রকি:- এতো সুইট কিউট একটা বোন পাশে থাকলে আনন্দ তো থাকবেই।
লামি:- মিষ্টি করে একটু হেসে বললো, আমি কিন্তু আপনার বোন, মনে কি চলছে তা কিন্তু বুঝি।
রকি:- হেসে বললো হ্যা জানি ফুফাতো বোন। আর মনে আবার কি চলবে?
লামি:-আপনার ভাগ্যে যে আছে তাকে না চাইতেই পেয়ে যাবেন।আর যে নাই তাকে কখনো পাবেন না।
রকি:- তোমার সাথে একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে। একটুখানি সময় দিবা?
লামি:- ঠিক আছে ঐ দিকে চলুন।
রকি:- আমাকে ঘৃণা করো বুঝি।
লামি:- নাউযুবিল্লাহ! আপনাকে আমি বড় ভাই হিসেবে সম্মান করি।
রকি:- তাহলে সব সময় এরিয়ে চলতে চাও কেন?
লামি:- আপনি তো আমার আর রাজুর বিষয়ে জানেন। আমি চাইনা নতুন করে কেউ কষ্ট পা ক।
রকি:-কষ্ট তা তো অনেক আগে থেকেই পাচ্ছি। আচ্ছা আমরা কি সম্পর্ক টা আর একটু গভীর করতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তোমার শত্রু।
লামি:- ঠিক আছে কিন্তু শুধু বোন ভাবতে হবে পারবেন? না হলে আরো দূরুত বাড়বে।
রকি:- ঠিক আছে। তবে..,
লামি:-কোন তবে হবে না।
হঠাৎ লামিয়ার হাতে ফোনটা বেজে উঠলো।
রকি বললো:- ফোন কিনছো নাকি?
লামি:- আরে না, আম্মুর ফোন।
লামি:-হ্যালো! ইমা দিদি!
ইমা:- লামু কেমন আছো বুড়ি?
লামি:- ভালো আছি। তোমাকে খুব মিস করি।
ইমা:- শুক্রবার আসতে পারো। তোকে নিয়ে একটা জায়গায় যেতে চাই।
লামি:- আমার তো যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু মা?
ইমা:- আমি সবকিছু ম্যানেজ করে নিব। তুই শুধু আসবি কি না বল?
লামি:- ঠিক আছে, রাজু কেমন আছে।
ইমা:- আগের থেকে অনেক ভালো আছে।
**00**00**
মিম হাইস্কুলে যে দিন ভর্তি হয়েছে, সেদিন থেকেই রানা ছেলেটি পিছনে লেগেই আছে।
মিম ছেলেদের পাতাই দেয় না। ভিতরে অনেক কোমল আর মিষ্টি, কিন্তু বাহিরে কাঁচা মরিচ। অনেক ছেলে ভয়ে কথা বলে না।
শুক্রবার বিকেল মিম , রাফি আর রাজু মার্কেটে গেল।এনি অনেক আগেই এসে বসে আছে। রাজুর মোবাইলে ইমা কল দিল ..
রাজু:- কেমন আছো তুমি?
ইমা:-ভালো, আপনি?
রাজু:- লামিয়া কেমন আছে?
ইমা:- আমার কাছেই আছে কথা বলবেন?
রাজু:- অনেক খুশি হয়ে বললো কৈ ফোনটা দাও,একটুখানি কথা বলতে চাই।
ইমা:- সরি, তোমার সাথে কথা বলতে চায় না। দুই দিন থাকবে দেখতে চাইলে আসো ।
রাজু ফোনটা কেটে দিয়ে সবাইকে বলল-
আমার একটা কাজ আছে আমি যাই।
মিম, রাফি বললো কোথায় যাও?
রাজু বলল- এসে বলবো।
বলেই চলে গেল তালই বাড়ির কাছে গিয়ে ইমা কে ফোন করলো, হ্যালো ইমা এখন কোথায় আছো?
ইমা:- নদীর তীরে বসে আছি
দৌড়ে চলে গেল নদীর পাড়ে একটুখানি খুঁজে পেয়ে গেল। লামিয়া রাজু কে দেখেই বলল- এটা তোমার কাজ তাই না
ইমা:- তাতে সমস্যা কি? ও তো অপরিচিত কেউ নয়?
লামি:- আমি তার সাথে কথা বলতে চাই না।
এমন কি কখনো দেখা করতে চাই না।
রাজু দৌড়ে গিয়ে লামিয়া কে বলল- লামু কেমন আছো তুমি? জানো তোমাকে এক নজর দেখার জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি?
তোমাকে ছাড়া আমি একটা মুহূর্ত থাকতে পারছি না।
লামিয়া কোন কথা না বলে অন্য দিকে চলে গেল।
রাজু কাছে গিয়ে হাতটা ধরলো লামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজু বলল- প্লিজ এক বার আমার দিকে তাও? প্লিজ কিছু বলো?
রাজু দুই হাতে লামিয়ার গাল ধরে বললো একটু কথা বলো?
তোমাকে বলার জন্য অনেক কথা জমে আছে।
ইমা তাকিয়ে দেখলো রাজু পাগলের মত ছটফট করছে, লামিয়া সাথে একটু কথা বলার জন্য। ইমা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
রাজু বলল- দয়া করে একটা কথা বলো? না হয় একটা শব্দ বলো? তাই আমার জন্য যথেষ্ট হবে।
লামিয়া কোন কথা না বলে চলে আসলো।
রাজু একটা চিৎকার দিয়ে নদীর চরে মাটিতে বসে পড়লো।
ইমা বলল- বেয়াই শান্ত হও নিজেকে শক্ত করো।
রাজু চোখ মুছে আস্তে আস্তে চলে গেল।
ইমা কে বলল- আমি যে লামিয়ার সাথে দেখা করতে আসছি, আপুর কাছে বলিও না।
ইমা বলল- আজকে থেকে যেও।
রাজু চলে আসলো।
কিছু দিন পর এনি এসে রাফিদের ঘরে উঠলো।
রাফি ঘর থেকে পালিয়ে গেছে। গ্রামের সব মানুষ ঘর ভর্তি হয়ে আছে। রাফির মা ঘর থেকে এনি কে নামিয়ে দিতে চাইছে, কিন্তু এনি বলল- আমার সাথে রাফি এক বছর সম্পর্ক করেছে। এখন বিয়ে না করলে আমি বিষ খাবো। গ্রামের মানুষ এবং মেম্বার বলছে রাফি কে বিয়ে করতে হবে। অনেক ঝামেলা হলোও রাফি কে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে হলো।
**00**00**
মোস্তফা কামাল মেয়ের জন্য ভালো একটা পাত্র ঠিক করলো। ছেলের বাবা সরকারি চাকরি করে। ছেলে বাহিরে ছিল অনেক বছর বড় লোক তারা। লামিয়া কে দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে। আগামী মাসে বিয়ে ঠিক করেছে।
লামিয়া রাজু জন্য প্রচন্ড কান্না করছে।
উর্মিলা তার মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে বললো। এই বিয়ে তার করতে হবে না হলে আমাদের সবাই কে মেরে ফেলবে।
মোস্তফা কামাল মেয়ে কে বলল- যদি তোর মা'কে এই বাড়িতে রাখতে চাও ।আর রাজু কে জীবিত দেখতে চাও, তাহলে যা বলি তাই করতে হবে। লামিয়া নিরুপায় হয়ে শুধু কান্না করছে।
রাজুর বিএ প্রথম বর্ষে ফেল করলো।বাড়িতে ভালো লাগে না,তাই ঠিক করছে ঢাকা যাবে। হয়তো লামিয়া কে ভুলে যেতে পারবে।
শেষ বারের মত লামিয়া কে দেখতে তার কলেজে গেলে। কিন্তু একটা মেয়ে বললো আজকে লামিয়ার বিয়ে।
রাজু ইমা কে ফোন করলো হ্যালো.. ইমা কোথায় আছো?
ইমা:- আমার এক আত্মীয় বাড়ীতে। পড়ে কথা বলবো এখন রাখি।
রাজু:- লামিয়ার বিয়ে আমাকে বলনি কেন?
ইমা:- আমি না পড়ে কথা বলবো রাখি।
রাজু:-আমি আসতে আছি। আমি বেঁচে থাকতে লামিয়া অন্য কারো হতে পারে না।
ইমা:- রাজু আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করো। তুমি আসলে মেরে ফেলবে। দয়া করে এখানে এসো না।
রাজু:- সারাটি জীবন কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
ইমা:- দয়া করে আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করো। লামিয়ার বাবা কিন্তু অনেক রেগে আছে।
রাজু পাগলের মত ছটফট করতে করতে দৌড়ে ছুটে গেল। পাঁচ কিলো পায়ে হেঁটে যেতে যেতে বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ, রাজু চিৎকার দিয়ে ডাকলো লামিয়া! লামিয়া? তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না। আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে অন্য কারো হতে দিব না।
পনুসহ পাঁচ ছয় জন লোক এসে রাজু কে মারতে শুরু করলো। রাজু শুধু লামিয়া বলে চিৎকার করে। মা'র তে মারতে রাজুর মুখ দিয়ে রক্ত বের হলো। দাঁড়াতে পারছে না শুধু শুয়ে শুয়ে পনুর পাও ধরলো।সবাই মারা থামালো। শুয়ে শুয়ে কোন ভাবে হাত পা দিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে সামনে আসলো। রাজুর ঠোঁট দুটো কাঁপছে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে বললো লামিয়া আমাকে ছেড়ে যেওনা।
সবাই খবর শুনে দৌড়ে গেল দরজায় রাজু কে দেখতে। ইমা লামিয়া কে বলল- রাজুকে মেরে ফেলছে।
লামিয়া চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেল। শুধু রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁপা ঠোঁটে বলছে লামিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
লামিয়া চিৎকার দিয়ে রাজু রক্তাক্ত শরীরে ঝাঁপি পড়লো। কষ্ট হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে শুধু রাজু বলে চিৎকার করছে। রাজুর কপালে চুমু দিয়ে বলবো তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো না।
মোস্তফা কামাল পনু কে ধমক দিয়ে বলল - লামিয়া কে ঘরে নিয়ে যা।
সবাই লামিয়া কে ধরে জোর করে ঘরে নিয়ে গেল।
রাজু বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইল,সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।
বরপক্ষ সব কিছু জেনেও বর বলল- সে বউ নিয়ে যেতে চায়। কারণ বিয়ে হয়ে গেছে এখন কি করবে।তা ছাড়া ছেলের অনেক বেশি বয়স হয়ে গেছে।দশ বছর বাহিরে ছিল এই বয়সে এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়ে।
লামিয়া শ্বশুর বাড়িতে গেলো, কিন্তু রাজুর খবর শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে।বাসর ঘরে বসে রাজুর কথা ভেবে অনেক কান্না করছে। মনে মনে বললো রাজু আমাকে মাফ করে দিও। আমি পারিনি তোমাকে দেয়া ওয়াদা রাখতে। আমি পারিনি তোমাকে রক্ষা করতে।
লামিয়ার স্বামী আসলো লামিয়া কান্না করছে।
বলল- দেখ যা ভাগ্যে আছে তা মেনে নেয়া ভালো।
আর যা তোমরা ভাগ্যে নেই তা নিয়ে আফসোস করে লাভ কি?
তুমি রাণীর মতো থাকবে টাকা পয়সা অভাব হবে না। সব কিছু ভুলে যেও এতে তোমার ভালো হবে।
লামিয়া চিৎকার দিয়ে বললো - খবর দার আমার কাছে আসতে চাইবে না।
আপনি যদি আমাকে স্পর্শ করেন তাহলে আত্মহত্যা করবো।
স্বামী:- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি শান্ত হও।
তুমি না চাইলে আমি কাছে আসবো না।
লামিয়া বসে বসে কান্না করছে, তার স্বামী হঠাৎ করেই তার উপরে ঝাপিয়ে পড়ল।
লামিয়া ঘৃণায় লজ্জায় আরো জোরে কেঁদে উঠলো। বলল- বুইড়া ব্যাটা আমি তোকে খুন করবো। নিজেকে বাঁচানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। ঘৃণা আর প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিল। প্রচন্ড কষ্টে হৃদয়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। রাজুর সাথে দেয়া শপথ গুলো, রাজুর রক্তাক্ত শরীরে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তার ভালোবাসার কথা মনে পড়ছে। শুধু একটা কথাই বললো রাজু যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।
প্রায় ছয় ঘণ্টা পর রাজুর হুঁশ ফিরল। দুই ব্যাগ রক্ত লেগেছে। সবাই পাগলের মত হয়ে গেছে।অনু মিম রাজুর মা সবাই কান্না করছে। মিম শুধু মনে মনে বলছে আল্লাহ তুমি আমাকে নিয়ে নাও। আমার জীবনটা রাজুকে দাও। রাজুর জীবনের সব কষ্ট আমাকে দাও। আমি বেঁচে থাকতে রাজুর এক বিন্দু কষ্ট দিওনা।মিম শুধু গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ইচ্ছে করছে সমস্ত পৃথিবীতে আগুন জ্বালিয়ে দিতে। ইচ্ছে করছে লামিয়া কে নিজের হাতে কেটে কেটে টুকরো করতে।
বিচার সালিশ হলো রাজুকে এভাবে মারার জন্য জরিমানা হলো।
রাজু এখন অনেক সুস্থ আছে। রহিম মাস্টার ওষুধ আনতে গেছে। রাজুর মা বাড়িতে আছে।অনু বাথরুমে গেছে তাই মিম এসে দেখলো কেউ নেই। রাজু ঘুমের মতো আছে তাই সাহস করে রাজুর কপালে একটা চুমু দিল। চোখের পানি পড়লো রাজুর গালে।
পায়ের পাতার উপরে একটা চুমু দিয়ে,নীচে ফ্লোরে বসে পড়লো।পা জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।আর বলছে তুই কি জানো না তুই কষ্ট পেলে আমি আরো অনেক বেশি কষ্ট পাই। তোর গায়ে কেই একটা আঁচড় দিলে আমরা কলিজায় লাগে। কেন তুই বুঝেও আমাকে এতো কষ্ট দাও? আমি যে তোর কষ্টে মরে যাবো। কেন আমার হৃদয়ে এতো রক্ত ঝারাও? সত্যি বলছি আমি আর সইতে পারছি না। যদি আমার সামার্থ থাকতে এই, জীবনে বিনিময়ে তোকে সুখী করার। তাহলে আমি হাসি মুখে তোকে জীবনটা দিয়ে দিতাম।
রাজু সব কিছু শুনে শোয়া থেকে উঠতে চেষ্টা করলো।মিম ধরে বললো- তুমি নাড়াচাড়া করো না। কিছু লাগলে আমাকে বলো।
রাজু মিম কে কাছে ডেকে হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল- আমাকে মাফ করে দিস। আমি কখনো তোকে বুঝতে পারিনি। আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারলাম না।
আমাকে হয়তো তোর মতো কখনো কেউ ভালোবাসবে না।কি ভাগ্য আমার,দেখিস তুই এক দিন অনেক সুখী হবি।
অনু আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছু শুনতে পারলো। কিন্তু কোন কথা না বলে আসতে চলে আসলো। অনু শুধু মিমের কথা ভাবছে রাজু কে কতটা ভালোবাসে।আর ও একটা ছলনাময়ী জন্য পাগল হয়ে আছে। হায়রে ভালবাসা হায়রে দুনিয়া ।
প্রায় এক মাস পর রাজু সম্পুর্ণ সুস্থ হলো।
রাজু কে রক্ত দিয়েছে দুই জন লোক দেখা করলো। সবাই বাড়িতে আসলো। রাফি ঢাকা যাচ্ছে এনি বাড়িতে আছে। এনি কে সবাই মেনে নিছে।
হার্টবিট (পর্ব ৫)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
211
Views
6
Likes
0
Comments
4.8
Rating