বোবা কান্না

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
লিজা ব‌উ সেজে বসে আছে। তাকিয়ে দেখলো, ছোট একটি ঘর। ঘরের মাঝে শুধু একটা চৌকি। সামনে ছোট্ট একটি বাড়ান্দা/হাতিনা বলে সবাই। পিছনে একটা বাড়ান্দা। ঘরে কিছু প্রতিবেশি আর সেন্টুর ভাই ভাবী। অনেক রাত হয়েছে সবাই চলে গেছে।সেন্টুর ভাই ভাবী সেন্টু কে বুঝিয়ে বলল- দেখ কোন ঝামেলা করবি না। ঠিক মতো বাসর রাত কাটাবি।
সেন্টু:- ঠিক আছে তোমরা যাও ঘুমাবো এখন।
সেন্টু চৌকির এক পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

লিজা দেখতে অনেক সুন্দরী।খুব গরিব ঘরের সাধারণ মেয়ে। বাবা রিকশা চালায়, মা অসুস্থ। লিজার স্বাপ্ন ছিল ভালো একটা সুন্দর ছেলের সাথে বিয়ে হবে। তাকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসবে।এই বাসর রাত কে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে। কতটা আশা ছিল কিন্তু ভাগ্যে কি নিয়ে এলো।তার স্বামী একবার ফিরেও তাকালো না। অনেক রাত পর্যন্ত একা বসে আছে। কষ্টে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।

ভোরে সেন্টুর ঘুম ভেঙ্গে গেল তাকিয়ে দেখলো। লিজা তার পাশে শুয়ে আছে.তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি অনেক সুন্দর। দেখতে খুব মায়াবী,এক কথায় মনোমুগ্ধকর। ভাবছে এতো সুন্দর একটা মেয়ে কি দেখে আমার সাথে বিয়ে দিল। উঠে একটা খেজুরের ডগা দিয়ে ব্রাশ করতে করতে বাজারে গেল। ভাবছে কি আর করার আছে,বিয়ে করতে না চাইলেও এখন আর উপায় নেই। তবে আমি রাকিব কে কখনো ক্ষমা করবো না। মিথ্যা কথা বলে আমাকে বিয়ে করিয়ে ছে।

সেন্টুর ভাই আর ভাবীর ডাকে লিজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তাকিয়ে দেখলো তারা দাঁড়িয়ে আছে।
লিজা:- বসুন ভাবী?
ভাবী:- সেন্টু কোথায় গেছে?
লিজা:-জানি না
রাকিব:- ভাবী আসলে ও বিয়ে করতে চায় নি। মিথ্যা কথা বলে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে গেছি।
লিজা:-কেন বিয়ে করতে চায় নি?
ভাবী:- পড়ে সব জানতে পারবেন।এখন একটুখানি ম্যানেজ করে নিতে হবে।

সেন্টু এসে দেখলো ভাই ভাবী ঘরে গল্প করছে।
সেন্টু:‍- বাহ বাহ আমাকে মিথ্যা বলে, বিয়ে করিয়েছো এখন কি সব দায়িত্ব শেষ?
কোন খোঁজ খবর রাখো এই মেয়েটা কি খেয়েছে? কিছু আছে কিনা?
ভাবী:- তোমার চিন্তা করতে হবে না, যদি না খেয়ে থাকে আমি আছি। বিয়ে আমরা করাইছি তোমার ব‌উয়ের ভালো মন্দ আমরা দেখবো।
সেন্টু:-ভাবী তুমি ভালো করেই জানো আমি মেয়েদের দুই চোখে দেখতে পারি না।আর এই সব বিয়ে সংসার আমাকে দিয়ে হবে না।
রাকিব:- দেখ ভাই তুই সারা জীবন এক কথা বলিশ না তো। যদি লিজা কে খাওয়াতে না পারো আমি খাওয়াবো। তুই শুধু এখন মন দিয়ে সংসার টা কর।
সেন্টু:- একটা মানুষ কে খাওয়ানো ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু এই সব ঘর-সংসার বিয়ে আমার জন্য না। মেয়েদের আমি বিশ্বাস করি না। আমি ওদের ঘৃণা করি। লিজা কে বলল- শুনুন আপনি অনেক সুন্দরী আমার থেকে ভালো ছেলে পেয়ে যাবেন। দয়া করে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিন।
লিজা:-আপনার ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় বিয়ে তো আমাকেই করছেন তাই না?সংসার তো আপনাকে করতেই হবে।
সেন্টু:- দেখুন আমি অনেক গরিব,আমার কিছু নেই। ঠিক মতো তিন বেলা খেতেও পারি না। ভালো খাবার, ভালো পোশাক,দামী খাট এগুলো আমার নেই। দয়া করে আপনি চলে যান।
লিজা:- আমি গরিবের মেয়ে সব কিছু স‌ইবে। মানুষ পাল্টানো যায় কিন্তু ভাগ্য পাল্টাবো কি দিয়ে? ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে।
রাকিব:- তুই আর একটা কথাও বলবি না। কিছু টাকা দিয়ে বললো ভালো কিছু বাজার কর। আর কিছু লাগলে আমাকে বলিশ। রাকিব আর ভাবী চলে গেল।

সেন্টু বটি দিয়ে মাছ কাটছে। লিজা দেখে বলল-
আমাকে দিন আমি কাটি?
সেন্টু:-এই শুনুন আমাকে সাহায্য করতে হবে না। আমি সবসময় একাই রান্না করে খাই।
লিজা:- তখন তো আমি ছিলাম না।
সেন্টু:- কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো আপনি আমার চোখের সামনে আসবেন না বুঝলেন, আমি মেয়ে মানুষ দেখতে পারি না। চলে যান।
লিজা কোন কথা না বলে বাড়ান্দায় গিয়ে বসে আছে।রাগে তার গা জ্বলছে আমি ভালো কথা বললাম তাতেও দোষ। সেন্টু মাছ, সবজি আর ডাল ভাত রান্না করতে করতে প্রায় দশটা বেজে গেল। লিজার ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। ঘরে শুধু পানি ছাড়া কিছুই নেই। সেন্টু রান্না করে গোসল করতে গেলো এসে দেখলো ভাত প্লেটে রেখে বসে আছে।
সেন্টু:- আপনি খাইছেন?
লিজা:-না
সেন্টু একটা শীতলপাটি বিছিয়ে ঘরের মেঝেতে বসে পড়লো। আর বলল- অনেক বেলা হয়েছে খেয়ে নিন।
লিজা:- শুধু হুম বলে উত্তর দিল।

সেন্টু খেয়ে চলে গেল লিজা খাবার খায় আর ভাবছে,লোকটা যতটা রাগ দেখায় আসলে ততটা রাগি না। তবে একেবারে খারাপ মানুষ না, মানুষের জন্য মায়াও আছে মনে হয়। খাবার মুখের দিয়ে অবাক হয়ে গেল .এতো সুন্দর রান্না করতে জানে। লিজা একা বসে আছে কিছু ভাল লাগছে না।ভাবী সে যদি একটু আসতো। লিজা দেখলো ঘরে পিছনে একটা ছোট বাড়ান্দা।তাতে বাঁশ ঝুলিয়ে তার উপরে কিছু জামা কাপড় রাখা। একটা পুরনো চেয়ার,অন্য পাশে বাঁশে একটি শীতল পাটি ঝুলছে। ঘরে ছোট একটি মাচা আছে।মাচায় একটা পুরনো টেরাঙ্ক আছে কিন্তু তালা নেই।মাচায় দুই তিন টা বোস্তা ঝুলানো আর কিছু পুরনো জামা কাপড়। মনে হচ্ছে কোন পরিত্যক্ত ঘর এটি। ধুলো বালি আর মাকড়সা ঘেরা।

