গল্পটি লিখেছেন :স্মরণ বাবু
জেলা: সিরাজগঞ্জ
এক সন্ধার প্রহরে আম্মা আমাকে মেরেছিলো আমি নতুন প্যান্ট ছিড়ে গুটাল বানিয়ে ছিলাম। আমি কান্না করতে করতে বাংলোর একটা কোনায় বসে পড়ি। তার একটু পরেই আব্বু বাড়িতে আসে, সে প্রথমে আম্মুর পক্ষ নিয়ে আমাকে বকাঝকা করে আমার সেদিকে মন বা কোন খেয়াল নেই। পাশেই ঝিঝিপোকা ডাকিতেছে এবং চাঁদের স্নান আলোয় চারিপাশটা যেন আলোকিত হয়ে আছে। আব্বু আসলে অনেকক্ষন ধরে লক্ষ করিতেছে যে আমি একটা জায়গায় গালে হাত লাগিয়ে বসে আছি-উঠতেছি না-আবার এদিকে মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো আমি কোথায় হাত পা ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসবো, কিন্তু না আমি তাও যাচ্ছি না শুধু মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে বসিয়া আছি। আর অভিমান করিয়া ভাবতেছি যে, আমিও আগে বড় হই তারপরে তোমাদের দেখিয়া লইবো (এ যেন আমার এক চাপা মনকষ্ট থেকে বাবা মার প্রতি এক অভিমান)। যাইহোক আব্বু ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন এই পাগলা কি হয়েছে তোর? নিমিষেই আমার অভিমান যেন রাগে রুপান্তরিত হলো, অতিরিক্ত রাগের কারণে আমি কেঁদে উঠলাম। আব্বু আমাকে তখন হাত ধরে বুঝিয়ে বলতে লাগলো ওরে পাগলা এভাবে কেউ পিতা-মাতার উপর অভিমান করে? আসো ঘরে যাই পড়তে বসো। এই বলে তিনি আমার হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন। তার কয়েকদিন পরেই একদিন ঘটলো এক কান্ড। আমি তখন মাত্র কেজি স্কুলের অত্যাচার- উৎপীড়ন (যা মূলত সম্মানিত শিক্ষক মহোদয়ের আমার প্রতি ভালোবাসা ও শাসন) প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি। সেদিন ক্লাসে প্রিয় শাহিন স্যার হাজিরা নিতেছেন সকলেই নিশ্চুপ। তিনি আসলে যতটা স্বাস্থ্যবান ঠিক ততটাই কালো ছিলেন। চেয়ারটায় বসলে শরীলটা এলাপাথারি ভাবে ছাড়তো- হুঙ্কার ছাড়লে মনে হতো যেন ক্লাসটা দুম দুম করে কাঁপছে। তিনি আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন। যদি বাংলা না পড়তো কেউ তাহলে তার কপালে সেদিন ঈদের চাঁদ আছে। তাই আমি অন্য সাবজেক্ট পড়ি বা না পড়ি, বাংলা সাবজেক্ট পড়তে ভুলি না নিয়মিতই পড়ে আসতাম। সেদিন হাজিরার মধ্যখানে ঘটলো অন্য ঘটনা। বাতাসে দুর্গন্ধ ভেসে ওঠলো স্যার নাম ডাকা বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষন বকাঝকা করলো। সারাক্লাসে আতঙ্ক বিরাজ করিতেছে। তিনি বারে বারে হুঙ্কার ছাড়িয়ে বলিতাছেন- কে এই কাজ করেছিস তাড়াতড়ি বল না হলে আমি যদি বাহির করি শান্তি আরো দ্বিগুন হবে। কিন্তু এতক্ষনে গন্ধ তীব্রমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। আশরাফুল নামের একটা বাচাল ছেলে সামনে গিয়ে বসে পড়ে বলে স্যার মাঝের বাঞ্চের একটা ছেলে পরিবেশ দূষিত করেছে। সেদিন স্যার তাকে বলিল আমাকে বললেই পারতে। সেদিন স্কুলে যেতে না যেতেই আমাদের ছুটি হয়ে যায়। তারপরে আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসি। গুটালটা দিয়ে পাখিকে মারার চেষ্টা করছিলাম। আমার কিছু বন্ধ বলিল চল আজকে আমরা নদীতে যাব। কোন কথা না বলে অমনি তাদের সাথে যুক্ত হয়েছি। মধ্যন্ধে ছুটে চলেছি পাখিদের দলের চাইতে যেন আমাদের দলটাই বড়। প্রথমেই আমরা ঢুকি বড় এটা আমের বাগানে। সেখানে কোন পাখি দেখতে না পেয়ে, একটা রাস্তা ধরে নদীর দিকে যাত্রা করি। পথের ধারের পাখিগুলোকে একজোটে মারবেল দিয়ে আক্রমন চালাই। একসময় নদীর ধারের একটা রাস্তা ধরে একটা বাগানে এসে পৌছি। সেখানে নদীর ছোট ছোট এক একটা ঢেউ বিস্তৃত ঢালু সবুজ ঘাসের উপরে আছড়ে পড়ছে। কচুরি পানার উপরে ভেসে থাকা সাদা রঙ্গের বকগুলোকে আঘাত হানি। ঐ পাড়ের ঘন জঙ্গলে আড়ালে সবুজ গাছগুলো মনে হচ্ছিল ঢের দাড়িয়ে আছে। পয়সা না থাকায় আমাদের খেয়া নৌকায় ওঠা হয় না। তার একটু দূরে বালির একটা পাড় দেখতে পাই, সেখানে অনেক পাখির বাসা ছিল। কিন্তু গর্তে হাত দেবার সাহস আমর হয়নি। আমাদের মাঝে একজন বলল, চল চল আমরা এখন ফেরত চলে যাই একটু পরেই সন্ধা নামবে। একটু একটু করে গোধুলির আলো যেন কমে আসতে লাগল। আমি আর বাড়িতে ঢোকার সাহস পাচ্ছি না। এমনিতেও কাউকে না বলে চলে গিয়েছিলাম, আম্মু আমাকে ঠিক মারবে। আব্বু আসলে তখন বাড়িতেই ছিল। আমি গিয়ে
তাকে জড়িয়ে ধরে বলি, আম্মু আমাকে মারবে। আব্বু আমাকে আশ্বাস দিলেন তোমাকে কেউ মারবে না।
সন্ধার আলো আধারে আম্মুর অশ্রু গড়িয়ে পড়া চোখ যেন আমাকে ডাকছিলো।
এক অদ্ভুদ ঘটনা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
399
Views
12
Likes
1
Comments
4.2
Rating