অপেক্ষার জানালা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
লাইটপোস্টের গায়ে আটকানো খামটা হাতে তুলে নিলো অর্পা। বুকের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসছিলো, আঙুল কাঁপছিলো। অনেক সাহস সঞ্চয় করে খাম ছিঁড়ে ভেতরের কাগজ বের করলো।
চিঠিতে লেখা—
*“অর্পা,
যখন তুমি এটা পড়ছো, হয়তো আমি আর তোমার কাছে নেই। তোমাকে ছাড়া বাঁচতে চাইনি, তবু আমার হাতে ছিলো না কিছুই। সংসারের দায়, পরিবারের চাপ, আর এক অদ্ভুত রোগ আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো দূরে। আমি ভেবেছিলাম—তুমি আমাকে ঘৃণা করবে যদি হঠাৎ হারিয়ে যাই। কিন্তু আমি চাইতাম তুমি একদিন সত্যটা জানো।
আমি এখনো তোমায় ভালোবাসি। প্রতিটি বিকেল, প্রতিটি জানালা, প্রতিটি বৃষ্টিভেজা দিন আমার ভেতরে তোমাকেই খুঁজেছে।
যদি কখনো মনে হয়, আমার জন্য কাঁদা বৃথা—তবে কেঁদো না। আমি চাই, তুমি বাঁচো, হাসো, নতুন স্বপ্ন দেখো।
আমার পৃথিবী শেষ হয়ে আসছে, তবু তোমার জন্য আমার ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না।
—আরিয়ান”*
অর্পার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেলো। চিঠিটা বুকে চেপে ধরে সে দাঁড়িয়ে রইলো সেই লাইটপোস্টের নিচে, যেটা আজও জ্বলছে, কিন্তু যার আলো আর কোনোদিন তাদের দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরবে না।
নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ছিলো, বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো, আর অর্পার ভেতরে বাজছিলো এক অদ্ভুত সুর—অপেক্ষার, অভিমানের, আর চিরন্তন ভালোবাসার।
সে ধীরে ধীরে আকাশের দিকে তাকালো। হয়তো দূরে কোথাও, কোনো নক্ষত্রের আলোয় আরিয়ান তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মুখের কোণে একফোঁটা হাসি এঁকে অর্পা ফিসফিস করে বললো—
“তুমি না থেকেও আছো, প্রতিটি জানালার আলোয়, প্রতিটি অপেক্ষায়।”
আর এভাবেই শেষ হলো অর্পার দীর্ঘ প্রতীক্ষা—
প্রতীক্ষার জানালা বন্ধ হলো না, বরং হয়ে রইলো চিরন্তন স্মৃতির জানালা।
47
Views
2
Likes
0
Comments
5.0
Rating