ভোরে সুমি মায়ের গলা শুনে লাফিয়ে উঠলো। তারাতাড়ি কপাট খুলে বললো মা, রাতে আসতে? জানো কতো ভয় পাইছি?
মা:- দুর বোকা মেয়ে ভয় পাওয়ার কি আছে?
তাছাড়া সেন্টু তো ঘরে আছে?
রিয়া:- আপু অনেক মজা হয়েছে? তুমি গেলে ভালো হতো?
সুমি:- মা আমার পরিক্ষা তিন মাস পড়ে? পরিক্ষার হল বকসি বাজারে,তাই ভাবছি নানা বাড়িতে থেকে পরিক্ষা দিব।
মা:- এখন কি? তিন মাস পড়ে তো?
সুমি:- আরে ওখানে বসে পড়লে ভালো হবে?
বাড়িতে তো অনেক কাজ? তাছাড়া দুরে গেলে লেখা পড়া ভাল হয়?
রিয়া:-আপু আমিও যাবো?
সেন্টু:- না গেলে ভালো হয়? পড়ার ইচ্ছা থাকলে সব জায়গায় পড়া যায়?
সুমির মা:- সেন্টু তুই লেখা পড়ার কি বুঝো?
ঠিক আছে আমি তোমার মামার সাথে কথা বলে দেখি।
সুমি অনেক খুশি মামা বাড়িতে অনেক মজা হবে। মামাতো ভাই বোনের সাথে সময় ভালো যাবে।
***000***000***000
লিজার চিন্তা হয় মানুষটি ভোরে রাগ করে না খেয়ে কাজে গেছে। দুপুরে বাসায় আসেনি, এতো করে বলি একটা ফোন কিনতে তা কিনবে না।
লিজা ভাবীর কাছে বসে আছে, অনেক চিন্তা হচ্ছে।
ভাবী:- কি ভাবছো লিজা?
লিজা:- না তেমন কিছু না.
ভাবী:- বাড়ির কথা মনে পড়ছে বুঝি? যাও কিছু দিন ঘুরে আসো
লিজা: মায়ের কি খবর তাও জানতে পারলাম না।
ভাবী:- চিন্তা করো না তোমার মা দেখো ভালো হয়ে যাবে।
লিজা একটু পড়ে বললো -ভাবী সেন্টু যে মেয়ে কে ভালোবাসতো তার সাথে কিভাবে পরিচয় হয়?
ভাবী- সুমি সেন্টুর মামাতো বোন হয়,আর ও মামা বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছে।
লিজা:-আচ্ছা তাহলে ছ্যাঁকা দিলো কেন?
ভাবী:- ওই মেয়ে খুব বেশি লূভী আর খারাপ তাই। সেন্টু কখনো ওর বিষয়ে বলে না।
লিজা:-আপনার ভাই রাগ করে সকালে চলে গেল আর দুপুরেও আসেনি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে?
ভাবী:- আরে ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না, রাতে চলে আসবে।
লিজা আর ভাবী অনেক গল্প করলো, রাতে সেন্টু বাসায় ফেরলো। খাবার খেয়ে খালার কাছে গেল। খালা, রাকিব, রিমা সবাই মিলে গল্প করছে। রিমা বলল- সেন্টু আজকে তোমার বউ কান্না করছে?
খালা:-কেন লিজার সাথে খারাপ ব্যবহার করছো সেন্টু?
সেন্টু:-না খালা তেমন কিছুই হয়নি তো।
ভাবী:- না আম্মা,ওর মায়ের কথা মনে পড়ছে তাই।বলে ওর মা'কে দেখতে ইচ্ছে করছে।
খালা:- আহারে মেয়েটা কতো কষ্ট সেন্টু তুই একটু নিয়ে যেতে পারো না?
সেন্টু:- না খালা, আমার কাজ আছে
খালা একটু রেগে বললো- তুই মায়ের দরদ কি বুঝবি তোর মা ছোট বেলায় চলে গেল।
মায়ের কথা বলতে সেন্টুর কষ্টে বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রিমা বিষয়টি বুঝতে পেরে বলল- মা থামুন তো সেন্টু না গেলে থাক?
রাকিব:-সেন্টু আর রাগ করে থাকিস না। একবার যা ওটা তো তোর শ্বশুর বাড়ি?
খালা:- বউমা! থামবো কেন? ঠিকই বলছি ওর মা অসুস্থ থাকলে না দেখে থাকতে পাড় তো।
সেন্টু খালার কথায় চোখে জল এসে গেল। অনেক কষ্টে বলল-ঠিক আছে নিয়ে যাবো ,বলে চলে গেল।
রিমা বলল -মা আপনার এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। সেন্টু মায়ের কথা শুনলে কষ্ট পায়।
শ্বশুরী:- আমি তো সত্যি কথাই বলছি। সেন্টুর উচিত শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া।
সেন্টু চোখের সামনে মায়ের অসুস্থ মুখটা বার বার ভেসে উঠে। চিকিৎসার অভাবে আস্তে আস্তে মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যায়। চোখ বেয়ে বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ভাবছে মা আমি তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও। মা তুমি এসে দেখে তোমার সেন্টু কে কেউ ভালোবাসে না।আজ খালাও বলল-আমি নাকি তোমাকে ভালোবাসি না?বলো মা সে কি মিথ্যা বলেছে বলো? আমি নাকি মায়ের দরদ বুঝতে পারি না? হ্যাঁ সত্যি মা তোমার সেন্টু ভালো না। আমি লিজা কেও কষ্ট দিই।আজ সেন্টুর মায়ের কথা, সুমির কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। পুরনো স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছে , মনে হয় কষ্টে জমা হয়ে বুকে পাহাড় হয়ে গেছে। এতো বড় পাহাড় নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।পা ভেঙ্গে যেতে চাইছে। ঘরে এসে মাটিতে বসে পড়লো।
লিজা দৌড়ে এসে ধরে বললো -
কি হয়ছে আপনার? শরীর খারাপ নাকি?
সেন্টু:- আমাকে একটু ধরবে বলে হাত বাড়িয়ে দিল। লিজা ধরে চৌকিতে বসিয়ে বললো - সেন্টু তোমার কি হয়েছে বলো?
সেন্টু:- কিছু হয়নি। আমাকে একটুখানি জরিয়ে ধরবে? বলে চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু ছেড়ে দিল।
সেন্টু আজ বড্ড বেশি ক্লান্ত, কষ্টের কাছে হেরে গেল। নিজেকে পৃথিবীতে খুব বেশি অসহায় আর একা লাগছে।কেউ নেই তাকে বুঝার মতো। আজকে একটু শান্তি খুঁজে পেতে ইচ্ছে করছে। একটা মানুষ পেতে ইচ্ছে করছে যাকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব বেশি কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে হয়তো কাউকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলে একটু শান্তি হতো।
সেন্টু বলল- লিজা আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে
লিজা সেন্টু কে এতো বিমর্ষ অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললো বললো- আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না। আমি বেঁচে থাকতে পৃথিবীর কোন কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি শুধু শান্ত হও। বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সেন্টু কে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। সেন্টু পরম আবেগে লিজা কে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। লিজা দুই হাতে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো:- তুমি শান্ত হয়ে বসো?
সেন্টু বসলো লিজা খাবার এনে দিল বলল-
অনেক রাত হয়েছে কিছু খেয়ে নিন?
সেন্টু:-আমার ক্ষুধা নেই?
লিজা কথা না বলে চুপ করে খেয়ে নিন বলে হাতে খাবার তুলে খাইয়ে দিল।
সেন্টু:- ঠিক আছে আমাকে দিন? আমি খেয়ে নেব?
লিজা:- তুমি করে বলতে পারেন না? আমি খাইয়ে দিই তাহলে খুব বেশি ভাল লাগবে।
সেন্টু:- আমাকে দিয়ে হবে না। আপনি খাইয়ে দিলে আমার লজ্জা লাগে?
লিজা:- দুর বাদ দেন তো, এতো লজ্জা দিয়ে কি হবে শুনি? ঠিক আছে অল্প খাইয়ে দিই এতে আমি শান্তি পাবো।
সেন্টু লিজা দিকে তাকিয়ে ভাবছে সত্যিই মেয়েটা অনেক বেশি ভালো। আমার কে এতো কেয়ার করছে।
লিজা:- ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি নতুন কেউ নয় সেই পুরনো বউ।
সেন্টু:-ঢোক গিলে বলল-না, মানে, আপনাকে, কিছু না। দেন খাই।
লিজা একটু হাসি দিয়ে বললো - ঠিক আছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন
সেন্টু খাবার খেয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। মনে হয় কিছু ভাবছে,
লিজা বলল-কি ভাবছেন?
সেন্টু:- না তেমন কিছু না, আমার খুব লজ্জা লাগছে আপনার দিকে তাকাতে?
লিজা:- হাসি দিয়ে বললো কেন আমি আবার কি করলাম?
সেন্টু:- ছিঃ আমি একটা পুরুষ হয়ে আপনার সামনে কেঁদে ফেলছি?
লিজা:- ইয়া আল্লাহ! আপনি যে কেমন? কে জানে? তাঁতে কি হয়েছে? ছেলেদের কান্না করতে নিষেধ আছে নাকি?
সেন্টু:- নাই কিন্তু ছোটবেলা থেকেই শুনেছি পুরুষের চোখে কান্না মানায় না। পুরুষ হলো লোহা দিয়ে তৈরি। কান্না নাকি নারীর ভূষণ। এটা পুরুষদের লজ্জার কারণ।
লিজা:- পুরুষের তো কষ্ট হয়, তাহলে কান্না করতে নিষেধ কেন? তাহলে পুরুষের চোখে অশ্রু থাকে কেন? এগুলো ভুল কথা কান্না করলে লজ্জার কিছু নাই। আর আপনি তো আমার স্বামী।আপনার সুখ দুঃখগুলো আমার সাথে মিশে আছে।
সেন্টু:- আপনার সাথে কথা বলে আমি পারবো না।
ঘুমিয়ে পড়লাম বলে শুয়ে পড়লো।
লিজা শুইয়ে শুইয়ে বললো- একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে?
সেন্টু:- আপনি তো খুব বেশি জ্বালাতন করেণ?
লিজা:- একটা কথাই তো একটু বলুন না?
বলে অসহার মতো তাকিয়ে আছে। বাতির আলোয় লিজার চেহারা পুর্ণিমার চাঁদের মতো জ্বলছে। লিজার দিয়ে তাকালে কেন জানি খুব মায়া হয়। মনে হয় তার মুখটা মায়া দিয়ে তৈরি করছে কেউ।
সেন্টু বলল- ঠিক আছে বলুন কি বলবেন?
আপনি কি কাউকে ভালো বাসতেন?
সেন্টু- এখনো বাসি।
লিজা- কাকে?
সেন্টু:- একটা চরিত্রহীন নষ্টা মেয়ে কে। যাকে ভুলতে পারছি না।
লিজা:- আচ্ছা যদি তাকে ভুলে যেতে সাহায্য করি?
সেন্টু:- হেসে উঠলো বললো এতো সহজ না।
লিজা:- বুঝলেন কিভাবে যে সহজ না।
সেন্টু:- আমি দুই বছর ধরে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গেছি।
লিজা:-যদি মাত্র তিন মাসে ভুলিয়ে দিই তবে কি দিবেন।
সেন্টু- যদি পারেন তাহলে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনাকে ছেড়ে যাবো না। কিন্তু না পারলে আর কখনো স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবেন না।
লিজা:- তবে একটা শর্ত আছে
সেন্টু- কি শর্ত?
লিজা:- আমাকে ভালো একজন বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে হবে।আর সবসময় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
সেন্টু:- আমি দুই বছর ধরে ভাবী আর খালা ছাড়া অন্য কোন নারীর সাথে কথা বলিনি। তাই একটু সময় লাগবে কিন্তু চেষ্টা করবো।
লিজা:-কেন বলেনি
সেন্টু:- আমি জানি না নরীরা কেমন হয়। ছোট বেলায় সতমা তার পর মামীর অত্যাচার দেখেছি। এরপর যাকে ভালোবাসি তার ছলনা দেখেই। জীবন থেকে নারীদের প্রতি জঘন্য ঘৃণা জমে গেছে। মনে হয়েছিল নারী জাতটাই খারাপ। কিন্তু ভাবীর কাছে এসে বুঝলাম সে সবার মতো নয়।
লিজা:- শেষ বারের মত একটুখানি বিশ্বাস করবেন? কথা দিচ্ছি কখনো অধিকার খাটাতে আসবো না। আর কখনো কষ্ট দিব না। শুধু বন্ধু হয়ে সুখে দুঃখে পাশে থাকবো।
সেন্টু:- আমাকে ভালোবাসেন?
লিজা:- দুই আঙ্গুল ফাঁকা করে বললো বেশি না,এতো টুকু
সেন্টু:- আমি আপনাকে ভালোবাসি না, তবে ভালো লাগে। আপনাকে দেখলে কেমন জানি অদ্ভুত একটা মায়া অনুভব করি।
লিজা:- ঠিক আছে ভালোবাসা চাই না। শুধু বন্ধু হতে চাই?
সেন্টু :-ঠিক আছে কিন্তু স্বাভাবিক হতে আমার একটু সময় লাগবে।
লিজা:- আমাকে তুমি করে বলতে হবে মনে থাকবে?
সেন্টু:- ঠিক আছে চেষ্টা করবো।
লিজা সেন্টু কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
সেন্টু:- আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না
লিজা:- কেন তাতে সমস্যা কি?
সেন্টু:- আমার সমস্যা হয়। ধরবেন না।
লিজা:- আমি না, কাউকে না ধরে ঘুমাতে পাড়ি না। ঠিক একটা হাত রাখি শুধু।
সেন্টু:- ঠিক আছে এর বেশি কিছু না।
লিজা:- ঠিক আছে।
***000***000***
সুমি মামা বাড়িতে গেলে ওর মামাতো ভাই রেজার প্রতি ছোট বেলা থেকেই একটু দুর্বল ছিল। কিন্তু রেজা অনেক সুন্দর তাই ওকে পাত্তা দিত না।
মামাতো বোন লিমা বলল- কেমন আছো সুমি? তোমাকে খুব মিস করছি।
সুমি:- আমিও তোমাদের সবাইকে খুব বেশি মিস করছি।
ভাইয়া তুমি কেমন আছো?
রেজা:- আমি ভালো আছি। তোমার খবর কি?
সুমি:- খুব ভালো। বলে ঘরে চলে গেল।
রেজা দেখলো সুমি অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে।ওর শরীর পুর্ণবতী যুবতী নারীর মতো হয়ে গেছে। শরীরের যৌবন উপচে পড়ছে। দেখলে মনে হয় আগুন সুন্দরী। ভাবছে আগে থেকেই তো আমার প্রতি দুর্বল আছে। এখন একটুখানি চেষ্টা করলে হয়ে যাবে। এমন জিনিস হাত ছাড়া করা যাবে না।
বিকেলে রেজার মা বলল-সুমির পরিক্ষার বাকি তিন মাস আছে। এই তিন মাস এখানে থাকবে।আর রেজা ওকে পড়াবি ঠিক আছে।
রেজা:- মা আমার পড়া আছে তো। আমি কিভাবে সময় দিব?
মা:- সমস্যা কি তোর পড়া তুই পড়বি।আর ওকে একটু বলে দিবি।
লিমা:- ঠিক তো ভাইয়া তুমি শুধু মাঝে মাঝে একটু দেখিয়ে দিবা।আর একটু অংক করিয়ে দিবা।
রেজা:- ঠিক আছে বলে চলে গেল।
মনে মনে ভাবছে এটাই আমার জন্য সব চেয়ে বড় সুযোগ। লিমা ভাবছে ভাইয়া সুমি কে তো পটিয়ে নিবে এটা সিওর। তবে ভাবী হিসেবে সুমি কে আমার খুব পছন্দ হবে। কিন্তু মা কি করে কে জানে?
দেখি কোথার জল কোথায় গিয়ে পড়ে।
রাতে রেজা, সুমি টেবিলে বসে পড়ছে। লিমা টেবিলের পাশে খাটের উপর বসে পড়ছে। খেয়াল করে দেখলো ভাইয়া লুকিয়ে লুকিয়ে সুমি কে দেখছে। সুমি বিষয়টি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। রেজা বলল-লিমা আমার কলম টি নিয়ে আয় তো বাড়ান্দায় আছে।
লিমা গিয়ে আড়ালে দাঁড়ালো বুঝতে পারছে ওর ভাইয়া সুমি কে কিছু বলবে।
রেজা:- সুমি তুমি সত্যিই অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে গেছো।
সুমি:- আমি আগের মতই আছি, আপনি অনেক বেশি হ্যান্ডসাম আর সুন্দর হয়ে গেছেন।
রেজা:- তোমার দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে পারি না। যা পড়ি সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
সুমি: বইয়ের ভিতরে নজর না অন্য দিকে দিলে তো সমস্যা হবেই।
লিমা এসে বলল-ভাইয়া কলম নাও।
লিমা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রেজা কে ফলো করছে।
সুমি পড়ছে রেজা বার বার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চোখের সামনে এভাবে একটা পরীর মতো সুন্দরী মেয়ে থাকলে কোন ছেলেই হয়তো না তাকিয়ে থাকতে পাড়বে না।
রাতে লিমা আর সুমি এক সাথে শুয়ে আছে।
লিমা বলল- তুমি তো ভাইয়ার মাথাটা পুরাই নষ্ট করে দিছো?
সুমি:- দুর আমি কি করছি। তোমার ভাইর যদি আমাকে ভালো লাগে আমার দোষ কোথায়?
লিমা:- তোমার দোষ নেই কিন্তু যেভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে মনে, ভাইয়া শেষ?
সুমি:- আরে না, ছেলে মানুষ তো মেয়েদের দিকে একটু তো তাকাবেই। কিন্তু তুমি আমাদের ফলো করছিলে?
লিমা:- তুমি যাই বল ভাইয়া তোমাকে দেখেই পাগল হয়ে গেছে। আমার কিন্তু ভাবী হিসেবে তোমাকে হেব্বি লাগে।
সুমি:-তাই না দুষ্টু, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তাই তোমার ভাইয়ের সাথে কিছু হবে না।
লিমা:- ঠিক আছে দেখা যাবে।
সেন্টুর সুমির কথা বার বার মনে পড়ছে। সুমিকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। যদি একবার দেখা হতো। কিছু ভাল লাগছে না কাজে প্রতি মন বসে না। রিয়া দেখলো সেন্টু কাজ রেখে বসে থাকে।সবার কথা শোনে ঠিক মতো খায় না, সময় মতো গোসল করে না শুধু বসে বসে কি যেন ভাবছে। হয়তো আপুর কথা মনে পড়ছে। বিকেলে কোদাল দিয়ে মাটি কাটতে গিয়ে পা কেটে গেছে।
রিয়া এসে বলল-মা সেন্টু ভাইয়ার পা কেটে গেছে।
রিয়ার মা বলল-কতো বড় শয়তান কাজ যেন না করতে হয় তাই পা কেটে বসে আছে।
খুব দ্রুত সেন্টুর কাছে গিয়ে বললো- কাজ করতে হবে না, কোটি পতির ছেলে। এখন বসে বসে মামার হোটেল খেতে পাবেন। যতো সব আপদ এসে আমার কপালে জোটে। ভিক্ষারীর বাচ্চা তোর বাবায় কি এখানে দালান গেঁথে গেছে যে বসে বসে খাবি।
রিয়া বলল-মা থামো তো অনেক রক্ত বের হচ্ছে।
সেন্টু পা চেপে ধরে বসে আছে। রিয়া কিছু পুরনো কাপড় দিয়ে পা বেঁধে দিল।
সেন্টু রাতে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, গায়ে জ্বর উঠে গেল।
রিয়া বলল-ভাইয়া ভাত খেতে আসো?
সেন্টু:-আমি খাবো না। তুমি গিয়ে খাও।
রিয়া চলে আসলো ওর মা বলল-কি বলছে লাট সাহেবের ছেলে?
রিয়া: বলছে খাবে না। মা খাবার দিয়ে আসি?
রিয়া কে থমক দিয়ে বললো - তোর মনে চাইলে খা, না হলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। এতো আদর দেখাতে হবে না।
সেন্টু পায়ের ব্যাথায় কান্না করছে, আর ভাবছে মা তুমি চলে গেলে আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতা? কেন আমাকে রেখে চলে গেলে? কেন আমাকে এমন জীবন তুমি দিয়ে গেলে? তুমি কি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়? কেন তুমি বুঝ না? মা আমার পা কেটে গেছে খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি এসে তোমার সেন্টু কে একটুখানি বুকে জড়িয়ে ধরো না। তোমার বুকে থাকলে বিশ্বাস করো আমার কষ্টগুলো দুর হয়ে যায়।
মা আমি কোথায় যাবো বলো? তুমি আমাকে নিয়ে যাও না? আমিও তোমার কাছে যেতে চাই?
বিশ্বাস করো মা আমি পৃথিবীর কিছু চাই না। সুমি কেও না শুধু তোমার কোলে একটু মাথা রেখে শুইয়ে থাকতে চাই।
সেন্টু জ্বর আর ব্যাথায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে শেষ রাতে একটুখানি ঘুমিয়ে পড়লো।
বকুল গাছের নিচে সেন্টুর মা বসে আছে। দখিনা বাতাসে সেন্টু মায়ের কোলে মাথা রেখে পরম মমতার আবেশে চোখ বুজে আছে।মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
সেন্টু:- মা তুমি কি জানো আমার খুব কষ্ট হয়েছিল?
