বই পড়ার উপকারিতা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
বই পড়া হচ্ছে এমন একটি অভ্যাস, যা কমবেশি সবার মাঝে থাকে। বই পাঠের উপকারিতার কথা লেখে শেষ করা যাবে না। তারপরও বিশেষ কিছু কথা তুলে ধরা হলো। একটি ভালো মানের বই অনায়াসে মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আবার একটি খারাপ বইও এমন পরিবর্তন ঘটাতে পারে যে, উন্নতি থেকে মুহূর্তেই অবনতির পথ দেখিয়ে দিতে পারে। বলা হয়ে থাকে, বই হচ্ছে বন্ধুর মতো। বিপদে আপদে সুসময়ে দুঃসময়ে কালে অকালে সদা সারাক্ষণ বই মানুষের সঙ্গে সঙ্গীর মতো লেগে থাকে। বই পড়া থেকে অর্জিত জ্ঞানের প্রতীকগুলো দেখা যায় মানুষের চারিত্রিক গুণাবলি ও চালচলনের মাধ্যমে। যে যত বেশি বই পড়তে সক্ষম, সে তত বেশি জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারেন। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য বই পাঠের বিকল্প নেই। বই যেমন মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তেমন আবার অস্বাভাবিক জীবন যাপন করতেও প্রেরণা জোগাতে পারেন। বই পড়ে নিজের মন মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে ধৈর্যের সাথে সমস্যা নিঃসরণ করা যায় তা-ও সহজে পাওয়া যায় বইয়ের মাঝে। যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজের চিন্তা-চেতনার, ভাবনা-কামনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-ইচ্ছা, কল্পনা-জল্পনা, অতীতের স্মৃতি প্রভৃতির আলোচনা সমালোচনা বইয়ের মাঝেই প্রকাশ করে আসছেন। একজন মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের জটিলতার বিষয়বস্তুর সমস্যাগুলো সমাধান মিলে বই নামক বস্তুতে। একজন মানুষের শৈশব, বাল্য, কৈশোর, তারুণ্য, প্রাপ্ত ও বৃদ্ধ কিংবা মরণাপন্ন অবস্থার উন্নতি বা অবনতির নানাবিধ কাহিনি বইয়ের মাধ্যমে অন্যরা সহজে জানতে পারেন। একজন নির্দয় ও নিঠুর প্রকৃতির মানুষকে বই পড়ার মাধ্যমে সদয় ও বিনয়ী করা যায়। মানুষের মাঝে যে সমস্ত বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি থাকে, সেগুলো বই পড়ার মাধ্যমে লাভ করা হয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব বোধ না থাকলে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ তো থাকে না এবং মানবিকতার বিকাশও ঘটে না। ঘরে বাহিরে সর্বদা সর্বত্র সর্বক্ষণে বাস্তবতা মেনে নিয়ে অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করার সহজ কলাকৌশলও বইয়ের মাঝে পাওয়া যায়। নির্ধন অবস্থা হতে ধনসম্পন্ন হওয়া এবং হীনচেতা হতে উন্নতমনা হওয়াও বই পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব। হউক তা ধর্মীয় বই কিংবা কোনো লেখক/লেখিকার প্রকাশিত বই। যদি বই হয় মান সম্পন্ন, তাহলে পাঠকের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে গোটা সমাজকে পরিবর্তন করে দেওয়া যায়। নীতিনৈতিকতা নিয়ে আজকাল তেমন বই প্রকাশ হয় না বলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বই যেন এক বিশেষ বিষের ন্যায়। এই প্রযুক্তির যুগে মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস পূর্বের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বর্তমান প্রজন্ম বই ছুড়ে প্রযুক্তি নিয়ে সারাক্ষণ লেগে থাকে। বাহিরের বই তো দূরের কথা বরং পাঠ্যপুস্তকের বইগুলোও ঠিকঠাক করে উল্টে দেখতে আগ্রহী নয়। বই পাঠে দূরীভূত হয় অশান্তির গ্লানি এবং ফিরে আসে স্বস্তির নিশ্বাস ও বিশ্বাস। খারাপ অবস্থা হতে ভালো অবস্থার পথ পেরিয়ে মন মানসিকতার ইতিবাচক মনোভাব গঠন করে সুখের জীবন অনুসন্ধান করার চেষ্টাও হয়ে ওঠতে পারে বই পড়া থেকে। শুধু জ্ঞানী বা গুণী হতে নয়, বরং একজন আদর্শবান মানুষ হতেও বইয়ের জ্ঞানের বিকল্প উপায়ন্তর নেই। অবিবাহিত অবস্থা থেকে যখন বৈবাহিক জীবনে পা রাখা হয়, তখন সাংসারিক ব্যস্ততায় অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সুশীল পরিবেশ তৈরি করতে বইয়ের জ্ঞান অর্জনই মূখ্য ভূমিকা হতে পারে। কর্ম জীবনে সহকর্মীদের সাথে ভালো আচরণ ও ব্যবহারের উত্তম কৌশল অবলম্বন করতে হলেও বই পড়ার বিকল্প নেই। কাজেই নিজের জীবনকে উন্নত করার পাশাপাশি পরিবার পরিজন কিংবা প্রিয়জনের কাছে প্রিয় হয়ে থাকার জন্য এবং সামাজিক সমস্যা ও ভিন্ন ভিন্ন সংকট সমাধানের জন্য বইয়ের জ্ঞানই মূল হাতিয়ার হতে পারে। বই পড়ে মানুষ নিম্ন থেকে ঊর্ধ্বে উঠে এবং অনাবিল শান্তির খোঁজে তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। আসলে বই পড়ার মজাই আলাদা। বই পড়লে কেবল উন্নত জীবন নয়, বরং অনেক অজানা ও অচেনা বিষয়ে সাথে সাথে অবগত হওয়া যায়। বই পড়ার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই না যাওয়া জায়গায় কল্পনা করে নিজেকে উপলব্ধিও করা যায়। পরিশেষে বলতে হয়, বই পড়ুন, নিজেকে গড়ুন, ইতিবাচক কর্মকাণ্ড করুন এবং সুপথ ধরুন।
403 Views
9 Likes
3 Comments
5.0 Rating
Rate this: