রাবির গরু

আমি রাবি। আমি তৃতীয় শ্রেণি তে পড়ি। আমরা তিন ভাই বোন আমার দাদি, মা, বাবা এই নিয়েই আমাদের পরিবার। আমার বাবা একজন কৃষক। আমার মা গৃহিনী আমাদের তিন ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ, পরিবারের খরচ চালানো বাবার একার পক্ষে কষ্টসাধ্য। তাই আমার মা ঘরের কাজের পাশাপাশি ছাগল গরু পালেন। সামনে কুরবানি ঈদ। কুরবানি ঈদে বিক্রি করার জন্য আমাদের একটা গরু আছে। যদিও এই গরুটা বেশ আদরের তাকে বিক্রি করতে আমাদের খুব কষ্ট হবে, তবুও। আমাদের অনেক বছর ধরে কুরবানি দেওয়া হয়না। তাই মা ভেবেছিল গরু বিক্রি করে যে টাকা পাবে তা থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনে কুরবানি দেবে । মাদের কুরবানি দেবে বলে আমি অনেক খুশি। আর যে টাকা অবশিষ্ট থাকবে তা তাদের ভবিষ্যৎের জন্য রেখে দিবে। গরু কেনার জন্য প্রতিদিনই ক্রেতারা গরু দেখতে আসত। গরুটা বেশি বড়ো হওয়ায় ক্রেতারা নিতে চাইতো না । গরুটা খওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ছিল। সে হয়তো বুঝতে পেরেছিল তাকে বিক্রি করে দেওয়া হবে।গরুটি পানি দেখে ভয় পেত। একদম পানি খেতে চাইতো না আমার মা বলল গরুটি হাটে নিয়ে বিক্রি করতে। তাই আমি আর বাবা গরুকে পুকুরে নামিয়ে গোসল করিয়ে আমরা হাটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। মা গরুকে ভালো করে খাইয়ে দিলেন। আমি আর বাবা গরুকে হাটে নিয়ে গেলাম। আমার মন খারাপ ও হচ্ছিল আবার টাকার কথা ভেবে খুশিও লাগছিল। আমাদের বাড়ি থেকে যেতে চাইছিল না। যাওয়ার সময় শুধু পেছনে তাকিয়ে দেখছিল। বাবা একজন মধ্য বয়স্ক লোকের কাছে গরুটি বিক্রি করলেন। লোকটি আমাদেরকে টাকা দিয়ে গরুটির রশি ধরে টান দিল গরুটি যেতে চাইছিল না। হঠাৎ গরুটি মাটিতে বসে পড়ল। গরুটি হাম্বা বলে ডাক দিল তারপর চোখ বন্ধ করল। আমি গরুটির কাছে গেলাম গরুটিকে চোখ খুলতে বললাম কিন্তু গরুটি চোখ খুলল না। বাবা গরুর কাছে যেতেই কেদে উঠল আর বলতে লাগল "আমার একি সবনাশ হলো" কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই আমাদের ঘিরে দেখতে লাগল। আমি কিছুই বুঝলাম না। পরে মায়ের কাছে শুনে বুঝলাম আমাদের গরুটি মারা গিয়েছে। আমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ এসে গরুটির জন্য আপসোস করতে লাগল। আমার কয়েক জন চাচা মিলে
মাটিতে গর্ত খুঁড়ে গরুটিকে গর্তে রেখে মাটি চাপা দিল। আমাদের আর কুরবানী দেওয়া হলো না। আমি গরুটিকে অনেক মিস করি। আমার মনে হয় আমাদের পরিবারের কেউ হয়তো হারিয়ে গেছে । সে আর কোন দিন ফিরবে আসবে না। গরু টি আমাদের কি যেন বুঝাতে চেয়েছিল তাইতো বারবার আমাদের বাড়ি দিকে তাকাচ্ছিল ।