মা:- বাবা আমি জানি, আমার সেন্টুর খুব কষ্ট হয়েছিল। এখন কষ্ট আছে?
সেন্টু:- না মা, আমার কোন কষ্ট নেই। মনে হচ্ছে আমি স্বর্গে আছি। তুমি কি জানো আমি পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট ভুলে যাই তোমার কোলে মাথা রেখে শুইলে।
মা:- আমি জানি আমার বাবা খুব বেশি খুশি আছে।
সেন্টু:- মা তুমি ছোট বেলায় মাথায় হাত বুলিয়ে এভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিতে আজো মনে আছে।
মা:- ঠিক আছে আমার মানিক চাঁন এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
সেন্টু:- মা তোমার মানিক কে সবাই এখন সেন্টু বলে ডাকে।
মা:- আমি সারাজীবন আমার মানিক কে মানিক বলে ডাকবো। বলে কপালে একটা চুমু দিল।
সেন্টু:- চোখ বুজে ঘুমিয়ে ভান ধরে বললো মা তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মা!
মা: তুমি আমার পৃথিবী সবচেয়ে ভালো বাবা!
হঠাৎ আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল,মা কোথায়? মা? মা? তাহলে কি সব কিছু স্বপ্ন ছিলো? সেন্টুর মন অনেক বেশি শান্ত হয়ে গেল স্বপ্নে মায়ের সাথে এমন মধুর দেখা হয়েছে ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। পায়ের ব্যাথায় তো দুরের কথা পৃথিবীর কোন কষ্টই কষ্ট মনে হচ্ছে না। ভোরে কিছু পানি ভাত খেয়ে রিয়া কে নিয়ে ক্লিনিকে গেল ঔষুধ আনতে। কেউ তাকে ঔষুধ তো কিনে দিবে না। সবাই শুধু কাজ করিয়ে এক মুঠো পানি ভাত দিয়ে খোটা দিবে।
রিয়া বলল-ভাইয়া তোমার পায়ে খুব বেশি ব্যাথা?
সেন্টু:- না, এখন একটু কমেছে
রিয়া:- কিভাবে কমছে ঔষুধ খাইছো?
সেন্টু: স্বপ্নে এসে মা ঔষুধ খাইয়ে দিছেন তাই।
রিয়া:- ফুফু কে দেখেছো?
সেন্টু:- হুম, স্বপ্নে এসে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
রিয়ার কষ্ট হলো সেন্টুর জন্য কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে। সেন্টু বলল-তারাতাড়ি চল এসে কাজ করতে হবে তো।
রিয়া:- মা বলেছে তোমার আজকে কোন কাজ করতে হবে না।
***@@@***@@@***
সেন্টু ঘুম থেকে উঠছে না। লিজা ভাবছে এতো বেলা পর্যন্ত তো সে কখনো ঘুমিয়ে থাকে না। শরীরে হাত দিয়ে দেখলো না জ্বর হয়নি। বলল- কাজে যাবেন না?
সেন্টু:-না আজকে আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
লিজা:- ইয়া আল্লাহ! আবার আপনি? আমি কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবো। বলে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
সেন্টু দেখলো লিজা কে রাগি চোখে দেখতে অনেক বেশি সুন্দরী লাগছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাগের সাথে, সুন্দরী চেহারা দেখতে এতো ভালো লাগে আগে জানা ছিল না। এটার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু অনুভব করতে পারে।
সেন্টু:-আজ কে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
লিজা:- দুর আবোল তাবোল না বলে কাজে যান।
সেন্টু:- সত্যি বলছি আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
লিজা:- আবার এখন কিন্তু,দুর আপনার সাথে কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না।
সেন্টু:- ঠিক আছে বাবা, এখন থেকে তুমি করেই বলবো।
লিজা রাগ করে চলে গেল,। লিজা বারান্দায় পিঁড়িতে বসে মাথায় তেল দিচ্ছে । সেন্টু তাকিয়ে দেখলো লম্বা কালো চুল। দেখলে মনে হয় আকাশের কালো মেঘে। বাতাসে মাধবী লতার মতো দুলছে। লিজা গুছিয়ে এক পাশে রাখছে, হঠাৎ বাতাসে এলোমেলো করে চেহারা ঢেকে দিচ্ছে। এভাবে বিরক্ত হয়ে দুই তিন বার রাখলো।সেন্টুর দেখতে খুব ভালোই লাগছে। একা একা হাসছে আর লিজার কান্ড দেখছে।
সেন্টু খাবার খেয়ে গোসল করে বলল- তারাতাড়ি তৈরি হোন?
লিজা:- কেন?
সেন্টু:-অ্যাপ, না। তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
লিজা:-কোথায়?
সেন্টু:-গেলে দেখতে পারবা
দুজনেই মোটামুটি সেজে গুজে বাহির হলো। সেন্টু বাড়িতে আসতে প্রায় রিকশায় এক ঘন্টা লাগলো।
বাড়ি দরজায় এসে দোকান থেকে কিছু বিস্কুট কিনে। মসজিদে দিয়ে বললো- আমার মায়ের জন্য একটু দোয়া করবেন।
ইমাম:-ঠিক আছে বাবা।
দরজায় একটা পুরনো কবর দেখিয়ে বললো- এটা তোমার শ্বশুরী। মা দেখো কাকে নিয়ে আসছি?
মা লিজা তোমার পছন্দ হয়েছে বলো? ওনা তোমার মতোই তোমার মানিকের খেয়াল রাখে।
লিজা আস্তে করে সেন্টুর কাছে এসে কাঁধে হাত দিল। তাকিয়ে দেখলো সেন্টুর চোখে জল ছলছল করছে। একটুখানি পড়ে চাচার ঘরে উঠলো। সবাই দেখতে আসছে সেন্টু বউ নিয়ে আসছে। সবাই অনেক আদর যন্ত করলো।সবার সাথে পরিচয় হলো, শুধু বাবা, মা, বোনের সাথে দেখা হলো না।
সেন্টু বলল- লিজা চলো আমরা যাই?
লিজা:- বাবার সাথে দেখা করবেন না?
সেন্টু একটু ভেবে বলল- ঠিক আছে চ, চলো?
দুজনেই একটা ঘরে ঢুকলো একটা মেয়ে সাথে দেখা হলো সেন্টু বলল- কে অনু?
অনু:- হুম বলেই চলে গেল।
সেন্টু বলল- অনু মা কোথায়?
অনু:-ঘরের ভিতর থেকে বলল জানি না।
সেন্টুর বাবা ঘর থেকে বের হয়ে বললো- তুই এখানে কেন? তোর মায়ের জায়গায় জমি তো সব খাইছো, এখন এখানে কি চাও?
সেন্টু:- বাবা ও লিজা তোমার পুত্রবধূ?
বাবা:-কিসের বউ ? তুই আমার ছেলে না।বের হয়ে এখনি বের হয়ে যা বলছি।
সেন্টু অনেক রেগে চলে আসলো আর বললো- দেখা হইলে চলে আসো আমি যাই ।
লিজাও পিছু পিছু বের হয়ে আসলো। এভাবে অপমান করবে বুঝতে পারেনি। বাড়িতে এসে সেন্টু বলল- লিজা তোমাকে অপমান ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি।
লিজা:- একটু হাসি দিয়ে বললো,আজকে সবাই কে দেখতে পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমার আর কিছু লাগবে না।
সেন্টু বলল- ভাবছি মানুষের কাজ আর করবো না।
লিজা:- তাহলে কি করবেন?
সেন্টু:- কিছু টাকা লোন নিয়ে দোকান দিবো।
লিজা অনেক খুশি হয়ে বলল- সত্যি!? তাই ভালো হবে।
সেন্টু:- সারা জীবন তো মানুষের কাজ করলাম কি আর করবো?
লিজা:- আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?
সেন্টু:- কি?
লিজা:-আমি মহিলাদের পোশাক বানাতে পারি। আপনি দোকান দিবেন আর আমি পোশাক তৈরি করবো।
সেন্টু:- আপনার তো অনেক কষ্ট হবে?
লিজা:-আবার আপনি? বলছি না তুমি করে বলতে রেগে আগুন হয়ে গেল
সেন্টু:-ঠিক আছে তুমি।
লিজা:- মনে থাকবে তো?
সেন্টু:-আর ভুল হবে না, মনে থাকবে,থাকবে।
👉এরপর কোরবানি ঈদে গল্প দিব
বোবা কান্না পর্ব ৩
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
364
Views
7
Likes
2
Comments
5.0
Rating