সন্ধ্যায় সেন্টু ঘরে আসলো ঘামে শরীর ভিজে গেছে। অনেক কিছু নিয়ে আসছে জগ, গ্লাস, প্লেট। চাউল,ডাল, আলু আর মুরগি আনছে। বলল-আপনি কষ্ট করে একটু রান্না করবেন?
না পারলে ভাবী কে ডাকি?
লিজা:- আপনি গোসল করতে যান। আমি রান্না করছি। লিজা সব কিছু গুছিয়ে মাটির চুলায় রান্না করছে।
ভাবী:-কি করো তুমি?
লিজা:- রান্না করছি
ভাবী:-আমাকে ডাক দিতে?
লিজা:- সমস্যা নাই আমি পারবো ।
একটুখানি চুপ থেকে আবার লিজা বলল- ভাবী একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে
ভাবী:-কি জানতে চাও?
লিজা:- আপনার ভাইয়ের কি কেউ নেই? কাউকে তো দেখলাম না।
ভাবী:- থেকেও কিছু নাই।
লিজা:- মানে বুঝলাম না।
ভাবী:- তোমার শ্বাশুড়ি যখন মারা যায়। তখন তোমার স্বামীর বয়স 12 বছর। বাবা বিয়ে করে সেন্টু কে ঘর থেকে বের করে দেয়। মামার বাড়িতে থাকতো। দুই বছর হলো আমাদের বাড়িতে থাকে।
সেন্টু এসে ভবীর কাছে এসে বললো ভাবী আমি সারাদিন কাজে থাকি।সে একা ঘরে থাকে একটু খেয়াল রেখো। কিছু হলে তো আবার আমাকে দোষ দিবা।
ভাবী:-ঠিক আছে,আর লিজা তুমি আমাদের ঘরে গিয়ে থাকবা সাব সময় একা থাকো কেন। আমি আর মা দুজনেই তো ঘরে থাকি।
লিজা:- ঠিক আছে

সেন্টু ঘরে গিয়ে বসলো আর বলল-তারাতাড়ি রান্না করো।
ভাবী লিজা কে বলল- দেখে নিও ও তোমাকে একদিন অনেক ভালবাসবে। শুধু ওর কথা মতো চলো তাতেই হবে।
সেন্টু গিয়ে খালা কে নিয়ে আসলো। শুধু রাকিব কে পেলো না,রাকিব ঘরে নেই। সবাই খেতে বসলো।
সেন্টু বলল- খালা রাকিব ঘরে আসলে পাঠিয়ে দিবা।ভাত খেয়ে যাবে কিন্তু, না আসলে কিন্তু আমি ওর সাথে কথা বলবো।
খালা:- ঠিক আছে।
ভাবী আর খালা দুজনেই খেয়ে চলে গেছে। শুধু বাকি আছে খালাতো ভাই রাকিব।

সেন্টু শুয়ে পড়লো, লিজা পাশে শুইতেই তার মনে পড়লো সুমির কথা। বুকটা হাহাকার করে উঠলো। একটা মেয়ে মানুষের পাশে আছে ছিঃ! ওরা ঘৃণিত জীব, ওরা লুভী স্বার্থপর। কখনো কাউকে ভালোবাসে না। শুধু টাকা পয়সার আর স্বার্থ খুঁজে।সুমি রানা কে জড়িয়ে ধরে তার উন্মুক্ত শরীরে বুকে ঠোঁটে কিস করছিল। সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেন্টুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ দিয়ে জল পড়ছে। লিজা হাত তার গায়ে লাগতেই চেঁচিয়ে উঠলো। দূর হোও আমার থেকে আমি তোমাদের ঘৃণা করি। লিজা লাফিয়ে উঠলো বাতি জ্বালিয়ে দিল। দেখলো সেন্টুর চোখে জল। নিজেকে শান্ত করে বলল-কি হয়েছে আপনার? আপনার চোখে পানি কেন?
সেন্টু:- আমাকে কোন প্রশ্ন করবেন না? আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই? বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। লিজা এতো রাতে কোথায় যান? শুনুন ঘুমিয়ে পড়ুন। দোহাই লাগে যাবেন না?
736 Views
17 Likes
4 Comments
4.3 Rating
Rate this: