অবশেষে তোমাকে পাওয়া (পর্ব ৩)

গত চারদিন ধরে শুভ্র সেই মেয়েটিকে খুঁজছে, প্রত্যেকটা দিন ভার্সিটিতে গিযে বেশির ভাগ সময় ক্যান্টিনেই কাটিয়েছে ৷ এই আশায় যে সেই মেয়েটির সাথে আবার হয়ত তার সাক্ষাৎ হতে পারে ৷ কিন্তু শুভ্র এই চারদিনে তার দেখা পায়নি ৷

আজও প্রতিদিনের মতো শুভ্র এবং তার বন্ধুরা ইউনিভার্সিটিতে এসেছে ৷ গেটের থেকে সামান্য দূরের একটা বেঞ্চিতে বসে আড্ডা দিচ্ছিল তারা৷ হঠাৎই শুভ্রর চোখ গেল ভার্সিটির গেটের দিকে সেখানে কালো রঙের কুর্তি পরিহীতা মেয়েটিকে দেখে দৃষ্টি আটকে গেল তার ৷ কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখতে পেয়ে আর সময়ব্যয় না করে ছুটে গেল তার পানে ৷ এদিকে শুভ্রর হঠাৎ এভাবে দৌড়ে যাওয়ায় বিস্মিত হয়ে গেল তার বন্ধুরা ৷ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল তারা৷

শুভ্র দৌড়ে গিয়ে থামল মেয়েটির সামনে ৷ আকস্মিক কারোর আগমনে হকচকিয়ে গেল মেয়েটি৷ শুভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটি বলে উঠল ,

দেখুন সেদিন যা কিছু হয়েছিল সব ভুলবশত হয়েছে, তার জন্য আমি আপনাকে সরিও বলেছি ৷ ওভাবে সবার সামনে আপনাকে চ*র মা*রাটা আমার উচিৎ হয়নি ৷ সেদিনের জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত ৷ কিন্তু তার জন্য আপনি এখন আমায় শাস্তি দিতে পারেন না ৷ কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়।( একনাগারে কথাগুলো বলে থামল আয়ু ) I
শুভ্র কিছুক্ষন বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল মেয়েটির দিকে ৷ মেয়েটি যে সেদিনের বিষয় নিয়ে একটু ভয় পেয়ে আছে সেটা বুঝতে পারল শুভ্র ৷ হঠাৎই তার মাথায় এক দুষ্টুবুদ্ধি কাজ করল ৷ সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল

তুমি সেদিন ভুল বুঝেই হোক আর জেনে বুঝেই হোক চ*র তো আমায় মে*রেছো তাও আবার পুরো ভার্সিটির সামনে ৷ এর জন্য তো তোমার শাস্তি পাওয়াই উচিৎ তাই নয় কী?
এইটুকু কারনে আপনি আমায় শাস্তি দেবেন? না বুঝে হয় তো একটা ভুল করেছি তার জন্য আপনি আমায় শাস্তি দিতে পারেন না ৷
এটা তোমার এইটুকু কারন মনে হল? আর ভুল তো ভুলই হয়, ভুল যখন করেছো তখন শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।

আয়ু একটা ঢোক গিলে শুভ্রর দিকে তাকাল আর মনে মনে নিজেকেই বকতে লাগল কেন যে সেদিন ও শুভ্রকে চ*র মা*রতে গেল সেদিন যদি তিথির কথা পুরোটা শুনতো তাহলে তো আর এরকমটা হত না ৷ নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হল ৷

শুভ্র তার ভয় মিশ্রিত মুখটা দেখে ফিক করে হেসে দিল ৷

এই আপনি হাসছেন কেন?
শুভ্র একটু গম্ভীর হয়ে বলল আমি হাসছি কেন সেটা তোমার না জানলেও চলবে। এখন বল তুমি কী শাস্তি পাওয়ার জন্য তৈরি ?
কী করতে হবে বলুন ৷ ভুল যখন করেছি তখন শাস্তিটা প্রাপ্য ৷

শুভ্র কিছুক্ষন ভেবে বলল কান ধরো।
আয়ু : অ্যাঁ ৷

অ্যাঁ নয় হ্যাঁ ৷ এবার তাড়াতাড়ি কান ধরে এখানে দশবার উঠবস কর ৷
আমি কান ধরতে পারব না৷

কেন ? তোমার কান নেই নাকি কানটা ধরার জন্য হাত নেই? কোনটা?

আমার কান হাত দুটোই আছে ৷

তাহলে চুপচাপ কানটা ধর ৷ আর উঠবস শুরু কর ৷

আয়ু কিছুক্ষন ভেবে শুভ্রর দু কান ধরল ৷ আর তারপর ছোড়েও দিল ৷

শুভ্র জিজ্ঞেসে করল এটা কী হল?
আপনি তো বললেন কান ধরতে ৷ তাই আপনার কানটা ধরলাম ৷

আমি আমার কান নয় বরং তোমার কান ধরতে বলেছিলাম ৷

আপনি তো একবারও উল্লেখ করেননি যে কার কান ধরতে হবে ৷ তাই আপনার কানটাই ধরলাম ৷

তুমি কিন্তু এটা ঠিক করলে না ৷

হ্যাঁ আর আপনি যেন কত ঠিক কাজ করলেন ৷
নিজে ভুল করে আবার আমাকে কথা শোনাচ্ছ ৷
ও আর আপনি বুঝি চুপ করে আছেন ?
তুমি এখন আমার সাথে ঝগড়া করবে?
জ্বি না আমার অত সময় নেই আপনার সাথে ঝগড়া করার ৷ আপনার কোনো কাজ নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে ৷
ঝগড়াটা আমি নয় তুমি শুরু করেছ ৷
জ্বি না আপনি আগে থেকে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করেছেন ৷

তোমরা মেয়েরা শুধুই পার ঝগড়া করতে ৷ মিস ঝগড়ুটে ।

আমি ঝগড়ুটে নই আপনি ঝগড়ুটে ৷ আপনি একটা মস্ত বড় হনুমান ৷ এর মাধ্যই তিথি এসে ডাক দিল আয়ু তাড়াতাড়ি আয় ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ৷ আয়ু আর কোনো কথা না বাড়িয়েই গটগট করে সেখান থেকে চলে গেল৷ আর শুভ্র হ্যাবলার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল । আর এতক্ষন ধরে দূর থেকে শুভ্রর বন্ধুরা ওদের কার্যকলাপ দেখছিল ৷