তানিয়া অমৃতার সাথে আমার মিলটা করিয়ে দিয়েছিল। আমারা দুজনেই এক সাথে বড়ো হয়ে ওঠেছি। ওর থেকে আমি মাত্র চার বছরের বড়ো। খেলনা বাটি থেকে লুকোচুরি, কিংবা লুডো সব খেলাতেই আমি ছিলাম ওর সঙ্গী। তবে ও আমার জন্য ক্রিকেট খেলতো। ও আমার সত্যি ভালো বন্ধু ছিলো। কিন্তু ওর ওপর আমি আর একটা অধিকার বোধ কাজ করতো। তবে ওকে যেমন মারধর করতাম ভালোবাসাতাম। একটু আধটু আমীস সম্পর্ক ছিলো। টিয়াপাখি দেখনো,সাইকেল শেখানো, স্যাঁতার শেখানোর অজুহাতে ওকে অনেক বার ছুঁয়েছি। ও কোন দিন বাধা দেয় নি। সেদিন আক্রম যখন জুঁইকে প্রোপজ করলো তখন দলবল নিয়ে আক্রম মারতে যাচ্ছিলাম। তখন অমৃতা আমাকে বাধা দিয়েছিল। বাধা না মানায় ও আমাকে ওর দিব্যি দিয়ে ছিলো কিন্তু সেটা মানি নি আমি। আসলে আক্রম ওপর আমাদের রাগ অন্য জায়গায়। ওদের পাড়ায় সান্টুরা আগের বছর সরস্বতী পূজা করতে চেয়েছিল। ওটা মুসলিম পাড়া হয়ায় ওখানে পূজা করতে দেয় নি। আর সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তি টা ভেঙে দিয়েছিল আক্রম। তুমি হিন্দুদের ঘৃণা করবে আবার হিন্দু মেয়েদের সাথে প্রেম করবে সেটা কিভাবে সম্ভব??
অমৃতা ওর জন্য অভিমান করেছিল। পরদিন দক্ষিণ পাড়ার ক্রিকেট খেলাতে আমরা জিতে ছিলাম। আর জিতে খুব খুশি হয়ে ছিলাম। জোরকার মতো অমৃতার সাথে দেখা হতেই ওকে জড়িয়ে ধরে খবরটা দিতে চাইলাম। কিন্তু ও বাধা দিলো। আবার মুখের ওপর বললো। ওকে জেনো আমি না ছুঁই । ও বললো আমরা বড় হয়ে গেছি। আমি ওকে ছুঁয়ে ওকে উপভোগ করি সেটা ও বোঝে। তাই এরপর ওকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে ও বড়োদের সে কথা বলে দেবে।
অমৃতার বন্ধু ছিলো বিজায়া। দক্ষিণ পাড়ায় থাকে। দক্ষিণ পাড়ায় ও বছরের পূজার ফাংসানে আমি শুধু কবিতা বলি নি, নাটকও করেছিলাম।আর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতে ওদের ক্রিকেট খেলাতে হারিয়ে আমি তো মোটামুটি ভাবে ও পাড়ায় হিরো। বিজায়া আমার ওপর ফিদা। আমি ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম। অমৃতাকে জালতে ওর সাথে প্রেমের অভিনয় করতে শুরু করলাম। যাইহোক তানিয়া শেষ মেষ বুঝিয়ে গেলো আমি যে শুধুমাত্র ওকেই ভালোবাসি।
তানিয়া চলে যাতে একা ঘরে ওর লজ্জায় জবা ফুলের মতো রাঙা হয়ে গেলো। নীল অপরাজিতার পাপড়ির মতো অস্ফুটে খোলা ঠোঁট দু'টো কাঁপছিল কি বলার জন্য। আমি কিছু না শুনে ডান হাত রাখলাম ওর কোমরে। তারপর টেনে আনলাম ওকে আমার দিকে। ও শক্ত করে খামচে ধরলো আমার জামা। আমি ওর অবিন্যস্ত খোলা চুলে আঙুল চালাতে লাগলাম। আমি আমার ঠোঁট এগিয়ে দিলাম ওর দিকে। আমার পেট থেকে গলা বেয়ে যেন বেরোতে চাইছে লক্ষ লক্ষ ডানা ওড়ানো প্রজাপতি। ঠোঁট দু'টো ক্রমশ যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। ওর নিশ্বাসের ওম এসে লাগে আমার নাকে। সাথে সঙ্গদ দেয় ল্যাভেন্ডার পারফিউমের গন্ধটা। আকাশের বুকে ডানা মেলে ধরা পাখিদের মতো ওর ডাগর চোখ দু'টো আমার দিকে তাকিয়েই, অধনয়ন হয়ে, বুজে আসে। একচিলতে সিঁদুরে মেঘের মতো লজ্জা খেলে যায় ওর সমস্ত মুখে। আমি ওর কোমড় ধরে আমার আরও কাছে টেনে আনি। ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে হারিয়ে গেলাম দুই জনে রূপকথার গল্পে।
কিন্তু জীবনটা রূপকথার গল্প নয়। সেই সময় আমাদের পাড়ায় লোসেডিং হতো। সেই পাড়ায় লোকজন এক জায়গায় বসে গল্প করতাম। আর এক মধ্যে সুযোগ বুঝে অমৃতা আর আমি প্রেম করতাম। কিন্তু একদিন আমাদের অজান্তে আমাদের অস্তিত্বকর অবস্থায় দেখে ফেলে আমার জ্যাঠা মশাই। ঘটনাটা পাঁচ কান না করে পরিবারের বড়রা আমাকে ডেকে বোঝায় , সবাই । বামন হয়ে আমি যেনো চাঁদে হাত দেওয়ার চেষ্টা না করি।অমৃতারা আমদের থেকে অনেক বড়ো লোক ছিলো। তাই সত্যিই হয়তো আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে ওরা। আবার হঠাৎ করে আমার উচ্চ মাধ্যমিক রেজাল্ট খারাপ হলো। তাই অমৃতাকে আমি এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম। কিন্তু সম্পর্কটা হয়তো ঠিক ঠাক থাকতো যদি আমাদের মাঝখানে অভিজিৎ না আসতো।
অভিজিৎ আমার ক্লাসমেট অমৃতাকে দেখছিলো আমার বাড়িতে এসেই। জোৎস্নার মতো সুন্দর মিষ্টি মেয়ে অমৃতা ওকে তো সবাই পছন্দ করবেই। অভিজিৎ ওকে দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো। আমি তখন ওকে এভয়েড করছি। কিন্তু ও তবু নিজের অধিকার ছাড়ে নি আমার ওপর থেকে। অভিজিৎ সাথেও ও সহজ ভাবেই মিশে ছিলো। আমার সব বন্ধুকে ও সন্মান করতো। ভালো ব্যবহার করতো। তাই একটু সাহস করে অমৃতাকে খুব সহজেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলো অভিজিৎ। কিন্তু ওর কপালে তার বদলে জুটেছিল প্রত্যাখান।আর অমৃতা সরাসরি বলে দিয়েছিল আমাকে ও ভালোবাসে। অভিজিৎ শুধুমাত্র বড়লোক ছেলে ছিলো না। যথেষ্ট সুন্দর দেখতে ছিলো। স্কুলের অনেক মেয়ে হৃদয়ে স্পন্দন বাড়িয়ে দিতো ও। তাই এই প্রত্যাখান ও মেনে নিতে পারেনি।
অমৃতা সাথে দূরত্ব বাড়ালেও মনে মনে আমি ওকে তখন ভালোবাসি। নিজেকে যোগ্যতম তৈরি করে ওকে নিজের করবো এমনি ভাবনা চিন্তা ছিলো আমার। অযোগ্য অসফল মানুষ অপরেকে দোষারোপ করে। আমি তখন একটা হতাশার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছি। কারণ হঠাৎ করে আমার মনে হচ্ছিল আমার জীবনের সব ব্যার্থতার কারণ যেনো আমার গরিব জন্মানো। মাধ্যমিকের পর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু বানিজ্য বিভাগ নিয়ে পড়াতে হলো বেশি পয়সা খরচের ভয়ে। বিজ্ঞান বিভাগ আমার সব বন্ধুরা পড়তো। খারাপ রেজাল্ট করেও প্রাইভেট কলেজে ইন্জিনিয়ারিং ভর্তি হলো অভিজিৎ।সুপ্রতিম হোটেল ম্যানেজমেন্ট ভর্তি হলো অথচ আমি সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারলাম না । এদিকে লোকের মুখে শোনা যাচ্ছিল অমৃতা ওর ক্লাসমেট পার্থ সাথে একটু বেশি ঘোরাঘুরি করছে। ভীষন হেরে যাওয়া জীবনটা সব বন্ধ বান্ধব ছেড়ে দিয়েছে আমাকে শুধু আপনা ছিলো অভিজিৎ।
সেবার অভিজিৎ জন্মদিনে প্রথম বার ওর অনুরোধ মদ খেয়েছিলাম। তখনই কথা গুলো হয়তো বলে ফেলেছিলাম।আমি তখন চুটিয়ে টিউসানি করছি। কারণ আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি পলিটেকনিক দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হবো।এবং পলিটেকনিক সুযোগ পেলাম। আর সেটা সেলিব্রিট করতেই মদ খাওয়া।একদিকে অভিজিৎ এক তুতো বোন আমাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু আমি সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। অভিজিৎ সেইদিন ওই প্রসঙ্গ তুলতেই, নেশায় ঘোরে বলেছিলাম সব সুন্দরী মেয়েদের বুকেই তিল থাকে। তিল না থাকলে সে সুন্দরী নয় । নাভিতেও তিল থাকতে হবে। আর উরুতে আঁচিল থাকতেই হবে নয়তো সে কিসের সুন্দরী। ও ওখান থেকেই বোধহয় অনুমান করে ফেলেছিলো আমি অমৃতা কথা মাথায় রেখে ঐ কথা গুলো বলছি। আসলে। অমৃতার ডান বুকের ওপর একটা কোল তিল ছিলো আর একটা তিল ছিলো ঠিক নাভির এক আঙ্গুল তলা। ওর ফর্সা উরু জ্বল জ্বল করতো একটা লালচে আঁচিল। আদর করার সময় আমি সব সময় ওখানে চুমু খেতামই।
অভিজিৎ পার্থ আর অমৃতার মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে কথা গুলো পার্থকে জানায়। আমার আর অমৃতার মধ্যে একটি শারীরিক সম্পর্ক কথা বললে ভেবেছিলো পার্থ অমৃতার জীবন থেকে সরে যাবে। কারণ পুরুষের চোখে একটি মেয়েতো পন্য তাই ব্যবহৃত পন্যের চাহিদা কমে যাবে। অথচো অমৃতা পার্থেকে সাথে নিয়ে আমার সাথে দেখা করলো। এবং আমাকে দুই টো কথা শুনিয়ে সদর্পে ঘোষণা করলো সে এবার সত্যি কারের ভালো বাসা খুঁজে পেয়েছে। পার্থ এমন একটি ছেলে যে ওকে ভালো বাসে। ওর শরীরকে নয়। আমি কোনো প্রতিবাদ করি নি। কারণ আমি তো এমনিতেই সরে যেতে চাইছিলাম ওর জীবন থেকে। ওর মনের মধ্যে আমার জন্য ভালোবাসাটা বেঁচে থাকলে আমার দূরে সরে যাওয়াটা কঠিন হতো।
অসম্পূর্ণ গল্প
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
40
Views
1
Likes
0
Comments
5.0
Rating