রোমান্টিক হুজুর পর্ব 4

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রিয়া:- তুই কোথায় আছো?
রকি:- বেবী তুমি এতো হট কেন? কুল বেবী!
রিয়া:- একটু ধোমক দিয়ে তুই আছো কোথায়?
রকি:- টাকা নিয়ে আসছো নতুন বাজার ব্রিজের সামনে।
রিয়া:- বটতলা এসে টাকা নিয়ে যা।
রকি:- বেবী পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।

রিয়া ফোনটা কেটে বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে মাঠে বসে পড়লো। রকি টাকার লোভে এক দৌড় দিল।
রিয়ার কষ্ট চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে। ভাবছে একটা পশু কে ভালোবেসে খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে।

রকি দৌড়ে এসে বলল-টাকা দে?

রিয়া টাকা দিব,তাই না শয়তান? বলে চিৎকার দিয়ে রকির গলা চেপে ধরলো। বললো কুত্তা আমাকে ভোগ করেও তোর মন ভরে নি? এখন টাকা চাও? আমাকে ব্লাকমেইল করো? আমি তোকে খুন করবো।

রকি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বললো- এখানে বসে সিনক্রিয়েট করতে আসিনি।
কেউ আসার আগে টাকা দে?

রিয়া বললো-
তুই খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছো আমাকে।
বসে বসে কান্না করছে। রকি বলল- টাকা দিবি না চলে যাবো?
রিয়া চোখ মুছে উঠে একটা টাকার বান্ডিল দিল।
বলল- এতে 30 হাজার আছে খুব কষ্ট করে ম্যানেজ করছি।
রকি বলল-কম হবে না,পুরো টাকা চাই আমার বলে গায়ে হাত দিল।
রিয়া:- রকি তোর পায়ে পড়ি প্লীজ আমার কাছে আর নাই।
রকি:- এতো কিছু বুঝি না আরো টাকা লাগবে।
রিয়া:- একটা চাকু বের করে রকির হাতে দিয়ে বললো-তার চেয়ে আমাকে খুন করে ফেল। নে বলে গলা এগিয়ে দিল।

রকি চাকু টা ফেলে চলে গেল। রিয়া একটা দির্ঘ্য নিঃশ্বাস ছেড়ে বাড়িতে আসলো।
ভাবছে ঝামেলা শেষ,এখন জীবনটা কে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে হবে। একটা মিষ্টি মেয়ের মা হতে হবে।সারা ঘর জুড়ে যে ছুটে চলবে।যার মুখের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট ভুলে যাবো। মেহেদী তারাতাড়ি ক্লাস থেকে আসলো। রিয়ার বাবা মনির চেয়ারম্যান মারা গেছে।

রিয়াকে বলল- রিয়া বিকেলে তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে।
রিয়া:- কেন কি হয়েছে?
মেহেদী:- তোমার বাবা খুব অসুস্থ তাই যেতে হবে।

রিয়া বাড়িতে ফোন করলো হ্যালো মা?
রিমা:- আমি তোর বোন?
রিয়া:- আপু বাবা কেমন আছে?
রিমা:- ভালো না যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আয়।

বিকেলে সবাই চলে গেল, বাড়িতে অনেক মানুষ কান্না কাটি শুনে রিয়া দৌড়ে গেল। বাবার লাশ পাশে সবাই বসে আছে। রিয়া চিৎকার দিয়ে কান্না করছে। রিয়া অনেক ভেঙ্গে পড়েছে তাই রিয়া কে মেহেদী শান্তনা দিচ্ছে। ভোরে অনিকের বাবা মা আসলো তার গরুর মাংস, চাউল, ডাল সবজি সব কিছু এনে শোকাহত পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলো।
পরের দিন মেহেদির বাবা বাজার থেকে মুরগী,চাল, ডাল সবকিছু আনলো। অনিক হেসে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে বলল- তাল‌ই এতো টাকা খরচ করে দেশি মুরগির আনলেন কেন? পোল্ট্রি কি ছিলনা?
তাল‌ই:- আরে বাবা থাক।
অনিক:- গরিব মানুষ কি দরকার ছিল?
তাইল বুঝতে পারছে যে অপমান করে বলছে তাই কথা না বলে চুপ করে রইলো। মেহেদীর অনেক রাগ হলো কিন্তু কিছু না বলে চলে গেল।

সপ্তাহ খানেক পর...

মেহেদী মাদ্রাসায় যাবার সময় হঠাৎ একটা ছেলে ডাক দিল। মেহেদী কাছে গিয়ে বললো- আমাকে ডাকছেন?
রকি:- তুই ছাড়া আর তো কেউ নেই? তাহলে তোকেই ডাকছি।
মেহেদী: ভাই আমি তোমার থেকে বড় হবো। তুই তুকারি করছো কেন?
রকি:- তাহলে তোকে আপনি করে বলবো? নাকি স্যার? না মুন্সী ডাকবো? বলে হাসি দিল।
মেহেদী:- অনেক রেগে বললো যা বলতে চাও বলে চলে যা। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
রকি:- এতো রাগো কেন মুন্সী বিয়ে করছো তো একটা সেই মাল!
মেহেদী:- আপনি কে? আর উল্টো পাল্টা কথা না কি বলতে চান বলুন?
রকি:- তোর ব‌উয়ের x আমি।
মেহেদী:- রেগে কলার চেপে ধরে বললো- তুই x হ‌ও আর y আমার তাতে কিছু আসে যায় না।
আর যদি সামনে দেখি তোর খবর আছে।
রকি:- একটু পিছনে সরে বললো শালা তুই একটা জিনিস। কুকুর বিড়াল দেখছো মানুষ খেয়ে যা ফেলে দেয় ও তাই খায়। তুইও আমার খাওয়া মাল খাবি খায়। যতো ইচ্ছে খা।

মেহেদীর রাগে শরীর কাঁপছে রক্ত মাথায় উঠে গেল। রকির কলার ধরে গালে জোরে চড় দিয়ে লাল করে দিল।আর বলল- তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
রকি দৌড়ে গেল আর বলল- কাজটা ভালো করোনি।এর মূল্য দিতে হবে তোর।

মেহেদীর কানে কথাগুলো বার বেজে উঠলো। ছিঃ বলে মনে মনে নিজেকে ঘৃণা করতে লাগলো। কাকে বিয়ে করছে? কাকে ভালোবেসে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে? কলুসীত করলো আমার ভালোবাসা কে।নোংড়া করলো আমার পবিত্র হৃদয় কে। কষ্ট চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমার সারা জীবনের স্বপ্ন,আশা সব কিছু শেষ হয়ে গেল।
মনটা অস্থির লাগছে, শরীর মনে হয় নিস্তেজ হয়ে আসছে। ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না রকির কথা গুলো শুধু কানের কাছে বেজে ওঠে।ক্লাস থেকে বাসায় গিয়ে রুমে শুয়ে পড়লো। দুপুরে না খেয়ে সন্ধ্যায় গোসল করে বাজারে গেল। অনেক রাতে আসলো

রিয়া বলল-আপনার কি হয়েছে?
মেহেদী:- কিছু না শরীর ভালো লাগছে না।
তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
রিয়া:- কি হয়েছে বলুন? খাবার খেয়ে আসুন?
মেহেদী:- আমি কিছু খাবো না। তুমি যাও বিরক্ত করো না।

রিয়া কিছু না বলে চুপ করে চলে গেল, ভাবছে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। না হলে সে এমন করতো না। মেহেদী ভাবছে রকি ছেলেটা কি সত্যি বলছে? নাকি রিয়ার নামে অপবাদ দিল? প্রেম করতেই পারে ছ্যাঁকা খেয়ে মনে হয় মাথা ঠিক নাই। প্রেম করলেই তো আর শরীর দেয় না। একটা মেয়ে অনেক প্রেম করে তাই বলে কি সবাই কে শরীর দেয়? জানি না মেয়েদের চরিত্র কেমন হয়?
আমি হয়তো খুব বেশি রেগে গেছি। উচিত ছিল রকির সাথে কথা বলা।

পর দিন ক্লাস শেষে মেহেদী বাড়িতে যাবে তখন রকি আসলো। বলল- তোর ব‌উয়ের নগ্ন ছবি ভিডিও আমার কাছে। সারা গ্রামের মানুষকে দেখাবো। তুই আমার গায়ে হাত দিসো না ঠিক আছে মনে রাখিস।
মেহেদী বলল- ভাই ভুল হয়ে গেছে।মাফ করে দাও তখন মাথা ঠিক ছিল না।আর তুমি যে সত্যি বলছো তা বুঝবো কিভাবে?
রকি কাছে এসে রিয়ার নগ্ন ছবি আর ভিডিও দেখালো। বলল- দেখ সত্যি না মিথ্যা।
মেহেদী:- ভাই তোর পায়ে পড়ি এগুলো ডিলেট কর। তুই যা চাবি তাই দিব,
রকি:- করতে পারি আমাকে 10 হাজার টাকা দিতে হবে।

মেহেদী একটুখানি ভেবে বলল- ঠিক আছে আমাকে এক সপ্তাহ সময় দে ভাই।
রকি:-ঠিক আছে।

মেহেদী ছবিগুলো দেখে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। ইচ্ছে করছে বুকটা ছিঁড়ে হৃদয়টা বের করে ফেলতে। যদি হৃদয়ে থেকে সব কষ্টগুলো দুর করা যেত? মনে হচ্ছে কষ্টগুলো আগুনের কিট হয়ে প্রতিটা শিড়া উপশিরায় দৌড়া-দৌড়ি করছে।
আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে, জীবনে কি চাইলাম আর কি পেলাম? কখনো কোন মেয়ের দিকে তাকাই নি, কখনো কারো সাথে মজা করিনি। কখনো এই হাত দিয়ে কাউকে ছুঁয়ে দেখিনি কিসের জন্য? নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছি কার জন্য? কেন নিজেকে পবিত্র রেখেছি?
এই মেয়ের জন্য ? সারাটা জীবন এতো অপেক্ষা করেছি? নিজেকে কষ্ট দিয়েছি ?একটা নষ্টা মেয়ের জন্য? আমিও মানুষ সবার মতো আমার তো চাহিদা আছে। তাহলে কেন ২২ টা বছর ধরে অপেক্ষা করছি ?আমাকে কে ফিরিয়ে দিবে অপেক্ষার ২২টা বছর? চোখের জল মুছে ঘরে ঢুকলো।

রিয়া:- এতো দেড়ি হলো কেন?

মেহেদী কোন কথা না বলে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
গোসল করে না খেয়ে কোথায় যেন চলে গেল।রিয়া কে কিছু বলেনি। অনেক রাতে ঘরে আসলো ।
রিয়া বলল- আপনার কি হয়েছে আমাকে বলুন?
মেহেদী রিয়া সামনে এসে হঠাৎ রিয়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো - রিয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার বুকটা ফেটে যেতে চাইছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে। আমি খুন হয়ে গেছি,দ্বির্ঘ্য ২২টা বছরের অপেক্ষা, কষ্ট,আশা সব কিছু এক সেকেন্ড শেষ হয়ে গেছে।

রিয়া মেহেদির কষ্ট দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।

কেঁদে বলল- তোমার কি হয়েছে আমাকে বলো?
মেহেদী কষ্টে কেঁদে ফেললো বলল-
তুমি এমনটা কেন করলে? কেন আমাকে বাজে ভাবে ঠকালে? কি দোষ ছিলো আমার? তোমাকে না হয় বিয়ে করাটা ভুল ছিল তাই বলে এতো বড় শাস্তি কেন দিলে আমায়?
রিয়া অস্তে অস্তে বসে পড়লো পা জড়িয়ে ধরে বললো - আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দাও?
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে এতো বড় কষ্ট দিতে চাইনি ।আমাকে মাফ করে দাও?
মেহেদী:- আমাকে তুমি শেষ করে দিলে।
বেঁচে থাকতে মেরে ফেললে। আমি সবার মতো না, জীবনে কখনো কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখিনি।কারণ আমি কখনো অন্য কারো স্পর্শ করা কাউকে গ্রহণ করতে পারবো না।
কখনো নিজেও কারো দিকে তাকিয়ে দেখিনি।

রিয়া প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে কান্না করছে ।
তাই মেহেদী রিয়া কে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মেহেদী আর কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল।

রাতে মেহেদী না খেয়ে খাটে শুয়ে আছে।
রিয়া রুমের এক পাশে বসে আছে । রিয়ার দিকে তাকালেই মনে পরে নগ্ন দৃশ্য। যাকে ভালোবাসি সে অন্য কারো বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমার ভালোবাসার মানুষটি কে একটা নেশা খোর সাথে।খারাপ পুরুষের বুকের মাঝে ছিঃ।সে অন্য কারো বুকের ঘ্রাণ নিচ্ছে। ওই নেশাখোর লম্পট চরিত্রহীন রিয়ার সারা অঙ্গ ছুঁয়েছে। আমি তাকেই ভালবাসি তার শরীরের ঘ্রাণে নেশা গ্রস্ত হ‌ই। ছিঃ ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা লাগে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে,অন্য কারো বুকে দেখার মত কষ্ট মনে হয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।এর চেয়ে মৃত্যুর যন্ত্রনা হয়তো কম হবে। এটা তো প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সমান কষ্ট দিচ্ছে। হঠাৎ করে খেয়াল হলো চোখের জলে বালিশ অনেক ভিজে গেছে।
তাকিয়ে দেখে রিয়া কাঠের বেড়ার সাথে পিঠ দিয়ে চোখ বুঝে বসে আছে।

মেহেদী রিয়া বলে ডাক দিল, রিয়া চুপ করে বসে রইল। মেহেদী উঠে রিয়ার কাছে গিয়ে ধরতে চাইলো, রিয়া পিছু সরে গেল।বললো খবরদার আমাকে ছুঁবে না। আমাকে ধরতে তো আপনার ঘৃণা হয়। আমি একটা নষ্টা, চরিত্রহীন মেয়ে, আপনার পবিত্র ভালবাসা কে কলঙ্কিত করেছি।বলে উঠে দাঁড়ালো আমার এই সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
মেহেদী ভয় পেয়ে গেল রিয়া কি বলছে। ওকি সত্যি আত্মহত্যা করতে চাইছে? মেহেদী ওর হাতটা ধরে টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে নিল।রিয়া শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।

মেহেদী বলল- পাগলামী করো না, একটা ভুল করেছো বলে জীবন শেষ হয়ে যায়নি। জীবন এতো ছোট না অনেক বাকি আছে। দুই হাতে গাল ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল- ওই পাগলী ভুল তো মানুষেই করে তাই না। তুমিও তো মানুষ।
তবে একটা কথা মনে রেখো আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। নিজের থেকেও খুব বেশি, মনে রাখিস তুই সম্পুর্ণ টাই আমার। যদি কখনো নিজের ক্ষতি করিস তাহলে আমার আরো বেশি ক্ষতি হবে।
রিয়া বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে বলল- আমাকে যদি তুমি মাফ করে দাও? তোমাকে ছুঁয়ে শপথ করছি জীবনে কখনো এমন ভুল করবো না। মেহেদী আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
মেহেদী:- আমি জানি, কিন্তু আমাকে একটু সময় দাও। কিছু দিন একা থাকতে চাই।
রিয়া:- তোমার পায়ে একটু জায়গা দিলেই হবে। বাকিটা জীবন তোমার দাসী হয়ে কাটিয়ে দিব।
রিয়া কে শুয়েই দিয়ে, মেহেদী জানালা পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে।

রকি কে দশ হাজার টাকা দিয়ে মেমোরির কার্ড আনলো। এখন শান্তিতে একটুখানি সময় কাটানো যাবে। অনু'র বিয়ের সময়ে এসে গেল ধুমধাম আয়োজন হচ্ছে। রিয়া মেহেদী আর অনু বিয়ের মার্কেট করতে গেল। অনেক কিছু কেনাকাটা করলো। বাড়িতে সবাই খুশি,অনু বিয়ের কথা ভাবতেই উত্তেজনা অনুভব করছে। অনু মনে মনে সবাই কে ধন্যবাদ দিল।

অনু ফোনে রাজার সাথে কথা বলছে কি কি মার্কেট করলো তা।
রাজা:- দেখো তুমি আমার ব‌উ হবে, তোমার সাথে একটু ঘুরতে যাবো তা না। তোমার পছন্দ মতো মার্কেট করে দিব হলো না।
অনু:- দেখ আমি তোমার এখনো ব‌উ হয়নি। তাহলে কেন অন্য একটি পুরুষের সাথে বাজারে যাবো?
রাজা:- দুই দিন পরেই তো হবে।
অনু:- তখন না হয় মার্কেট করে দিও। আর এতো বছর অপেক্ষা করছে দুই দিন করতে সমস্যা কি?
রাজা:-দেখো আমি তোমাকে দেখেই পাগল হয়ে গেছি। আমার দুই দিন তো দূরের কথা একটু মুহূর্ত দেরি সয়না।
অনু:- দেখো আমি একটা মুসলিম মেয়ে সবার মতো না।আর র‌ইলো ভালোবাসার কথা তা বিয়ের পর বুঝতে পারবো। দেরি না স‌ইলে এখন এসে বিয়ে করো। ফ্রি মজা নেয়ার ধান্দা বাদ দাও।
রাজা:- সরি অনু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।

রিয়া এসেই হঠাৎ ডাক দিল,অনু সব কিছু পছন্দ হয়েছে তো?
অনু:- হুম,
রিয়া:-কার সাথে কথা বলো?
অনু:-ভাবী সে!
রিয়া:- ইস্ তর সইছে না বুঝি? এখনি এতো কথা?
অনু:- লজ্জায় লাল হয়ে গেল, লজ্জাবতী লাতার মতো মাথা নিচু করে বলল- ভাবী ভাল হচ্ছে না কিন্তু?
রিয়া:- থাক লজ্জা পেতে হবে না, ফোনটা আমাকে দাও।

রিয়া:- রাজা বাবু কেমন আছো তুমি?
রাজা:- কে বলছেন?
রিয়া:- আমি তোমার ভাবী
রাজা:- ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
রিয়া:- কি করে ভালো থাকবো ননদের তো আর তর সইছে না। বিয়েটা কখন করবা?
রাজা:- আজকে বাড়িতে যাবো, চিন্তা করো না তাকে বলো দুই দিন অপেক্ষা করতে।
রিয়া:- শোন সব কিছু গরম খাওয়া ভালো।বাসি হলে মজা থাকে না।
অনু জোর করে ফোনটা নিয়ে দিল এক দৌড়।

শুক্রবার ভোরে অনুর বিয়ে,বর পক্ষের সবাই আসলো, পুরুষ মসজিদে বসলো, মহিলা ঘরে।
সরা কাবিন শেষ করে হলে,পুরুষ ঘরে এসে খেয়ে অনু কে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।
রিয়া হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছে,বমি হলো।
কেমন জানি মাথা ঘুরছে অনুভব করছে।
তার ভিতরে কেউ এসে গেছে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।সবার আগে মেহেদী কে খুশির খবর দিবে। তাই এখন কাউকে বললো না।
মহিলাদের জন্য নাস্তা তৈরি করলো।অনু কে সবাই সাজিয়ে দিচ্ছে।

রাহিমা বেগম রিয়া কে ডাকলো - রিয়া? রিয়া?
রিয়া:- মা, আসতে আছি বলে সরবত নিয়ে হাজির হলো।
রাহিমা বেগম বলল- একটা আমার পুত্রবধূ রিয়া।
ছেলের মা:- বেয়াইন রিয়া কিন্তু অনেক সুন্দর। লক্ষ্মী একটা মেয়ে।

রিয়া সবাই কে নাস্তা দিল,ঘর ভর্তি লোক গ্রামের সব মহিলারা এখানে। হঠাৎ রাজার চাচাতো বোন অনুর শ্বাশুড়ির কে, ডেকে কানে কানে বলল- রিয়া কে ওরা সবাই চেনে। রিয়ার চরিত্র খারাপ,রকি নামের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। দুই জনের খালি গায়ে একটা রুমে ছিল ভিডিও সারা দেশের মানুষ দেখছে।

অনুর শ্বাশুড়ি রিণা চিৎকার দিতে দিতে আসলো।
বলল- হায় হায় কপাল আমার। ছিঃ ছিঃ কোন বাড়িতে মেয়ে নিতে আসলাম।
রাহিমা বেগম:- কি হয়েছে বেয়াইন?
রিণা খান:- খবরদার ওই মুখে বেয়াইন ডাকবে না।
ছিঃ ছিঃ বাড়িতে চার পাশে পর্দা, বাবা ছেলে সবাই আলেম। ছিঃ ছিঃ আর ঘরে ব‌উ কে দিয়ে বেশ্যা গিরি করার। এই বাড়িতে আমি ছেলে বিয়ে দিতে আ‌ইছি।

রহিমা বেগম এমন অপবাদ শুনে রিণার দিয়ে তেড়ে আসেন। ছেলের বিয়ে না করলে চলে যাবে। কিন্তু ব‌উয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে পারলো না। রিয়া ধরে বললো- মা থামুন,কি করছেন।
অনেক মানুষ বলল- ঘটনা সত্য আমরা তার ভিডিও দেখছি।
রিণা বলল- রকি ছেলেটার সাথে এক ঘরে থাকে নায় তোর ব‌উ ।

রিয়া ঘরে রুমে গিয়ে বসে কান্না করছে।
অনুর বাড়ান্দায় বসে কান্না করছে।
সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে বিষয়ে নিয়ে সবাই অপমান করছে। রহিম মাস্টার মসজিদে বসে সবার অপমান সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেললো। মেহেদী বাবার চোখের জল মুছে দিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো। গ্রামবাসী বলল- এরা আলেম নামে কলঙ্ক। উচিত সমাজ থেকে বের করে দেয়া।
এদের পিছনে এতো বছর নামাজ পড়েছি।
যারা সারা জীবন সম্মান করতে তারা আজ যা মুখে আসে তাই বলছে। রহিম মাস্টার কে মেহেদী ঘরে নিয়ে গেল।

মেহেদী মা রিয়া কোথায়?
রাহিমা বেগম:- কঠিন গলায় বললো ঘর থেকে বের করে দিয়েছি।
মেহেদী:- ও এখন কোথায় যাবে?
মা:- চেঁচিয়ে বললো জাহান্নামে যাক।ও আর কখনো এই ঘরে উঠতে পারবে না। চরিত্রহীন পশু, একটা কুকুর কে দুই বেলা খাবার দিলে রাতে বাড়ি পাহারা দেয়। মালিকের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে না। ওতো কুকুরের চেয়েও খারাপ।
মেহেদী:- বলেছিলাম কলেজে পড়া মেয়ে আমার লাগবে না। এখন এমন কথা বলছো কেন?
মা:- কিছু বলতে পারলো না শুধু ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে। নিজের চোখ মুছে বললো- ও যদি ঘরে আসে আমার মরা মুখ দেখবি বলে চলে গেল
মেহেদী:- তুমিও শুনে রেখো আমার ওকেই লাগবে। বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

রহিম মাস্টার লজ্জায় গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলো। সবাই এসে ধরে রুমে নিয়ে গেল।
রহিম মাস্টার বলল- আমার জন্য এতো কিছু হয়েছে। আমি মেহেদীর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
অনু বাড়ান্দার রুমে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদছে।
রিয়া কে দেখে সবাই তাকিয়ে আছে। ভিডিও তে এই মেয়েটা ছিল। সবাই ভিড় করে আছে আর বাজে ইঙ্গিত ইশারা করে, খারাপ কথা বলে। রিয়া কোথায় যাবে? কি করবে কাছে টাকাও নেই? বাজারে এক পাশে বসে আছে, লজ্জায় মাথা নিচু করে কাঁদছে।

মেহেদী খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখলো এই অবস্থা।
সবাই মেহেদী কেও খারাপ ভাষায় গালি দিল।
কেউ বলে হুজুর মানুষ টাকার ওভাবে ব‌উকে দিয়ে একটু ব্যবসা করলে সমস্যা নাই।কেউ বলে ভাই মাল টা জটিল কিন্তু, হেব্বি জোস রে! ওই ভাড়া কতো? দে লাগাই? মেহেদীর রাগে রক্ত মাথায় চড়ে আছে। ইচ্ছে করছে সবাই কে খুন করে ফেলতে।

কিছু না বলে একটা রিকশা নিয়ে রিয়া কে বললো- রিকশায় উঠো ?

রিয়া বসে বসে কান্না করছে, মেহেদী একটা চড় মেরে টেনে রিকশায় তুললো।

এই রিকশা বক্সি বাজারের দিকে চলো।
অনেক দূরে গিয়ে একটা বট গাছের নিচে নামলো।
মেহেদী বলল- এখন কি করবে বলো?
রিয়া:- আমি তোমাদের মান-সম্মান সব নষ্ট করে দিলাম। আমার জন্য সব কিছু হয়েছে।অনুর কি অবস্থা এখন?
মেহেদী:-আমি কিছু জানি না, যখন শুনছি তোমাকে বের দিয়েছে। আমার মাথায় কিছু কাজ করেনি। এখন কি করবো বলো?
রিয়া:- আমি কি বুঝতে পারছি না। শুধু জানি আমি বেঁচে থাকতে চাই? আমার অনেক কাজ আছে, অনেক বড় দায়িত্ব তুমি আমাকে দিয়েছো।
মেহেদী:- আমি তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না। মা বলেছে তোমাকে নিয়ে গেলে আত্মহত্যা করবে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না
রিয়া:- আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে আমার বিশ্বাস মা আমাকে দুরে সরিয়ে দিতে পারবে না।

মেহেদী রিয়া চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে। নিজের চোখ থেকে জল ছেড়ে দিলো ।বলল- চলো তোমাকে পৌঁছে দিই।

রিয়া কে রেখে বাড়িতে আসলো,অনুর কাছে গিয়ে শান্তনা দিয়ে বললো, তোকে অনেক বড় ঘরে বিয়ে দিব। তুই অনেক সুখী হবি।কাদিস না বোন,তোর কান্না দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।অনু মেহেদির দিকে তাকিয়ে আবার কান্না করছে। মেহেদী চোখ মুছে দিয়ে বলল- সবার চোখে জল দেখতে আমার ভালো লাগে না। কেন বুঝো না আমার খুব কষ্ট হয়?
অনু বলল- ভাইয়া বাবা আত্মহত্যা করতে চাইছিল।সে তোমার কথা ভেবে আরো কষ্ট পাচ্ছে।
মেহেদী:- আমাদের ভাগ্য টাই খারাপ কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি বাবার কাছে গেলাম।

মেহেদী বাবার কাছে গিয়ে দেখলো শান্ত হয়ে বসো আছে। মেহেদী বলল- বাবা?
বাবা:- আয় বস। জীবনে অনেক বড় ভুল করেছি। তুই আমাকে মাফ করে দিস বাবা। বলে চোখ লুকিয়ে নিল।
মেহেদী:- বলল বাবা তুমি ভুল করনি, নিজেকে দোষী করো না। আমার ভাগ্যে এটাই ছিলো।

মেহেদীর এই প্রথম বাবার চোখে জল দেখে প্রচন্ড কষ্ট হলো। বলল- বাবা কখনো তুমি আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনি। আমিও তোমাকে বুঝতে চেষ্টা করনি। আমি অনেক ভুল করেছি মাফ করে দিও।
বলে চলে আসলো।

মেহেদী সমাজের কথা, রিয়ার কথা,অনুর কথা ভেবে কোন কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। এই সমাজে তাদের অবস্থান কোথায় তা তো বুঝতে বাকি রইল না। ভোরে নাস্তা করে মাদ্রাসায় গেল।
গিয়ে দেখে সবাই মেহেদির কে নিয়ে আলোচনা করছে। অনেক অভিভাবক এসে বলল- তারা এই মাদ্রাসায় পড়ে চায় না। কারণ মেহেদির মতো হুজুর থাকলে বাচ্চা খারাপ হয়ে যাবে।
তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেহেদী কে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হবে।

শিক্ষাক মহোদয় বলল- তুমি এখানে চাকরি করলে এলকাবাসী তাদের সন্তানদের পড়াবে না। তাই তুমি চলে যেতে পাড়ো। কোন উপায় না দেখে বাড়ি চলে আসলাম। কিছু দিন পর পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সৌদিতে চলে আসলাম। এখন দশ বছর হয়ে গেল। জানি না সবাই কেমন আছে? হয়তো ভাবছে আমি বেঁচে নাই।

রফিক, বলল- ভাই বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না?
রনি:- ভাই সত্যি আপনার অনেক কষ্ট পাইছেন জীবনে।
মেহেদী:- বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু। এখন মনে হয় আর দেশ ছেড়ে, মা-বাবা কে ছেড়ে, থাকতে পারবো না।
রাকিব:- ভাই রাত প্রায় শেষ একটু ঘুমিয়ে নিই।
মেহেদী:- হ এখন ঘুমানো উচিত।
রনি:- ভাই কালকে বন্দ আছে তো।
সবাই ঘুমিয়ে পড়লো মেহেদী ভাবছে জীবনে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো।
***===***===***
সবাই অনেক খুঁজেও মেহেদির খবর পেলো না।কেউ বললো ব‌উয়ের শোকে আত্মহত্যা করছে। সবাই ভরসা রাখে বেঁচে থাকলে একদিন আসবে।

রিয়া খবর টা শুনে আরো ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু মেহেদির সন্তান তার গর্ভে তাকে বড় করতে হবে।
তাই সন্তানের জন্য নিজেকে অনেক কঠিন করতে হবে। রিয়ার একটা মেয়ে হলো। রিয়া নামা রাখছে "মায়া" মেহেদির মেয়ে "মায়া" এই মেয়ের জন্য রিয়া বেঁচে আছে। না হলে কবে এই সমাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করতো শুরু পাড়েনি।" মায়া"র মায়ায় পড়ে। রিয়া ভাবছে এক দিন মেহেদী আসবে। এখান থেকে তাকে নিয়ে যাবে।
Please support
698 Views
12 Likes
2 Comments
4.2 Rating
Rate this: