**নীলার সফলতা**

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
বাস্তবতা বড়ই কঠিন, কল্পনাকে সত্যিকারের রূপান্তর করতে প্রয়োজন সীমাহীন ধৈর্য্যতা, আর তারই প্রমাণ হিসাবে ধরে নিতে পারি এ গল্প।।।

গল্প না বললেই চলে হতে পারে সত্যি কারের জীবনের ঘটনা,
জন্মের পর থেকেই তার জীবনে শুরু হয় এক প্রবল সংগ্রাম।। সংগ্রামে যে শুধু যুদ্ধ করতে হয় তা নয়, মেনে নিতে হয় কষ্টদায়ক কর্ম, শুনতে হয় বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা, দেখতে হয় বৈচিত্র রকমের হিংস্র প্রাণীদের।
ছোটবেলা থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে নীলা নামক এক মেয়ে। জন্মের পরপরই বাবা যেন তার জীবনে নেই। (জীবনে নেই বলে যে মানুষটার মৃত্যু তা কিন্তু নয় ) পৃথিবীতে দেখতে হয় বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত মানুষ, আর এই সম্পর্ক গড়তে চাইতো নীলা।। নীলার মা রুজি রুটি নিয়েই ব্যস্ত। নীলাকে বুঝার মত কোন মন মানসিকতার মানুষ পাওয়া গেল না। বয়স যখন সাত, নীলা দেখতো তার মত ছেলে মেয়ে স্কুলে যায় এবং আনন্দে বাসায় ফিরে। তারও একদিন ইচ্ছা হল স্কুলে যাওয়ার জন্য। সে তার মাকে কোন মত রাজি করানোর পর স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। নীলা সে রাত কিছুতেই ঘুমাতে পারলো না।। সেখানে গিয়ে কি করবে, কে কি বলবে তাকে এসব চিন্তা নিয়ে সে যে কখন ঘুমিয়ে পড়ল সে নিজেই বুঝতে পারল না। পরের দিন সকালে সে খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠলো। এবং স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। স্কুলে যাবার পর সে খুব মনোযোগ সহকারে পড়াশুনা করতে লাগলো। এভাবেই অনেক বছর চলে গেল। নীলা এখন অষ্টম শ্রেণীর একজন ছাত্রী।হঠাৎ তার জীবনে শুরু হয় এক নতুন পর্ব, তার জীবনে যে এরকম ঘটবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্রও ধারণা ছিল না নীলার।। তার মা হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করে। মেয়ের জন্য রেখে যায়নি একটি পয়সাও, রেখে যায়নি মাথা রাখার মত জায়গা। আবারো এতিম হয়ে পড়ল নীলা। নীলার মাথায় যেন কান্নার পাহাড় ভেঙ্গে পড়ল। কান্না করতে করতে সে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আর এই ব্যস্ততার মধ্যেই লক্ষ্য করল একজন মহিলা তাকে দেখতে এলো। সে মহিলাটি ছিল তার দূর সম্পর্কের এক মামি। মহিলাটির মাথায় ছিল নীলা সম্পর্কে এক ভয়াবহ বুদ্ধি। মহিলাটি নীলাকে তাদের ঘরে রাখতে চাইতো কিন্তু নীলা কখনো রাজি ছিল না, আজ অসহায় বলে সে তার মামীর বাসায় থাকতে চাইল। মহিলাটি তার স্বামী এবং তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতো। মহিলাটি স্বামী অপরের প্রতি ছিল নিষ্ঠুর। বিশেষ করে নীলার প্রতি। মহিলাটি নীলাকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়।।

নীলাকে তার পড়ালেখার জন্য খরচ দিতে তার মামি বা মামা কিউই রাজি হলো না। অতঃপর নীলাকে তার পড়ালেখার সমাপ্তি করতে হয়।। নীলার মামি নীলাকে দিয়ে সব কাজকর্ম করাতেন। মহিলার বাচ্চাগুলো ছিল খুবই অত্যাচারী। মহিলাটির ছেলের বয়স ১৭। মেয়ে বিয়ে হয়ে এখন মহিলাটির বাড়িতে থাকে। মনে হয় মহিলাটির মেয়ের স্বামী বিদেশ থাকেন। নীলার মামা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। নীলা মনে করে পুলিশ অফিসাররা সব সময় দুর্নীতিকারিকে শাস্তি দেয় এবং অন্যায় অত্যাচার সমাজ থেকে দূর করে। কিন্তু তার এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল প্রমাণ হয় তার মামার ব্যবহার দেখে।। প্রায়ই নীলাকে মারধর করত তার মামা। মামী এসব দেখিও না দেখার ভান করতো। তার মামীর মেয়েও একই চরিত্রের। ছেলেটা তো ঘরেই দেখা যেত না, সারাদিন বাইরে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আড্ডায় মগ্ন ছিল।।

নীলা কবিতা লিখতে খুবই ভালোবাসতো। যখন সে কাজ শেষ করে তখনই সে কিছু সময় সবাইকে লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখত।। একদিন তাদের বাড়িতে এক মেহমান আসলেন। নীলা খুব সুন্দর আচরণ করে অতিথির সাথে। খুব ভালো করে আপ্যায়ন করে। অতিথি ছিলেন একজন বড় এবং বিখ্যাত কবি। নীলার মামা বা মামির সঙ্গে কোন সম্পর্কই ছিল না মেহমানের।
এই কবি নিলার গ্রামে ভ্রমন করতে এসেছিল। এবং মাঝেমধ্যে লোকেদের ঘরে প্রবেশ করে একজন ভালো কবিতা লেখককে খুঁজছিলেন ।। কবি যে ঘরে বসে নীলার বানানো চা খাচ্ছিলেন সেই ঘরেই রাখা ছিল নীলার সেই খাতা যেটার মধ্যে লেখা ছিল প্রায় ৪০ টির মত কবিতা। কবির এই কবিতাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো এবং কে এই কবিতাগুলো লিখেছেন তা জানতে চাইলেন। ওই রুমে কেউই উপস্থিত না থাকায় নীলা সত্যিটা বলতে পারল।

আর এখন বর্তমানে নীলা একজন খুবই বিখ্যাত কবি।। এখন তার টাকা পয়সার কোন কিছুরই অভাব নেই।। সে এখন তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকমের অসহায় ও অত্যাচারী মানুষের থাকার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
205 Views
4 Likes
6 Comments
5.0 Rating
Rate this: