আমি এক অসহায় মা😭

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
আমার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর চলছে। আমার ২ ছেলে ১ মেয়ে। আমার স্বামী ও শশুর বাড়ির সবাই আমাকে ভুল বোঝে কথায় কথায় অনেক অপমান করে। সামান্য কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে আমাকে মারধোর করে। বলে রাখি! আমরা ৪ জা আমি ৩ জন বউ ওদের কারো বেবি নেই। আর সবাই পৃথক কিন্তু সবার অবস্থা ভালো শুধু আমার ঘরে অভাব তবু আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ৩ টা বেবি নিয়ে সংসার এর সব কাজ করে ও একটি এনজিও স্কুলে পড়াই, সাথে টিউশন পড়াই। কিছু বছর অনলাইনের মাধ্যমে জামাকাপড় সেল দেই। এতো সব কাজ করার পর দিন শেষ এ আমি খুব খারাপ।

আমার রোজগারের সবটাই আমি বেবি দের পিছনে খরচ করি। শুধু স্বামীর ভাত টাই খাইছি বাকি চাহিদার সব নিজেই করতাম। সবসময় বেবি দের টা করে থাকলে নিজের জন্য করতাম, না থাকলে ছাড়া চলি। তবুও স্বামী দেয় ও না উল্টো অনেক কথা শুনায় তাই কিছু চাই না।

সামান্য কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে আমাকে খাবার খোটা দিবে, ঘর থেকে বের করে দিবে, বাপ মা তুলে গালি দেয়। তাই আর সহ্য করতে না পেরে, আমি বেবি নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাই। আমাকে তখন ছেলে মেয়ে রেখে বের করে দেয়। আমি বেবি ছাড়া চলে আসতে বাধ্য হই। পর দিন আমি ফোন দিয়ে পাশের বাসার ভাবি কে বলি, আমার বেবি দের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। সে রাতে আমার বেবিরা আমার জন্য কান্না করে, তাই সবাই কে বারন করা হয়। আমি ফোন দিয়ে বেবি দের সাথে কথা বলতে চাইলে, কেউ যেনো ফোন না দেয়। তার পর আমি ফোন দিয়ে সব শুনে আমার স্বামী কে ফোন দিয়ে অনেক অনুরোধ করি। আমার বেবি দের যেনো আমার কাছে দিয়ে যায়। কিন্তু সে আমার বেবি আমাকে না দিয়ে। আমার ননাসের বেবি নেই? উনাকে দিয়ে দেয়। আমার বেবি দের সাথে কথা পযন্ত বলতে দেন না । আমার বাবা মা ভাই বোন সবাই আমার উপর ছেড়ে দিয়েছে।

কারন ১৫ বছর চলছে আমাদের এ-ই টানাপোড়েন এর সংসার আমার ত্যাগ। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার বেবি দের জন্য বুকটা ফেটে যায়।😭😭 খাবার খেতে গেছি ওদের মুখ টা ভেসে ওঠে। সারাক্ষণ অস্থির তোলপাড় করছে বুকটা
আমি মা হয়ে তো মুখ বুঝেও থাকবো না। পুলিশের সহায়তা নিলাম,পুলিশ নিয়ে স্বামীর বাসায় গেলে, আমি বাচ্চাদের মারি নিযাতন করি এমন সব অপরাধ চাপিয়ে দেয় আমার উপর।

আমি বার বার বলি বাচ্চা গুলোর সাথে দেখা করাতে তারা দেখায় না কারন বাচ্চা গুলো আমার ননদের ওখানে আছে তাই দেখাতে পারেনা৷
আমি না পাচ্ছি বলতে না পাচ্ছি সইতে। উল্টো পুলিশ আমাকে বলল আর যদি এমন খবর শুনি জেলে ভরে দিবো। দুখে কষ্টে ওখান থেকে বের হয়ে আসি। কি করবো বুঝতে পারছিনা।

মার কাছে যাই প্রাই স্বামীকে ফুন দেই রিকুয়েষ্ট করি বাচ্চাদের জন্ন্যে কোনো কাজ হয়না। মাথায় কিছুই যখন কাজ করছে না মনে মনে ভাবি স্বামীকে খুন করে ফেলবো। পরে আবার ভাবি তাহলে ওঁদের সাথে আর আমার সাথে পার্থক্য কি রইলো।

এভাবে কেটে যায় কিছু দিন,আমি একদিন দেখলাম আমার ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে ওর ফুপু মার্কেটে গেছে,আমিও পিছু পিছু যাই পিছন থেকে মেয়েটা আমাকে দেখে কান্নায় ভেজ্ঞে পরছে। মনে হচ্ছে আমাকে চিনতে পারছে ভুলেনি এখনো যে আমি ওর মা! কান্না দেখে আমার আরো খারাপ লাগছে আমার মেয়েকে নিতেই হবে।

পরের দিন রাতে আমি লুকিয়ে ননদের বাড়ি যাই বাচ্চা গুলো আনবার উদেশ্য। যাওয়ার পর তাদের পালিতো কুকুর গুলোর চিল্লানোর কারনে আমি ধরা পরে যাই। তারপর আমার ননদ ও তার স্বামী কি মাইর টাই না মারলো আমায়। কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যাই।

রাস্তায় এক গাছের নিচে বসে ছিলাম হঠাৎ এক উকিলের সাথে দেখা হয়ে গেলো ভাগ্য কর্মে,যার কেও নাই তার উপর ওয়ালা আছে ঠিকি! আমার সরিরে মারার চিহ্ন দেখে আমায় বলল কোনো সমস্যা,আমি বললাম যে আপনি বলল মানুষ, আমি বললাম পৃথিবীতে এখন মানুষ কই সব তো অমানুষ। এটা বলাতেই সে বুঝে গেলো কিছু একটা হইছে।

উকিল ছিলো মহিলা,আমি সব কিছুই খুলে বললাম। সে আমাকে ভরষা দিলো আমার পাশে থাকবে। দু'দিন পরেই আমার স্বামীর বাসায় নোটিশ পাঠালো কোটের। বিচার শুরু হলো কোটে, প্রথম দিন আমার বাচ্চদের আনেনি তাই ভালো কিছু হলো না। পরের বার সব বাচ্চাদের নিয়ে আসার কথা ছিলো কোট থেকে,পরের সপ্তাহে আবার বিচারে বসে আর আমার মেয়েরা আমাকে দেখা মাত্রই মা মা বলে কান্না করতে থাকে। বড় মেয়েটা একটু বড় থাকার কারনে সব খুলে বলে,ওর বাবা আমাকে মারতো সেগুলো ও বলে পরে ওর বাবার ২বছরের জেল হয় আর আমার ননদ ও তার স্বামী আমাকে মারার কারনে জরিমানা দিতে হয়।

অবশেষে আমার মেয়েদের পেয়ে যাই। আর আদালতের আইন অনু্যায়ী আমাদের মা ও সন্তানদের আমার স্বামীর পরিবার কিছু টাকা দেয়। আমি ওই টাকা দিয়ে একটা পার্লার দেই। আর খুব ভালো আছি ছেলে মেয়েদের নিয়ে।

মানুষের মাঝে ঈশ্বর আছে সেটা অবশ্যই ঠিক কিন্তু সবার মাঝে না। মহিলা উকিল আমার পাশে না দারালে বুঝতাম না। যে সত্তের জয় হবেই। ধন্যবাদ 👏
669 Views
8 Likes
0 Comments
4.0 Rating
Rate this: