গ্রামের নাম কালীগঞ্জ। গ্রামটি খুবই ছোট। অধিকাংশ বাসিন্দায় চাষী। কেউ কেউ রুজি রোজগারের তাকিদে বাইরে থাকে। হিন্দু -মুসলিম দুই ধর্মের মানুষের বসবাস এখানে। গ্রামের পূর্ব ধার বরাবর হিন্দুদের বাড়ি। পশ্চিম জুড়ে মুসলিমদের ঘর। এই ছোট গ্রামটিরই একটি ঘটনা আজ বলবো।
গ্রামে তিন বান্ধবী ছিল। তাদের নাম ছিল পায়েল, মন্দিরা, শ্রাবনী। ওরা ছিল খুব সুন্দরী। তারা এক সাথে স্কুলে যেত। একসাথে টিউশন যেত। প্রায় সময় এক সাথেই থাকতো। একই রকম পোশাক তাদের পছন্দ ছিল ।
আর্থিক অবস্থা কারোরই তেমন ভালো ছিল না। এতে তাদের ভালো থাকার মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ে নি। তারা খুশি ছিল। তিন জনই একে ওপর কে পছন্দ করতো । একের দুঃখের ভাগী অন্যরাও হতো। সুখের কথারও আদান প্রদান হতো। তাদের মাঝে একটা গভীর বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল।
মাঝে মধ্যেই তাদের পিকনিক হতো। তিন জনে মিলে পিকনিক করত। খাদ্য সামগ্রী যে খুব বেশি থাকতো তা নয় । সামান্যই আয়োজন। সেটাও ভাগাভাগি করে নিজের নিজের বাড়ি থেকে আনা হতো।
কখনো বা ট্যুর হতো। বাইরে কোথাও নয় গ্রামের মধ্যেই পুকুর পাড়ে। সেটা ছিল তাদের বিকালের বেড়ানোর জায়গা।
পৃথিবীতে তো কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। তাদের সুখের দিনও বেশি দিন রইল না। একদিন পায়েলকে বিষধর সাপ দংশন করলো। বিষ তীব্র ছিল। অল্প সময়েই পুরো শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হলো। পায়েল জ্ঞান হারালো। যত দ্রুত সম্ভব গ্রামের মানুষ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে নিলো। ইনজেকশন দেওয়া হলো, ওষুধ দেওয়া হলো, হাসপাতালের ডাক্তারেরা অনেকক্ষন ধরে তাকে জাগানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সব কিছুই বিফল হলো। পায়েল বাঁচলো না।
ছোট গ্রাম, খবর পৌছতে সময় বেশি লাগলো না। গ্রামের মানুষেরা বিপদের দিনে একে পাশে দাঁড়াতো। দুঃখে দুঃখী হতো। মৃত্যু সংবাদে সকলেই ব্যথা পেলো। মহিলারা অনেকেই কান্না করলো।
গ্রামে মধ্যে তখন দুটি মানুষ এমন ছিল যাদের মনের অবস্থা বর্ণনা করা কঠিন। এরা শ্রাবনী ও মন্দিরা। আজ তারা দুঃখের সাগরে ভাসছে। সকলে কান্না করছে অথচ তারা নির্বাক। মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে, গলা শুকিয়ে গেছে। অবিরত অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে।
দুঃখ আসে, চলেও যায়। কিছু দিন পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলো। দুটি মানুষের মন আশ্চর্য রকম হিমশীতল হয়ে গেলো। সব উত্তেজনা যেন উবে গেলো। আনন্দ, ভালো লাগা সব কিছুই অপ্রয়োজনীয়। স্মৃতির যে রেখা এমন গভীর ভাবে মনে বসেছে তার কালি কোনো কালেই মন থেকে উঠবে কিনা বলা যায় না।
তিন সখী
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
238
Views
10
Likes
1
Comments
4.4
Rating