মা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মা ডেকেছে অভিমান ভুলে শহর ফিরছে, রাহুল। রাহুল নামটাও ওর নতুন মায়ের দেওয়া। ও নিজের আসল মায়ের দেওয়া আসল নামটা এখন তো ভুলেই গেছে। রাহুল মনে মনে ভাবলো এখনও সে সেই বাচ্চা রেয়ে গেলো। মা আবার নতুন - পুরাতন, নকল হয় নাকি। মাতো মা ই।
এখনও মনে আছে রাহুলের সেই দিন টার কথা। বুবাই আঙ্কেলের দেহটা নিয়ে সবাই কান্না কাটি করতে ব্যাস্ত। রাহুল রিমি দেহটা আগলে বসে আছে একা। সোমাদি মানে ওর গর্ভনেস ওকে হাসপাতালে পৌছে দিয়ে কেটে পরেছে। ও ওর ছোট মামু ফোন করেছিলো। মামি ফোনটা কেটে দিলো। ও শুনতে পেয়েছে মামি মা বলছিলো - তোমার বাবা মা বলেছে না রিমি মরা মুখ দেখবে না। ওই কথাটাই বহল থাক, রিমির মৃত্যু সংবাদ যেনো এ বাড়ির কারো কানে না আসে। তাহলে তোমার একদিন কি একদিন। ওর ছেলের দায়িত্ব নিতে পরবো না আমি। খাই পড়িয়ে মানুষ করবে তারপর দেখবে সম্পত্তির ভাগ চাইবে। "

রাহুল দ্বিতীয় বার কাউকে ফোন করে নি। কারণ ও দেখ ছিলো রিমিকে। কতো লোক ওকে ফোন করতো কত ব্যস্ত থাকতো রিমি। মা হিসেবে একটু আদর করার সুযোগ পাতো না ও রাহুলকে। যদিও ও বললেই দিয়েছিলো রাহুল কে ও জেনো ওকে মা বলে না ডাকে। তাছাড়া বুবাই অ্যাঙ্কেল রিমি জোর করেছিলো বলেই রাহুলকে বোর্ডিং পাঠায় নি।বুবাই খুব ভালো ছিলো ।বুবাই অ্যাঙ্কেল বেড়াবার সময়  সেই দিন বলেছিলো , "আমাদের কিছু হয়ে গেলে তুমি চিন্তা করবে না। তোমাকে  আমার ভালো বন্ধু সামলে নেবে,," ।  ও বুবাই অ্যাঙ্কেলকে বিশ্বাস করতো তাই ও ভয় পেলো না।

বুবাই অ্যাঙ্কেল রাহুল মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে ব্যাকুল ছিলো। রিমি মতো দক্ষ অভিনয় জানতো না রাহুল তাই অনেক উপহার বিনিময়ে ও রাহুল বুবাই অ্যাঙ্কেলকে বাবা বলতে পারে নি। কারণ আসলে রিমি তো কখনো রাহুল মা হয় নি। তাছাড়া রাহুল তখন ক্লাস সেভেন পড়তো  সবকিছু  বুঝতে পারতো। রিমিকে বুবাই অ্যাঙ্কেল বহু আগে থেকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু রিমি কেরিয়ার কেরিয়ার করে বিয়ে করে নি। হঠাৎ বুবাই আঙ্কেলের বাবা অসুস্থ হলো খুব, মৃত্যু আগে বুবাই অ্যাঙ্কেল বিবাহিত দেখতে চেয়েছিলেন। তাই বুবাই অ্যাঙ্কেল বিয়ে করলো। তবে ওদের দায়িত্ব ছাড়লো না। বরং রিমি বুবাই আঙ্কেল অবর্তমানে বিভিন্ন ফটোগ্রাফার সাথে ঢলাঢলি করতে শুরু করলো। খবর কানে যেতেই লং ড্রাইভ গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে দূর্ঘটনা করেছে বুবাই অ্যাঙ্কেল। এটা বুঝতে পেরেছে রাহুল।
হঠাৎ সবাই কান্না কাটি থামিয়ে দিলেন। একজন মহিলা এলেন। বললো " উনার সাথে রিমির লাশটা আমরাই নিয়ে যাবো, ওর বাড়ির লোক জন ওর সৎ কার করবে না। ওর সৎকার করবো আমরাই। "
আর একজন মহিলা  বললো " কিন্তু রিমির লাশে মুখাগ্নি কে করবে দিদি ভাই। "
মহিলা বললো " উনা যে করবে সে,"
একজন ছেলে বলে উঠলো " আমাদের গোপাল কেন ঐ নষ্ট মেয়ে মানুষটার মুখে আগুন দেবে। আমি ওকে আগুন দিতে দেবো না। "
মহিলা বললো " অভি তুমি ছোট, কলেজ পড়ছো বলে অতো বড় হয়ে যাও নি যে বড়দের কথার  ওপর কথা বলবে।  আর গোপাল অনেক ছোট ও কেন উনার মুখাগ্নি করবে??"
সবই এক সাথে জিজ্ঞাসা করলো " তাহলে কে করবে.."
সব কথার মাঝখানে, মহিলা রাহুল কাছে এসে রাহুল জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করছিলো। রাহুল কোন প্রতিবাদ করতে পারে নি। কারণ ঐ মহিলার জড়িয়ে ধরার মধ্যে একটা আপনত্ব খুঁজে পেয়েছিলো। ও কিছু না বুঝে  মহিলাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো।
মহিলা সবার উত্তর জবাব দিলো " উনার ছেলে উনার মুখাগ্নি করবে। কেউ আপত্তি করলে তে চাইলে বললো। কিন্তু এটা আমার সিদ্ধান্ত। উনা স্ত্রী হিসেবে আমার অধিকার আছে উনার মুখাগ্নি কে করবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সেই দিন থেকেই ও পেলো নতুন একটা ঠিকানা। একটা পরিবার। একটা মা। রাহুল প্রথম মুহূর্ত থেকে ওনা মা বলে ডাকতে শুরু করেছিলো। আর আজীবন ঐ মহিলাকে মা বলে ডাকতে চায় সে।
ঐ মহিলা নাম সুমিত্রা দেবী। মহিলা রাহুল কাছে আর্দশ মা। যে শুধু মাত্র বই পড়ার শিক্ষায় শিক্ষিত মহিলা  নন , বরং তিনি নিজের মতো রাহুল কে নিতী শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। রিমির সাথে থাকলেও , রাহুল কে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি শিখিয়ে ছিলো বুঝিয়ে ছিলো, রিমি ওর জন্মদ্রাতি মা হলেও রিমি আসলে ভালো মা নয়। কিন্তু সুমিত্রা বুঝিয়ে ছিলো পৃথিবীতে কোন মাই খারাপ মা হতে পারে না।
সত্যিই তো রাহুল হল আবির  আর রিমির ভালোবাসার আশীর্বাদ। অনেক কম বয়সেই মা হয়েছিল রিমি, মাত্র পোনের বছরে মা হয়েছিল ও। তখন  রিমির সাথে ওর বাবা এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। কারণ রাহুলকে ভ্রুণ অবস্থায় শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন সবাই। কিন্তু রিমি বদনাম ভয় করে নি। আবির বিয়ে করে নেয়। বছর দুই মধ্যে আবিরের প্রেম উবে গেলো। অন্য মেয়ে সাথে সম্পর্ক গড়ে তালুল। রিমি ফিরে এলো বাড়িতে সতিন নিয়ে সংসার করবে না সে।
একটা চাকরি জোগাড় করে, দুই টো পেটে চালিয়ে নেবে ঠিক করেছিলো সে। শুধু মাত্র একটা নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বাপের বাড়ি আশা। ও সুন্দরী তাই অনেক বিবাহ প্রস্তাব এসেতো। কিন্তু তখন রাহুল জন্য সবাই পিছিয়ে যেতো। কারণ আবির ওর বাবা ও মুসলিমের ছেলে। রিমি একটা প্রশ্ন করতো সমাজকে?? মায়ের পরিচয়ে কেন পরিচিত হতে পারে না তার সন্তান।
সত্যি ধর্ম তো একটা সংস্কৃতি। মুসলিম ঘরে জন্মগ্রহণ করে হরিদাস ঠাকুর তো পরম বৈষ্ণব গুরু হয়েছিলেন। হরিদাস ঠাকুর  হয়েছিলেন 'নামাচার্য', যিনি হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে সাহায্য করেছিলেন।  তো জন্ম যে ঘরে হোক সে হিন্দু সংস্কৃতি মানুষ তো সে কেন হিন্দু নয়। তার মা তো হিন্দু।
জীবনে রিমির শেষ শেষ ভালোবাসা ছিল ডাক্তার বাবু প্রেমের সম্পর্ক ছিলো পাঁচ বছর। ডাক্তার বারবার মডেল দের প্রেম পড়তো। তাই রিমি ও মডেলিং শুরু করে। কিছু টা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিয়ের কথা উঠতেই আবার রাহুলকে বোডিং পাঠানোর কথা শুরু হয়। বা আবিরের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। ও মানে নি।
বুবাই অ্যাঙ্কেলকে রিমি কোন দিন ভালোবাসে নি। বুবাই অ্যাঙ্কেল ওকে জোর করে বিয়ে করতে চাইতো। রিমি শেষ পর্যন্ত রাজীও হয়েছিল হয়তো রাহুল ভবিষ্যতের কথা ভেবে। রিমি কে বুবাই এর বাড়ির লোক জন মেনে নিয়েছিলো। রাহুলকে নিয়ে ওদের কোন অসুবিধা ছিলো না। কিন্তু রাহুলের ভবিষ্যৎ নিশ্ছিদ্র  সুরক্ষিত করতে গিয়ে রিমির সাথে বুবাই এর বাড়ির লোকজন সম্পর্ক খারাপ হয়। রিমি বুবাই এর বাড়ির লোকজনকে বলেছিল ও আর কোন ইসু নেবে না। কিন্তু বুবাইএর বাবা চাইতেন বুবাইএর একটা সন্তান হোক।

সুমিত্রা দেবী ওর ভালো মা সেই বুবাইএর বাড়ির প্রিয় ছেলে পরিনত করলো রাহুলকে। বুবাইএর বাড়ি সদস্য না শুধুমাত্র ও। ওকে বংশের বড় ছেলের মর্যাদা দেওয়া হয় এখন এ বাড়িতে। গোপালের মতো ভাই পেয়েছে ও। লোক ওদের সম্পর্কে রাম লক্ষণএর সম্পর্কের সাথে তুলনা করে। সব সম্ভব হয়েছে ওর মায়ের জন্যে সুমিত্রা দেবী বট গাছের মতো সব ঝড় জল থেকে বাচিয়েছে রাহুলকে। মা শব্দটি একটা আলাদা রূপ দেখিয়েছে ওকে।
রিমি আর সুমিত্রা মধ্যে রাহুল কোন তুলনা করতে চায় না। কারণ রিমি মা হিসেবে লড়াই করলেও , সুমিত্রা দেবী সফল  মা হিসেবে তাঁর চোখে প্রতিষ্ঠিত। তবে জন্মদাত্রি মা রিমির জন্যেও তার চোখের কোনে মাঝে মাঝে চলে আসে জল অজানা কারণে।

39 Views
1 Likes
0 Comments
4.0 Rating
Rate this: