শামীমের নীরা (পর্ব ৩)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
নিরাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মেসে চলে আসলাম
মেসে আসার পর যে আমাকে এই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে জানতাম না মেসে এসে দেখি হুলস্থুল কান্ড ঘটে গেছে আমাদের মেসেজে প্রধান যে মেসের সব কিছু দেখাশোনা করে সে আমাদের সবার টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে আমরা মেসে ১৩ জন থাকি সামির যে আমাদের সবকিছু দেখাশোনা করে সেই আমাদের সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে আমরা কিছু বুঝতে পারছিলাম না কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসার বাড়িওয়ালা এসে হাজির হলো সে বলল সামির তিন মাসের ভাড়া দেয় নি আমরা মাসের প্রত্যেককে অবাক হয়ে গেছি বাড়িওয়ালার কথা শুনে বাড়িয়ালা এখন আমাদের সব ভাড়া মিটিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলছে তখন আমাদের মধ্যে থেকে রাকিব বলল আপনি ভাড়া নেন নি কেন বাড়িয়ালা বলল আমাকে বলেছেন যে সবার কাজকর্মের অবস্থা নাকি খুবই খারাপ তোমরা সব সময় মাসে টাকা দিয়ে দাও বলেই আমি এই তিন মাস তোমাদের কোন চাপ দেইনি কিন্তু সামির যে পালিয়ে যাবে তা আমি বুঝতে পারিনি তাই তোমরা চারদিনের মধ্যে আমার ভাড়া মিটিয়ে চলে যাও

আমরা সবাই এখন কি করবো তিন মাসের মধ্যে

ভাড়া কিভাবে দেব এক মাসের ভাড়া আমাদের ২০
হাজার টাকা তিন মাসের ভাড়া ৬০ হাজার টাকা আমরা দেবো কি করে চার দিনের মধ্যে কোথায় পাবো তারপর আমরা সবাই মিলে আলোচনা করি ঠিক করলাম যে আমরা ১২ জন যদি ৫০০০ টাকা করে দেই তাহলেও ৬০ হাজার টাকা দিয়ে আমরা যে যার মত চলে যাব এখন কথা হলো আমি টাকা পাব কোথায়

আমার বেতন তো আর এখন পাব না আরো ২০- ২১ দিন পর পাব স্যালারি

মাথা কাজ করছে না বন্ধুদের কাছ থেকেও পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছি এখনো শোধ করতে পারিনি ভাবতে বসে পড়লাম

তখনই নিরা ফোন দিল

হ্যালো বাবু কী কর

আমি সব নিরাকে খুলে বললাম

নিরা সব শুনে ফোনটা কেটে দিল

কেন কেটে দিল আমি বুঝতে পারলাম না দশ পনেরো মিনিটের পর দেখি নিরা আবার ফোন দিয়েছে
আমি ফোনটা রিসিভ করে বললাম তখন ফোনটা কেটে দিলে কেন

তখন নিরা বলল তুমি একটু আমার বাসার নিচে আসতে পারবা

আমি বললাম কেন নিরা

নিরা বললো আসই না প্লিজ

এসে আমাকে ফোন দিও বলে নিরা ফোনটা কেটে রেখে দিলে

আমিও ওর কথা মতো বাড়ির নিচে গিয়ে নিরাকে ফোন করলাম. দেখি আজকে একটা ব্যাগ নিয়ে নিচে আসলো.

আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে ধরলে বলল এই নাও

আমি বললাম কি

তখন নিরা বলল এখানে ২০ হাজার টাকা আছে

আমি বললাম এ তুমি কি বলছ আমি এই টাকা নিতে পারবো না

নিরা বলল এটা তোমার জন্য কারণ আমি তোমার জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম আজ ভাবলাম একটা দেবার সময় এসে গেছে

শামীম বলল আমি এই টাকাটা নিতে পারব না

আচ্ছা বাবা তুমি না হয় আমাকে পরিশোধ করে দিও ধার হিসেবে নাও তাহলেই হবে তো

৫ বছরের সম্পর্ক আমাদের এতটুকু আমি তোমার জন্য করতে পারিনা

আর হ্যাঁ বন্ধুদের টাকাটাও শোধ করে দিও

আমি জানি না কেন অজান্তে আমার চোখে পানি চলে আসলো

নিরা তুমি এখন যাও না হয় আব্বু দেখে ফেলবে
তখন মনে হলো নিরাকে জরিয়ে কান্না করি নিরা আমায় এতটা ভালোবাসে এত ভাবে আমাকে নিয়ে

আমিও চলে আসলাম আর বন্ধুদের থেকেও টাকা নিয়ে ৬০০০ টাকা করে বাড়িয়ালার হাতের দিয়ে আসলাম আর বাড়িআলা কে টাকাও বুঝিয়ে দিলাম
মেসে এসে বন্ধুদের বললাম একটা বাড়ির সন্ধান দে তো দোস্ত কোথায় যাব থাকবো আর অফিস তো আছে আর মেস এর উপর থেকে আমার ভরসা উঠে গেছে

তখন আমার বন্ধু ইব্রাহিম বলল আমার কাছে একটা রুমের একটি সন্ধান আছে।
আমি তখন বললাম কোথায় রে ইব্রাহিম বলল আমার মামার বাড়ি আমি না হয় আমার মামার বাড়ি থাকবো তুই না হয় মামার বাড়ির উপর তোলাটা ভাড়া নিয়ে নিস

আমি বললাম মানে

ইব্রাহিম বলল আমার মামার তো বাড়ি আছে তারা নিজের বাড়িতেই থাকে তোকে একটা রুম দিতে পারি সে এক রুমে একটা বারান্দা একটা বাথরুম আর একটা রান্নাঘর আছে ছাদের পাশে ঘর সব মিলিয়ে ৬৫০০ টাকা পড়বে

তখন আমি ভাবলাম সবকিছুই ঠিক আছে আমার জন্য পারফেক্ট কিন্তু নতুন চাকরি বেতন আট হাজার টাকা ভাড়ায় যদি সাড়ে ছ হাজার টাকা হয় তাহলে মা-বাবা আর আমার খাওয়া চলার খরচ একসাথে মেন্টেন করব কিভাবে

তখন মাথায় আসলো টিউশনের কথা ভাবলাম সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যদি অফিস করি আর সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত যদি টিউশন করতে পারি তাহলেও হাজার ৪ টাকা হলে সবমিলিয়ে চলতে পারব

আমি ইব্রাহিমকে বললাম তোর মামার সাথে কথা বলিস
আমি বাড়িতে গিয়ে এসে টিচার নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দিলাম

নিরা বিজ্ঞপ্তি দেখি আমাকে ফোন দিল

আমি বললাম হ্যালো

ও বললো, তুমি চাকরির পাশাপাশি টিউশন করে নিজের শরীর অসুস্থ করতে চাইছো

তখন আমি বললাম জীবনে একটু কষ্ট না করলে সফলতা পাওয়া যায় না

তাই আরো কিছু বলল না এর পরের দিন

দুইটা টিউশন পেলাম দুজনেই পরে ক্লাস নাইনে মাসে একেকজনের সাবজেক্ট সহকারে ৩০০০ টাকা করে দেবে মোট ছয় হাজার টাকা আমি ভেবেছি এই দুই ভাইকে পড়াবো এর বেশি আর আমার দরকার নেই

কারণ এর মধ্যেই আমি নিরাকে আর সময় দিতে পারবো বলে মনে হয় না

কিন্তু যাই হোক ওর জন্য আমাকে একটা সময় বের করতেই হবে
আর আমি যেই স্টুডেন্ট পেয়েছি তারা সব কমার্স স্টুডেন্ট যা আমার জন্য একদম পারফেক্ট পড়াতে পারবো তাই আর কোন অসুবিধা হলো না

আমি মনে মনে খুব খুশি ছিলাম যে মাসে ৬০০০ টাকা পেলে ৬৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়া দিবো বাড়ির জন্য টাকা রাখবো সব মিলিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক হবে
211 Views
6 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: