নাং তানি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
আমার অনুমান ঠিক হলো। লোভী ওসমান সঠিক শাস্তি পেলো। ক্যাপটেন সাহেব বললো জাহাজ চালাও কারো জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সবার প্রশ্ন  কিন্তু ঐ মেয়েটার কি হবে? তাকে তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই আমার দিকে তাকালো। কারণ এই বিপদের কথা নিয়ে আমি ওদের আগে থেকেই সতর্ক করে ছিলাম।
আমি বললাম " শুধু মাত্র অপরাধীরা শাস্তি পাবে নয়তো কোনো ভয় নেই।" মনে মনে সান্ত্বনা দিয়ে এগালাম যে ভাবেই হোক একটা গ্রামে পৌঁছাতে হবে।

আমার দঢ় বিশ্বাস ছিল প্রথম, থেকেই ঐ সুন্দরী মেয়েটি নাং তানি। মানে ওরা থাইল্যান্ডের একটি প্রেত। আমার বাংলায় যেমন বলি তেঁতুল গাছে পেত্নী থাকে তেমন এখানকার মানুষরা ভাবে এই প্রেতেরা  থাকে জংলি কলা গাছের কাছে। থাই ভাষায় এই জংলি কলা গাছকে বলা হয় ক্লুয়াই তানি আর নাং মানে হল মহিলা। যদিও থাইল্যান্ডে এদের আরও কিছু নাম আছে যেমন ফি তানি  ভেঙে বলে ফি মানে হল প্রেত  আবার ফ্রাই তানি  বলা হয় ফ্রাই মানে মেয়ে । তবে শুধু থাইল্যান্ডেই নয়, নাং তানির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ক্যাম্বোডিয়া আর লাও-এর উপকথাতেও। ক্যাম্বোডিয়াতে এদের বলা হয় নাং মাই। 
জাহাজ চাকরি টাকা আছে কিন্তু জীবন বড় এক ঘেয়ে। স্ত্রী ছেলে মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে হয়। তাই মাঝে মাঝে শারীরিক এবং মানসিক শান্তির জন্য আমরা বিপথে পরিচালিত হয়ে যাই। আমরা জাহাজ নিয়ে যখন পার পাশ দিয়ে যাই তখন নৌকা করে সুন্দরী মহিলারা এসে জাহাজিদের সাথে রাত কাটিয়ে যায় ‌।
এ জাহাজে ওসমান আর আব্দুলা চরিত্রের দোষ আছে। ওরা এরকম মেয়ে ভাড়া করে।  গত ছয় মাস আগে , পাকিস্তানী চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুলা এখানে মারা গেছে। এখনকার স্থানীয় বন্দরে খালাসী সাথে কথা বলেছিলাম সেদিন। লোক মুখে শোনা যায়। ওই দ্বীপটাতে কলা বাগানে একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখেছিলো সবাই ওর লোভ করে গিয়ে আর ফেরেনি। দুই দিন ধরে এই ছোট্ট দ্বীপে খোঁজ হয়েছিল ওকে।
আমরা এই পথ বাদ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্য, হঠাৎ রাফ সি মানে সমুদ্র উত্তাল হওয়ায়। এই  অঞ্চলে নঙ্গর করতেই হলো আমাদের।
যদিও ঐ মেয়েটাকে অসহায় মনে হচ্ছিল। ও বলেছিলো ওকে ঐ গ্রামে ছেড়ে দিতে। আমরা রাজি হয়ে গেছিলাম। কিন্তু রাতে বেলায় হঠাৎ ওদের আর খুঁজে পাওয়া গেলো না।
লোককথা গল্প অনুযায়ী নাং তানি-র যে বর্ণনা পাওয়া যায় এদের দেখতে হয় অপরূপ সুন্দরী একটি নারীর মত, পরনে থাকে সবুজ রঙের পোশাক আর ঠোঁট হয় গাঢ় লাল রঙের। এদের শরীরের রং-টা হয় কিছুটা সবজে। এদের মাথায় থাকে অবিন্যস্ত কালো ঘন চুল। পূর্ণিমার রাতে এদের দেখা যায়।এদের দেখতে মানুষের মত হলেও এদের পা মাটিতে পড়ে না। এরা মাটির থেকে সামান্য উপরে ভেসে বেড়ায়।  
মেঘলা আকাশ ছিলো তাই জানা ছিলো না আজ পূনিমা কিনা। ঐ মেয়েটির সাথে একটা মেয়ে এসে ছিলো। ওসমান সাথে সহবাস করতে রাজি হয়ে গেলো সে সহজেই সামান্য অর্থের বিনিময়ে। এটা গরীব দেশ দেশ এটা স্বাভাবিক ছিল।   সেও সবুজ শাড়ি পরে এসেছিলো। তবে পায়ের দিকে কেউ তো লক্ষ করেনি। তাই সব অঙ্ক পরিস্কার হয়ে গেলো।

কিন্তু এই নাং তানি-রা মানুষের ক্ষতি সাধন যেমন করে, তেমনই উপকারও করে। বলা হয় এরা সেই সব পুরুষ মানুষের ক্ষতি করে যারা কোন ভাবে কোন নারীর ক্ষতি করেছে। তবে এমনও কাহিনী শোনা যায় যে এরা পাথ চলতি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের খাবার খেতে দেয়।  ঠিক যেমনটা হলো আমাদের সাথে। ওদের দেওয়া খাবার খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি, ওরা নেই।
ওসমান খুঁজতে গিয়ে, খাড়ির ভিতরে হারিয়ে   যেতে একটা মেয়ে আমাদের পথ দেখিয়ে দিলো। তার নাম জিজ্ঞেস করা হলো না।তাহলে কি ওরা প্রতিশোধ নিলো আব্দুলা, ওসমানকে মরে। দুই বছর আগে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছিল ওরা। তার পাপের শাস্তি পেলো ওরা দুজন।
তবুও আমরা একটা গ্রাম ঢুকলাম মাদুলির জন্য।এই নাং তানি-র হাত থেকে রক্ষা পেতে এক ধরণের বিশেষ মাদুলি পরার রীতি আছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন গ্রামে। গ্রামের লোকেরা প্রতি পূর্ণিমার আগে জংলি কলা গাছের গায়ে কাপড় বেঁধে আসে। শুধু তাই না, গ্রামের লোকেরা এই সব গাছের নীচে ফল আর মিষ্টি রেখে আসে নাং তানি-র জন্য। আমরাও রেখে দিলাম।

75 Views
1 Likes
0 Comments
4.5 Rating
Rate this: