রোমান্টিক হুজুর পর্ব ৫ এর বাকি অংশ

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
পর্ব ৫ এর বাকি অংশ
সালেয়া বলল- আজকে যদি এই ছেলে পক্ষ গ্রামের মানুষ সবাই অপমান করে যায় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি বলে রাখলাম।
রিয়া:- আমাকে মাফ কর আমি বাবার কাছ থেকে মেয়ে আলাদা করতে পারবো না।

রিয়া ছেলে পক্ষের সবাই কে ডাকলো বলল- আপনারা কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলতে চাই। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পাত্রী আবার কি বলবে,
রিয়া বলল-
আমি বুঝিয়ে বলি তুই ঘরে যা
রিয়া:- কোন দরকার নেই আমি বলি। বললো আসলে এখন আমি বিয়েটা করতে পারবো না।

সবাই তো বলাবলি শুরু এই মেয়ে কি বলে? মনে হয় কোথাও কারো সাথে ইটিস-পিটিস চলছে।

ছেলের বোন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো-
তুমি বললেই হবে।আমরা সব আয়োজন করছি, অনেক জিনিস কিনেছি এগুলোর দাম কে দিবে।
রিয়া:- আমি বুঝতে পারছি আপনাদের সমস্যা। কিন্তু আমি একজনের বিবাহিত স্ত্রী, আমার স্বামীর কোন খোঁজ ছিলনা। তাই সবাই বিয়ের আয়োজন করেছে কিন্তু সে এখন ফিরে এসেছে। আমাদের কোন তালাক হয়নি এই অবস্থা বিয়ে হবে না। শুধু কেচ-মামলা ঝামেলা হবে।তাই বলছি সে যেহেতু চলে আসছে আগে বিবাহ বিচ্ছেদ করি।তার পর না হয় বিয়ে হবে। এখন আপনারা যদি না বুঝতে চান কি করবো বলুন? অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থায় তো বিয়ে হবে না?

ছেলে পক্ষের লোক বলল- এ কথা আগে বলেনি কেন? আমরা অনেক খরচ করছি। আমাদের একটা মান-সম্মান আছে।
রিয়া:- দেখুন বিয়ের আসর থেকে তো কনে পালিয়ে যায় নি। আমি যা ভাল মনে করছি তাই বললাম। যদি মালমা হয় আমি কিন্তু আপনাদের পক্ষে কথা বলবো না। আমি বলবো আমি সব কিছু বলছি এবং আমার অমতে বিয়ে করছে।
এখন ভেবে দেখুন কি করবেন।

সবাই বলল- অন্যের স্ত্রী কে বিয়ে করতে পারবে না।
কারণ এখনো তালাক হয়নি তাই আগে তালাক দেয়া উচিত। কাজী বলল-
এই বিয়ে হবে না আমি বিয়ে করাতে পারবো না। আগে তালাক লাগবে, আর যদি বিয়ে করে হবে ধর্ষণ। এতে সবাই আসামি হবে।
চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো সবাই হাসাহাসি করছে।
ছেলে পক্ষের সবাই গালি দিতে দিতে চলে গেল। রিয়া ঘর বসে আছে কেউ কথা বলছে না।

মেহেদী অস্থির হয়ে আছে রিয়ার সাথে একটু কথা বলার জন্য।
কি করে পারলো এভাবে? সে কি জানে না তাকে আমি কতটা ভালবাসি।
দশটা বছর তার জন্য অপেক্ষা করলাম এই দিনের জন্য।
আজ ওর আছে স্বামী আছে সংসার।
আমাকে এভাবে ভুলে গেল কেন?
কখনো কি আমাকে ভালোবাসে নি?
রিয়া সাথে একটু কথা বলতে হবে কি করে পারলো?

মেহেদী ঠিক করলো রিয়ার বাড়িতে যাবো।
যদি বিয়ে করে তাহলে দূর থেকে একটুখানি দেখে চলে আসবো।
আর যদি না করে তাহলে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললো আমার ব‌উ কে আমি নিতে এসেছি।

মেহেদীর বুকটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে। আজকে তুমি আমার কাছে থাকার কথা।
কিন্তু কি ভাগ্য আমার, আমার ব‌উ এখন অন্য কারো।
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
গলা শুকিয়ে কাঠ গেল, ঢোক গিলে
তোমাদের ছেড়ে আমি ভালো নেই।
প্রতিটা দিন আমার কষ্টে কেটেছে।
প্রতিটা রাত আমার তোমাকে ভেবে কেটেছে।
কত রাত কাটিয়েছি কেঁদে কেঁদে,তোমার বিরহে আমার হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছ গেছে।
তুমি কেন বুঝলে না তোমাকে কতটা ভালবাসি?
কি করে পারলে বিয়ে করতে? একটুও ভাবলে না আমার কথা। তুমি এতো নিষ্ঠুর পাষান্ড এক ফোঁটাও মায়া হলো না আমার জন্য?
আসলে তুমি আমাকে ভালবাস নি।
তাই ফোনটাও ধরলে না। ঠিক আছে তুমি যদি আমাকে ছাড়া সুখী হ‌ও বাদা দিব না।

মেহেদী রাতে একটা বাইসাইকেল নিয়ে চলে গেল।
পথে এক্সিডেন্ট করেছে হাত কেটে গেছে। পায়ে আঘাত লেগেছে তারপর চলে গেল।
দরজায় কোন মানুষ নেই বাড়িতে নিরব।
ঘরে কিছু ছেলে মেয়ে টিভি দেখছে, মেহেদী গিয়ে বলল-
ঘরে মানুষ আছে?
মায়া আর ওর খালাতো বোন তানিয়া আসলো।
মায়া বলল-শুধু আমি তানিয়া আর রানা আছি।
মেহেদী:- তোমার নাম কি?
মায়া:- আমি মায়া। আপনি কে?
তাকিয়ে দেখলো হাত কেটে গেছে সেখানে বেঁধে রাখছে। বলল-আপনার হাতে কি হয়েছে?
মেহেদী:-আসার সময় ব্যাথা পাইছি। সবাই কোথায় গেছে?
মায়া:- ছকিনা খালার ছেলে অসুস্থ তাই খালামণি, আম্মু আপু দেখতে গেছে।
মেহেদী:- তুমি কি রিয়া কে চিনো?
মায়া:- হাসি দিয়ে বললো না।
মেহেদী:-সত্যি করে বল তাহলে তোমাকে মজা দিব?
মায়া:- আগে মজা দাও তাহলে বলবো
মেহেদী:- তুমি তো অনেক দুষ্টু কিন্তু আমার কাছে মজা নাই টাকা দিলে হবে?
মায়া:- তাহলে একটু বেশি লাগবে?
মেহেদী একশো টাকার চারটি নোট দিয়ে বললো এখন বলো
মায়া:- রিয়া হলো আমার আম্মু।
মেহেদী কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
মনে মনে ভাবছে তাহলে রিয়া সত্যি বিয়ে করছে।
আমি শুধু শুধু ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ঠিক আছে ভালো থেকো বিদায়।

মেহেদী চলে আসার পথে রাস্তায় ছকিনার স্বামী আর দোকান দার লিটন দেখে বলল- কেমন আছেন আপনি?
মেহেদী:-আলহামদুল্লিলাহ ভালো। আপনারা কেমন আছেন?
তারা - ভালো আছি। আপনার তো কোন খোঁজ খবর ছিল না।
মেহেদী:- একটুখানি বাহিরে গেছিলাম, আচ্ছা যাই।
তারা:- হাতে কি হয়েছে শ্বশুর বাড়িতে গেছিলাম?
মেহেদী:- এক্সিডেন্ট করছি, মামার বাড়িতে গেছিলাম। বলে চলে আসলো

ছকিনার স্বামী গিয়ে বললো আপনারা এখানে আর আপনাদের জামাই বাড়িতে দেখলাম।
রিমা বলল-কোন জামাই?
ছকিনার স্বামী - মেহেদীর সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের দরজার কাছে।

সবাই তারাতাড়ি ছুটে আসলো কিন্তু কেউ নেই।
রিয়া দৌড়ে ঘরে গেল কোথায় কেউ নেই।
তাহলে কি রিয়ার সমস্ত আশা ভরসা মিথ্যা হলো। মেহেদী নিতে আসেনি?এতো বছরের অপেক্ষা ভুল ছিল?আবারো ঠকতে হলো? কষ্টে রিয়ার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। বসে বসে মায়ার কাছে সব কিছু শুনলো। মেহেদী এক্সিডেন্ট করেছে কি অবস্থা কেমন আছে? শুনে রিয়া অস্থির হয়ে উঠলো। কিন্তু কি করবে ওই বাড়িতে তো আর তার স্থান নেই।যার অপেক্ষায় ছিলাম সেও দেখা না করেই চলে গেল।

মেহেদীর টাকা রিয়া ফেলে দিয়ে বললো-
ওর টাকা ধরবি না। আমার সাথে একটু কথাও না বলে চলে গেল। মায়া বলল-
তুমি তো ছিলা না কিভাবে কথা বলবে।

রিয়া বাড়ান্দায় চেয়ারে গিয়ে একা বসে আছে।
ভাবছে মানুষটি এসেই চলে গেল তাহলে আসলো কেন? আমার প্রয়োজন থাকলে অপেক্ষা করত?
হয়তো খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছে তাই চলে গেছে।
ও কেমন আছে যদি বেশি ব্যথা পায়? আমার তো তাকে দেখতে যাওয়া। না ঠিক হবে না, আমাকে তো ঘর থেকে বের করে দিসে। কিভাবে সেখানে যাবো? কিন্তু আমি যে মেহেদী কে না দেখে থাকতে পারছি না।

মেহেদী চলে গেল রিয়া এভাবেই সারা জীবন ঠকিয়ে আসলো। কি দোষ ছিল আমার? মানছি আমারো ভুল ছিল সবাই কে না জানি যাওয়া।তাই বলে আমাকে এভাবে কষ্ট দিল? আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তার কাছে। সবাই নিষ্ঠুর পাষান্ড আমি কাউকে চাই না।

চোখের জল মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো।
সবাই দেখলো মেহেদীর হাত বাদ রক্তে লাল হয়ে গেছে শরীর।পা দিয়ে খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।
অনু চিৎকার দিয়ে বললো - ভাইয়া তোর কি হয়েছে?
সবাই চলে আসলো, মেহেদী বলল- আমি ঠিক আছি। একটুখানি এক্সিডেন্ট করেছি।
বাবা: - কার সাথে কিভাবে? কোথায় গেছি লি?
অনু ধরে ঘরে নিয়ে গেল বলল- ভাইয়া কোথায় গেছিলা?
মেহেদী:- রিয়ার কাছে।জানো অনু ও সত্যি বিয়ে করছে? ওর একটা মেয়ে আছে মায়া। ও আমাকে ভালোবাসে না। সত্যি আমাকে ভালবাসে না বলে বুকে একটা চড় দিল।
অনু হাতটা ধরে বললো ভাইয়া তুমি শান্ত হ‌ও ।
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে?
মেহেদী:- কেঁদে কেঁদে বলল- কিছু ঠিক হবে না। কিছু না। ও খুব নিষ্ঠুর! কি করে পারলো আমাকে ছেড়ে যেতে? আমি তো ওকে ভালবাসি তাই না?
তুই বল? তাহলে কিভাবে পারলো আমাকে ভুলে যেতে? দেখে নিস আমিও ভুলে যাবো? বলে চোখের জল মুছলো অনু কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। এভাবে মেহেদী কে কখনো কান্না করতে দেখেনি। ভাইয়ের জন্য প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেই দিন সবাই জোর করে বিয়ে না করলে এতো কষ্ট পেতো না। আজকে জন্য সবাই দায়ী। মেহেদীর চোখ মুছে দিয়ে বলল-
ভাইয়া তুই কি ছোট বাচ্চা যে কাঁদো।
এভাবে বোকার মত করিস না।
মেহেদী:- আমি ঠিক আছি,আ আ আমার কোন কষ্ট নেই। আমি কাঁদবো কেন? ও যদি ভুলে যেতে পারে আমি ও পারবো না কেন? মেহেদী চুপচাপ টিনের বেড়াতে সাথে পিঠ দিয়ে বসে আছে।
সবাই যে যার মতো লুকিয়ে চোখের জল মুছতে আছে।

সারা রাত কোন খাবার খেল না ঔষুধ তাও খায় নি। শুধু ব্যাথা বিছানায় ছটফট করছে।
হাতে পায়ে খুব ব্যাথা করছে। ভোরে কিছু খেয়ে চাইছে না। জোর করে কিছু খাইয়ে ফার্মাসিতে নিয়ে ঔষুধ আনলো।
Next part finished
379 Views
9 Likes
5 Comments
5.0 Rating
Rate this: