নাস্তা করে ঔষুধ খেয়ে ভোরে সামনে বাড়ান্দা/বড় হাতনায় বসে আছে। অনামিকা বলল-
তোমার ব্যাথা কেমন? যন্ত্রণা একটু কমছে?
মেহেদী:- আমার বোন টা পাশে থাকলে কিছু হবে না। বলে নাকটা ধরে টান দিল।
অনু:-ভাইয়া তোমার ভাগ্নি টিপ আর মালা কিনতে চায়।
মেহেদী:- আমার মামা টা কোথায়?
অনু:-ঘুমিয়ে পড়ছে।
মেহেদীর বাবা আসলো একটা চেয়ারে বসে বলল-
মেহেদী এখন কেমন লাগছে?
মেহেদী:-বাবা অনেক ভালো।
বাবা- কি দরকার ছিল ঐ দিকে গিয়ে এক্সিডেন্ট করার?
অনু:-বাবা থাক না এসব কথা বলে কি হবে।
বাবা:-তোর ভাই কে একটু বুঝিয়ে বল এখনো ছেলে মানুষি করার বয়স নাই।
মেহেদী:- বললো আমি শহরে একটা দোকান দিতে চাই?
অনু:-বাবা তুমি আর একটা কথাও বললে বসতে দিব না। আমার ভাইয়ের বিষয়ে আমি বুঝবো।
বাবা:-ঠিক আছে তোমরাই বোঝ বলে উঠলো।আর বললো দোকানের জন্য ভালো একটা জমি আমি দেখে নিব।
মেহেদী:-বাবা মনে হয় রাগ করে চলে গেল,তোর এভাবে বলা উচিত হয়নি।
অনু:-দূর ভাইয়া তুমি বাদ দাও। কিছুক্ষণ পর রাগ ভেঙ্গে যাবে।
**00**00**00**
ভোরে উঠে মায়া মুখ ভার করে বসে আছে।
সালেয়া বলল- ও মায়া! আপু তুমি কি চা খাবা? না নুডুলস রান্না করবো?
মায়া:- চুপচাপ বসে রইল
রিয়া বলল-কি খাবি বল তোর নানীর কাছে। যা দুজনে মিলে রানা কর।
মায়া:- আমি কিছু খাবো না।
মায়া চুপ করে বসে আছে কারো সাথে কথা বলছে না।সালেয়া রিমা কারো কথা শোনলো না।
রিয়া কাছে এসে বললো- মায়া কি হয়েছে বল?
কেউ গালি দিছে? না টাকা লাগবে?
মায়া:-না। কিছু লাগবে না।
রিয়া:- তাহলে আমার মিষ্টি মামুণি রাগ করছে কেন?
মায়া:- আমি বাবার কাছে যাবো?
রিয়া:- ঠিক আছে আমরা অন্য একদিন যাবো?
এখন কিছু খেয়ে নাও।
মায়া:- না, আমি কিছু খাবো না। আমি বাবার কাছে যাবো?
রিয়া:- বলছি না আমরা পড়ে যাবো। এখন খেয়ে নাও।
মায়া:- না আমি এখনি যাবো। আমি কিছু খাবো না।
রিয়া কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এই মেয়েটা এতো অবাধ্য তো কখনো ছিলনা।যত দিন যাচ্ছে ততই নষ্ট হয়ে যায়। রিয়া রেখে গিয়ে বললো-
ওই বাড়ি থেকে আমাকে টেনে হিচড়ে বের করে দিসে।
কি করে আমি সেখানে যাবো। তোর বাবা কি পারতো না আমাদের নিতে।
মায়া:-তখন আমি ছিলাম না, আমি থাকলে তোমাকে বের করার সাহস হতো না।
রিয়া:-কেন তুই কি করতি?
মায়া:-তোমাকে কিছু বললে আমি চুপ থাকবো কেন?
রিয়া:- ঠিক আছে এখন চল খেয়ে পড়তে বসবি।
মায়া:-বলছি না আমি বাবার কাছে যাবো। তুমি না গেলে আমি একাই যাবো।
রিয়া অনেক রেগে গেলো মায়া কে কয়েক টা থাপ্পড় দিলো । দৌড়ে এসে সালেয়া জড়িয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে তার কলিজার উপরে আঘাত করলো।এই নাতনি ছোট বেলা থেকেই নিজের হাতে লালন পালন করে বড় করছে। এখন সালেয়া নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। পাগল মতো রিয়া কে গালি দিল।সালেয়া বলল- আমার নাতনীর গায়ে হাত তুলনী আমার কলিজায় আঘাত করছো।
রিয়া চলে গেল ঘরের বাড়ান্দায় একটা চেয়ারে বসে ভাবছে,এতোটা রেখে যাওয়া উচিত হয়নি।
মায়ার গায়ে হাত তুলে খুব কষ্ট হচ্ছে। জানি না কতটা জোরে আঘাত করেছি। কখনো বাবার আদর পায়নি, তাই হয়তো বাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু ও তো অন্যায় কিছু চায় নি শুধু বাবাকে চেয়েছে। এটা ওর অধিকার কিন্তু নিজের দূর্বলতা ঢাকতে গায়ে হাত দিলাম।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে মায়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
মেহেদীর জন্য কষ্ট হচ্ছে।কি করবে এখন?
এই মেয়ে আবারো এভাবে করবে তাতে সন্দেহ নেই।
রিয়া চুপ করে বসে রইল সমস্ত কষ্ট রাগ, পাহাড় সমান অভিমান হয়ে। মেহেদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।
বসে বসে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোন উপায় নেই।
কেউ কখনো আসবে না দেখতে। কখনো কেউ বলবে না কাঁদো কেন।
মায়া অনেক কান্না করছে ফর্সা চাঁদের মতো গালে হাতের আঙ্গুল গুলো লাল হয়ে আছে।
অনেক পড়ে মায়া না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
রিয়াও কিছু খেল না শুধু চুপ করে মেয়ের পাশে শুয়ে রইলো। তাকিয়ে দেখলো মায়ার গালে লাল হয়ে আছে।গালে কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো।
অনেক পড়ে মায়া সজাগ হয়ে দেখলো ওর মা পাশে।
মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল
রিয়া বলল- মায়া মা উঠে কিছু খেয়ে নে?
মায়া চুপচাপ শুয়ে আছে কোন কথা বললো না ।
রিয়া:- মা আর কখনো তোকে মারবো না বলে চুম্বন দিল। উঠ তারাতাড়ি খেয়ে তোর বাবাকে দেখতে যাবো।
মায়া:- না আমি যাবো না। বলে শুয়ে আছে।
রিয়া:- তুই না গেলে তাতে কি? আমি একাই যাবো।
মায়া:- মুখে হাসি ফুটে উঠল বললো মা সত্যি যাইবা।
রিয়া:- একদম সত্যি বলছি, তারাতাড়ি খেয়ে চলে যাবো। কিন্তু কাউকে বলা যাবে না ঠিক আছে।
মায়া:- কাউকে না?
রিয়া:- না।
মায়া:- ঠিক আছে, তারাতাড়ি চল...
দুজনেই খুব হাসি-খুশি মুখে, তারাতাড়ি খেতে বসলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সালেয়া বলল- বাহ মা মেয়ের কান্ড, একটু আগেও মারলো আর এখন দুজনে হাসি মুখে খাচ্ছে।
মায়া:- মা বলছে খাবার নিয়ে রাগ করতে নাই।
সালেয়া:- মার সব কথা শুনলে তো মাইর খেতে হয় না।
মায়া:- আপু তুমি কিছু বুঝবে না কাজে যাও তো আংন্টি তোমাকে ডাকে।
খেয়ে দুজনে সুন্দর করে তৈরি হলো।
রিয়া খোঁপা করে কপালে ছোট্ট একটা কালো টাপ দিল। নীল শাড়ি ম্যাচিং করে পড়লো। রিয়া কে দেখতে অপরুপ সুন্দরী লাগছে। মনে হয় মা মেয়ে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।
মায়া কে নীল সিলোয়ার কামিজ পড়তে বললো সে সাদা পড়বে।
রিয়া ভাবছে বাবার মতো সাদা রং খুব পছন্দ করে।
মায়া চাঁদের মতো সুন্দর তারপর সাদা পোশাকে।
দেখলে মনে একটা চাঁদ দৌড়াদৌড়ি করছে। রিয়া দুধে-আলতা গায়ের রঙ আর মায়া ধবধবে সাদা চাঁদের মতো।
রিয়া এই জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো বোরকা পরে হিজাব দিল। দুজনেই আসতে দুপুরে হয়ে গেছে।
রিয়া দরজা দাঁড়িয়ে বললো এই বাড়ি।
তোর-দাদা দাদী আছে,আর তোর ফুফু আছে অনু।সবার সাথে কথা বলেই চলে আসবি।বলবি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে থাকতে পারবো।
**00**00**00**
পুকুর থেকে মাছ ধরছে উঠান বসে অনু মাছ কাটে।
রহিম মাস্টার নাতনির সাথে মাছের গল্প করতে।
মেহেদী গোসল করে, হঠাৎ মায়া উঠানে আসলো।
চারদিকে তাকিয়ে দেখলো ,অনু দেখে চাঁদের মতো একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
অনু বলল- তুমি কাকে খোঁজ?
মায়া:- মেহেদী আছে? রহিম মাস্টার এর ছেলে।
রহিম মাস্টার শুনে অবাক হয়ে তাকালো, বলল-
তোমার বাড়ি কোথায়? মেহেদী কে তুমি চিনো?
বলে ধোমক দিল।অনু বললো বাবা তুমি থামো।
অনু:- এই দিকে আসো তো।তোমার নাম কি?
মায়া:- বললো তোমার নাম কি অনু?
অনু:- হুম, তুমি এতো কিছু জানো কিভাবে?
মায়া:- সে তোমার বাবা তাই না?
অনু:- বাবা একটু রাগি মানুষ তো। তুমি কি চিনো তাকে।
রহিম মাস্টার:- বড় মানুষের সাথে বেয়াদবের মতো কথা বলে বাড়ি কৈ?
মায়া:- মা ঠিক বলছে তুমি অনেক রাগী, আমার বাবা তোমার মতো না।সে অনেক ভালো।
অনু:- তোমার নাম কি, বাড়ি কোথায়?
মায়া:- আমি মায়া, বাড়ি বকসি বাজারের পাশে।
অনু শুনছে রিয়ার মেয়ে আছে মায়া, তাহলে এই কি মায়া
অনু:- তোমার মায়ের নাম কি রিয়া?
মায়া:- হ, আমার আম্মুর নাম রিয়া।
রহিম মাস্টার এখন আরো বেশি রেগে গেল।অনু বাবাকে থামা তে পারছে না, মায়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। মায়া হাত জোরে ঝাঁকি দিয়ে ছুটিয়ে বলল-
আমি আমার বাবাকে দেখতে এসেছি। না দেখা পর্যন্ত কেউ আমাকে সরাতে পারবে না।
রহিম মাস্টার:- চেঁচিয়ে বললো তোমার বাবার কাছে যা মরতে এখানে আসছো কেন?
মায়া:- তোমার ছেলেই আমার বাবা। আমি তাকে না দেখে যাবো না।
অনু:- মায়ার কথা শুনে দৌড়ে কাছে এসে বললো তো তো তোমার বাবা কে? গলা কেঁপে উঠলো কথা বলতে গিয়ে ঢোক গিলল।
মায়া:- তার ছেলে মেহেদী আমার বাবা। আমি বাবাকে সাথে কথা বলতে চাই।
রহিম মাস্টার থ খেয়ে হাত ছেড়ে দিল। তাকিয়ে বলল- কি বললে তোমার বাবা কে?
না এ হতে পারে না মিথ্যা বলছো।
মায়া:- বিশ্বাস না হলে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো। মা বলছে আমি যখন পেটে ছিলাম, তখন তোমরা তাকে ঘর থেকে বের করে দিছো।
অনু:- তোমার মা কোথায়? তোমার মা কি আবার বিয়ে করছে?
মায়া:- মা রাস্তায় বলছে আসবে না।নানী আপু মার বিয়ে দিতে চাইছে মা তা ভেঙ্গে দিসে।
রহিম মাস্টার মায়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
এটা তার মেহেদির মেয়ে আমার বংশধর? মায়ার দিয়ে তাকিয়ে আছে চাঁদের মতো দেখতে। বলল-
দাদা ভাই তুমি এতো বছর কেন আসলে না?
আবেগে তার কন্ঠ ধরে আসছে বলল- দাদা ভাই আর কখনো আমাদের ছেড়ে যাবে নাতো?
অনুর ডাকে মেহেদী, রহিমা সবাই হাজির হলো।
অনু এবং রহিম মাস্টারের দুজনে আনন্দে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
মেহেদী বলল- কি হয়েছে?
অনু :- ভাই রিয়া ভাবী আইছে।
মেহেদী:- কোথায়? সব সময় মজা করিস না।
মায়া কে দেখে বলল- তুমি এখানে কেন?
মায়া দৌড়ে এসে মেহেদী কে জড়িয়ে ধরলো।
বলল- বাবা তুমি আমাকে দেখতে গেলে না কেন?
মেহেদী:- কে তোমার বাবা?
মায়া:- মা বলছে তুমি আমার বাবা! জানো তোমার অনেক মিস করছি।
মেহেদী:- সত্যি আমি তোমার বাবা? তোমার মা কোথায়?
মায়া:- মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে,সে বলছে তুমি না আনলে কখনো আসবে না।
মেহেদী পাগল পাগল হয়ে এক বার মায়ার চেহারা দেখে, একবার মায়ার হাত দেখে, পা দেখে, হাত দিয়ে ছুয়ে
বলল- সত্যি বলছো তুমি আমার মেয়ে?
কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না, ঠোঁটে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
মায়া বলল-হ্যা আমি তোমার মেয়ে।
মেহেদী হাতে কপালে চুমু দিয়ে চোখের জল মুছে হাসি দিয়ে বলল- বাবা দেখো আমার মেয়ে?
মায়া! বাবা? মায়া আমার মেয়ে? তোমরা শুনছো? মায়া আমার মেয়ে? বলেই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
কপালে, গালে, চুমু দিয়ে বলল আমাকে মাফ করে দিস মা!?
আমি তোকে চিনতে পারি নি? তুই আমার মেয়ে?
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মিষ্টি মেয়েটা আমার।
বললো - বাবা তোমার আম্মুকে আনতে চলো?
মায়া:- আমার কথা বল না তাহলে আম্মু আমাকে বকা দিবে।
মেহেদী:- ঠিক আছে মায়া চলো।
মেহেদী আর মায়া আসলো রিয়া বোরকা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেহেদী বলল- তোমার মা কোথায়?
মায়া:- ওই যে বোরকা পড়া মহিলাটা দেখছো?
মেহেদী:- হেসে দিল কি বলো তোমরা মা বোরকা পড়ে?
মায়া:- আজকেই প্রথম পড়ছে।
মেহেদী:- ঠিক আছে তুমি একটু এখানে দাঁড়াও আমি আগে যাই।
রিয়া দুর থেকেই মেহেদী কে দেখতে পেলো। এতো বছরের অপেক্ষা ,আকাঙ্ক্ষা এই মানুষটির জন্য।
দেখে ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়তে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
মেহেদী সামনে এসে দাঁড়ালো। রিয়া দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়ছে না।
কি করবে জড়িয়ে ধরবে? নাকি পালিয়ে যাবে?
না কথা বলবে? মেহেদী কি এখন তাকে ভালোবেসে?
নাকি শুধু মেয়ে কে নিতে চাইছে?
না আমি মায়া কে কখনো দিব না ভেবে হাঁটা শুরু করলো।
মেহেদী ভাবছে এতোটা বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি।
প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে মিস করছি।এই দিনের জন্য।
আর আমাকে অপেক্ষা করাই ও না।এক বার আমাকে আপন করে নাও।
কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে, কথা গুলো হৃদয় থেকে মুখের কাছে এসে গলায় বন্দী হয়ে গেছে।
ইচ্ছে করছে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে। ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে বলতে রিয়া আজো তোমাকে আগের মতই ভালবাসি।
ভয় হয় রিয়া আমাকে গ্রহণ না করবে তো?
যদি শুধু মেয়ের জন্য এখানে আসে? যদি আবার আমাকে ছেড়ে চলে যায়?
রিয়া হাঁটতে শুরু করল মেহেদী ভাবছে না এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে পারবো না।
হঠাৎ করে রিয়ার হাত ধরে ফেলল।
থমকে গেল পৃথিবী, মনে হচ্ছে দুজনের শরীরে সখ লেগে গেল। রিয়া আর মেহেদী কেঁপে উঠলো কিন্তু কিছু বললো না।
কথা বলার মতো ভাষা হারিয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
এটা কি আনন্দ না দুঃখ বোঝার হুঁশ নেই।
মেহেদী শুধু অপলক দৃষ্টিতে রিয়ার চোখে তাকিয়ে আছে। ব্যাকুল হৃদয় শুধু রিয়া কে দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
মেহেদী অনুভব করছে তার বুকের হার্ট বিট শুধু।
পায়ের নিচে মাটি নেই, শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে।
রিয়া মুখের পর্দাটা সরিয়ে নিল মেহেদী চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠল। শুধু তাকিয়ে আছে ,
মায়া বলল-বাবা তোমাদের ভিতরে ডাকছে।
মনে হচ্ছে কেউ শুনতে পারলো না, তাই মায়া মেহেদী কে নাড়া দিয়ে বললো - তোমাদের ভিতরে ডাকছে?
হুঁশ ফিরে পেলো বলল- কি?
মায়া:- আব্বু তুমি এতো কম শোন সবাই ডাকছে তো?
মেহেদী:- হুম চলো।
রিয়া:- হাতটি সরিয়ে নিয়ে বললো- না বাড়ি যেতে হবে।
মেহেদী:- আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিব না?
রিয়া:- এতটা বছর কোথায় ছিলেন আপনি?
এখন আমার কাউকে প্রয়োজন নেই? একবার একটা ফোন করে কখনো জানতে চাওনি যে আমি কেমন আছি?
মেহেদী:-কষ্ট তো আমারো হয়েছে তাই না?
রিয়া:-একটা পুরুষ মানুষের আবার কষ্ট? তাহলে তো এক বার হলে আমাকে খুঁজতে?
নিজের বউকে ফেলে চলে গেলা কখনো জানতে চেয়েছো বেঁচে আছি না মরে গেছি?
আজ দশ বছর পরে এসে আমার উপর অধিকার খাটাও। তখন কোথায় ছিলে তুমি? তোমার মেয়ে না খেয়ে বাবার জন্য রাতে পর রাত দিনের পর দিন কেঁদেছে ,তখন একটা ফোন দেওনি তুমি।
এই তোমার ভালবাসা? এটা তোমার দায়িত্ব?
জানো একটা নরী স্বামী ছাড়া থাকা কতটা কষ্টের।
কতটা লজ্জার। দিনের পর দিন মানুষের নোংরা কথা হজম করতে হয়।
সমাজে নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় লাগে কে আবার কি অপবাদ দেয়।
মায়া আমাকে বলে মা যখন ছুটি হয় প্রতিটি ছেলে-মেয়ে দৌড়ে বাবার কোলে উঠে।কত আদর করে, মজা কিনে দেয়।
আমার বাবা কখনো একটা ফোন করেও বললো না মামুণি তুমি কেমন আছো?
মেহেদি:- আমি এখন বুঝতে পারছি যা করেছি ভুল করেছি।
তখন বুঝতে পারিনি আমাকে মাফ দাও।
আমি তোমার থেকে বিছিন্ন থাকতে -থাকতে বিরহের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছারখার হয়ে গেছি।
রিয়া:- কাউকে না বলে চলে এসেছি এখনি যেতে হবে।
মেহেদী:- এক বার সবার সাথে দেখা দিয়ে যাও।
বলে হাত ধরলো রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
রিয়া আর না করতে পারলো না সমস্ত অভিযোগ অভিমান শেষ হয়ে গেল।
চোখের দিকে তাকিয়ে- শুধু দেখা করে চলে আসবো, কিছু খাবো না
মেহেদী:- ঠিক আছে বাবা চলো...
**00**00**
রিমার ছোট ছেলে রানা সাঁতার জানে না। পুকুরে ডুবে পানি খেয়েছে।
সবাই হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে রিয়া কোথায় গেল।
সালেয়া ফোন করলো কিন্তু রিয়া ধরলো না। অনেক বার কল করতে দেখে ফোন বন্ধ করে রাখলো।
সবাই খুব টেনশনে আছে, রিমার স্বামী আসতে অনেক দেরী করলো।
সবাই বাহিরে বসে আছে অনিক আসলো।
রিমা স্বামী কে অনেক গালাগালি করছে এতো দেরি।
রিয়া ফোন ধরে না রেগে বললো সবাই খারাপ আর কত কিছু।
ডাক্তার আসে বলল- ঠিক সময়ে নিয়ে আসতে পারছেন তাই এখন আর ভয় নাই,রুগি সুস্থ আছে।
***000***000***
অনু নুডুলস আর ডিম ভাজি করে দিলো।
রিয়া খেয়ে যে রুমে থাকতো সেই রুমের কাছে গেল।
মেহেদী মায়া কে খাইয়ে দিচ্ছে।
রিয়া তাকিয়ে দেখলো রুমটা নতুন করে সাজানো।
রিয়ার কোন চিহ্ন নেই এটা দেখে খারাপ লাগলো।
ভাবছে কাছে আসলে বলে ভালবাসি। অথচ দুরে গেলে কখনো মনে রাখে না।
পিছনে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী দাঁড়িয়ে আছে।
রিয়া বললো:- এখানে কেউ থাকে না?
মেহেদী:- না। বলে তাকিয়ে আছে?
রিয়া বলল- এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ? আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
মেহেদী:- তুমি যে কষ্ট পেয়েছো তা তোমার কর্ম ফল? তোমার জন্য আমিও কষ্ট পেয়েছি?
রিয়া:- পিছনের কথা তুলে আমাকে অপমান করতে চাও বুঝি?
দশটা বছর কষ্টের আগুনে নিজেকে নিজেই তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছি।
আর কতটা আঘাত পেলে ভুলের ক্ষমা হবে বলো?
নিজের ভুলের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণা সহ্য করেছি।
ঠিক আছে আমি আর কখনো তোমার সাথে নিজেকে জড়াতে চাই না।
মেহেদী:- হঠাৎ জড়িয়ে ধরে বললো আমি পিছনে কথা বলে তোমাকে আঘাত করতে চাইনি।
মায়া যে আমার মেয়ে সেই টুকু জানার অধিকার কি আমার ছিলনা বলো?
রিয়া:- আমি বলার মতো সময় পাইনি। যখন বুঝতে পারি আমি মা হতে চলেছি তখন আমাকে তাড়িয়ে দিছো।
মায়া আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, না হলে আমি হয়তো আগেই মারা যেতাম।
মেহেদী:- তুমি কি জানো না প্রতিটা বাবা চায় তার সন্তানকে আদর করতে।
বুকে জড়িয়ে ভালোবাসার আলিঙ্গন করতে।
প্রতিটা বাবার স্বপ্ন থাকে তার সন্তানকে কথা বলা শিখাবে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা মিষ্টি কষ্ট আব্বু বলে প্রথম ডাক শুনতে।
হাত ধরে এক পা দুই পা করে হাঁটতে শিখাতে।
প্রতিটা বাবা চায় তার সন্তান আব্বু বলে বলে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ুক।
চোখের জল মুছে বলল- কিন্তু দেখো আমার ভাগ্য?
না পেলাম জীবনে মা-বাবা ভালোবাসা।
না পেলাম স্ত্রী-সন্তনের ভালোবাসা।
অথচ সারাটি জীবন ধরে শুধু একটুখানি ভালোবাসার জন্য সবার ধারে ধারে ভিক্ষা করলাম।
বিনিময়ে কি পেলাম অপমান আর কষ্ট ছাড়া।
রিয়া:- মেহেদির অশ্রু মুছে দিয়ে কপালে একটা দির্ঘ্য চুমু দিয়ে বলল- শান্ত হও তুমি!
মেহেদী রিয়া চোখের দিকে নিরবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রিয়া বলল- আমাকে মাফ করে দাও তুমি?
আমাদের ভাগ্যে হয়তো কষ্ট লেখা ছিল।
জীবনে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। কথা দিলাম আর কখনো কষ্ট দিব না।
আমি আমার শেষ রক্ত বিন্দু, এবং আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার সুখের জন্য বিলিয়ে দিব।
এখন আমাকে যেতে দাও,যে দিন তুমি সম্মানের সহিত নিয়ে আসবে সেদিন চলে আসবে।
দুজনে চলে আসলো বাড়িতে কেউ নেই।
ফোন করলো সবাই হসপিটালে আছে। তারাতাড়ি হসপিটালে গেল রিমা রাগ করে আছে কোন কথা বলে না। রানা কে বাড়িতে নিয়ে আসলো সবাই। রিয়ার প্রতি রেখে আছে।
রিয়া বললো ফোনে চার্জ ছিলনা তাই বন্ধ হয়ে গেছে।
রিমা ছেলের কাছে বসে আছে রিয়া বলল-
আপু আমি আছি তুমি যাও কিছু খেয়ে নাও।
রিমা:- আমার ছেলে আমি দেখতে পারবো কাউকে লাগবে না।
রিয়া:- রিমার হাত ধরে বললো দেখ আমি তো তোর বোন তাই না?
আমি বুঝতে পারি নি তাহলে অনেক আগেই আসতাম। তোর ছেলে আমার মেয়ে একই কথা তো।
আমাকে মাফ করে দে না। আমি তো তোর ছোট তাই না?তুই তো বলতি ছোট মানুষ ভুল তো করবেই?
আর শোন আপু আজকে মেহেদির সাথে দেখা করছি।
রিমা:- সত্যি? মেহেদী কি বললো?
রিয়া:- আমি তো সেই রাখ তার সাথে থাকবো না।
অনেক কেঁদে আমার পায়ে পড়লো। কি আর করবো বল আমার তো স্বামী তাই বলছি ঠিক আছে।
আমাকে যদি উপযুক্ত সম্মান দিয়ে নিতে পারো তাহলে আসবো।
রিমা:- ঠিক আছে পুরুষ মানুষ কে একটু বেশি টাইট দিতে হয়।
আমার কপালে একটা পশু জুটেছে। আমার পাও ধর তো দুরের কথা ,বাসা খালি পেলেই অন্য মেয়ে নিয়ে আসে।
রিয়া:- কি বলো কত বড় সাহস তুই কিছু বলনা?
রিমা:- লুকিয়ে নিয়ে আসে দেখলে বলে খালাত বোন মামাতো বোন দেখতে আসছে।
বেশি কথা বললে আমাকে মারতে চায় তাই ভয়ে কিছু বলি না
রিয়া:- চিন্তা করিস না পুরুষ মানুষ তো ঠিক হয়ে যাবে। কয়দিন আর ফ্রি খাইবে?
***00***000***
মেহেদী ভাবছে রিয়া যেখানে চাকরি করে তার কাছে একটা বাসা করবো।
মেহেদী:- বাবা আমি একটা ফার্মেসি দিতে চাই। ভাবছি রিয়া কে নিয়ে শহরে থাকবো, আর একটা ঔষুধের দোকান দিব। তোমার কোন আপত্তি আছে?
রহিম মাস্টার ছেলের সাথে থাকার ইচ্ছা থাকলেও।
ভাবছে ছেলে কখনো কিছু পায়নি আমরা আর কয়দিন থাকবো। এখন ও নিজের মতো করে থাকতে চায় থাকুক।যেন ভালো থাকে তাতেই হবে।
বলল- আপত্তি করবো কেন তোর যেখানে ইচ্ছা থাক।
তবে মাঝেমধ্যে আমাদের কাছে আসিস একে বারে ভুলে যাইস না।
মেহেদী:- না আসলে তোমরা যাবে।
**00***000***
ভোর হতে না হতেই সেই ঘটক আর ছেলের বোন এসে হাজির। কি কখর মেয়ের তালাক হয়েছে নাকি এখনো হয়নি?
কবে মেয়ে বিয়ে দিবে?
রিয়া বলল- আমি বিয়ে করবো না, অন্য কোন পাত্রী দেখেন।
ছেলের বোন তুমুল ঝগড়া শুরু করে দিল।
তাদের হাজার হাজার টাকা খরচ করছে এখন বলে বিয়ে করবে না।
তারা তো বিয়ের জন্য মেয়ে বাড়িতে হাত পা ধরে নি ঘটক পাঠিয়ে আনা হয়েছে।
অনেক ঝগড়া ঝাটি করে ঝামেলা করে সালিশ বইলো। মেয়ে পক্ষ আগে বলেনি তাই ছেলে পক্ষের খরচ এর জন্য জরিমানা হিসেবে 20000 টাকা দিবে।
রিয়া রাজি হলো তবে এক মাস সময় চাইলো।
**00**00**
মেহেদী একটা ফ্ল্যাট বাসা ক্রায় করলো শহরের কাছে। এখান থেকে রিয়ার ইস্কুলে অনেক কাছে হবে। দুই রুম , রান্নাঘর সাথে বাথরুমে এবং সামনে ব্যালকনি সায়-ছোট সব কিছু মিলিয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে।
মাসের শুরুতে বাসায় উঠলো সবাই খুব খুশি।
দুপুরে মেহেদির বাবা মা বোন আর শ্বশুরি খাবার খাবে। অনেক বাজার করলো রান্না বান্না ধুম পড়েছে।
পোলাউ,গরু, মাসরুর,মাছ ,করলা সব কিছু রিয়া নিজ হাতে রান্না করছে।
সবাই শুধু সাহায্য করলো। মেহেদী খেয়ে বুঝতে পাড়লো সেই আগের রিয়া এখন নেই।
অনেক সুন্দর রানা করতে জানে।
সবাই বিকেলে চলে গেল, মেহেদী ভাবছে রিয়া অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
কিন্তু সেই চঞ্চল অস্থির রিয়া কে বেশি পছন্দ ছিল।
এখন স্থির, শান্ত লাজুক আর নম্র স্বভাবের রিয়া।
মেহেদী বলল- বাহ তুমি কতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছো।
রিয়া:- সময় আর পরিস্থিতি আমাকে শিখতে বাধ্য করছে।
মেহেদী:- কিন্তু তুমি কি জানো আমি সেই রাগি, চঞ্চলা চপলা, অস্থির হরিণী চাহনিতে বেশি পাগল হয়ে যেতাম। মিস করি সেই পুরনো রিয়া কে।
রিয়া:- স্রত কখনো এক থাকে না, বয়স আর সমাজের বেড়া জালে নিজেকে বন্দী করলে কখনো আপন গতি থাকে না। পাল্টে যায় গতি বদলে যায় জীবন।
মেহেদী:- আচ্ছা কখনো আমাকে মিস করেছো?
রিয়া:- তোমাকে আমি কেন মিস করবো?
মেহেদী:- না, এমনি।
রিয়া:- আমি পুরুষ মানুষ কে বিশ্বাস করি না।
মেহেদী:- তাহলে এতোটা বছর কার অপেক্ষায় ছিলে?
রিয়া:- বয়েই গেছে আমার।মা মেয়ে ভালো ছিলাম কখন কারো প্রয়োজন পড়েনি।
মায়া:- এসে বলল- বাবা মিথ্যা বলছে প্রতি রাতে তোমার কথা ভেবে বসে থাকতো। কখনো না খেয়ে কান্না করতো।
রিয়া:- মায়া খুব খারাপ হবে কিন্তু চুপ কর বলছি।
মেহেদী মায়া কে পাশে বসিয়ে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল- প্রিয় মানুষদের ছেড়ে দূরে থাকা কতটা কষ্টের তা এতো বছরে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।
কখনো আমিও একটা রাত ঘুমাতে পারিনি।
শুধু মনে হয়েছিল আমার দেহটা শূন্য পড়ে আছে,মন, হৃদয়,আত্ম , আমার সম্পূর্ণ অস্তিত্ব রেখে গেছি।
রিয়া:- থামো তো তোমার বয়স হয়েছে আর বিবেক বুদ্ধি কমে গেছে? মেয়ে বড় হয়েছে না ওর সামনে এভাবে বলো কেন।
মেহেদী:- ওরে আমার লজ্জাবতী বউ এতো লজ্জার কি বলাম। তোমার কথা কখনো মিস করিনি শুধু মায়া কে মিস করছি বুঝলা?
রিয়া:- কি? মায়া যে তোমার মেয়ে তা জানতে বুঝি?
মেহেদী:- স্বপ্নে দেখেছি বুঝলা।
রিয়া:- ঠিক আছে। আমিও তোমাকে কখনো মিস করিনি।
রাতে মেহেদী ঘুমাবে কিন্তু রিয়া বললো-
তুমি একা অন্য রুমে থাকবে। আমি আর মায়া এই রুমে থাকবো।
মেহেদী:- ওই শোন না মায়া একা থাক, আমরা অন্য রুমে যাই?
রিয়া:- না আমি আমার মেয়ের কাছে থাকবো।
তোমার দরকার নাই, যখন দরকার ছিল তখনি চলে গেছো।
মেহেদী:- কেন দরকার শেষ হয়ে গেছে বুঝি?
রিয়া:- যাকে দরকার তাকে তো পাশে রাখছি। বলে মায়াকে জড়িয়ে ধরলো।
মেহেদী:- দেখো দশটা বছর তোমার থেকে আলাদা ছিলাম কেন বুঝতে চাও না?
রিয়া:- তাতে কি হয়েছে এখন কি দশ বছরের বকেয়া আদায়ে করতে চাও নাকি?
মেহেদী:- হায়রে কপাল তা পারলে ভালো ই হতো।
রিয়া:- তাতে আমার দোষ কোথায় তোমার ইচ্ছায় রইছো।
এখন আর দশ বছর আমার ইচ্ছায় থাকবা ।বলে ঘুমিয়ে পড়লো।
মেহেদী:- আচ্ছা শোন না আমি তোমার বাম পাশে শুই আর ডান পাশে মায়া থাকুক।
রিয়া:- কালকে থেকে দেখা যাবে, আজকে তোমার আলাদা থাকতে হবে এটা সাস্তি।
মেহেদী বিরক্ত হয়ে এক বুক হতাশা নিয়ে চলে গেল ।
শুইতে যাইবে তখন চোখে পড়লো একটা পুরনো ডাইরি।
ভাবছে মায়ার ডাইরি আছে,দেখি হাতের লেখা কেমন।
পাতা উল্টে দেখলো রিয়া আর মেহেদী নাম লেখা।
একটু উলটে নিল ..
রোমান্টিক হুজুর আমার জীবনের স্রেষ্ট মুহূর্তে ছিল সেই দিন। যখন তুমি নৌকায় বসে চিৎকার দিয়ে বলেছিলে ভালোবাসো!।
জীবনে কখনো কিছু অভাব হয়নি, কিন্তু তোমার কাছে এসেছি বুঝতে পারলাম জীবনে কিছুই পাইনি।
সত্যি বলতে একটা নারীর জীবনে খাঁটি ভালোবাসা ছাড়া মূল্যহীন।
আবার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ভিতরে দেখলো, মেহেদী! যে দিন আমি রকির জন্য অসুস্থ হয়ে ছিলাম। তুমি আমার মাথায় পাশে বসে সারা রাত জেগে ছিলে। তোমার চোখের জল আমার কপালে পড়ে ছিল। তখন প্রথম অনুভব করে ছিলাম তোমাকে। তোমার অশ্রু মনে হয় আমার হৃদয়ে সেই দিন ভালোবাসার বিজ বপন করেছিল।
নিজের অজান্তেই তোমার জন্য মায়া অনুভব করছিলাম ।
আবার ভিতরে উল্টিয়ে পড়তে শুরু করলো..
শত কষ্ট অবহেলা সহ্য করেও তুমি আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছো । আমাকে খাইয়ে দিছো,ঘুম পাড়িয়ে দিছো,জামা কাপড় ধুয়ে দিছো।কত আদর যত্ন করেছো আমাকে। আমি কত হতভাগা বিনিময়ে শুধু আঘাত করেছি।
এখন আমি বুঝতে পারি তোমাকে, তোমার ভালোবাসা কে, তোমার প্রয়োজনীয়তা কতটা। তোমার ভালোবাসা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে ধৈর্য্য ধরতে হয়। কিভাবে অপেক্ষা করতে হবে। কিভাবে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে হয়।
আরো ভিতরে উল্টিয়ে দেখলো.. নিজের সৌন্দর্য্য আর অর্থ সম্পদের অহংকারে আমি অমানুষ হয়ে গেছিলাম।
তুমি নতুন করে আমাকে তৈরি করছো। তোমার ভালোবাসার স্পর্শ স্পর্শে মরুভূমির মতো হৃদয়ে উর্বর হয়েছে। সেখানে তুমি ভালোবাসোর কৃষ্ণচুড়া বপন করেছো। যখন তা বড় হয়ে আমার হৃদয়ে সমস্ত জমিন লাল রঙে ছেয়ে গেছে, তখন তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে। একাকী নিঃসঙ্গতায় আমি হারিয়ে গেছি। আবার নিজে খুঁজে পেয়েছি, কষ্টের মরুভূমির মাঝে একা দাঁড়িয়ে আছি। কখনো স্মৃতিগুলো আমাকে ঘিরে রেখেছে। প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে বুঝিয়েছে তোমাকে কতটা প্রয়োজন।
আরো ভিতরে উল্টিয়ে দেখলো,,, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাতাসের শন শন শব্দে জানালার পাশে বসে আছি। হিমশীতল শিহরণ আকাশ ভাঙ্গা গর্জন। ভয় ভয় লাগছে কেউ নেই পাশে।ডাহুকের বেকুল সুরে হঠাৎ মনে পড়ে তোমাকে। তোমার শরীরের মিষ্টি গন্ধ আর উষ্ণতায় আমাকে ঘিরে রেখেছে। তুমি জানো না তোমাকে ভেবে কতটা রাত নির্ঘুম কেটেছে। কতটা সময় বসে বসে তোমার অপেক্ষায় করছি।তার সাক্ষী ঐ নিঃসঙ্গতা আর নিরব রাতগুলো।
আরো ভিতরে উল্টিয়ে দেখলো,,, মেহেদী আমি আজ বড্ড বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই সমাজের রক্ত চক্ষু আর নোংরা ইঙ্গিত নিয়ে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না। তুমি জানো না একটা নারী স্বামীর ছাড়া সমাজে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন।
কারো সাথে কথা বললে কোথায় গেলেও ভয় হয় কে আবার কি অপবাদ দেয়া।
আরো উল্টিয়ে ভিতরে দেখলো...
কতটা ভালবাসি তোমাকে আমি জানি না, কতটা মিস করছি তাও জানি না। শুধু জানি আজ আট বছর এক মাস দুই দিন।এমন একটা রাত কাটেনি যে রাতে তোমাকে ভাবিনি। আর কতটা অপেক্ষা করাবে তুমি? আর কতটা শাস্তি দিবে আমাকে? আর কতটা কষ্ট পেলে তোমার পাথর হৃদয়ে নরম হবে?
আরো ভিতরে দেখালো...
দখিনা বাতাসের কাছে পৌঁছে দিলাম, আমার হৃদয়ের কথা।
হে বাতাস বলে দিও বন্ধুর কানে।তাকে ছাড়া দির্ঘ্য দিন বিছিন্ন থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত অসুস্থ হয়ে গেছি। চোখ থেকে গভীর কুপের মত জল পড়তে পড়তে শুকিয়ে গেছে।তার বিরহের লেলিহান শিখায় পুড়ে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছি। হৃদয়ের গভীরে রক্ত ঝরে, কষ্টরা আগুনে কিট হয়ে শিড়া উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। হে বাতাস বলে দিও তাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। একাকী আর নিঃসঙ্গতা গলা কাটা পশুর মত ছটফট করছি।তার বিরহের বিষে আমার সারা দেহ নীল হয়ে গেছে
মেহেদীর চোখে প্রচন্ড ঘুম আসলো।তাই বন্দ করে বললো অনেক সময় আছে পড়ার। এখন ঘুমাতে হবে গুড নাইট।।
**সমাপ্ত**
রোমান্টিক হুজুর (শেষ পর্ব)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
587
Views
10
Likes
3
Comments
3.8
Rating