রোমান্টিক হুজুর

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
আজকে আট বছর হলো মেহেদী সৌদিতে আছে।
একটি রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে বিশ জন কর্মচারী।তার ভিতরে সে অন্যতম। প্রথমে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দায়িত্ব পালন কারলেও এখন সে ম্যানেজার। সব কিছু তার দায়িত্বে। মালিকের অনেকগুলো রেস্টুরেন্টে এবং মুদির দোকান আছে। বিভিন্ন দেশের কর্মচারী আছে। সবার থাকার জন্য একটি রুমে চারটা করে সীট আছে। এভাবে অনেক রুম আছে।মেহেদির সাথে আরো তিন জন বাঙ্গালী থাকে। সবাই সবাইকে নিজের আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে।

অনেক রাত হয়েছে মেহেদী আজকে খুব বেশি ক্লান্ত। সে শুয়ে শুয়ে ভাবছে অনেক বছর হয়ে গেলো।আর এভাবে রাগ করে নিজেকে পরিবার কে কষ্ট দেয়া ঠিক না। এখন দেশে যাওয়া উচিত।রিয়া হয়তো নতুন করে জীবন সাজিয়েছে।কিন্ত বাবা মায়ের তো আমি ছাড়া কেউ নেই। হঠাৎ রফিক বলল-
ম্যানেজার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে? যদি কিছু মনে না করেন তো বলি?
মেহেদী:-এখানে আপন বলতে কেউ নেই, আপনারাই আপন। অসুস্থ হলে সেবা করেন। ভুল করলে সঠিক পরামর্শ দেন। পিতা মাতার মতো সবাই দায়িত্ব পালন করেন। ম্যানেজার না শুধু ভাই বলেন।
রফিক:- তারপরও তো আপনি?
মেহেদী:-কোন তার পর নাই যা বলতে চাও সোজাসুজি বলো?
রফিক:-ঠিক আছে, আচ্ছা ভাই আমরা সবাই বাড়িতে কথা বলি। আপনি কখনো কারো সাথে কথা বলেন না কেন?

রনি এবং রাকিব পাশের সিটে শুইয়ে আছে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করতে দেখে অবাক হয়ে গেল।শোয়া থেকে উঠে বসলো সবাই।কারণ জানে এই প্রশ্নের উত্তর মেহেদী কাউকে দিবে না। বরং রেগে যাবে, কিন্তু মেহেদীর মনটা আজকে বেশি খারাপ। জীবন যুদ্ধে হাঁপিয়ে গেছেন। আজকে প্রিয় মানুষগুলোর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে তাই রাগ করলো না। মেহেদী একটুখানি নিরব থেকে হঠাৎ করে বাচ্চাদের মত হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। আর বলল- আমি খুব বেশি নিষ্ঠুর! আমি পাষান! আমার কোন কষ্ট নেই। আমার কেউ নেই। বলে আবার চুপ হয়ে গেল। সবাই অবাক হয়ে বললো -
কি হয়েছে ভাই আমাদের খুলে বলো?
মেহেদী:- বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। কারো সাথে যোগাযোগ নেই। কারো নাম্বার জানি না।
রফিক আর কোন প্রশ্ন করলো না চুপ হয়ে গেল।
রনি বলল -কেন পালিয়ে এসে ছেন?
মেহেদী-সবার সাথে রাগ করে।
রনি:- কেন?
মেহেদী:- বলতে গেলে রাত শেষ হয়ে যাবে। কালকে অনেক বেশি ডিউটি করতে হবে। এখন ঘুমাও পরশু বন্ধ সবাই মিলে গল্প করবো।

আজকে বন্ধ সবাই মেহেদী কে বলল- আমাদের সবার কথাই জানেন। আজকে জানতে চাই আপনার বিষয়ে? দেখেছি মাঝে মাঝে আপনি একা লুকিয়ে লুকিয়ে কি যেন ভেবে চোখের জল ফালান। আজকে বলতে হবে?
মেহেদী ঠিক আছে শোন -

সে দিন শুক্রবার আমার বিয়ে.সবাই সেজেগুজে রেডি হয়ে বসে আছে। আমি এক কথার মানুষ কোন আধুনিক মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।
মা বলল- বাবা তুই কোন চিন্তা করিস না?
ইস্কুল কলেজে পড়লেই মানুষ খারাপ হয় না?
দেখ মেয়েটি অনেক ভালো, অনেক সুন্দর। তোমার সাথে মানাবে।
অনু:- ভাইয়া তুই কেমন মানুষ এই যুগে তোর মতো এতো বাছে কেউ?
মেহেদী:- আমি কোন কলেজের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারবো না। আর ও বড় লোকের মেয়ে বিশেষ করে ওকে একদমই না।
মা:- দেখ বাবা তুই তো সব কিছু জানো। তোর বাবা তার সম্মান রাখতে কথা দিয়েছে।
মেহেদী:- সবাই তার কথা রাখতে আমাকে বলির পাঁঠা বানাবে। আমার কোন মান-সম্মান বলতে কিছু নেই। ওই মেয়ে কেমন পোশাক পড়ে দেখলে আমার ঘৃণা লাগে। মনে হয় যাত্রাপালার মেয়ে।
মা:- মেয়েরা বাবার ঘরে যেমনি থাকুক, শ্বশুর বাড়িতে নতুন করে জন্ম হয় তাদের। তুই যেমন রাখবি তেমনি থাকবে।
রহিম মাষ্টার হাক দিয়ে বলল- তোকে এখানেই বিয়ে করতে হবে? না হলে তুই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা, তোকে ত্যাজ্য পুত্র করবো।
সবাই বুঝিয়ে বললো। মেহেদী অনেক ভেবে বলল-ঠিক আছে বিয়ে করবো কোন সমস্যা হলে তোমাদের দায় নিতে হবে।
সবাই মহা খুশি মেয়ে দেখেই বিয়ে করে সাথে সাথে ব‌উ উঠিয়ে নিয়ে আসবে।

রহিম মাস্টার রাগি মানুষ। তিনি আলিয়া মাদ্রাসায় চাকরি করেন।এক বার প্রিন্সিপাল রহিম মাস্টার কে ঘুষের অপবাদ দিল।তার চাকরিটা মনির চেয়ারম্যান এর জন্য রয়েছে। তাই সেই রিণ শোধ করতে তার ছেলের সাথে চেয়ারম্যান মেয়ের বিয়েতে রাজি হয়েছে। মনির চেয়ারম্যান সারা জীবন সুদ-ঘুষ খেয়ে,গরিবের টাকা,দুর্নীতি, দুইনম্বারি করে এখন ভালো সেজেছে। বিরোধী দলের নেতা পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন তাবলীগ জামাতের গিয়ে পীর সাহেব হয়েছে।

রিয়া তার মা'কে বলল-মা আমি কোন হুজুর - টুজুর বিয়ে করতে পারবো না। দাঁড়িওয়ালা লোক আমার দুই চোখের বিষ।
রিয়ার মা বলল-আমি জানি না তোর বাবা কে বল।
রিয়া রেগে গিয়ে বললো:- বাবা আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না?
বাবা:-কেন?
রিয়া:- পারবো না জাষ্ট পারবো না। হুজুর ছেলে ইম্পসিবল। হুজুর ছেলে আমি ঘৃণা করি।
মনির চেয়ারম্যান মেয়ে কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বলল- দেখ মা! তোরা দুই বোন জীবনে কখনো কিছুর অভাব পেয়েছো? কখনো কিছু চেয়ে পাওনি এমন হয়েছে?
রিয়া:-না, কখনো অভাব হয় নি।
বাবা:-যখন বাজারে যাইতাম কিছু খেতে ইচ্ছে করলে। খাবার মুখের কাছে নিয়ে ফেরত আনতাম। তোদের রেগে কখনো কিছু গলা দিয়ে যেতো না। সারাটা জীবন নিজের শক্তি, নিজের অর্থ, নিজের যৌবন বিলিয়ে দিয়েছি।তোদের মুখে একটুখানি হাসি ফুটিয়ে তুলতে। তোদের সুখের জন্য সারা জীবন খেটে খেটে এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি। জীবনে কখনো কিছু চাই নি। বলে দুই ফোঁটা অশ্রু ছেড়ে দিল।
রিয়া:- বাবার কথায় কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বললো বাবা এমন বলছো কেন?
বাবা:- হ্যা যদি বলো আমি ভালো না, আমি স্বার্থপর বলতে পারো। কিন্তু বাবা হিসেবে কি খুব বেশি কিছু দাবী করেছি আমি?
আমি এখন অসুস্থ বৃদ্ধ যে কোন সময় মারা যেতে পারি। আমি মারা গেলে কেউ নেই আমার জন্য একটু দোয়া করবে। তাই চেয়েছি একটা আলেম জামাই থাকুক। যে হয়তো একটু দোয়া করবে।
আমি বাবা হিসেবে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি মা আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ কর?
রিয়া আর কোন উপায় না দেখে বলল- ঠিক আছে বাবা।
1.25K Views
26 Likes
3 Comments
4.0 Rating
Rate this: