Innocent alone

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
**জানা হলো না** কিছু কথা 😇

আমার স্বামী খুবই গম্ভীর স্বভাবের একজন মানুষ। আমার উনার সাথে সবসময় অভিমান লেগেই থাকে এ নিয়ে যে উনি অন্যান্য মেয়েদের স্বামীর মতো কেনো নয়। আমি যতো যা মজা করে কথা বলি না কেনো একটা মুচকি হাসিও দেন না উনি কখনো, সারাদিন মুখ ঘুমরো করে থাকেন। অন্য মেয়েদের স্বামী দিনে অগণিত বার নিজের বউকে ভালোবাসি শব্দটা বলে। তবে উনি বিয়ের তিন বছরের মাথায় একবারও ভালোবাসি শব্দটা বলেন নি আমায়। রান্না আমার ভালো হোক বা খারাপ কখনো না তো তারিফ করবেন আর না তো বদনাম। অন্যের স্বামীরা জীবনের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার দিনে বিভিন্ন ভাবে স্ত্রীকে স্যারপ্রাইজ দেয় তবে আমার জন এই ক্ষেত্রেও আলাদা। জন্মদিন হোক বা বিবাহবার্ষিকী কখনো উইস করেন না আমায় কিন্তু সেই দিনগুলোতে হুট করে কিছু না কিছু নিয়ে আসেন আমার জন্য আর চট করে বলেন উঠেন রেডি হও বাইরে যাবো, আলাদা করে কোনো আদর বা ভালোবাসা দেখান না। বিয়ের আগে আমি আমার পরিবার নিয়ে যে ফ্লাটে থাকতাম তার পাশের ফ্লাটে উনি থাকতেন, উনার মা বাবা কেউ নেই, অনাথ উনি। সবসময় উনার গম্ভীর চরিত্রটা আমার চোখে যেনো আলাদা হয়ে ফুটে উঠতো। আমি যেনো সেই গম্ভীর ব্যক্তিত্বের দিকে প্রতিনিয়ত আকর্ষিত হতাম। উনাকে কখনো কোনো মেয়ের সাথে কাজ ছাড়া কোনো কথা বলতে দেখি নি। আর না তো কারো দিকে আলাদা করে তাকাতে দেখেছি, শুধু আমি নই উনার এই স্বভাবেই হয়তো অনেক মেয়েই পাগল ছিলো, আশপাশের মেয়েগুলোকে দেখে বুঝতাম। এছাড়া উনি যথেষ্ট সুদর্শন। কিন্তু উনি কখনো কারো ধার ঘেষেন নি, হঠাৎ একদিন আমি উনাকে মনের কথা জানাই যে আমি উনাকে ভালোবাসি, উনি আমাকে সোজা উত্তর দেন উনি এসবে জড়াতে চান না। আমার সেদিন অনেক কান্না আসে, হুট করে বাবা বলেন বিয়ে করতে, উনার উপর রাগ করে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দেই পাত্র না দেখেই কিন্তু বিয়ের আসরে বর হিসেবে উনাকে দেখতে পাই। তখন বুঝতে পারি না উনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইলেন না আমার উপর দয়া করে। তবে আমার এই ভ্রম উনি ভাঙতেও চাইলেন না। বাসর রাতে শুধু এইটুকুই বললেন, আমি যতোদিন না স্বামী স্ত্রীর মতো একটা সম্পর্কের শুরুর জন্য প্রস্তুত হবো ততোদিন উনি আমায় ছোঁবেন না, যেদিন আমি মনে করবো আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে এগুনোর প্রয়োজন সেদিনই না কি উনি এই সম্পর্কে এগুবেন। কথাটা শুনে আরেকদফা ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম আমি, তবে উনি উনার কথায় অটল থাকলেন, অন্য কোনো দৃষ্টিতে তাকালেনই না আমার দিকে একদিনও, নিজেকে রোজ কতো রকম করে সাজাতাম উনার জন্য। তবে কখনো উনি চোখ বুলিয়ে দেখতেনই না। এমতাবস্তায় দুই মাস কাটলো, পরে মনে সন্দেহ শুরু হলো আমার। হয়তো আমি উনার চোখে সুন্দর না আর নয়তো উনার মধ্যে কোনো সমস্যা আছে, তাই একদিন যাচাই করতে মুখ খোলে বললাম, আমি আপনার সাথে আমাদের সম্পর্কের নতুন শুরু করতে চাই। উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন, অতঃপর সন্ধ্যায় আমার জন্য একটা শাড়ী আর খোঁপায় দেওয়ার জন্য বেলিফুল আনলেন। বললেন ওগুলো পরে রেডি হতে। আমিও রেডি হলাম, উনি আমাকে নিজের গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেলেন সে রাতে, জায়গাটা বেশ দূর না আমাদের শহর থেকে। ওখানে উনার মা বাবা থাকতেন। উনারা মারা যাওয়ার পর আর উনার ওখানে যাওয়া হয় না জানালেন উনি। অতঃপর বললেন উনার শৈশব কৈশোর এখানেই কেটেছে আর উনার জীবনের নতুন শুরু উনি এখান থেকে করতে চান। উনার সে ঘর সেদিন খুব সুন্দর করে সজ্জিত ছিলো। এমনকি উনি যে কক্ষে থাকতেন সেই কক্ষটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। আমি খুশি হয়ে বললাম, এসব আপনি করিয়েছেন? উনি উত্তরে শুধু মাথা নাড়ালেন যে উনি করিয়েছেন। সেদিন আমাদের সম্পর্কের নতুন শুরু হলো। উনি সব কাজেই সিরিয়াস। কখনো হাসি তামাশা করতে দেখি না উনাকে, তবে কখনো উনি ঝগড়াও করেন না আমার সাথে আর না তো আমাকে ঝগড়া করার কোনো কারন দেন। আমি কখনো কখনো উনার এমন অদ্ভুত আচরণে ক্ষেপে গিয়ে অনেক কিছু বলে দেই রাগের মাথায় তবে উনি উত্তরে কিছু বলেন না বরং সেদিন অফিস থেকে ফিরতে কিছু না কিছু নিয়ে আসেন আমার জন্য। সেদিন আমি আর আমার প্রতিবেশী রুশানা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এলাকার দুটো ছেলে উত্তপ্ত করতে শুরু করলো আমাদের। রুশানা রেগে গিয়ে ওদের দু'চারটে কথা শুনিয়ে দেয়, ছেলেগুলোও প্রতিউত্তরে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। আমি রুশানাকে টেনে নিয়ে আসি সেখান থেকে। পথিমধ্যে রুশানা তার স্বামীকে পেলে ছেলেগুলোর নামে নালিশ দেয়। তখন তার স্বামী বলে,
তো কি হয়েছে? ছেলেপুলে এমন কথা বলবেই মেয়েদের দেখলে। তোমার ওদের সাথে কথা বলা ঠিক হয় নি। তোমাকে কে বলেছে ওদের সাথে কথা বলতে, শুধু শুধু ঝামেলা। কথাটা শুনে আমি ভাবলাম উনিও হয়তো এমন কথাই বলবেন। তাই উনাকে আর জানালাম না বিষয়টা। কিন্তু পরদিন সকালে একটা কাজে ঘর থেকে বেরুলে ওই দুইটা ছেলে এসে আমার কাছে ক্ষমা চায়।

আপা আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমরা আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে লাগ বাজ করবো না। ছেলেদুটোর দুই গালেই পাঁচ পাঁচটা আঙুলের ছাঁপ আন্দাজ করতে পারলাম। বুঝলাম কেউ মেরেছে ওদের।
রাতে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি কি ওই ছেলেদের কিছু বলেছেন। উত্তরে উনি বললেন,

তুমি যদি তখন ওদের গালে দুইটা লাগিয়ে দিতে তবে আমার আর কষ্ট করতে হতো না। মেয়েদের যারা সম্মান করে না তারা নিজেরা সম্মানে থাকার যোগ্য না।

কথাটা শুনে মুচকি হাসলাম আমি। আজ আমার এক বান্ধবীর স্বামী ওকে ছেড়ে দিলো কারন সে নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করে। আমার বন্ধবীর উপর তার মন ভরে উঠেছে, ওর বিয়েও আমার সাথেই হয়েছিলো, ওর স্বামী ওকে খুব ভালোবাসতো। রোজ কতোবার কতোরকম করে ওকে ভালোবাসি বলতো তা হয়তো নিজেও জানে না সে লোক। তাছাড়া সবকিছুতেই আলাদা আদিখ্যেতা করতো ওর স্বামী ওর জন্য, বেবি সোনা, বাবু কতো নামে ডাক। এদিকে রোজ ডে, হাগ ডে, ভ্যালেন্টাইনডে কিছুই বাদ যেতো না আলাদা করে পালনের জন্য। যা আমার স্বামী কখনোই করেন না, উনার এক কথা ভালোবাসা সারা জীবন থাকে, তবে দু'চারদিন পালন কেনো করবো। ওর স্বামীকে দেখে কখনো কখনো আমার হিংসে হতো যে আমার স্বামী কেনো ওমনটা না। কিন্তু আজ হঠাৎ খবরটা শুনে আমার কেমনজানি লাগতে শুরু হলো। যদি উনিও আমায় ছেড়ে দেন। হঠাৎ আমার এক বান্ধবী আসলো আমার বাড়ি। গল্পে গল্পে বলে উঠলো,


জানিস আরোহী, তুই অনেক লাকি রে।

কেনো?

কারন তুই ওমন একটা স্বামী পেয়েছিস। জানিস যখন থেকে তোর স্বামীকে দেখেছি ওকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা জমে উঠেছিলো বুকে, তাই ঘনঘন তোর বাড়ি আসতাম, ওকে দেখতে। তবে কখনো ও আমার দিকে তাকায়ই নি। আজকে সাহস করে তোর স্বামীকে প্রপোজ করলাম তখন তোর স্বামী কি বললো জানিস।

কি বললেন?

আমি আমার স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালোবাসি, আর ওর জায়গায় কখনো দ্বিতীয় মেয়ে আসবে না।

যতনে রাখিস রে, এমন স্বামী সবাই পায় না।

কথাটা বলে মিতা (মিতা মানে অন্তরের বন্ধ) চলে গেলো। আমার চোখে সুখে জল চলে আসলো।

হ্যাঁ লোকটা গম্ভীর, আলাদা করে ভালোবাসা দেখাতে জানে না কিন্তু সত্য অর্থে ভালোবাসতে জানে। হয়তো তার ভিতর আলাদা কোনো শো ওফ বা ন্যাকামো নেই। তবে আছে সত্য অনুভূতি। হয়তো আমরা অনেকেই এসব গম্ভীর স্বভাবের মানুষগুলোকে বোরিং বলে পাশ কাটাই কিন্তু সেই চাঁপা স্বাভাবের মানুষগুলোও তো মন খুলে ভালোবাসতে জানতে পারে, যারা বাকি দশজনের মতো মুখ খোলে তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে জানে না। এমন তো নয় যে তাদের অনুভুতি নেই, তারা ভালোবাসতে জানে না। আসলে তারা নিজেদের অনুভুতি দেখাতে না পারলেও সে অনুভুতি অনুভব করিয়ে দিতে সক্ষম হয়, তবে তা অনুভব করার জন্যও যোগ্য একটা মনের দরকার পরে। আমরা কেউ তা বুঝতে চাই না। দেখানোর ভালোবাসা সবাই বাসতে পারে। ভালোবাসা অনুভব করানোর ক্ষমতা যে কারো থাকে না। আমি যতোবারই অসুস্থ হয়েছি ততোবারই রাত জেগে উনি আমার সেবা করেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে উনি আমাকে ডাকেন না। নিজে থেকে উঠে সবকিছু করে নাস্তা করে আমার জন্যও নাস্তা বানিয়ে যান। কখনো ভুল বশত গোসলখানায় কাপড় রেখে আসলে পরের বার গিয়ে দেখি উনি তা ধুয়ে ফেলেছেন অথচ এসব বিষয় নিয়ে আমার বান্ধবীদের সংসারে রোজ ঝগড়া হয়। আজ সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হলো। উনার প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান আরও বেড়ে গেলো আমার।

আজ সুন্দর একটা শাড়ী পরে অপেক্ষা করতে থাকলাম উনার। উনি এসে আমাকে দেখে তেমন কিছু বললেন না। আমিই জিজ্ঞাসা করলাম। কেমন লাগছে আমায় বলবেন না।

আমার কাছে আমার স্ত্রী সকল রুপেই পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরী। উনার এই এক কথাই হাজার রোমান্টিক বানীর উপরে মনে হলো আমার। রাতে উনার কোলে মাথা রেখে উনার কাছে আবদার করলাম।

***চলবে***
822 Views
17 Likes
4 Comments
4.4 Rating
Rate this: