আমি কিছু বলবো এর আগেই ছেলেটি তাদেরকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেল। আমিও এরইমধ্যে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলাম। সকালবেলার চোখ খুললে আমি দেখি কাকা কাকি কবিরাজ এবং অন্যান্য আরো প্রতিবেশী দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে। কবিরাজ জিজ্ঞেস করা শুরু করলো কি হয়েছিল তোমার সাথে বল আমাকে। আমি তখন বললাম,,,,,
-কালকে আবার ওই মেয়েটি আসছিল এক বিরাট ভয়ানক রূপ নিয়ে -।তখন আমার খাটের পাশে একটি কবর উঠে আসলো সেখান থেকে একটি লাশ বের হয়ে আসলো। আর লাশটি কারো না বরঞ্চ আমার ছিল।
এই শুনে কাকাকাকি ভীষণ ভয় পায়। কাকি বলে উঠেন
-মায়ার লাশ উঠে আসছিল মানে কি বুঝাতে চাচ্ছে?
-এর মানে এটাই সে মায়াকে তাদের সাথে জিন দেশে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
-এর থেকে কি বাঁচার আর কোনো উপায় নেই?
-হ্যাঁ আছে। আপনারা একটু বাইরে বের হন আমি মায়ার সাথে কথা বলতে চাই।
সবাই বাইরে গেলে কবিরাজ আমাকে বলে উঠেন,,,
-তারপর কি হয়েছিল?
-এরপর লাশটি হঠাৎ থেমে গেল এবং মেয়েটি তাকে নিয়ে উধাও হয়ে গেল।
-তুমি মিথ্যা বলছো কেন আমার সাথে?
-মানে?
-ওই ছেলেটি তাদেরকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল। তুমি ছেলেটির কথা বলনি কেন?
আমি থতমত খেয়ে যাই।
-তুমি কি ছেলেটাকে পছন্দ করো -?আর এই জন্য ছেলেটাকে খারাপ বলতে চাচ্ছ না।
-না মানে।,,,,,
-আমি সব বুঝেছি আমাকে কিছু বুঝানো লাগবে না।
-কিন্তু ছেলেটা কে আর তার মধ্যে এরকম শক্তি কিভাবে আসলো?
- ছেলেটা হলো জিন দেশের বাদশাহ।
- কি!!! তারমানে ছেলেটাই আমাকে আছর করেছে?
- না। তোমার একটা জিনিস মনে আছে?
- কি হুজুর?
- যেদিন প্রথম ছেলেটার সাথে দেখা করে ছিলে ওই দিন তোমার কাছে একটি কালো বিড়াল আসছিল?
- হ্যাঁ মনে পড়েছে।
- তারপর যেদিন তোমার উপর জ্বীনের আছর পড়েছে ওই দিন থেকে আর ওই কালো বিড়াল দেখা গিয়েছিল?
- নাতো কিন্তু এর সাথে এর কানেকশন কি?
- সময় হলে তুমি সবকিছুই বুঝবে। আর তোমার ভালবাসাই এখন তোমাকে বাঁচাবে।এ ছাড়া কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
এই বলে কবিরাজ সেখান থেকে চলে গেলেন। আমার মধ্যে কেমন যেন খারাপ লাগা শুরু হলো। শরীরটা কেমন যেন দুর্বল দুর্বল লাগছিল। আমি এর জন্য ওয়াশরুমে হাতমুখ ধুতে যাই। এসে দেখি আমার খাটে সারফরাজ বসা। আমি দেশে প্রথমত অনেক ভয় পাই।
-দেশের প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করবেন না -।আমাকে ছেড়ে চলে যান।
-আপনি বসেন আপনার সাথে আমার কথা আছে।
-বলেন কি বলবেন,,,,,
-আচ্ছা আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
-জানি আপনি আমার এই রূপ দেখে অনেক ভয় পাচ্ছেন? হয়তো ঘৃণাও করতে পারেন?
-আপনি বলেন কি বলবেন,,,,,,
-আমি জিন দেশের বাদশা সরফরাজ।
-আপনাকে যে মেয়েটি এতদিন ভর করেছে তার নাম আলজা।সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু তার মধ্যে অনেক হিংসা। আর এর থেকে বড় কথা সে ভালো কাজের থেকে পাপ কাজ করে বেশি। আর এই জন্য আমি তাকে পছন্দ করিনা। একবার আমি আপনাকে দেখছিলাম। আপনি এক বুড়া মহিলার সাহায্য করেছিলেন। আর তখন থেকেই আমি আপনার পিছু করছি গত এক বছর ধরে। কারণ আপনি অনেক নেক দিল ইনসান। আর এটা আলজা জানতে পারে। আর সে আপনাকে আমার থেকে দূরে সরানোর জন্য এসব করছে। আপনার মনে আছে যখন প্রথম আমার সাথে দেখা করেছিলেন এক ছিনতাইকারী আপনাকে তাড়া করেছিল। এর পরের দিন খবর পেয়েছিলেন ছিনতাইকারীকে কে যেন নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
-হ্যাঁ মনে পড়েছে। তাহলে ওইটা কি আপনি করেছিলেন।
-না। ওইটা আলজা করেছিল। আমি ওকে দেখে শুধু বলেছিলাম যে ছিনতাইকারীকে ভয় দেখাতে যাতে সে পাপ কাজ ছেড়ে দে। কিন্তু আলজা একটি বাঘের রূপ নিয়ে ছিনতাইকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করে যাতে দোষ আমার উপর চাপে।এরপর আমি ওকে জিন দেশ থেকে বের করে দেই। কিন্তু হয়তো এখন তাকে আমাদের দেশে নিয়ে শাস্তি দিতে হবে।
-ও আচ্ছা।
-আপনার মনে আছে আপনাকে আমি একটি রুমাল দিয়ে ছিলাম? আপনি তো আমাকে ফেরত দিয়ে দিলেন।
-হ্যাঁ মনে আছে।
-রুমালটি একটু খুলেন পুরাটা।
আমি পুরোটা খুলতে গিয়ে দেখি এক পাশে একটি ভাজ রয়েছে। সেই ভাযের মধ্যে আল্লাহর 99 টি নাম এবং উপরের জাযাকাল্লাহ লেখা ছিল।
-এই রুমালটা যতদিন আপনার কাছে ছিল কোন খারাপ সত্যি আপনাকে স্পর্শ করতে পারেনি -।তখনই আপনি আমাকে রুমালটা দিয়েছেন তখনই আলজা একটি সুযোগ পেয়েছিল আপনাকে ক্ষতি করার।
এমন সময় কে যেন দরজায় নক দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে? দরজার পিছন থেকে কাকির আওয়াজ শোনা গেল। আমি কাকীকে বললাম এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা হবে। এমন সময় সে বলে ওঠে যে কিসে ব্যস্ত কার সাথে ব্যস্ত তুই? এমন সময় দরজার পিছন থেকে কবিরাজ বলে উঠেন,,,,, এখন ওকে কেউ বিরক্ত কইরেন না। সে এখন তার জীবনের অনেক বড় অধ্যায়ের সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ আপনার মেয়ে যাকে ভালবাসে তাকে আজকে হারাতে হবে।
এরইমধ্যে সারফারাজ আবার বলে ওঠে
-এখন বলেন আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমি আলজা থেকে আপনাকে মুক্ত করতে পারব ।কারণ হিংসায় হিংসাকে কাটে আর ঘৃণায় ঘৃণাকে কাটে।
-আমি কিছু বুঝতে পারছিনা আপনার কথা।
-আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।
-যদি বলি হ্যাঁ?
-তাহলে আপনাকে আমার সাথে সারা জীবনের জন্য জিনেদের দেশে চলে যেতে হবে।
-কি বলেন আমি আমার কাকা কাকি কে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না?
-কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা তো আর জোর করে পাওয়া যায় না। কিন্তু আমি আপনাকে আলজা থেকে মুক্ত করবই।
এমন সময় সে আমার মাথায় চাপ দিয়ে ধরল। আর মনে মনে কিছু মন্ত্র পড়তে লাগলো। এরইমধ্যে সারফরাজ গায়েব হয়ে গেল আর আমিও চিৎকার দিয়ে উঠি। আমার চিৎকার শুনে যখন সবাই ঘরে ঢুকে। দেখে আমার চোখ সামনের দিকে চলে আসছে আর আমি কিরকম ভয়ানক আওয়াজ করা শুরু করলাম। কাকি তখন কবিরাজকে জিজ্ঞেস করে
-হুজুর কি হয়েছে আমার মেয়ের -?
-আপনার মেয়ের উপর এখন দুটো জিনের আছর পড়েছে। -কী বলছেন এসব.?(এই বোলে কাকী আমার সামনে আসার চেষ্টা করল)
-এখন সামনে যাবেন না। কারণ এদের মধ্যে একজন আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
-তাহলে আরেকজনকে চায় হুজুর?
-সে তো আপনার মেয়ের ভালোবাসার মানুষ।
-মানে???
এমন সময় আমি বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাই। আর তার সাথে হুজুর বলে উঠেন,,,,
-এখন আপনার মেয়ে বিপদমুক্ত -।কারণ জিনেদের বাদশা ওই জিনকে তার সাথে নিয়ে চলে গেছেন।
কিছুক্ষণ পরেই আমার হুশ ফিরে আসে। আমি চারপাশে সারফারাজ কে খুঁজা শুরু করি। কিন্তু কোথাও পাই না। এমন সময় কবিরাজ বলে উঠেন
-তুমি যাকে খুজছো সে চলে গেছে আলজাকে নিয়ে। তোমার স্মৃতি হিসেবে তোমার একটি ওরনা নিয়ে চলে গেছে হয়তো দেখো।
আমি খেয়াল করে দেখলাম আসলে আমার লাল ওড়না নিয়ে চলে গেছে সে। আমি তখন কবিরাজকে জিজ্ঞাসা করলাম
-হুজুর!! সে কি আর কখনো ফিরে আসবে না?
-তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আসলেও আসতে পারে।
আশেপাশে যারা প্রতিবেশী ছিল তারা সবাই বলা শুরু করলো
-ইস আমাদেরও যদি এরকম একটি জিনের বাদশা ভালোবাসতো।
এরকম প্রায় সপ্তাহ খানিক কেটে গেল আমি এখনো সরফরাজকে ভুলতে পারছিনা। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলাম এমন সময়ে জানালা দিয়ে একটি হাত আসবে এবং হাতে সেই রুমালটি। আমি রুমালটি দেখে মুচকি একটা হাসি দিলাম।
(সমাপ্ত)
[বি.দ্র. খুব শীঘ্রই জিনের আছর 2 আসবে ]
জ্বিনের আছর (Season 1) Last Episode
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
792
Views
28
Likes
6
Comments
4.5
Rating