অপেক্ষার জানালা

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:


রাতটা যেন শেষই হলো না। বিছানায় শুয়েও অর্পা ঘুমাতে পারলো না। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠলো চিঠির সেই লাইন—
“যদি কোনোদিন আমার খোঁজ পেতে চাও, তবে আমাদের পুরোনো জায়গায় যাবে…”

পুরোনো জায়গা! কত জায়গাই তো আছে। কলেজের ছাদ, লাইব্রেরির কোণ, অথবা সেই বটগাছের তলা যেখানে দুজনে বসে কত স্বপ্ন বুনেছিলো। কোন জায়গার কথা লিখেছিলো আরিয়ান?

ভোর হওয়ার আগেই অর্পা ঠিক করলো—আজকেই বের হবে। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক কাঁপুনি, তবু একটা টান টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।

সকালটা অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক ছিলো না। চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছিলো, কিন্তু অর্পার মনে হচ্ছিলো প্রতিটি চুমুকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে হাজারো প্রশ্ন। আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হলো, চোখদুটো যেন ভিজে আছে অদৃশ্য কুয়াশায়।

বিকেলের দিকে অর্পা সাহস করে বের হলো। হাতে সেই চিঠিটা, যেটা যেন তাকে পথ দেখাচ্ছে। রিকশায় বসে শহরের ভিড়ের দিকে তাকালো সে। প্রতিটি মানুষই যেন কোথাও যাচ্ছে, কারও না কারও জন্য, অথচ অর্পা জানে না—সে কাকে খুঁজতে যাচ্ছে, আর কী-ই বা পাবে শেষে।

রিকশার ঘন্টা, হকারের ডাক, রাস্তায় হর্নের শব্দ—সব মিলিয়ে শহরটা জীবন্ত। কিন্তু অর্পার মনে হলো, এই শব্দগুলোর ভেতর লুকানো আছে নিঃশব্দ কোনো উত্তর।

অবশেষে সে পৌঁছালো সেই জায়গায়—পুরোনো কলেজ ক্যাম্পাসে। চারপাশে বদলে গেছে অনেক কিছু, নতুন বিল্ডিং, নতুন মুখ, কিন্তু সেই পুরোনো ছাদের জানালাটা এখনো আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কত বিকেল কেটেছিলো দুজনের—বৃষ্টি দেখা, গল্প বলা, স্বপ্ন আঁকা।ছাদের জানালার সামনে দাঁড়াতেই বুকটা ধক করে উঠলো। হাওয়া বইছে, পর্দা উড়ছে, আর অর্পার মনে হলো—আরিয়ান ঠিক এই জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে।

সে চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বললো—
“আরিয়ান, তুমি কি সত্যিই এখানে আছো? নাকি আমি কেবল স্মৃতির পেছনেই ছুটছি?”

কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। শুধু হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আর চারপাশের নিস্তব্ধতা।

ঠিক তখনই হঠাৎ করে তার চোখে পড়লো ছাদের কোণে একটা কাগজ—ভাঁজ করা, হলুদ হয়ে যাওয়া। কাছে গিয়ে হাতে নিতেই বুক কেঁপে উঠলো। ভাঁজ খুলে দেখা গেলো, চিঠির মতোই সেই পরিচিত হাতের লেখা…

👉 চলবে…
34 Views
1 Likes
0 Comments
3.7 Rating
Rate this: